দবির মিয়ার ঈদ। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


বৃদ্ধ দবির মিয়া বাড়ির উঠোনে বসে উদাস চোখে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ বাদে কাল ঈদ। চারপাশে সবার ভেতরে একটি উৎসবমুখর ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু সেই আনন্দ তাকে স্পর্শ করতে পারছে না। কারণ দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে থাকায় দবির মিয়ার ঘরে আজ কোন খাবার নেই। পরিবারের সদস্যসংখ্যা ছয়জন। যতদিন সে কর্মক্ষম ছিল ততদিন কোনরকমে দুবেলা ভাত জুটেছে। কিন্তু গত কয়েক দিন যাবত সে অসুস্থ থাকায় তাদের খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

Polish_20220503_214257186.jpg

কোনদিন একবেলা খাবার জোটে আবার কোনদিন সেটাও জোটে না। ঘরে তিন-চারটে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে। তারাও এক প্রকার না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। দবির মিয়ার বউ এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে যা জোগাড় করতে পারে সেটাই তাদের একমাত্র সম্বল। বাড়ির পাশে রইস মিয়া হঠাৎ ডাক দিয়ে বলল আজ বিকালে চৌধুরী বাড়ি থেকে রিলিফ দেয়া হবে। যাবা নাকি? আমিতো যাবো। প্রস্তাব শুনে দবির মিয়া খুবই খুশি হল।

সে বসে বসে চিন্তা করছিল কালকে ঈদের দিনেও হয়তো তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে। এখন সে কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। সে সাথে সাথে রইস মিয়াকে বললো চলো এখনই যাই। রইস মিয়া বললো আরে মিয়া এত তাড়াতাড়ি যেয়ে লাভ নাই। রিলিফ নিতে আমরা দুপুরের পরে রওনা দেবো। তখন দবির মিয়া বললো যাওয়ার সময় কিন্তু মনে করে আমাকে ডাক দিও। রইস মিয়া বললো ঠিক আছে।

যদিও দবির মিয়া এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। শরীরটা খুব দুর্বল। তার পরেও তার কোনো উপায় নেই। তাকে যেতেই হবে। সে চিন্তা করছিলো ওইখানে যে পরিমাণ ভিড় হয়। তার ভেতর থেকে সে রিলিফ নিতে পারবে কি না। মনে মনে চিন্তা করলো যাই হোক তাকে যেতেই হবে। এছাড়া তার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। সে বসে বসে প্রতীক্ষার প্রহর গুনছে। ইতিমধ্যে দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে সে রইস মিয়ার ডাক শুনতে পেলো। রইস মিয়ার ডাক শুনে দবির মিয়া তাড়াতাড়ি রওনা দিলো। যাওয়ার আগে সে বাড়ি থেকে একটি বড় ব্যাগ নিয়েছে। কারন যদি রিলিফ পায় তাহলে আনতে একটি ব্যাগ দরকার হবে।

ঘণ্টাখানেকের ভেতর তারা চৌধুরী বাড়ির সামনে পৌঁছে গেলো। সেখানে পৌছে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। তারা দেখতে পেলো চৌধুরী বাড়ির সামনের মাঠ লোকে লোকারণ্য হয়ে আছে। এই অবস্থা দেখে তারা রিলিফ পাওয়ার আশা ছেড়ে দিলো। তারপরেও দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিন্তু যখন রিলিফ দেয়া শুরু করলো তখন লোকজনের হুড়োহুড়িতে অনেকে আহত হল। বৃদ্ধ দবির মিয়া মানুষের ধাক্কায় পড়ে গিয়েছে কয়েকবার। তারপরেও সে রিলিফ নেয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করলো। দীর্ঘক্ষন সেখানে অপেক্ষা করলো। কিন্তু চৌধুরী বাড়ি থেকে রিলিফ দিয়েছে মাত্র ৫০০ লোককে। রিলিফ নিতে এসেছে কয়েক হাজার মানুষ। যার ফলে বেশীরভাগ মানুষই শূন্য হাতে ফিরে গেলো।

বৃদ্ধ দবির মিয়া ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়ে বেশ ভালো ব্যথা পেয়েছে। রইস মিয়া দবির মিয়াকে ধরে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। কারণ দবির মিয়া ব্যথায় ভালো মতো হাঁটতে পারছিল না। ফেরার সময় দবির মিয়ার দুচোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। সামান্য যে আশার সঞ্চার হয়েছিল সেটাও দুরাশায় পরিণত হয়েছে। কালকের দিনটা তাদেরকে না খেয়ে কাটাতে হবে। সেই দুঃখে কাঁদতে লাগলো। বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে বাড়ির লোকজন তার কাছে আসলো কি পেয়েছে সেটা দেখতে। কিন্তু তার অবস্থা দেখে তারা আর কিছু জিজ্ঞেস করতে সাহস পেল না। দবির মিয়ার স্ত্রী দ্রুত তার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো। পানি খেয়ে দবির মিয়া ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

দবির মিয়ার বাড়ির সকলের মন খুব খারাপ। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাগুলোর। এগুলো সব তার মেয়ের ঘরের সন্তান। কালকের দিনে বাচ্চাদের মুখে এক মুঠো খাবার দিতে পারবেনা এই দুঃখে দবির মিয়া কাঁদতে লাগলো। মনে মনে সে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করলো হে আল্লাহ আমার জন্য না হোক এই মাসুম বাচ্চাদের জন্য হলেও কালকে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিও। ইতিমধ্যে অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।সে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলো। এর ভেতর বাইরে কিছু মানুষের পায়ের শব্দ শুনতে পেলো। তারা বাইরে থেকে ডাকছিলো চাচা বাড়িতে আছেন? কিন্তু দবির মিয়া বিছানা থেকে উঠতে পারল না। সে তার স্ত্রীকে বলল দেখো তো কে এসেছে? তার স্ত্রী দরজা খুলে বাইরে গেলো। সেখানে দেখতে পেল কয়েকজন লোক দাঁড়ানো।

তাদেরকে জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে বাবারা? লোকগুলি তাকে বলল চাচি আপনাদের জন্য কিছু উপহার এনেছি। কালকের দিনটা যাতে আপনারা ভালো ভাবে কাটাতে পারেন সে জন্য এই উপহার। এইকথা বলে তারা দু'জন একটি বস্তা নিয়ে দবির মিয়ার ঘরে পৌঁছে দিলো বস্তাটি। পৌঁছে দিয়ে তারা দবির মিয়ার স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। এর ভেতর দবির মিয়াও খাট থেকে উঠে বসেছে। দবির মিয়া তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করল কী ব্যাপার? এরা কারা? আর এই বস্তার ভিতর কি? তার স্ত্রী বলল এদের তো চিনি না। বস্তার ভিতরে কি আছে দেখতে হবে। বস্তাটা খুলে তারা অবাক হয়ে গেলো।

সেখানে পোলাওর চাল, এক প্যাকেট মাংস, সেমাই, দুধ, চিনি আরো বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী দিয়ে ভরা। খুশিতে তাদের চোখে পানি চলে এলো। দবির মিয়ার স্ত্রী তার নাতিদের সাথে সাথে ডেকে উঠালো। সে তার নাতিদেরকে জানালো কালকে তারা পোলাও মাংস খাবে। সাথে সেমাই ও থাকবে। এত জিনিসপত্র দেখে বাচ্চাদের খুশি আর ধরে না। বস্তার ভেতর কিছু কাপড়চোপড় ও তারা পেলো। একটি লুঙ্গি, একটি শাড়ি এবং বাচ্চাদের জন্য কিছু কাপড়চোপড় ও ছিলো সেখানে। খুশিতে দবির মিয়ার পুরো বাড়িটা ঝলমল করে উঠলো। দবির মিয়া মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করলো।(সমাপ্ত)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

ভাইয়া দবির মিয়ার গল্প করে খুব খারাপ লাগলো ।আমাদের সমাজের দবির মিয়ার মতো হাজারো চরিত্র রয়েছে যারা তাদের তিন বেলা খাবার জটাতে পারে না। দবির মিয়ার পরিবারের সদস্যরা ঈদ উপলক্ষে তেমন কোনো কিছুই করতে পারে না যেখানে তিনবেলা খাবার খেতে পারে না সেখানে ঈদের আনন্দই কিছুইনা। আসলে ঈদ এখন বড়লোক হয়ে গেছে। এই অসহায় গরীব মানুষের কথা কেউ ভাবেনা। সরকার যে রিলিপ দেয় তার অধিকাংশ সচ্ছল মানুষই পেয়ে থাকে আমার ধারনা মতে। আমাদের সমাজে দবির মিয়ার মতো হাজারো দবির মেয়েদের কথা ছিল অথচ এত কষ্ট সহ্য করে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পড়ে যাওয়ার পরেও তিনি আশায় ছিলেন যে কিছু পাবেন।কিন্তু না পেয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে রিক্ত হাতে ফিরে আসলেন ।এই যে কষ্ট এই যে ব্যথা বোঝার কেউ নেই। তবে সর্বশেষে কিছু হৃদয়বান মানুষ যখন দবির মিয়ার মত মানুষদের কথা ভেবে তাদের জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে তখন দবির মিয়ার মনে মুখে যে আনন্দের ছাপ প্রকাশ পেয়েছে এই আনন্দ কখনো কোটি টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব নয় এই সুখ কখনোই মূল্য দিয়ে মাপা যাবে না। এই ধরনের মানবিক কাজ যারা করেন তাদের আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই সবসময়

 2 years ago 

আমাদের সকলেরই উচিত সাধ্যমত এই ধরনের লোকদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। আমরা সবাই ঈদের সময় নতুন জামা কাপড় কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে যাই। কিন্তু তখন এই দেশের লক্ষ লক্ষ দবির মিয়ারা অনাহারে থাকে। আমাদের উচিত তাদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করা।

 2 years ago 

দবির মিয়ার ঈদের গল্পটি পড়তে পড়তে খুবই বিষণ্ন হয়ে গিয়েছিলাম। যতই পড়ছিলাম ততোবারই ভাবছিলাম শেষ পর্যন্ত দবির মিয়ার ভাগ্যে কি কিছু জুটবে। পরে যখন গল্পটি পড়ে বুঝতে পারলাম কিছু সংখ্যক লোক এসে তাদের ঘরে উপহার দিয়ে গেছে এবং সেইসাথে বিভিন্ন ধরনের খাবার সামগ্রী, তখনই আমার মনের ভেতরে আনন্দ বয়ে গেছে। খুবই ভালো লেগেছে এই মুহূর্তটুকু পড়তে। কেননা দবির মিয়া রিলিফ আনার জন্য চৌধুরী বাড়িতে পড়ে গিয়ে যে পরিমান কষ্ট পেয়েছিল, আর বাড়ি ফিরতে ফিরতে অঝোরে কান্না করছিল তা সত্যিই বেদনা দায়ক। আর এই বেদনার অবসান ঘটেছিল কারো না কারো সাহায্যের মাধ্যমে। মানবতা এখনও নিঃশেষ হয়ে যায়নি। দবির মিয়ার মতো লোকের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কেউ না কেউ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ভাইয়া,দবির মিয়ার ঘরে খাবার আসাতে সে যতটুকু আনন্দ পেয়েছিল, গল্পটি পড়ে আমিও ঠিক ততটুকুই আনন্দ পেয়েছি। এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

যদিও বাস্তবে এরকমটা খুবই কম হয়। তার পরেও মাঝেমাঝেই গল্পের সুখী সমাপ্তি দেখতে ইচ্ছে করে। সেজন্যই গল্পটা এভাবে শেষ করলাম। কিন্তু বাস্তবে দবির মিয়ারা অনাহারেই থেকে যায়।

ঈদ যেখানে নিজেই বড়লোক
তাকে করতে লাগে অনেক টাকা .
টাকা হীন'দের কাছে ঈদ
সদাই পড়ে থাকে ঢাকা।

হৃদয় ছাড়া মানুষ নাকি বাচে
নয়তো হৃদয় বানান,
হৃদয়হীন মানুষগুলো বলে
গরিবের নাকি নাই কোনো আগান ।

 2 years ago 

কবিতার পঙক্তি গুলোর মাধ্যমে চমৎকার কিছু কথা তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

যদিও দবির মিয়া এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। শরীরটা খুব দুর্বল। তার পরেও তার কোনো উপায় নেই।

ভাইয়া, এটাই বাস্তব যখন অভাব আসে তখন শরীরে ব্যথা গুলো, দুর্বলতা গুলো তখন কিছুই মনে হয় না। তখন চিন্তা থাকে কষ্ট করে হলেও পরিবারের জন্য দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করা। ভাইয়া, আপনার এই পোস্টটি মাধ্যমে সমাজের বাস্তবে চিএ তোলে ধরেছেন।আমাদের সমাজে অহরহ দবির মিয়া রয়েছে যারা এক বেলা খাবার জোটাতে তাদের কষ্ট হয়ে যায়। তাদের জন্য ঈদ যেন একটা দুঃস্বপ্ন। ভাইয়া,আমাদের যাদের সামর্থ্য আছে সমাজের দবির মিয়ার মত হাজারো দবির মিয়া পড়ে রয়েছে তাদেরকে সাহায্য করা খুবই প্রয়োজন। ভাইয়া, আপনার এই পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব খারাপ লেগেছে সমাজের বাস্তব চিত্র এই পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য।

💐ঈদ মোবারক💐

 2 years ago 

আমাদের সকলের উচিত সাধ্য মত এধরনের লোকজন এর পাশে দাঁড়ানো। তাহলে সমাজে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74