ছোটবেলার মতো করে শবেবরাত উদযাপন।
দুদিন আগেই গেল শবে বরাত। শবে বরাত মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত। যদিও ধর্মীয়ভাবে এই রাত নিয়ে তেমন একটা কিছু বলা নেই। তবে আমাদের দেশে শবেবরাতকে ঘিরে বিভিন্ন রকম সামাজিক রীতিনীতি গড়ে উঠেছিল। আমার এখনো মনে পড়ে ছোটবেলা থেকেই শবে বরাত মানে ছিল একটি উৎসব। এই দিনে মাংস, রুটি বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্ন বাড়িতে তৈরি করা হতো। সেটা যেমন নিজেরা খাওয়া হত তেমনি আত্মীয়-স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর বাড়িতেও দেওয়া হতো।
তখন আমরা মনে করতাম এগুলো মনে হয় ধর্মীয় রীতি। কিন্তু পরবর্তীতে আস্তে আস্তে জানতে পারলাম এগুলো শুধুই সামাজিকতা। ধর্মীয়ভাবে এই ধরনের কার্যক্রমের কোন অস্তিত্ব নেই। হ্যাঁ আপনার ইচ্ছা হলে আপনি রুটি মাংস হালুয়া এগুলো যে কোন দিন খেতে পারেন। সেই বিষয়ে কোন বিধি-নিষেধ নেই। তবে এই শবেবরাতেই যে আপনাকে মাংস,রুটি, হালুয়া খেতে হবে এমন কোন ধর্মীয় বিধান নেই। যাইহোক যখন ছোট ছিলাম তখন ধর্মীয় বিধানের থেকে সামাজিকতা বা লৌকিকতার দিকে আকর্ষণ ছিল অনেক বেশি। শবে বরাতের আগমনের আগে থেকেই আমাদের উদযাপনের পরিকল্পনা তৈরি হতো। আনন্দ উদযাপনের সাথে বাজি বা পটকা ফোটানোর একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমরাও তার বাইরে ছিলাম না।
আমরাও শবে বরাতের রাতে বাজি বা পটকা ফুটিয়ে উদযাপন করতাম। যদিও তাতে এলাকার মুরুব্বিগণ যারপর নাই বিরক্ত হত। কিন্তু আমাদের তাতে বয়েই গেছে। যদিও এখন নিজে বড় হওয়ার পর বুঝতে পারি আসলেও কাজটি ছিল যথেষ্ট বিরক্তিকর। তবে শবে বরাতের মূল আনন্দ হতো রাতে। কারন ছোটবেলায় আমাদের সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাইরে থাকার অনুমতি ছিল না। তবে এই একটি রাত ছিল ব্যতিক্রম। এই রাতে আমরা নামাজ পড়ার কথা বলে বাড়ির বাইরে থাকতে পারতাম। তারপর যথারীতি দল বেঁধে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতাম।
কোথাও কোন মসজিদে গিয়ে দু'রাকাত নামাজ পড়তাম। দুই রাকাত নামাজ পড়ে এমন ভাব করতাম। মনে হতো যেন সারারাত জুড়ে ইবাদত বন্দেগী করেছি। সেই রাতটি থাকতো আমাদের সকলের জন্যই অনেক স্পেশাল। সাধারণত মফস্বল শহরগুলো রাত দশটার ভেতরে দোকানপাট মার্কেট সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। তবে শবে বরাতের এই রাতে সারারাত মার্কেটের আশেপাশের খাবারের দোকানগুলি খোলা থাকতো। সেখানে রাতভর বিভিন্ন মুখরোচক খাবার পাওয়া যেত। বন্ধুদের সাথে ঘোরাফেরা সাথে কিছুটা খাওয়া-দাওয়াও হতো। তবে গত কয়েক বছর ধরে আমার শবে বরাত উদযাপন টা একেবারেই পাল্টে গিয়েছে। এখন আর এটাকে কোন উৎসব মনে হয় না। এখন মনে হয় শবে বরাত মানে বাড়তি কিছু ইবাদতের সুযোগ তৈরি হওয়া। এখন আর আগের মত বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডাবাজি আর ঘুরে বেড়ানো হয় না।
এখন বাড়ির বাইরে থাকলেও চেষ্টা করি কিছুটা নামাজ পড়তে। তবে এবারের শবে বরাতটা আমি কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী ভাবে কাটিয়েছি। সেই ছোটবেলার মতো করে এলাকার দু তিনজন বন্ধুর সাথে শহরে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়েছি। প্রথমে এশার নামাজ পড়ে আমার এক বন্ধুর ওষুধের দোকানের সামনে বসে কয়েক বন্ধু আড্ডা দিচ্ছিলাম। আড্ডা দেয়ার সময় এক বন্ধুর জিজ্ঞেস করল রাতে কি বাসায় থাকবি না বাইরে বের হবি? তখন আমি জানালাম বাইরে বের হওয়া যায়। তখন সে বলল তাহলে চলে আসিস। তখন আমি বললাম ঠিক আছে। আজকে আমরা একসাথে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াবো। আমার প্রস্তাবে তারাও রাজি হয়ে গেল।
ওদের সাথে এই পর্যন্ত কথাবার্তা বলে আমি বাড়ি ফিরে এলাম। বাড়ি ফিরে বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে কিছু কাজ করে তারপর আবার আমার সেই বন্ধুর ওষুধের দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি আমার সেই দুই বন্ধু এখনো বসে আছে। আর যেই বন্ধু ওষুধের দোকানের মালিক সে আমাদেরকে জানালো সে একটু বাজারে যাবে একটা কাজে। চাইলে আমরাও তার সাথে যেতে পারি। তার এই প্রস্তাব পাওয়ার পরে চার বন্ধু মিলে একসাথে ফরিদপুর নিউমার্কেটের দিকে হাঁটতে লাগলাম। আমাদের বাড়ি থেকে নিউমার্কেটের দূরত্ব খুব বেশি না হওয়ায় অল্প কিছুক্ষণে সেখানে পৌঁছে গেলাম। সেখানে পৌঁছানোর পর আমার এক বন্ধু বলল তার কিছুটা ক্ষুধা লেগেছে।
তখন আমি আমার দুই বন্ধুকে নিয়ে একটি হোটেলে ঢুকলাম। যেহেতু আমার পেট ভরা ছিল তাই আমি কিছু খাইনি। তবে আমার তাদের জন্য নান রুটি, পরোটা, খাসির কলিজা এবং ডাল ভাজি অর্ডার করলাম। অর্ডার করার কিছুক্ষণের ভিতরেই টেবিলে খাবার পরিবেশন করলো। তারপর আমি ওদের সাথে গল্প করতে লাগলাম আর ওরা খেতে লাগলো। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে আমরা সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম ফরিদপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থান জামে মসজিদে। সেখানে গিয়ে দেখি মসজিদের সামনে রীতিমতো মেলা বসেছে। বেশ কিছু দোকানপাট হয়েছে তারা ফলমূল থেকে শুরু করে আতর জায়নামাজ সবই বিক্রি করছে। এই দোকানপাট গুলোর জন্য সেখানে রীতিমতো উৎসবের আমেজ বিরাজ করছিল। এই দোকানগুলি ছাড়াও আরো বেশ কিছু ফুড কার্ড দেখতে পেলাম। কেউ চটপটি বিক্রি করছে, কেউ ঝালমুড়ি বিক্রি করছে, আবার কেউ আখের রস বিক্রি করছে। দীর্ঘদিন পর আবার সেই ছোটবেলার শবে বরাত উদযাপনের কথা মনে পড়ে গেল।
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোনো লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | গোরস্থান মসজিদ |

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |


Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ভাইয়া শবে বরাতের সন্ধ্যারাত্রে ছোটবেলায় আমিও আমার খেলার সাথীদেরকে নিয়ে পটকা ফোটাতাম। বিশেষ করে ওই সময় অর্থাৎ 2002-০3 সালের দিকে আমাদের গ্রামের দোকানে কয়েক প্রকারের পটকা পাওয়া যেত। যাহোক ভাইয়া, আপনার সেই ছোটবেলায় শবেবরাত উদযাপনের স্মৃতিগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করে আমাদের ছোটবেলার স্মৃতিগুলো নতুন করে মনে করে দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শবে বরাত মুসলমানদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। অতীতের সময় শবে বরাত খুবই গুরুত্ব ভাবে উদযাপন করতো। হেলা রুটি গোস্ত ভাত রান্না করতো এবং এগুলো বিকেলে একত্রিত করে সিন্নি করত। আসলে সেই সময়টা অনেক মধুর ছিল। তবে এখন শুনি ইসলামে এটা নাকি করা উচিত নয়। শুধু এবাদত করতে হবে। আপনি বন্ধুদের নিয়ে খুবই আনন্দ করেছেন। আপনাদের বাড়ি থেকে নিউ মার্কেট যেহেতু বেশি দূরে নয় তাই অল্প সময়ে পৌঁছে গেলেন। বন্ধুর ক্ষুধা লেগেছে বলে রেস্টুরেন্টে ঢুকলেন এবং নান রুটি খাসির কলিজা পরোটা ডাল ভাজি অর্ডার করলেন। যেহেতু আপনার পেট ভরা ছিল তাই আপনি খাবার খাননি। বন্ধুরা খাচ্ছিল এবং আপনি তাদের সাথে গল্প করছিলেন। খাওয়া শেষে আপনারা ফরিদপুর কেন্দ্রীয় গোরস্থান জামে মসজিদের দিকে গিয়েছিলেন। দেখলেন সেখানে বিভিন্ন ধরনের মেলা বসেছে। সবমিলে বোঝা যাচ্ছে খুবই সুন্দর একটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন আপনার বন্ধুদের সাথে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।