বন্ধুদের সাথে অপ্রত্যাশিতভাবে ঈদ পরবর্তী আড্ডা (দ্বিতীয় পর্ব)।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


আমরা যেখানে চটপটি খেতে যাবো সেই জায়গাটা পদ্মার পাড় থেকে মোটামুটি বেশ দূরে। ইতিমধ্যে আমি অনেকটা হাঁটার ফলে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তাই সাথের বন্ধুদের বললাম চলো আমরা অটোরিক্সা করে সেখানে যাই। কিন্তু কেউই প্রথমে আমার প্রস্তাবে রাজি হলো না। সবাই হেঁটে সেখানে যেতে চাইলো। আসলে বন্ধুবান্ধব এক জায়গায় হলে গল্প করতে করতে হাঁটতে বেশ ভালোই লাগে। কিন্তু আমি অনেকটা হাঁটার ফলে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। তাই আমার আর হাঁটতে ইচ্ছে করছিল না। পরবর্তীতে ওরা আমার অবস্থা বুঝে আমার প্রস্তাবে রাজি হোলো। তারপর আমরা একটা অটোরিকশা নিয়ে সেই চটপটির দোকানের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

IMG_20230702_173946.jpg

অটো রিক্সা করে সেখানে পৌঁছতে আমাদের খুব একটা বেশি সময় লাগেনি। অল্প সময়ে আমরা সেই চটপটির দোকানে পৌছালাম। তবে সেখানে পৌঁছে খেয়াল করে দেখি চটপটির দোকানের রাস্তার ঠিক অপজিটেই একটি দোকানে খিচুড়ি বিরিয়ানি এগুলি বিক্রি হচ্ছে। এই দোকানটি আমাদের অনেকের কাছে বেশ পরিচিত। কারণ এই দোকানের খিচুড়ি আমরা আগেও খেয়েছি। এখানকার খিচুড়ি খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। বন্ধু প্রদীপ আমাদেরকে বলল তোরা ইচ্ছা করলে এখান থেকে খিচুড়ি ও খেতে পারিস। আমরা তিনজন সেখান থেকে খিচুড়ি খেতে রাজি হলাম। আর আমাদের বন্ধু রাসেল আর পরে আমাদের সাথে যোগ দেয়া ফেরদৌস এবং হারুন তারা তিনজন চটপটি খেতে গেলো।

IMG_20230702_174414.jpg

আমি সুমন আর প্রদীপ তিন বন্ধু খিচুড়ির অর্ডার দিয়ে টেবিলে বসলাম। গরমের ভেতর অনেকটা হাটার ফলে আমার বেশ পানি পিপাসা পেয়েছিলো। চোখের সামনে ফ্রিজের ভেতরে কাঁচের বোতলে মেরিনডা দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। ফ্রিজ থেকে একটা বোতল বের করে চুমুক দিতে লাগলাম। যদিও আমি জানি গরমে ক্লান্ত হওয়ার পরে এই ধরনের কার্বনেটেড বেভারেজ খাওয়া একেবারে ঠিক নয়। তারপরেও মাঝে মাঝে জানা সত্ত্বেও কিছু উল্টোপাল্টা কাজ করতে ইচ্ছা করে।

IMG_20230702_174435.jpg

যাইহোক আমি কয়েক চুমুকে মেরিন্ডার বোতল খালি করে ফেললাম। তারপর বসে রইলাম খিচুড়ির অপেক্ষায়। অল্প সময়ের ভেতরেই আমাদের তিনজনের সামনে খিচুড়ি পরিবেশন করলো। সেই খিচুড়ির ভেতর ছোট ছোট করে কাটা কয়েক টুকরো মুরগির মাংস দিয়েছিলো। প্লেটের একপাশে ছিল তেতুলের চাটনি আর পেঁয়াজ। আর টেবিলে একটি বাটিতে রাখা ছিল মরিচ ভর্তা। মোটামুটি খিচুড়ি খাওয়ার জন্য একেবারে পারফেক্ট আয়োজন। যদিও বিকাল বেলায় এ ধরনের খাবার খাওয়ার সময় নয়। তারপরেও আমরা তিনজন বেশ মজা করে খিচুড়ি শেষ করলাম। খিচুড়ি খাওয়া শেষ হলে আমরা বিলমিটিয়ে রাস্তার ওপারে চটপটির দোকানে গিয়ে বসলাম।

IMG_20230702_173747.jpg

সেখানে গিয়ে দেখি বন্ধু-বান্ধবেরা সবাই চটপটি খাচ্ছে। এর ভেতরে বন্ধু রাসেল জিজ্ঞেস করল যে আমরা চটপটি খাব কিনা? চটপটি আমাদের সবার কাছেই অত্যন্ত পছন্দের একটি খাবার। সামনে এমন লোভনীয় চটপটি দেখে আর না করতে পারিনি। পরে রাসেল আমাদের জন্য চটপটি অর্ডার করলো। এদিকে চটপটির দোকানদার তিনি চটপটি বানাতে ব্যস্ত ছিলের । তার ছোট্ট দোকান হলেও সেখানে দেখলাম কাস্টমারের অনেক চাপ। যার ফলে চটপটি দিতে তার অনেক দেরি হচ্ছিলো। অবশ্য তাতে আমাদের একেবারেই সমস্যা হয়নি। কারণ আমরা সবাই গল্পে মশগুল ছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আমাদের সামনে চটপটির বাটি এলো।

IMG_20230612_134150.jpg

তবে চটপটি মুখে দিয়েই বুঝতে পারলাম তাড়াহুড়ার কারণে হয়তো দোকানদার মসলা কম দিয়েছে। তখন আমি উঠে গিয়ে একটু বিট লবণ আর ঝাল নিয়ে এলাম। তারপর চটপটির ভেতরে বাটি বিট লবণ আর ঝাল দিয়ে একটু নাড়াচাড়া দিয়ে যখন চটপটি মুখে দিলাম। তখন দেখলাম চটপটিটা খেতে বেশ ভালোই হয়েছে। অবশ্য এই দোকানের চটপটি আমি আগেও অনেকবার খেয়েছি। আমরা বন্ধু-বান্ধবেরা যখনই লেকপাড়ে ঘুরতে আসি তখনই এই দোকান থেকে চটপটি খাই। চটপটি খাওয়া শেষ হলে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতে লাগলাম। এর ভেতরে হঠাৎ করে আমাদের ফরিদপুরের একটি জায়গার কথা আমাদের আলোচনায় উঠে এলো। শহর থেকে দূরে একটি রাস্তা রয়েছে যখন সব জায়গায় অনেক গরম থাকে তখনও ওই রাস্তাতে বেশ ঠান্ডা থাকে। কারণ সেই রাস্তাটার দুইপাশ দিয়ে সারি সারি গাছ রয়েছে। গাছের ছায়ার কারণে রাস্তাটাতে সূর্যের আলো বলতে গেলে পরেই না। শহরের ছেলেমেয়েরা বিকালের দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে সেই রাস্তাতে ঘুরতে যায়। অবশ্য রাস্তার আসল নামটা আমরা কেউই জানিনা। শহরের ছেলেপেলেরা ওখানে ঘুরতে গিয়ে সেই রাস্তার নাম দিয়েছে এসি রোড।

আমরা যখন এই গল্প করছিলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। হঠাৎ করে আমাদের বন্ধু হারুন প্রস্তাব দিল চলো আমরা সেখান থেকে গিয়ে ঘুরে আসি। অবশ্য আমার এই সময়টাতে সেখানে যাওয়ার খুব একটা ইচ্ছা ছিল না। কারণ ওই রাস্তাটা দিনের বেলায় দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু এখন তো দিনের আলো প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই চিন্তা করছিলাম সেখানে আর এখন গিয়ে কি হবে? তবে খেয়াল করে দেখলাম সাথের বন্ধু-বান্ধব সকলের সেখানে যাওয়ার আগ্রহ রয়েছে। তাই আমরা হারুন আর ফেরদৌসের মোটরসাইকেল করে রওনা দিলাম সেই রাস্তার উদ্দেশ্যে। (চলবে)

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানফরিদপুর

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আপনাদের ঘুরাঘুরি গল্পগুলো পড়লে বেশ ভালোই লাগে।ঘুরতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া হবে না তাই কি হয়। তাইতো বন্ধুরা দুভাগে ভাগ হয়ে কেউ খিচুড়ি আবার কেউ চটপটি খেয়েছেন।প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলেও আপনারা এসি রোডে যেতে তৈরি হলেন।আশাকরি সেখানে কি হয়েছিল তা পরের পর্বে জানা যাবে।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আমি তো ভাই আপনার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলাম! একি খাওয়ার উপর খাওয়া । খিচুড়ির পর আবার চটপটি। যাই হোক পেটে সইলে পিঠে সয়। আপনাদের এই বন্ধু বান্ধবের ঘোরাফেরার গল্পগুলো পড়তে কিন্তু বেশ ভালোই লাগে। আর অনেক বন্ধু-বান্ধব মিলে অনেকটুকু রাস্তা কিন্তু একত্রে হেঁটেই পার হওয়া যায়। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

ভাই, এ তো দেখি খাওন আর খাওন। একদিকে খিচুড়ি অন্যদিকে চটপটি সাথে আবার মেরিন্ডা, আহা!! এত খাবার খেয়ে পেট মহাশয় বুঝি খুব শান্তি পেয়েছিল। আসলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গেলে, তাদের সাথে আনন্দ করতে করতে কত কিছুই না খাওয়া যায়। বন্ধুদের সাথে গল্প, আড্ডা, খাওয়া সবকিছুই যেন অন্যরকম ভালো লাগা। যাইহোক ভাই, আপনারা সব বন্ধুরা মিলে আপনাদের ফরিদপুরের এসি রোডে গিয়ে কি রকম সময় কাটালেন তা জানার অপেক্ষায় রইলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.17
JST 0.031
BTC 86273.50
ETH 3305.14
USDT 1.00
SBD 2.81