জেনারেল রাইটিং || শৈশবের স্মৃতিচারণ: কলম কুড়ানো!

in আমার বাংলা ব্লগ3 months ago (edited)

নমস্কার,

তোমরা সবাই কেমন আছো? আশা করি, সবাই অনেক অনেক ভাল আছো। আমিও বেশ ভালো আছি।

pencils-5299570_1280.jpg

ইমেজ সোর্স

আমার মনে হয়, তোমরা হয়তো প্রথমেই অবাক হয়ে যাবে আমার এই পোস্টের টাইটেল দেখে। কারণ ফুল বা ফল কুড়ানোর ব্যাপার তো আমরা সবাই শুনেছি কিন্তু কলম কুড়ানো আবার কি ব্যাপার, এই নিয়ে সবাই অনেক কনফিউশনে পড়ে যেতে পারে! হিহি.. যাইহোক, আমি বিষয়টা আস্তে আস্তে তোমাদের সামনে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করছি। প্রথমেই বলে রাখি ছোটবেলায় ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমি এই কলম কুড়োনোর কাজটি করেছি। তখন খুব ছোট ছিলাম আর এই ব্যাপারটার ভালো-মন্দ দিক বুঝতামও না তখন আমি। তবে এই ব্যাপারটা খুব মজা নিয়ে করতাম আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে।

কলম কুড়োনোর ব্যাপারটা এরকম ছিল যে, আমরা আমাদের ক্লাস রুমে যাওয়ার পূর্বে, আমাদের পূর্বে যারা ওই ক্লাস রুমে ক্লাস করতো তারা যেসব কলম ফেলে যেত, আমরা বন্ধুরা মিলে সেই সব কুড়িয়ে জমা করে রাখতাম। এই ব্যাপারটাকে আমরা কলম কুড়োনো বলতাম আর কি। এই ব্যাপারটা সম্ভব হতো আমাদের স্কুল দুটি শিফটে হওয়ার কারণে। আমাদের স্কুল তখন একটা মর্নিং শিফট আরেকটা ডে শিফট, এই হিসাবে চলতো। আমাদের থাকতো ডে শিফটে ক্লাস । যাইহোক, মর্নিং শিফটের সবাই যখন ক্লাস করে চলে যেত, তাদের অনেক কিছুই ক্লাসের মধ্যে পড়ে থাকত। তার মধ্যে বেশি পড়ে থাকতো কলম আর আমরা কয়েকজন বন্ধু ছিলাম যারা মর্নিং শিফট শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই আমাদের ক্লাস রুমের মধ্যে গিয়ে এই কলম গুলো কুড়িয়ে নিয়ে আমরা জমা করে রাখতাম।

ছোটবেলায় এই কলম কুড়ানো কাজটা আমরা ঝড়ের আম কুড়ানোর মতো মজা করে করতাম। যদিও এই ব্যাপারটাকে এখন বিচার করতে গেলে অনেক হাসি পায় এবং কি করতাম সেটা ভাবলে বেশ লজ্জাও লাগে। তবে সত্যিই ছোটবেলায় এই কাজটি করতাম আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে। সেই সময় যে ব্যাপারটা শুধু আমরাই করতাম সেরকম কোন ব্যাপার ছিল না কিন্তু। যারা মর্নিং শিফটে ক্লাস করতো তারাও কিন্তু অনেকেই এই কাজটা করতো। কারণ আমরা যখন ডে শিফটে ক্লাস করে কোন কিছু ক্লাসরুমে ফেলে আসতাম, পরের দিন গিয়ে আর পেতাম না সেগুলো কারণ পরের দিন মর্নিং শিফটে যারা ক্লাস করত তারা ওইগুলো পেয়ে নিয়ে যেত। এইভাবে আসলে একজনের জিনিস আরেকজন কুড়িয়ে নিয়ে ব্যবহার করতো। ছোট বাচ্চাদের মধ্যে এই ব্যাপার গুলো দেখা যেত তখন। অন্যের জিনিস নিয়ে যদিও খুশি হবার কোন মানে হয় না। তবে ছোট বাচ্চাদের মন, এই ব্যাপারটাতেই কেমন জানি খুশি হয়ে যেতো।

কুড়িয়ে পাওয়া সামান্য একটা পাঁচ টাকার পুরোনো কলম আমাদের আনন্দের কারণ হতে তখন । এরকম কলম কুড়িয়ে রাখতে রাখতে যখন অনেক কলম সংগ্রহ করা হয়ে যেত এবং এইগুলো বাড়িতে এনে রাখার পর যখন বাড়ির লোকজন দেখতো, তারাও অবাক হয়ে যেত। তারাও মাঝে মাঝে এটা ভাবতো যে, ছেলেকে তো এত কলম বা এত ভেরিয়েশন এর কলম কিনে দেই নি তাহলে এত কলম সে পাচ্ছে কোথা থেকে! আমাকে এরকম অনেকবার প্রশ্নও করা হতো, এত কলমের রহস্য নিয়ে। তবে আমি কোন ক্লিয়ার উত্তর দিতাম না। যদিও মাঝে মাঝে বলে দিতাম, এক বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে এসেছি, আরেকজনের কলম একটু ব্যবহার করে দেখছি, এরকম বিভিন্ন বাহানা মূলক উত্তর দিয়ে সেই ব্যাপারগুলো পার করে দিতাম। ছোটবেলায় যে এইসব মাথায় কোথা দিয়ে আসতো, সেটা ঠিক আমি জানিনা তবে এই কথা আমি তখন বলতাম।

মর্নিং শিফটের ক্লাস ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে অন্য কেউ ক্লাস রুমে প্রবেশের পূর্বে আমরা ক্লাস রুমে প্রবেশ করতাম। তারপর শুরু হতো বেঞ্চের তলার জায়গা গুলো দেখার কাজ। হিহি.. বেঞ্চের তলাতেই সব থেকে বেশি আমরা এই কলম খুঁজে পেতাম। তাছাড়া বেঞ্চের যে ডেক্স গুলো থাকতো সেগুলোর মধ্যেও কলম খুঁজে পেতাম আমরা। এছাড়া অনেক সময় এক টাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকা, দশ টাকাও পাওয়া যেত বেঞ্চের ডেক্স গুলোতে। কলম কুড়ানোর এই ব্যাপারটা কয়েক বছর করার পর যখন আস্তে আস্তে বুঝতে শিখে গেছিলাম ভালো-মন্দ সব ব্যাপারগুলো তখন আবার এই কাজগুলো করতাম না। এখন যখন বসে বসে এই ব্যাপার গুলো মনে করি, খুব হাসি পায় আমার। সামান্য একটা কলমের জন্য আমরা ছুটে ছুটে আগে ক্লাস রুমে যেতাম, যে ব্যাপারটা এখন ভাবলে বেশ অদ্ভুত রকমের একটা অনুভুতি হয়।

আমি বন্ধুদের সাথে মিলে এই কাজগুলো করতাম আর এগুলো এখনও আমার স্মৃতির পাতায় জমা হয়ে রয়েছে। যাইহোক, এখন এই কাজগুলো কেউ করে কিনা সেটা আমার জানা নেই। তাছাড়া ছোটবেলায় এরকম কোন কাজ অন্যরা কেউ করেছে কিনা তাও সত্যি আমি জানিনা। তবে আমাদের জেনারেশনে আমাদের বন্ধু-বান্ধবরা অনেকেই এই কাজ করতো।


পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
লোকেশনবারাসাত , ওয়েস্ট বেঙ্গল।
বন্ধুরা, কলম কুড়ানো নিয়ে শেয়ার করা আজকের এই ব্লগটি তোমাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট এর মাধ্যমে জানিও । সবাই ভালো থাকো, সুস্থ থাকো , সুন্দর থাকো ,হাসিখুশি থাকো , নিজের পরিবার নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো , সবার জন্য এই শুভকামনা রইল।

ধন্যবাদ সবাইকে






আমার পরিচয়

IMG_20220728_164437.jpg

আমি সুবীর বিশ্বাস( রঙিন)। কলকাতার বারাসাতে আমি বসবাস করি। আমি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিস এন্ড ফিসারিস সাবজেক্ট নিয়ে। বর্তমানে আমি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যানরত আছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে একটু শান্ত স্বভাবের । চুপচাপ থাকতেই বেশি ভালোবাসি আমি। নতুন নতুন জিনিস শিখতে আমার খুব ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা, রেসিপি করা , গল্প লেখা আমার বেশ ভালো লাগে। আমি স্টিমিটকে অনেক ভালোবাসি এবং সব সময় স্টিমিটে কাজ করতে চাই।

🌷🌷 সমাপ্ত 🌷🌷

Sort:  
 3 months ago 

ব‍্যাপার টা তো দারুণ। এইভাবে কলম কুড়ানোর কথা কাউকে শুনিনি। আপনারা ভালো লাগা থেকে কাজটা করতেন। সত্যি বলতে ছোটবেলা আমরা এমন অনেক কাজই করতাম যেগুলো এখন মনে পড়লে মনে হয় ইস কত বোকামিই না করেছি হা হা। তবে আমার কয়েকজন ফ্রেন্ড ছিল তারা কৌশলে কলম ধার নিত কিন্তু লিখে আর পরে ফেরত দিত না হা হা।

 3 months ago 

তবে আমার কয়েকজন ফ্রেন্ড ছিল তারা কৌশলে কলম ধার নিত কিন্তু লিখে আর পরে ফেরত দিত না

এই কাজ তো আমরাও অনেক করেছি ভাই। হিহি..😂😂😂

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

ছোটবেলায় এমন অনেক ঘটনা আছে যেগুলো মনে পড়লে এখনো হাসি পায় আবার কিছুটা লজ্জাও পায়। কিন্তু ওই সময় কি আর বাচ্চাদের মন অত কিছু বুঝতো। এজন্যই তো আপনারা কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলো পেয়ে খুব মজা পেতেন। তাছাড়া নতুন ডিজাইনের কলম পেলে খুশি হওয়ারই তো কথা। ভালো লাগলো আপনার ছোটবেলার কাহিনী পড়ে।

 3 months ago 

আমার ছোটবেলার এই কাহিনীটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে, জেনে খুব খুশি হলাম আপু।

 3 months ago 

অনেক সুন্দর স্মৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আমিও আজকে এই নিয়ে লেখালেখি করছিলাম। হয়তো কিছুক্ষণ পর আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। তার আগে আপনার ব্লগ দেখে বেশ ভালো লেগেছে আমার। যাইহোক আমারও কিন্তু একই স্মৃতি রয়েছে। আশা করি আমার ব্লগটা পড়লে বুঝতে পারবেন

 3 months ago 

আমিও আজকে এই নিয়ে লেখালেখি করছিলাম।

বলেন কি ভাই, তাহলে তো বেশ দারুন ব্যাপার! যাইহোক, সময় পেয়ে আপনার ঐ পোস্টটাও পড়ে নেব ভাই।

 3 months ago 

হি হি হি। আপনার কথা শুনে বেশ হাসলাম দাদা। কলম কুড়াঁনোর অভ্যাস। তার সাথে তো আবার টাকা পয়ঁসাও পেতেন। ভালোই তো ছিল বন্ধ করার কি দরকার ছিল। কে বলবে আজ হয়তো কোটি পতি হয়েও যেতে পারতেন। দারুন ছিল আজকের পোস্ট দাদা।

 3 months ago 

ভালোই তো ছিল বন্ধ করার কি দরকার ছিল। কে বলবে আজ হয়তো কোটি পতি হয়েও যেতে পারতেন।

তাহলে কি এখন আবার কলম কুড়ানোর অভ্যাস শুরু করবো নাকি আপু, কোটিপতি হওয়ার জন্য? হেহেহে... 🤭🤭😂😂

 3 months ago 

ছোটবেলার এরকম মজার মজার কিছু স্মৃতি রয়েছে যেগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো অনেক বেশি হাসি পায়। যদিও এরকম ভাবে কলম কুড়ানোর অভ্যাসটা আমার ছিল না, তবে আমার অভ্যাস ছিল কলম জমানোর। যে কলমগুলো ব্যবহার করতাম সেগুলোর কালি ফুরিয়ে গেলে আমি এক জায়গায় রেখে দিতাম এরকম ভাবে অনেক কলম আমি জমিয়ে ছিলাম। আর সেগুলো দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করতাম ছোটবেলায়। আবার আমার ফ্রেন্ডদেরকে বলতাম তাদের কলাম ফুরিয়ে গেলে যেন আমাকে দিয়ে দেয়। আচ্ছা আপনারা তো এত কলম খুঁজতেন এটা ঠিক আছে, কিন্তু এগুলো দিয়ে কি করতেন??

 3 months ago 

আপু, কুড়িয়ে জমানো কলমগুলো লেখালেখির কাজেই ব্যবহার করতাম। এক্ষেত্রে একটা সুবিধা হতো যে, বাড়িতে আর কলম কিনে দেওয়ার কথা বলতে হতো না। হিহি..🤭🤭

 3 months ago 

হা হা হা 🤣🤣। ভাই আমি তো ভাবতেছি আপনি এত কলম কুড়িয়ে কি করেছিলেন। বন্ধুদের সাথে দেখছি ক্লাস শুরু হওয়ার আগে, কেউ আসার আগেই কলম কুড়ানো শুরু করে দিতেন। আসলে ছোটবেলায় এক একজনের অভ্যাস এক এক রকমের থাকতো। আর তেমনই আপনার অভ্যাস ছিল ক্লাস থেকে কলম কুড়ানোর। কলম কুড়ানোর সময় আবার আপনারা টাকাও পেতেন, বিষয়টা কিন্তু ইন্টারেস্টিং ছিল। ভাবছি কলম কুড়ানোর পাশাপাশি টাকা কুড়িয়ে কত টাকা ইনকাম করেছিলেন। হি হি হি। যাইহোক অনেক সুন্দর একটা মধুর স্মৃতি শেয়ার করেছেন খুব ভালো লাগলো পড়ে।

 3 months ago 

ভাই, মাসে পাঁচ থেকে দশ টাকার মত ইনকাম হয়ে যেত কলম কুড়ানোর পাশাপাশি টাকা কুড়িয়ে। হেহেহে..😂😂😂।

 3 months ago 

কলম কুড়োয়নি তবে কলম দিয়ে খেলেছি বেঞ্চের উপরে। ম্যাডামের টেবলে চারজন বন্ধু মিলে কলম দিয়ে টুকাটুকি খেলা শুরু করে দিতাম। ১০০ হলেই গেইম! যাইহোক, শৈশবের সময়টা দাদা আসলেই অন্যরকম ছিল। কতো মজা হতো তখন।

 3 months ago 

বেঞ্চের উপরে অথবা স্যার ম্যাডামদের টেবিলের উপরে কলম খেলার কাজ আমরাও অনেক করেছি ভাই।

 3 months ago 

সত্যি প্রথমে কলম কুড়ানোর কথাটা শুনে অবাক হয়ে গেছি। পুরা পোস্ট পড়ার পর আসলে ঘটনা বুঝতে পেলাম।আপনার কলম কুড়ানোর কথা গুলো পড়ে আমার নিজের কিছু কথা মনে পড়ে গেলো তা হলো রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা কিংবা যাওয়ার পথে যদি কখনো কলম হাত থেকে পড়ে যেত আমি আর তা কখনোই তুলে নিতাম না।খুব লজ্জা অনুভব করতাম হাত থেকে পড়ে যাওয়ার কলম কুড়িয়ে নিতে।এই কথা গুলো এখন মনে পড়লে ভীষন হাসি পায়।ধন্যবাদ ভাইয়া মজার কাজ কলম কুড়ানোর স্মৃতিচারণ করে পোস্ট টি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 3 months ago 

ছোটবেলায় আমরা এমন অনেক কিছুই করেছি, যেগুলো এখন মনে করলে আমাদের সবারই হাসি পায় দিদি। যাইহোক, আপনার এই মন্তব্য টি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65762.16
ETH 3485.95
USDT 1.00
SBD 2.50