এক অসহায় মায়ের করুন কাহিনী [10% beneficiary to @shy-fox]
আসসালামু আলাইকুম,
সবাই কেমন আছেন?আশা করি আল্লাহর মেহেরবানীতে সবাই ভালো আছেন।
আজকে আমি ডাইং পোস্ট অথবা রেসিপি পোষ্ট নিয়ে আসেনি।আজকে আপনাদের মাঝে একটি বাস্তব গল্প শেয়ার করতে এসেছি।
প্রতিটা সন্তানের একমাত্র আশ্রয়স্থল হচ্ছে তার মায়ের কোল মায়ের আশ্রয়।তেমনি প্রতিটা মা-বাবার শেষ সময়ে আশ্রয়স্থান হচ্ছে তার নিজের সন্তান। যখন বুড়ো হয়ে যাই মা বাবা তখন কিন্তু সেই ছোটবেলায় আমরা যেমন ছিলাম সেরকম হয়ে যায়।মা-বাবারা তখন চাই সন্তানের ভালোবাসা পেতে কিন্তু অনেক মা-বাবা সে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। এছাড়াও যখন একটা মা সন্তানদেরকে বাবা ছাড়া লালন-পালন করে সে মায়ের প্রচন্ড রকমের কষ্ট হয় কারণ পিতা হচ্ছে বটবৃক্ষের মতো। একটা মা তার সন্তানকে বড় করে তোলাটা অনেক কষ্ট বাবা ছাড়া আর সেই জন্য অনেক লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হয়তে হয়। আর এত লাঞ্ছনা-বঞ্চনা এবং কষ্ট সহ্য করে সন্তান বড় করে একটা মা অথবা বাবা কি পায় তার সন্তানদের থেকে?
সাহারা খাতুন আমার আপন খালা শাশুড়ি,এই বাড়িতে যখন বউ হয়ে এসেছি তখন থেকেই ওনার কথা আমার শাশুড়ির থেকে শুনে এসেছি। তিনি জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন অল্প বয়সে তার স্বামীর মৃত্যু হয়, তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে স্বামী ছাড়া জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য অনেক রকমের পরিশ্রম করেছেন। জীবনে বেঁচে থাকার যুদ্ধে টিকে থাকার জন্য কখনও এই ঘরে কখনো বা ওই ঘরে কাজ করেছেন। ধান তোলার সময় আসলে মানুষের বাড়িতে গিয়ে ধান তোলে খাবার জোগাড় করতেন,এভাবে করে তিন ছেলে মেয়েকে মানুষ করেছেন। খালামণির ছেলে মেয়ে হচ্ছে এক ছেলে দুই মেয়ে, মেয়েদুটোকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে যখন বড় হয়েছে তখন বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে একটু সুখের আশায়।
সত্যি কথা বলতে কি যার কপালে সুখ নেই সে যদি হাজারো চেষ্টা করে সুখ কোনভাবেই কিনে আনতে পারবে না। সেই ভাগ্যটা হয়েছিল খালার কপালে। বিদেশে গিয়ে ছেলে ভালো টাকা ইনকাম করছিলো। টাকা দিয়ে মাকে অনেক ভালোই রেখেছিল কিন্তু এই সুখ আর ভালো থাকা মনে হয় উপরওয়ালা সহ্য করেনি।ছেলে যখন দেশে আসে ছেলেকে বিয়ে করায় বিয়ে করানো পর ছেলের বউ নিয়ে মোটামুটি আনন্দেই ছিল কিছু বছর।তাপর শুরু হয় ঝামেলা মাকে বাড়িতে রাখতে রাজি না (বৌ) মানে ভাবী। খাবার দাবারের অনেক কষ্ট দেয় প্রায় সময়ই।প্রতিনিয়ত খালাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছিল এক সময় বাধ্য হয়ে খালা মেয়ের বাড়িতে চলে যায়।
মেয়েদের বাড়িতে কয়েক বছর থাকে তারপর নিজের বাড়িতে ফিরে আসে। আবার শুরু হয় ঐ অত্যাচার এক সময় স্ট্রোক করে খালা।স্ট্রোক করার পরও ছেলে এবং ছেলের বউয়ের মন গলেনি।খালার নাতিরা এবং মেয়েরা খালার চিকিৎসা করে খালা আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে ওঠে, আবার নিজের বাড়িতে ফিরে আসে।আপনারা হয়তো জানেন ব্রেনে স্ট্রোক বা হার্ট স্ট্রোক করলে ওই রোগীদের বেঁচে থাকবে যতদিন ততদিন ওষুধ খেতে হবে। খালা তার সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল খালার চিকিৎসার খরচ টা পর্যন্ত দেয় নি।শেষে মানুষ খারাপ বলবে বিদায় তিন মাস ওষুধের টাকা দিয়েছে তারপর টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।খালার ছেলের বাড়িঘর দেখলে কেউ বলবে না তার মা এতটা কষ্টে রয়েছে।এলাকার গণ্যমান্য মানুষ মিলে খালাকে বয়স্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এই বয়স্ক ভাতা দিয়ে খালা কোনরকমে ঔষধ কিনে খেত ২৫ দিনের আর ৫০০ টাকার জন্য পুরো মাসের ওষুধ কিনে খেতে পারত না।
খালা এক সময় আমার কাছে আসেন আর আমি জানি খালা যে কতটা কষ্টে আছেন। খালা আমাকে বলে 500 টাকার জন্য আমি পুরো মাসের ওষুধ খেতে পারি না, আর ওষুধ না খেতে পারলে আমার বুকের ব্যথা শুরু হয়ে যায়। খালার কান্নাকাটি দেখে আমি নিজেও কান্না করেছি সত্যিই খুব কষ্ট লেগেছিল।আমি খালার কথা শুনে বললাম চিন্তা করবেনা আমি দিব। আমার বাংলা ব্লগ থেকে কাজ করে যে টাকা পেতাম ঐ টাকা থেকে খালাকে ৫০০/১০০টাকা করে দিতাম।যখন আমি অনেকদিন যাবত আমার বাংলা ব্লগের কাজ করছি না তখন আমার খালাকে টাকা দেওয়া খুব কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এদিকে আমার হাজবেন্ডের চাকরি নাই তারপরও চেষ্টা করছি একজন অসহায় মাকে সাহায্য করার জন্য।
আজকে পোস্টটা লেখার আগে খালাকে দেখার জন্য খালার বাড়িতে গিয়েছি,এত সুন্দর ঘর এত সুন্দর বিল্ডিং করে রেখেছে সন্তান আর যে তার সন্তানদের জন্য এত পরিশ্রম এত কষ্ট করেছে সে মায়ের জায়গাটা কিন্তু হয়েছে একটা ছোট ভাঙ্গাচুরা ঘরে। খালার ঘর দেখে চোখ দিয়ে জল এসে গিয়েছে নিজের অজান্তে বয়সের ভারে কথা বলতে পারছিল না খালা।
আমি চাই প্রত্যেকটা সন্তান তার বাবা-মাকে নিজের সন্তানের মত করে যনো ভালোবাসে। খালার মত যেন কোন মা অথবা বাবা সন্তানের লাঞ্চনার বঞ্চনার শিকার না হতে হয়।ঔষধ এবং খাবারের জন্য যেনো কারো কাছে হাত পাততে না হয়। বাবা মা অনেক মূল্যবান সম্পদ যার হারিয়ে গিয়েছে সেই জানে বাবা-মা কি জিনিস ছিল।
ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
কত যত্নে আদর-স্নেহে
লালন পালন করে,,
অযত্নে-অবহেলায়
বাবা-মায়েরা মরে।
সুশিক্ষার বড়ই অভাব
দেখছে চারিদিক,
কুলাঙ্গার সন্তানদের
মন থেকে ধিক্।
বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের
কপাল খারাপ কেন?
মায়ের বয়সী খালা টাই
সাক্ষী হল যেন।
♥♥
আপু,তোমার কবিতাটা পড়ে আমার খুব কান্না আসছে। আপু,আমরাও মা আমাদের কপালে কি আছে সেটা জানি না। ধন্যবাদ আপু 🙏❤🙏❤
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ঠিক বলেছেন ভাইয়া, যে যেরকম করবে তার ফল দুনিয়াতে কিছুটা ভোগ করে যেতে হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া 🙏
আপনি ঠিক বলেছেন সত্যি কথা বলতে কি যার কপালে সুখ নেই সে যদি হাজারো চেষ্টা করে সুখ কোনভাবেই কিনে আনতে পারবেনা।সত্যি আপু পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্হান হচ্ছে মা বাবা। আর আপনার খালা শাশুড়ির যেতেতু অনেক আগেই স্বামী ছিল না, তাহলে সে তার তিন ছেলেমেয়ের জন্য কতোই না কষ্ট করেছে। এখন ছেলেরা অনেক ভালো তবে তার মাকে দেখে না, এ ধরনের যন্ত্রনা অনেক কষ্টকর। আপনার খালা শাশুড়ির জীবনের গল্প পড়ে অনেক খারাপ লাগল। তবে তার ছেলের ও তো সন্তান আছে এর প্রতিফল সে পাবে।ধন্যবাদ
জ্বি আপু, তার সন্তান আছে তিনিও এই কষ্টটা এক সময় ভোগবে সেই অপেক্ষায় আমরা আছি কারণ তিনি অনেক বয়সে বড় তাকে কোন কিছু বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ধন্যবাদ আপু
এই ঘটনাগুলো পড়লে নিজের কাছে খারাপ লাগে। সাথে সাথে খারাপ লাগে ঐসব ছেলে মেয়ের জন্য যারা আল্লাহর দেওয়া সবচাইতে বড় নিয়ামত বাবা মা কে অবহেলা করে। এগুলো এখন একেবারেই বাস্তব ঘটনা।।
ভাইয়া,ঐ সন্তানরা যদি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত জিনিসটা বুঝতে পারতো তাহলে মা অথবা বাবাকে কষ্ট দিতে পারত না। ধন্যবাদ ভাইয়া 🙏
আসলে বুঝি না কেন এ বর্তমান সমাজ ৷ এখন প্রায় প্রতি পরিবারে এসব দৃশ্য চোখে পড়ে ৷ ছেলেকে বিয়ে দিলে ছেলে আলাদা হয়ে যাচ্ছে৷ আসলে এটাই কী ছেলে হিসেবে দায়িত্ব ৷ বুঝি না কেন এসব হচ্ছে ৷ যে মা ১০মাস ১০ দিন গর্ভে ধারন করে এতো সুন্দর একটি পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসলো ৷ শুধু কি তাই কতো কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে নিজে না খেয়ে রাত দিন করে বড় করে ৷ কিন্তু দিনশেষে সেই ছেলে মাকে ভুলে গেলো ৷
আরে ভাই মা যে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ সেটা কি জানো ৷ মা সমস্ত সর্গ আর সেই মাকে ভুলে একজন স্ত্রীকে পেয়ে ভুলে গেলা ৷
এবার আসি সেই স্ত্রী ৷
এই মেয়ে তুমি একজন নারী হয়ে আরেক নারীর কষ্ট বুঝো না ৷ তুমি কেমন নারী ৷ তুমিও তো সেই প্রসবের যন্ত্রণা জানো ৷ তুমি ও তো একদিন ওই পথে যাবে ৷ তোমাকেও ওই বৃদ্ধ বয়সে যেতে হবে ৷ সেদিন যদি তোমার ছেলে ঠিকি একি কাজ করে ৷
যা হোক আসলে এই বিষয়ে বলে শেষ করা যাবে না ৷ বর্তমান সময়ে প্রায় এসব বাড়ির আশে পাশে ঘটছে ৷
জানি না কেন এমন হচ্ছে ৷ তবে একটু নিজের বিবেক জাগ্রত করলে হয়তো এসব হবে না ৷
ভাইয়া, দশ মাস দশ দিন যে মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে রেখেছিল সেই মাকে ঘরে রাখতে চাই না এর থেকে আর কি কষ্টের আছে। ঠিক বলেছেন ভাইয়া,এখন ঘরে ঘরে এমন ঘটনা ঘটছে। ধন্যবাদ ভাইয়া🙏🥰
প্রথম ছবিটি চেঞ্জ করুন।
ভাইয়া,ছবিটা পরিবর্তন করেছি
ধন্যবাদ ভাইয়া🙏🙏
পৃথিবীতে কত কোটি মানুষ কিন্তু সত্যি বলতে মানুষ খুঁজে পাওয়া একটু কঠিন। এই মায়ের কথাগুলো শুনে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম। যে সন্তানদের তিনি মানুষ করেছেন এতটা কষ্ট করে সেই সন্তানরা তাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে, সত্যিই মেনে নেয়া কষ্টকর। এই সন্তানদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। উপরে একজন আছেন তিনি সবকিছু দেখেন। আর আপনি আপনার ইনকামের থেকে উনাকে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করছেন সত্যিই এটা একটা অসম্ভব ভালো কাজ। এই কাজের দোয়ার বরকত ইনশাআল্লাহ পাবেন।
জি ভাইয়া,খালামণিকে আমি এটাই বলি উপরে একজন আছেন তিনি সব দেখছেন।ওনারও একটা ছেলে আছে যখন বৃদ্ধ হবে আপনার মতই এভাবে কষ্ট দিবে ধৈর্য ধরে থাকার জন্য বলেছি।ধন্যবাদ ভাইয়া 🙏🙏