সূর্যের ছুঁড়ে দেওয়া সকাল-২ সকাল সকাল দেখলাম পাখির পাঠশালা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,
কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় বেশ ভালোই আছেন৷ আমিও ভালো আছি৷ আজকের ব্লগটা সকালেই লিখব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু হল না৷ নানান কাজে এতো ব্যস্ততা ছিল যে একটু ধৈর্য্য নিয়ে বসাই হল না৷ যাইহোক বেটার লেট দ্যান নেভার - এই মতে বিশ্বাস করি বলে রাতেই নিয়ে চলে এলাম সকালের কথাগুলো।
রোজই সকালে যেমন ব্যস্ততা সেরে একটু হাঁটতে বেরিয়ে পড়ি আজও তেমনিই গিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি দারুণ ঘটনার সাক্ষী হলাম৷ সেইটাই আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব৷
আমি যেই সময়টা নামি তখনও কিছু কিছু গাড়ি সোসাইটি থেকে বেরোয় যে যার কাজের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে৷ আমাকে তাই একটু ধার দিয়েই হাঁটতে হয়৷ যেহেতু কানে হেডফোন দেওয়া থাকে তাই মাঝ বরাবর যাবার তো কোন কারণই নেই৷ আসলে আমি আমাদের সোসাইটির ভেতরেই বিশাল বাউন্ডারিতে হাঁটি। অনেক গাছ আছে, ছোট্ট একটা অ্যাম্ফিথিয়েটার আছে৷ বাচ্চাদের খেলার গ্রাউন্ড আছে, এছাড়াও ক্লাব হাউস, মন্দির, আর পুরোটা ঘিরে রয়েছে সারি সারি গাছ৷ রাস্তায় তো আর বেলা করে হাঁটা যায় না৷ তাই ভেতরেই৷ তো এখানেই একবার ঘুরে দ্বিতীয়বার ঘুরছি এমন সময় রাস্তায় দেখলাম বাদামী রঙের কি একটা যেন নড়ছে৷ কাছে গিয়ে দেখলাম এটি একটি পাখি। যার ঘাড়ের কাছে কোন পালক গজায়নি৷
এত ছোট্ট পাখি দিয়ে উঠতে পারে না হাঁটতে পারে না, কোন কারনে হয়তো তার বাসা ভেঙে গেছে তাই রাস্তার উপর পড়ে আছে৷ কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে তো অনেক যাচ্ছে তাই ভাবলাম যদি কেউ চাপা দিয়ে চলে যায় তবে তো মরেই যাবে। এইসব সাত পাকে পাখিটিকে হাতে করে তুলে সামনেই একটা ঘাস গজানো ছোট্ট গ্রাউন্ড যেখানে বিকেলে বাচ্চারা ফুটবল খেলা শিখতে আসে তারপর রেখে দিলাম। ভাবলাম এখানে তো সেফ থাকবে তাছাড়া গাছের পাতা পাবে, আর এ সবের মধ্যেই যদি ওর মা এসে যায় তাহলে বাচ্চাটা প্রাণে বেঁচে যাবে। এরপর আর ওই দিকে তাকাইনি আবার হাটতে শুরু করলাম ।
প্রায় ১০-১৫ মিনিট পর মনে হল পাখিটার একটা ছবি তুলি। বা দেখি ও কি করছে। ওই গ্রাউন্ডে গেলাম। শুরুতেই ওকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না তারপর যখন দেখতে পেলাম তখন ধরতে চাইলাম কারণ একটু আগেই ও আমার হাতের উপর উঠে এই খেলার মাঠে এসেছে। ওমা সে পাখির যত কাছে যায় সে তো দৌড়ে দৌড়ে পালায়। এদিকে আমি তো কোন ভাবেই বুঝতে পারছি না ও হাঁটতে শিখলো কিভাবে একটু আগেই তো পা ফেলতে পারছিল না । বিষয়টা একটু সন্দেহজনক লাগলো আমি একটুখান দাঁড়ালাম দেখলাম দুটি অন্য পাখি ওর কাছে একবার আসছে ঠোঁটের কাছে কিছু বলতে চাইছে আবার খানিক হেঁটে উড়েও যাচ্ছে৷ এটা ঠিক কি হচ্ছে কোনভাবেই বুঝতে পারছি না। মিনিট দশের পর দেখলাম ওই বাচ্চা পাখিটি আস্তে আস্তে করে টানা ঝাপটাতে চাইছে। আমিও সেই সুযোগ বুঝে একটু ছবি তোলার চেষ্টা করলাম কিন্তু দেখলাম পাখিটি আমাকে দেখে আগে দৌড়োচ্ছিল আর এখন যাচ্ছি ও ততই এদিক ওদিক করছে। এসবের মাঝে কিছু ছবি তুললাম আর লক্ষ্য করলাম অন্য পাখিটি বারবার আসছে আর উড়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ করে মাথায় এলো ওই অন্য পাখিটি এই বাচ্চা পাখিটাকে ওড়া শেখাতে চাইছে। সামান্য পরেই আমি এই ওড়ার ব্যাপারটা একেবারেই বিশ্বাস করে নিয়েছিলা। কারণ চোখের সামনে তখন এটাই ঘটছে।
বেশ কিছু সময় পর ছোট্ট পাখিটা উড়তে শিখে গেল এবং উড়েই চলে গেল। কি অপূর্ব এবং অদ্ভুত লাগল আপনাদের বোঝাতে পারব না সে কথা৷ বাচ্চা পাখিটার নিজের মা নেই৷ অন্য এক পাখি সে ওড়া, হাঁটা সবই শিখিয়ে দিল৷ এ যেন গুরুদেবের পাঠশালা। সত্যিই তো বড় হতে যে মাকেই লাগবে এমনটা সত্য নয়৷ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা লাভের জন্য যে কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তিই যথেষ্ট । অথচ মানুষের সমাজে এসব হয় না৷ শিক্ষকের পড়ানো কত ভাল কিংবা কত খারাপ তার বিচার কেউ করে না৷ বলা ভালো এখন পাঠদান প্রাইভেট চাকরি করানোর মতো। ফেল কড়ি মাখো তেল।
ঠিক বলছি তো? মানুষ ভুলে গেছে মানুষের পাশে থাকতে অথচ এই অপ্রিয় দুর্গম দুর্বার পৃথিবীর মাঝে যে যার নিজের জায়গা তৈরি করতে ব্যস্ত। আজকাল কারো হাতে কোন সময় থাকে না অথচ সে কিন্তু পৃথিবীর সব থেকে উন্নত প্রজাতির অন্তর্গত। কী ভীষণ আশ্চর্য লাগে এসব ভাবলে। দিন যত যাচ্ছে মানুষের মানসিকতা কি আদৌ উন্নত হচ্ছে নাকি তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে? বড় ভাবি এসব।
এক একটা সকালে অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যা আমার মনুষ্যজন্ম থাকার কারণেই বুঝতে পারি। এবং ভাবতেও পারি। সেই নানান ঘটনার মধ্যে এই পাখিটির উড়ে যাওয়াও যেন সূর্যের ছুঁড়ে দেওয়া সকাল।
বন্ধুরা কেমন লাগলো আজকের ব্লগ অবশ্যই জানাবেন। সকালের ঘটনা দিয়েই সেজে উঠে আবার আসব আগামীকাল অন্য কিছু নিয়ে৷ আজ
টাটা
পোস্টের ধরণ | ক্রিয়েটিভ রাইটিং |
---|---|
ছবিওয়ালা | নীলম সামন্ত |
মাধ্যম | স্যামসাং এফ৫৪ |
লোকেশন | পুণে,মহারাষ্ট্র |
ব্যবহৃত অ্যাপ | ক্যানভা, অনুলিপি, ইনশট |
৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিসিয়ারি লাজুক খ্যাঁককে
আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশ ও ইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
দারুন একটি পোস্ট। কোয়ালিটি রাইটিং। এই প্রসঙ্গে আমারও একটি শিক্ষণের ঘটনা মনে পড়ে গেল। তখন আমি সাইকেল চালানো শিখছি নিজে নিজেই। বাবার হাতে সে সময় ছিল না যে আমাকে শিখিয়ে দেবে। একদিন রাস্তায় টেনে টেনে চালাবার চেষ্টা করছি, পাড়ার এক কাকু আমাকে বললেন - একা পারবি না বাবা, চল আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। সেই বলে তিনি প্রায় এক সপ্তাহ আমার সাথে থেকে আমায় সাইকেল চালানোর দক্ষ করে দিলেন। ঠিক এই পাখিটির মতোই যেন শিখেছিলাম সেইদিন সাইকেল চালানো। আজও কাকুর সেই ভূমিকা ভুলতে পারিনি।
পাখিরা জানে আমরা সকলেই নিজেদের তরে এবং প্রত্যেকের তরে । মানুষ ভুলে গেছে আবার কলকাতাকে দেখলে, এখন মনে হয় মানুষ সবই মনে রেখেছে। এ যেন বাঙালির হাইবারনেশন মোড ছিল