সাজেক ভ্যালি বাইক ট্যুর - দ্বিতীয় পর্ব
আ মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী ব্লগার ভাই এবং বোনদের আমার সালাম এবং আদাপ। সবাই কেমন আছেন? আশা করি সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার রহমতে অনেক ভাল আছি।
![]() |
---|
সাজেক ভ্যালি বাইক ট্যুর - প্রথম পর্ব
অতঃপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা হোটেল নুরজাহান থেকে বেরিয়ে পড়ি। তখন রাত অনেকটা হয়ে এসেছিল তাই রাস্তা দিয়ে যেতে একটু একটু ভয় করছিল আমার যদিও রাস্তায় অনেক গাড়ি-ঘোড়া ছিল। রাস্তা ফোর লেন হওয়ায় বাইক ড্রাইভ করতে অনেক সুবিধা হলেও ডাকাতির ভয় থেকেই যায়। আমি অনেক আগে শুনেছিলাম ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে নাকি অনেক ডাকাতি হতো, তবে এখন ডাকাতি অনেকটা কমে এসেছে তবুও কেন জানিনা আমার ভয় করছিল।
কুমিল্লা ছেড়ে আরও অনেকটা দূর যাওয়ার পর আমার কেন জানি না ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। এভাবে একটানা অনেকক্ষণ ভ্রমণ করলে ক্লান্তি এমনিতেই চলে আসে তাই হয়তো কিছুটা ঘুম চোখের কোনায় উঁকি দিচ্ছিল। চোখ টেনে টেনে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম না ঘুমানো যাবে না ঘুমালেই ব্যস্ত রাস্তায় পড়ে যেতে পারি। এই চিন্তা করি বারবার চোখ টেনে ধরেছিলাম। তারপর আরো অনেকটা পথ পাড়ি দেয়ার পর আমরা ফেনী শহরে ঢুকে পরি। ফেনী শহরটা মোটামুটি উন্নত মনে হয়েছে আমার কাছে। রাস্তার ধারেই একটা বড়সড় হোটেল চোখে পড়ে গেল তাই আমি আর মামা চিন্তা করলাম এখানে থেমে কিছু খেয়ে একটু চায়ে চুমুক দিতে হবে। না হলে চোখ থেকে ঘুমটা যেন যাচ্ছেই না।
তারপর আমরা রাস্তার ধারের একটি চা এর দোকান দেখে দাঁড়াই, এখানে আমরা দুটো লাল চা অর্ডার করেছিলাম। মসলা চা এর উপর সুন্দর চাল ভাজা ছিটিয়ে আমাদের পরিবেশন করেছিল। লাল চায়ের সাথে উপরে কিছু চাল ভাজা খেতে সত্যি দারুন লাগছিল। চা খেয়ে আমরা সেখানে কিছুক্ষণ বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখনই ঘুমটা যেন কোথায় পালিয়ে গেল আর আমরাও আবারো যাত্রা শুরু করলাম।
তারপর চলতে চলতে আমরা এমন একটা জায়গায় চলে আসলাম যেদিক থেকে আমাদের বামে ঘুরে পাহাড়ি রাস্তায় যেতে হবে। সোজা গেলে চট্টগ্রাম শহর আর বামে গেলে খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি সাজেক। আমরা সেই মোড়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম ভোরের আলো হওয়ার জন্য। কারণ শুনেছিলাম সেই রাস্তায় নাকি ডাকাতির ভয় রয়েছে। তখনই আরও তিনটি বাইক এসে সেখানে দাঁড়ালো এবং তারাও নাকি সাজেক যাবে। তো তারা বেশিক্ষণ দেরি না করে সেই রাস্তা ধরেই রওনা দিল আমরা চিন্তা করলাম তাদের পিছন পিছনই যাই।
![]() |
---|
এবার শুরু হলো আমাদের পাহাড়ি পথের যাত্রা। কিছুদূর যেতেই বুঝতে পারছিলাম আমরা পাহাড়ি অঞ্চলে ঢুকে পড়েছি। সেই বাইকগুলোর সাথেই আমরা যাচ্ছিলাম। তাদের সাথে এখনো পরিচয় হয়নি তবুও সাহস নিয়ে তাদের সাথেই যাত্রা শুরু করি। দু'পাশে জঙ্গল আর পাহাড় সেই রাস্তায় শুধু আমরা ছিলাম মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি যাচ্ছিল কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই সে রাস্তায় আমরাই ছিলাম। বেশ ভালই লাগছিল রাস্তাগুলো।
![]() |
---|
চলতে চলতে পাহাড়ি রাস্তা ধরে আমরা অনেকটা পথ অতিক্রম করার পর সূর্য মামার দেখা মিলল। তারপর আমরা আরো অনেকটা সামনে এগোতেই থাকলাম সেই বাইকার ভাইদের সাথেই। আরো কিছুদূর যাওয়ার পর সেই ভাই গুলো তাদের বাইক থামিয়ে রাস্তার ধারে নেমে পড়ল, তাদের ব্রেক কষা দেখে আমরাও বাইক থামিয়ে দেই। তারপর তাদের সাথে কথা বলে একটু পরিচিত হয়ে নেই তারা আমাদের বলে চলেন একসাথেই যাওয়া যাক সাজেকে গিয়ে মজা হবে আড্ডা হবে।
![]() |
---|
আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে আরো অনেকটা পথ আমরা এগিয়ে গেলাম তখন দিনের আলো বেশ ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে। তখন আমরা সেই বাইকার ভাইদের বিদায় দিয়ে রাস্তার ধারে এক বুড়ো চাচার দোকানে চা খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে পরি। সেখানে চা বিস্কুট খেয়ে মোটামুটি ফ্রেশ হয়ে আবার আমরা যাত্রা শুরু করি, এখনো আমাদের অনেকটা পথ অতিক্রম করে সাজেক অব্দি যেতে হবে।
![]() |
---|
তারপর অনেকটা দূর যাওয়ার পরে আমরা এক জায়গায় একটু দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন একটা লোকের সাথে হালকা গল্প করে জানতে পারলাম সামনে একটা ব্রিজ হচ্ছে, সেই ব্রিজটি নাকি বাংলাদেশ ভারতের যৌথ ভাবে তৈরি করা। আর সেই জায়গাটি ও নাকি অনেক সুন্দর তাই আমি আর মামা চিন্তা করলাম জায়গাটা দেখেই যাই। তারপর সেই জায়গায় আমরা চলে যাই ব্রিজটি দেখলাম এবং সেখানে দুজন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও ছিল তাদের সাথেও এই ব্রিজটি নিয়ে হালকা-পাতলা গল্প করে ব্রিজটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।
![]() |
---|
সেই ব্রিজটির আশেপাশের পরিবেশ সত্যি অনেক ভালোলাগার মতো ছিল। রাস্তা টিও ছিল অনেক প্রশস্ত আর ভেজাল মুক্ত। আর সেখানের চার পাশের পরিবেশও ছিলো সবুজ শ্যামলে ভরা। সত্যিই আমার কাছে জায়গাটি এক কথায় দারুন লেগেছিল।
![]() |
---|
পাহাড়ের রাস্তাগুলো কেমন একটু বেশি আঁকাবাঁকা। বাইক খুব একটা জোরে চালানো যাচ্ছিল না ধীরে ধীরেই সেই রাস্তাগুলো আমরা পার হচ্ছিলাম। এই ধরনের পাহাড়ি রাস্তাগুলোতে সতর্কতা মেনে চলা অধিক জরুরী কারণ সতর্কতা না মানলে রাস্তা থেকে অনেকটা নিচে পড়ে যেতে হতে পারে। তাই আমরা মোটামুটি আস্তে আস্তেই দেখে শুনে সর্তকতা মেনে রাস্তাগুলো পা দিচ্ছিলাম।
![]() |
---|
আমরা প্রায় খাগড়াছড়ি শহরের কাছাকাছি চলে এসেছিলাম আর মাত্র ৩৬ কিলোমিটার দূরে খাগড়াছড়ি শহর। খাগড়াছড়ি শহর পেরিয়ে আমাদের যেতে হবে দিঘীনালা নামের একটি জায়গায় যেখান থেকে আমাদের আর্মির বহর সাজেক ভ্যালি অব্দি নিয়ে যাবে। আর্মির বহর কেন টুরিস্টদের গার্ড দিয়ে সাজেক ভ্যালি অব্দি দিয়ে যায় তা আপনাদের এর পরের পর্বে অবশ্যই জানাবো।
আজ তাহলে এ পর্যন্তই আপনার সাথে আবারও দেখা হবে আমার বাইক ট্যুরে তৃতীয় পর্বের পোস্ট নিয়ে। সে অবদি সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন শুভকামনা রইল সকলের জন্য।
YouTube |
---|
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
https://twitter.com/mahir4221/status/1574866879948025856?t=Wcv99wqYOXWDepM76J_JXw&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্ন্দর্যতম স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সাজেক ভ্যালি। আপনার পুরো পোস্টটি দেখে সত্যি খুব ভালো লাগলো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করেছেন। নিশ্চয় সাজেক ভ্যালি বাইক ট্যুর অনেক আনন্দের হয়েছে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম। শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সাজেক যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে কুমিল্লা এবং ফেনী দুটি জায়গাতেই খুব ভাল ভাল কিছু হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে অনেক মজার খাবার পাওয়া যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে অনেক আগে ডাকাতি হত, এখন তেমন একটা শোনা যায় না। লাল চায়ের উপরে চাল ভাজা ব্যাপারটা খুবই ইউনিক মনে হচ্ছে আমার কাছে। আপনারা পাহাড়ি রাস্তায় সকালে সূর্যের জন্য অপেক্ষা করে ভালই করেছেন, রাতের বেলা বলা যায় না যেকোন কিছু হতে পারে। সাথে নতুন টিম পেয়ে নিশ্চয়ই আপনাদের সাহস বেড়ে গিয়েছিল। আপনার শেয়ার করা ছবিগুলো খুবই প্রাণবন্ত হয়েছে। আশা করি পরের পর্বে পুরো সাজেক দেখতে পারব। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটি ভ্রমন আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
বাইক ট্যুর আমার কাছে খুব ভালো লাগে আমিও মাঝে মাঝেই বন্ধুদের সাথে বের হই এইতো কয়েকদিন আগে ঘুরে আসলাম রাঙ্গামাটি থেকে।।
বোঝাই যাচ্ছে আপনি অনেক সুন্দর সময় অতিবাহিত করেছেন।।
ঢাকা থেকে ওই লাইনে যাওয়ার পথে সব থেকে আমার কাছে বেশি ভালো লাগে কুমিল্লার রেস্টুরেন্ট গুলা।।
যদিও আমি একবার সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করেছি তারপরও বাসায় থাকব আপনার বিভিন্ন পর্বের মাধ্যমে সব জায়গার বিস্তারিত ফটোগুলো দেখার শুভ হোক আপনার বাইক ট্যুর