আ_{^{মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।}}

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি রেসিপি পোষ্ট নিয়ে। আর আজকের রেসিপি হচ্ছে ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকেন বিরিয়ানি। চিকেন বিরিয়ানি কিংবা মাটন বিরিয়ানি দুটোই আমার খুবই পছন্দের। তবে আজ আমি চিকেন বিরিয়ানি নিয়েই হাজির হয়েছি। আর এই চিকেন বিরিয়ানি খেতে খুবই সুস্বাদু ও মজার হয়েছিল। যেহেতু শারদীয় দুর্গা উৎসবের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ, সেহেতু আমার অর্ধাঙ্গিনী বাসায় থাকার কারণে, মাঝে মাঝেই মুখরোচক খাবার গুলো তৈরি করে খাওয়া হচ্ছে। আর তাইতো আজ দুপুরে আমার বাসায় চিকেন বিরিয়ানি রেসিপিটি তৈরি করা হয়েছিল।

আমরা বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট কিংবা বিরিয়ানি হাউজে গিয়ে বিরিয়ানি খেয়ে থাকি। তবে বাসায় খুব বেশি তৈরি করা হয় না। কেননা বিরিয়ানি তৈরি করা সত্যিই খুব ঝামেলার ব্যাপার। আর এই চিকেন বিরিয়ানিতে বিভিন্ন উপকরণ লাগে, যা সবগুলো হয়তো সব সময় বাসায় থাকে না। তবে মাঝে মাঝে যে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়া হয় না তা কিন্তু নয়। আমার আবার লোভনীয় খাবার গুলোর কথা মনে পড়লেই, যখন তখনই খেতে ইচ্ছা করে। হোক সেটা দিনের বেলায় কিংবা হোক সেটা রাতের বেলায়। যখন ইচ্ছে করে তখনই লোভনীয় খাবার গুলো তৈরি করে খাই।

যাইহোক আজ আমি ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকেন বিরিয়ানি রান্নার পদ্ধতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। ঘরোয়া পদ্ধতি এজন্যই বলছি আমার ঘরে যা যা ছিল, ঠিক তাই তাই দিয়ে চিকেন বিরিয়ানি রান্নার চেষ্টা করেছি। এবং খেতে তা খুবই মজার হয়েছিল। আর এই মজার চিকেন বিরিয়ানি রেসিপি আপনাদের মাঝে শেয়ার করে নিচ্ছি। আপনারা চাইলে আমার রন্ধন প্রণালী অনুসরণ করে, ঘরোয়া পদ্ধতিতে চিকেন বিরিয়ানি রান্না করে খেতে পারবেন। তো বন্ধুরা আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলুন, আমার রন্ধন প্রণালীর ধাপ গুলো দেখে নেয়া যাক।

ক্রমিক নং	উপকরণ	পরিমাণ
১	মুরগির মাংস	৮০০ গ্রাম
২	চিনিগুড়া চাউল	৮০০ গ্রাম
৩	আলু	৪-৫ টি
৪	পেঁয়াজ	১০টি
৫	কাঁচামরিচ	৮-১০ টি
৬	বিরিয়ানি মসলা	১ প্যাকেট
৭	গুড়া দুধ	পরিমাণ মতো
৮	টক দই	পরিমান মত
৯	বড় এলাচ	পরিমাণ মতো
১০	ছোট এলাচ	পরিমান মতো
১১	লং	পরিমাণ মতো
১২	দারচিনি	পরিমাণ মত
১৩	তেজপাতা	৩-৪ টি
১৪	গাজর	২টি
১৫	শুকনা মরিচ	গুঁড়া সামান্য পরিমাণ
১৬	সয়াবিন তেল	পরিমাণ মত
১৭	চিনি	স্বাদমতো
১৮	লবণ	স্বাদ মতো

" ধাপ : ১ "

১। প্রথমে মুরগির মাংস গুলো কেটে বেছে, ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

" ধাপ : ২ "

২। এবার পেঁয়াজ গুলোর খোসা ছাড়িয়ে, কুচি করে কেটে নিতে হবে।

" ধাপ : ৩ "

৩। এবার আলু গুলোর ছাল ছাড়িয়ে, ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে। উপরে দেয়া চিত্রের মত করে।

" ধাপ : ৪ "

৪। এবার চিনিগুড়া চাল গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করে, ছাকনিতে ঢেলে নিতে হবে। যেন পানি গুলো সব ঝরে পড়ে যায়।

" ধাপ : ৫ "

৫। এবার গাজরের ছাল ছাড়িয়ে, কুচি করে কেটে আলাদা একটি পাত্রে নিতে হবে। এভাবে আলাদা আলাদা পাত্রে পরিমাণ মতো টক দই, বিরিয়ানি মসলা ও গুঁড়া দুধ নিতে হবে।

" ধাপ : ৬ "

৬। এবার চুলায় কড়াই বসিয়ে দিতে হবে। কড়াই গরম হয়ে আসলে, পেঁয়াজ কুচি গুলো কড়াইতে ছেড়ে দিতে হবে।

" ধাপ : ৭ "

৭। এবার পেঁয়াজ কুচি গুলো কড়াইতে ছেড়ে দেয়ার পর, পরিমাণ মতো সয়াবিন তেল কড়াইতে ঢেলে দিয়ে চামচের সাহায্যে নেড়েচেড়ে পেয়াজ কুচি গুলো বাদামী রঙ করে ভেজে নিতে হবে।

" ধাপ : ৮ "

৮। এবার পেঁয়াজ কুচি গুলো বাদামী রঙ হয়ে আসার পর, কিছু বেরেস্তার জন্য আলাদা একটি পাত্রে তুলে রাখতে হবে।

" ধাপ : ৯ "

৯। এবার পেঁয়াজ কুচি কিছু বেরেস্তা হিসেবে আলাদা পাত্রে তুলে নেয়ার পর, এক কাপ পরিমাণ পানি কড়াইতে ঢেলে দিতে হবে। ঢেলে দেয়া পানি গরম হয়ে আসলে, শুকনা মরিচ গুঁড়া, তেজপাতা, ছোট এলাচ ও বড় এলাচ কড়াইতে ঢেলে দিয়ে চামচের সাহায্যে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে। মশলা পানি কিছুক্ষণ কষিয়ে নেয়ার পর, পরিমাণ মতো গুঁড়ো দুধ, বিরিয়ানি মসলা ও টক দই কড়াইতে ঢেলে দিয়ে চামচের সাহায্যে নেড়েচেড়ে নিয়ে আরো কিছুক্ষণ কষিয়ে নিতে হবে।

" ধাপ : ১০ "

১০। এবার মুরগির মাংস গুলো কড়াইতে ছেড়ে দেয়ার পর, চামচ এর সাহায্যে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে নিতে হবে।

" ধাপ : ১১ "

১১। এবার ভালোভাবে নেড়েচেড়ে নেয়ার পর, কাঁচা মরিচের ফ্লেভার পাওয়ার জন্য ৫-৬ টি কাঁচামরিচ কড়াইতে ছেড়ে দিতে হবে। তারপর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে হাল্কা আঁচে কষিয়ে নিতে হবে।

" ধাপ : ১২ "

১২। এবার হাল্কা আঁচে কষিয়ে নেয়ার পর, মসলা পানি একে বারে কমিয়ে গেলে আলদা একটি পাত্রে মুরগির মাংস গুলো তুলে নিতে হবে।

" ধাপ : ১৩ "

১৩। এবার মুরগির মাংস আলাদা একটি পাত্রে তুলে নেয়ার পর, আবারো চুলায় কড়াই বসিয়ে দিতে হবে। কড়াই গরম হয়ে আসলে, পরিমাণ মতো সয়াবিন তেল কড়াইতে ঢেলে দিতে হবে। সয়াবিন তেল গরম হয়ে আসলে, কেটে নেয়া আলুর টুকরোগুলো কড়াইতে ছেড়ে দিয়ে হাল্কা আঁচে ভেজে নিতে হবে। তারপর ভাজা আলু গুলো আলাদা একটি পাত্রে তুলে নিতে হবে।

" ধাপ : ১৪ "

১৪। এবার ভেজে নেয়া আলু গুলো আলাদা একটি পাত্রে তুলে নেয়ার পর, সেই পাত্রে আরো অল্প পরিমাণ তেল ঢেলে দিতে হবে। তারপর দুটো পেঁয়াজ কুচি, বড় এলাচ, ছোট এলাচ, লং ও দারচিনি সেই সাথে তেজপাতা তেলে ছেড়ে দিতে হবে।

" ধাপ : ১৫ "

১৫। এবার পেঁয়াজ দারচিনি লং এলাচ তেজপাতা হালকা ভাবে ভেজে নেয়ার পর, পূর্বে ঝরিয়ে রাখা চিনিগুড়া চাল গুলো করাইতে ঢেলে দিতে হবে।

" ধাপ : ১৬ "

১৬। এবার চিনিগুড়া চালগুলো করাইতে ছেড়ে দেবার পর ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে পরিমাণ মতো আদা বাটা দিয়ে দিতে হবে।

" ধাপ : ১৭ "

১৭। এবার ভেজে নেয়া চিনিগুড়া চাল গুলোতে পরিমাণ মতো রসুন বাটা ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে দিতে হবে।

" ধাপ : ১৮ "

১৮। এবার চিনিগুড়া চালগুলো অল্প আচে ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। যাতে করে বিরিয়ানি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর ঝরঝরে হয়। তারপর একটি পরিষ্কার পাত্রে পরিমাণ মতো গরম পানি ফুটিয়ে, সেই পাত্রে কষিয়ে নেয়া সমস্ত চালগুলো ঢেলে দিতে হবে।

" ধাপ : ১৯ "

১৯। এবার ফুটন্ত গরম পানিতে চিনি গুড়া চাল গুলো ছেড়ে দেয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরে, পূর্বে কেটে নেয়া গাজর কুচি গুলো ছেড়ে দিয়ে, ভালোভাবে নেড়েচেড়ে নিতে হবে দিতে হবে।

" ধাপ : ২০ "

২০। এবার চিনিগুড়া চাল ও গাজর কুচি গুলো ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে নেয়ার পর, পাত্রে তুলে রাখা কষানো মুরগির মাংস গুলো ঢেলে দিতে হবে। সেই সাথে বেশ কয়েকটি কাঁচামরিচ ছেড়ে দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে নিতে হবে।

" ধাপ : ২১ "

২১। এবার চিনিগুড়া চাল ও কষানো মুরগির মাংস ভালোভাবে নেড়ে চেড়ে নেয়ার পর, পূর্বে ভেজে রাখা আলু গুলো ছেড়ে দিতে হবে। সেই সাথে ভেজে নেয়া পেয়াজ বেরেস্তার সাথে অল্প পরিমাণ চিনি মিক্সড করে নিতে হবে।

" ধাপ : ২২ "

২২। এবার চিনিগুড়া চাল ও কষানো মুরগির মাংসের উপরে চিনি মিক্সড করা বেরেস্তাগুলো ছড়িয়ে দিতে হবে। এরপর একটি ঢাকনা দিয়ে হাল্কা আঁচে দমে বসিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ দমে বসিয়ে দিলেই তৈরি হয়ে যাবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত রেসিপি।

" শেষ-ধাপ "

শেষ-ধাপ : আমাদের কাঙ্খিত রেসিপি সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়ে যাওয়ার পর, পরিবেশনের জন্য আলাদা একটি পাত্রে ঢেলে নিয়ে মনের মতো সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

---

---

আশা করি আমার রেসিপি পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।