আ_{^{মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।}}

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজ আমি আমার এলাকায় ঘটে যাওয়া একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে হাজির হয়েছি। আর এই ঘটনাটি ঘটে গেছে গতকাল রাতে। আমার সারাটা দিন খুবই ব্যস্ততায় দিন কেটে যায়, তাই বেশিরভাগ সময় আমি রাতের বেলায় আমার প্রিয় কমিউনিটির জন্য পোস্ট উপস্থাপন করার চেষ্টা করি। তো আমি রাত ১টা ৪৫ মিনিটে হঠাৎ করে ই আমার বাড়ির পাশে খুব জোরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেয়েছিলাম। এত জোরে জোরে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল সবাই, আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো বা কোন চোর ধরা পড়েছে। তাই দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে আমাদের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তাটি ধরে তিন-চারটে বাড়ির পরে গিয়ে যে দৃশ্য দেখেছি তা যেন মুহূর্তে আমার হুশ উড়িয়ে দিল।

কিছুক্ষণের জন্য আমি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার চোখের সামনে আগুনের লেলিহান শিখা দাউ দাউ করে জ্বলছে, আর প্রচন্ড কালো ধোয়া আকাশের দিকে দ্রুত ধেয়ে চলেছে। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রীও ছিল। সে এরকম আগুন দেখে এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল, আমার সামনে জোরে জোরে চিৎকার শুরু করে দিয়েছিল। আর তার চিৎকারে যেন আমি হুশ ফিরে ফিরে পেয়েছিলাম। আমি কি করবো কিছুতেই যেন ভেবে উঠতে পারছিলাম না।

তখন আমার মোবাইল ফোনটি হাতেই ছিল, যার কারনে আমি সেই আগুনের বাড়ির দিকে দৌড়াচ্ছি আর মোবাইল ফোনে ৯৯৯ এ কল করার চেষ্টা করেছিলাম। তো মুহূর্তেই আমার কলটি ৯৯৯ রিসিভ করে নেয়। তো যখন আমি খুবই উৎকণ্ঠা নিয়ে বলতে শুরু করেছিলাম আমার এলাকায় আগুন ধরেছে, তাৎক্ষণিকভাবে ৯৯৯ কর্তব্যরত ব্যক্তি আমাকে বলল আপনি লাইনেই থাকুন কল কেটে দিবেন না, তারপর তিনি মুহূর্তের মধ্যেই আমাদের এখানে ফায়ার সার্ভিসের সাথে আমাকে কনফারেন্সে কথা বলিয়ে দেয়।

কনফারেন্সে কথা বলার সময় আমাদের কুড়িগ্রাম জেলার ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত ফায়ারম্যান আমার নাম্বার নিয়ে সে বলল দ্রুতই আমাদের এখানে পৌঁছে যাবে। তার কিছুক্ষণ পরে আবার তারা আমার কাছে ফোন দিয়ে আমার লোকেশন অনুযায়ী আসছিল। তারা বলছিল আপনার ফোনটি কাটার দরকার নেই, আমরা আপনার সাথে কথা বলতে বলতেই আপনার এলাকায় গিয়ে পৌঁছাব। আমার বাড়িটি পৌরসভা থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে হওয়ার কারণে, খুব দ্রুতই ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটি আমাদের এলাকায় প্রবেশ করে গেল।

রাতের বেলা হওয়ার কারণে একদম ফাঁকা রাস্তা থাকায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চোখের নিমিষেই যেন আমাদের এলাকায় এসে গিয়েছিল। তারা আমাকে আমাদের বাড়ির সামনে মেইন রোডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিল, তাই আমি আগুনের এদিকে না থেকে রাস্তায় গিয়ে সে গাড়ির দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হাত উঠিয়ে ডাকতে শুরু করেছিলাম। তারা খুব দ্রুত আমাদের এলাকায় প্রবেশ করেই তাদের, বড় বড় মেশিনারিজ দিয়ে দুর্বার গতিতে কাজে লেগে পড়েছিল।

তখন পর্যন্ত দেখি যে বাড়িতে আগুন ধরেছিল, সেই বাড়ির রান্না ঘর পুরোপুরি জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। আর রান্না ঘরের পাশেই ছিল দুটি বড় বড় খরের পালা। সেই খড়ের পালায় আগুন লাগার কারণে আগুন আর ধোঁয়া যেন পুরো বাড়িটিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যাক অবশেষে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে একটি পুকুরে তাদের মেশিন বসিয়ে পাইপের সাহায্যে দ্রুত পানি দিয়েছিল। তবে খড়ের গাদার আগুন বলে কথা, খড়ের গাদার দিকে তাকাতে দেখি খড়ের গাদার ভেতরে আগুন শুধু জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।

পুকুর থেকে পানি তুলে সেই খরের গাদার আগুন নেভাতেও দমকল বাহিনীর প্রায় ঘন্টা খানিক সময় লেগেছিল। যখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুরোদমে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল, তখন পর্যন্ত এলাকাবাসীর অনেক ভাইয়েরাও তাদের সাথে কাজের সহযোগিতা করছিল। একটা পর্যায়ে পুকুরের পানি দিয়ে পুরো বাড়িতে যেন পানি দিয়ে ভরে গিয়েছিল। যাইহোক আগুন নেভা শেষ, এবার ফায়ার সার্ভিসে কর্তব্যরত একজন কর্মী যার বাড়িতে আগুন লেগেছিল তার কাছে সরকারি কিছু কাগজপত্র সই করে নিয়েছিল।

আগুন নিভে যাওয়ার পরে, ফায়ার সার্ভিসের একজন পরিচিত ভাই আমার দিকে এগিয়ে এসে আমাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানালো। খুব দ্রুত ৯৯৯ এ কল করে ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনীকে ডেকে আনার জন্য। তা না হলে হয়তো বা পুরো এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের তান্ডব নৃত্য শুরু হয়ে যেত। ভাগ্যিস ফায়ার সার্ভিসের দমকল বাহিনী মূহুর্তের মধ্যে আমাদের এলাকায় চলে এসেছিল, যার কারণে আমাদের এলাকা অনেক বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে গেল।

আর ৯৯৯ এ কল করে খুব দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের সাহায্য নিয়ে দমকল বাহিনী আগুন নিভিয়ে দেয়ার কারণে, আমাদের এলাকায়ও অনেকে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিল। এবং আমার ওপর তারা খুব খুশি হয়েছিল। এরপর আবার ৯৯৯ থেকে আমাকে কল করে তাদের সার্ভিসে সন্তুষ্ট আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। আর আমিও তাদের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছি এবং এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের এই সেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছি।

এবার জেনে নিন আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে হল। যে বাড়িতে আগুন ধরেছে সে বাড়ির গৃহিণী লাকড়ির চুলায় রান্না করে চুলার আগুন সম্পূর্ণ নিভিয়ে না রেখে, চুলার উপরেই আবার অনেকগুলো লাকড়ি শুকানোর জন্য স্তুপ করে রেখেছিল। আর সেই লাকড়িতেই আগুন ধরে পুরো রান্নাঘরে ছড়িয়ে গিয়েছিল। তাই আমি বলব, আগুনের তাণ্ডব নৃত্য থেকে বাঁচতে হলে, অবশ্যই আমাদেরকে খুবই সতর্কতার সাথে থাকা উচিত। যার ঘর বাড়ি পোড়া গেছে, সেই ব্যক্তি খুব স্বচ্ছল অবস্থার নয়।

কোন রকমে রিক্সা চালিয়ে তাদের দিন যাপন করে। অথচ এই আগুনের কারণে তার অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেল। আর হ্যাঁ আগুন জ্বলার সময়ে আমি কোন ফটোগ্রাফি করিনি, কেননা আমার কাছে ফটোগ্রাফি করাটা উচিত নয় বলে মনে হয়েছিল। যাইহোক পরিশেষে আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই, আপনারা সকলে খুবই সতর্কতার সাথে থাকবেন, আগুন নিয়ে কখনো যেন কারো কোন বিপত্তি না ঘটে।

---

---

আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।