এক দুঃখিনী মায়ের গল্প || শেষ - পর্ব

" আজ মঙ্গলবার - ৩১শে শ্রাবণ - ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৫,আগস্ট - ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ "

মার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।

pexels-keira-burton-6624439.jpg

source

আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্ট হচ্ছে এক দুঃখিনী মায়ের গল্পের দ্বিতীয় ও শেষ পর্ব নিয়ে। গত পর্বে রেখা তার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে শশুর বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসলে খুবই চিন্তা গ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। কারণ তার কাছে টাকা পয়সা না থাকার কারণে সে হাসপাতালের দিকে যাওয়ার কোন প্রকার সাহস করতে পারছিল না। আর তাই অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতেই ফিরে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

রেখার শশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি যেতে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো সময় লেগে যায়। তাই এতদুর রাস্তা রেখা কিভাবে যাবে সে চিন্তা ভাবনা করে কোন কুল কিনারা পাচ্ছিল না। তাই তার শ্বশুরবাড়ির পার্শ্ববর্তী এক বাড়িতে গিয়ে কিছু টাকা ধার চাইলে, সে বাড়ির লোকও তাকে টাকা ধার দিতে অস্বীকার জানায়। তারা বলেছিল রেখার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা একদমই ভালো নয়, যদি কোন ভাবে রেখার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা জানতে পারে রেখাকে তারা কোনো প্রকার টাকা ধার দিয়েছে, তাহলে তাদের সাথে ঝগড়াঝাটি শুরু করবে।

এমনিতেই রেখার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মোটেও ভালো ছিল না, তাদের পরিবারের সকলেই খুবই ঝগড়াটে এবং মারপিটে স্বভাবের। যার কারনে এলাকার অনেকেই তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। কোন উপায় না পেয়ে রেখা এবার তার বাবার বাড়ির রাস্তার দিকে হাঁটতে শুরু করে দিয়েছিল। একদিকে রেখার মেয়ে ভীষণ অসুস্থ তার উপরে মাথার উপরে তপ্ত রোদ যেন রেখার শরীরকে অবশ করে ফেলছিল। তবুও মনের জোরে রেখা প্রায় ঘন্টাখানেক রাস্তা হাঁটার পরে যখন সে আর কোন ভাবে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না, তখন রেখা একটি রিকশা ঠিক করে নিয়েছিল।

আর রিক্সাওয়ালাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললে রিক্সা ওয়ালা রেখার প্রতি মায়া দেখিয়ে তাদের রিক্সায় তুলে নেয়। এক্ষেত্রে রিক্সাওয়ালা কে খুবই সহৃদয়বান ব্যক্তি বলা যেতে পারে। রিকশা যতই রেখার বাবার বাড়ির দিকে এগোচ্ছে ততই যেন রেখার মেয়েটি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছিল। প্রচন্ড জ্বর সেই সাথে বারবার বমি করছিল রেখার মেয়ে। এমন পরিস্থিতি দেখে রেখা খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিল। চলন্ত রিক্সায় রেখা হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিল। রেখার এমন আর্তচিৎকার ও বুকফাটা কান্না দেখে রিক্সাওয়ালা খুব জোরে রিকশা চালিয়ে যেতে শুরু করেছিল।

অবশেষে রেখা তার বাবার বাড়ির সামনে গিয়ে পৌঁছেছিল। রেখার এমন কান্নাকাটি শুনে রেখার বাবা-মা দৌড়ে বাড়ির সামনে এসে দেখে তার মেয়ের এমন করুন পরিস্থিতি। ঠিক সেই মুহূর্তে রেখার বাবা-মাও যেন নিজেদেরকে আর ধরে রাখতে পারছিল না। তৎক্ষণাত তারা রেখার মেয়ের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস রেখার মেয়ে যখন হাসপাতালের সামনে গিয়ে পৌঁছেছিল ঠিক তখনই রেখার মেয়ে ভীষণ কাঁপুনি দিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল।

আর এরকম পরিস্থিতি যখন রেখার মা দেখেছিল তখন ঠিক বুঝেছিল তার নাতনি আর এ পৃথিবীতে নেই। তাই রেখার মা নাতনির এমন করুন মৃত্যুতে বুকফাটা আহাজারিতে ভেঙে পড়েছিল। রেখা তার মায়ের এমন চিৎকার শুনে বুঝে উঠতে পেরেছিল তার মেয়ে আর এই পৃথিবীতে নেই। তবে রেখা কোন প্রকার কান্নাকাটি না করে একদম পাথরের মত নিথর হয়ে রইল। রেখার চোখে নেই বিন্দুমাত্র চোখের পানি, নেই বুকফাটা আহাজারি। সে শুধু সামনের দিকে ফেলফেল করে তাকিয়ে ছিল। হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার থাকে মৃত বলে জানিয়ে দেয়,এবং তার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করতে বলে।

কিন্তু এসব কথায় যেন রেখার বিন্দুমাত্র মাত্র আফসোস হচ্ছিল না। কারণ রেখা তো একদম পাথর হয়ে গিয়েছিল। যখন রেখার মেয়েকে তার বাবার বাড়ি নিয়ে এসেছিল, তখন রেখা একদম চুপ ছিল বলে, এলাকাবাসী তাকে কান্না করার জন্য খুবই চেষ্টা করতে থাকে। একপর্যায়ে রেখা যখন তার হুঁশ ফিরে পায় তখন দেখে তার মেয়ে তার চোখের সামনে সাদা কাপড় পড়ে শুয়ে আছে। আর এরকম দৃশ্য দেখে রেখার চিৎকার ও বুকফাটা কান্না যেন সেখানে থাকা সকল মানুষের হৃদয়কে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছিল।

রেখা শুধু বারবার চিৎকার করে বলছিল, আমি এমন এক দুঃখিনী মা, যে মা কিনা তার সন্তানের চিকিৎসা করার সুযোগ টুকু পায়নি। হয়তো ঠিক সময়ে আমার মেয়ের চিকিৎসা করালে আজ আমার বুকের মানিক আমার বুকেই থেকে যেত। মেয়ের দুঃখে রেখা শেষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার মেয়ের মৃত্যুর জন্য তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করবে। এবং অবশেষে রেখা ও তার মেয়ের এমন করুন পরিস্থিতির জন্য রেখার স্বামীর সাজা হয়ে গিয়েছিল। যাক অবশেষে বলবো, রেখার বাবা মায়ের মত কোন বাবা-মা যেন ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে তার মেয়ের জীবন নষ্ট না করে ফেলে। বরং প্রতিটা বাবা মায়ের উচিত মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া।



আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkPKDYqZPTyz3HQnPBAZYA84k8k89ixkhuUsFjZkgWkC1gjU36M1oU8J7FbJUoPMtjB5EHLD1usXZox8d6boJGJdTa7jANjx37k.png
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1uasvrAaBSP6D1NgNuBSX2m.gif

3W72119s5BjVs3Hye1oHX44R9EcpQD5C9xXzj68nJaq3CeSsa63mzHQexuvWRDgxAQmHZjMKhFaYGe2ubQmiC33SnsVy3TGA7BbZJiqfXWxLCKhiShcGVU.png

Picsart_22-12-07_06-14-15-124.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

দুঃখিনী মায়ের গল্পের শেষ পর্ব পড়ে সত্যি চোখে জল চলে এসেছে ভাই। বাবার জন্য মেয়েটা শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছে। তার মা পরবর্তীতে মামলা করে ভালোই করেছে। এরকম মানুষের শাস্তি হওয়া উচিত। আসলে মেয়েটার বাবা মা যদি তাকে এত অল্প বয়সে বিয়ে না দিত এবং কি ভালোভাবে পড়ালেখা করিয়ে বড় করত, তাহলে মেয়েটার এরকম পরিস্থিতি হতো না। সম্পূর্ণটা পড়ে সত্যি খুব খারাপ লেগেছে ভাই।

 last year 

গল্পের শেষটা সত্যিই খুব কষ্টের ছিল ভাই। তবে রেখার স্বামীর সাজা হয়েছে এটা রেখার জন্য খুব ভালো সংবাদ ছিল।আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

ভাই আপনি আজকে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এক দুঃখিনী মায়ের গল্প। সত্যি ভাই আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আসলে নিজেই বলছিল আমি যে এমন দুঃখী মা যে আমি আমার সন্তানের চিকিৎসা করার সুযোগ টুকো পাইনি আসলে সেই সময় প্রত্যেকটি মায়ের অনেক খারাপ লাগে। অবশেষে মামলা করেছিল জেনে বেশ ভালো লেগেছিল এমন শয়তান মানুষের শাস্তি হওয়া উচিত। ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 last year 

রেখার দিক থেকে সত্যিই রেখা একজন দুঃখিনী মা। যে কিনা মেয়ের চিকিৎসা করাতেও পারেনি। যাইহোক ভাই গল্পটি আপনার কাছে ভালো লেগেছে এজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

আপনার এই গল্পটা আমি যত পড়ছিলাম আমার ততই কষ্ট হচ্ছিল। এই গল্পটার আগের পর্ব আমার পড়া হয়েছিল। আর এই পর্বের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম আমি। ভেবেছিলাম হয়তো মেয়েটি তার মেয়েকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারবে এবং চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু হসপিটালের ওখানে যাওয়ার পরেই মেয়েটা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিল এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। মা আসলেই অনেক দুখিনী। নিজের মেয়েকে নিজের চোখের সামনেই মারা যেতে দেখেছে। মেয়েটাই ছিল তার বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা কিন্তু সেও শেষ পর্যন্ত মাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। পরবর্তীতে তার হাসবেন্ডের সাজা হয়ে গিয়েছে জেনে ভালো লাগলো। আমাদের সবার উচিত নিজের সন্তানদেরকে ভালোভাবে রাখা। অল্প বয়সে এভাবে বিয়ে না দেওয়াটাই ভালো।

 last year 

রেখার বাবা-মা রেখাকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে তার জীবনে এমন করুণ পরিণতি তৈরি করে দিয়েছে। এজন্য রেখার বাবা মা ভীষণ অনুতপ্ত ছিল। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 last year 

আপনার গল্পটি পড়ে সত্যি অনেক খারাপ লাগলো। আপনার গল্প প্রথম পর্বটি আমি পড়ি নাই তবে আজকের পর্বটি পড়ে রেখার কাহিনী জেনে সত্যি এত খারাপ লেগেছে যা বলে বোঝানো যাবে না। নিজের মেয়ের মৃত্যু এভাবে চোখের সামনে দেখলে যেকোন মানুষ পাথর হয়ে যাবে। আসলে তার মেয়েটিকে নিয়ে অনেক দূর সে হেঁটে হেঁটে এসেছে। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস যখন তার মা-বাবার বাড়ির লোকগুলো তার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়েছে তখন হাসপাতালে সামনে তার মেয়েটির শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। ধন্যবাদ আপনাকে খুব সুন্দর করে গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

ঠিক বলেছেন আপু, নিজের সন্তানের করুন মৃত্যু কোন বাবা-মা ই সহ্য করতে পারে না। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.15
JST 0.030
BTC 65725.56
ETH 2673.18
USDT 1.00
SBD 2.90