পরোপকারী সুমনা আপুর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কাহিনী||শেষ-পর্ব
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
পরোপকারী সুমনা আপুর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কাহিনী||পর্ব-১
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আর আজকের পোস্ট হচ্ছে সুমনা আপুর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কাহিনী দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। কথায় আছে না, উপকারী গাছের ছাল থাকে না। আর সুমনা আপুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল, নিজের বোন ও ননদকে সাহায্য করতে গিয়ে তিনি একদম নিঃস্ব হয়ে গেছেন। আর এ বিষয়ে আমি গত পর্বে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত কিছু কথা তুলে ধরেছিলাম। আজ তারই ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ও শেষ পর্বে, সুমনা আপুর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করার চেষ্টা করব। যাইহোক সুমনা আপু তার মেজ বোনকে ৮ লক্ষ টাকা ধার দেয়ার কারণে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছিল।
কেননা সুমনা আপু এসব টাকা কোন জমানো টাকা থেকে দেয়নি, বরং তার কলিগদের কাছ থেকে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ করে টাকাগুলো দিয়েছিল। আর এই টাকাগুলো পেয়ে সুমনা আপুর মেজ বোনের হাজব্যান্ড সৌদি আরবে গিয়ে পানির ট্যাংকি গাড়ি কিনেছিল। আর সেখানে তিনি নিজেই এই গাড়ি পরিচালনা করতেন, এবং মরুভূমিতে পানি সাপ্লাই করতেন। এভাবে বেশ কিছুদিন নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করতে করতে একদিন সৌদি আরবের প্রশাসনের গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করে ফেলেন। যার কারণে সুমনা আপুর মেজ বোনের হাজবেন্ডের অনেকগুলো টাকা জরিমানা হয়ে যায়। আর এই জরিমানা হওয়ার কারণে, সুমনা আপুর মেজ বোনের হাসবেন্ড ও সুমনা আপুর মেজ বোন, সুমনা আপুকে ধার দেয়া টাকাগুলো ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
যার কারণে সুমনা আপু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। অন্যদিকে আবার সুমনা আপুর ননদের কাছে যে চার লক্ষ টাকা পেতেন, সেই টাকাটাও তারা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। সুমনা আপুর ননদের কথা, তোমার বোন এতগুলো টাকা নিয়ে তোমাকে দিতে পারছে না, তাহলে আমার কাছে যে টাকা রয়েছে তার জন্য এত চাপাচাপি কিসের।সুমনা আপুর ননদ সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তিনিও এই মুহূর্তে তার পাওনা টাকাটা ফেরত দিতে পারবে না। সব দিক বিবেচনা করলে দেখা যায় সুমনা আপুর মত বিপদগ্রস্ত লোক বোধ হয় আর কেউ নেই।
অবশেষে সুমনা আপু তার হাজবেন্ডকে সমস্ত কিছু খুলে বলেন। যদিও বা সুমনা আপুর হাজবেন্ড এত কিছু জানতেন না, কিন্তু যখন থেকে এত কিছু জানতে পেরেছেন, তখন থেকে তিনিও সুমনা আপুর সাথে আর ভালোভাবে কথাবার্তা বলতেন না। সুমনা আপুর হাজবেন্ডের কথা হচ্ছে সুমনা আপু তাকে না জানিয়ে এতগুলো টাকার রিস্ক কিভাবে নিতে পারে। তবে সুমনা আপুর হাজবেন্ড সুমনা আপুর এমন মানসিক টেনশন দেখে সহ্য করতে না পেরে, তার পৈতৃক সম্পত্তি থেকে পাঁচ শতাংশ জমি বিক্রয় করে সুমনা আপুর ঋণ গুলো পরিশোধ করে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করেছিল।
কিন্তু এতেও যেন বিধি বাম হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কেননা সুমনা আপুর হাজবেন্ড যে জমিটি বিক্রি করতে চেয়েছিল, সে জমির কাগজের কি যেন এক সমস্যার কারণে কোন ক্রেতাই কিনতে চাইছিল না। যার কারণে সুমনা আপুর হাজবেন্ড একপ্রকার বাধ্য হয়ে তার বসতবাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিল। আর এই বসতবাড়ি বিক্রি করার কথা শুনে সুমনা আপু খুবই ভেঙে পড়েছিল। কেননা তার ঘরেও ছোট ছোট দুটি ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সুমনা আপু খুবই হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিল। তবে কি আর করার, এতগুলো টাকা ঋণের বোঝা সহ্য করার মত ক্ষমতা তার ছিল না।
তাই অবশেষে বসতবাড়ি বিক্রি করার সিদ্ধান্তটাই চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। আর যেদিন এই বসত বাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল, সেদিন সুমনা আপু ও তার হাজবেন্ড খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। কেননা শুধুমাত্র অন্যের ঋণের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার কারণে, তারা আজ বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। যদিওবা আমার সুমনা আপুর হাজবেন্ডের আরো জমি ছিল, সেখানে গিয়ে তিনি এখন নতুন করে বাড়ি করার চিন্তা ভাবনা করেছে। তবে কতদূর সফল হতে পারবে সে বিষয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে। সুমনা আপুর এমন নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার ঘটনা আমাদের এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল।
সুমনা আপু এক বাক্যে খুবই ভালো মানুষ তা নিয়ে কারো বিন্দুমাত্র সন্দেহ ছিল না। যার কারণে এমন একটি ঘটনার কারণে এলাকাবাসী সুমনা আপুর জন্য খুবই আফসোস করছিল। সত্যি কথা বলতে কি আমি নিজেও এ বিষয় নিয়ে খুবই আপসেট হয়ে গিয়েছিলাম। কিভাবে মানুষের সুখের জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, কিভাবে একজন সরকারি চাকরিজীবী মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায় ,তার বাস্তব উদাহরণ হচ্ছে আমাদের এই সুমনা আপু।
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন তার সকল সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। হয়তো সুমনা আপুর গল্প বলতে গিয়ে খুব সহজে লেখা হয়ে গেল, কিন্তু সুমনা আপুর এই বাস্তব জীবনের লড়াইয়ে কতটা কষ্ট করেছে তা স্বচক্ষে না দেখলে হয়তো বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহতালা সুমনা আপুকে আরো ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুক, সেই সাথে তার পাওনা টাকা তার মেজ বোন ও ননদের কাছ থেকে ফিরে পাক এই প্রত্যাশা করছি।
আশা করি আমার পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
https://twitter.com/mahbubullemon/status/1774225772670235123?t=8HqS9oWfJhoiyPJh9d0ETw&s=19
সুমনা আপুর নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কাহিনীটি পড়ে সত্যিই অনেক খারাপ লাগলো। শেষ পর্যন্ত পাওনা টাকা পরিশোধের জন্য বসতবাড়ি বিক্রয় করতে হলো। অন্যের ঋণের বোঝা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে তারা আজ বসতবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। খুব খারাপ লাগলো ঘটনাটি পড়ে। মহান আল্লাহ সুমনা আপু এবং তার পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করার তৌফিক দান করুক।
আপু অন্যের ঋণের বোঝা নিজের কাধে নিয়ে সুমনা আপু খুবই বিপদগ্রস্ত হয়েছিল। আর তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে তার বসতবাড়ি বিক্রি করে ঋণের বোঝা সরাতে হয়েছিল। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বর্তমান সময়ে সুমনা আপুর মতো ভাল মানুষেরাই এভাবে বিপদে পড়ে এবং নিঃস্ব হয়ে যায়। সত্যি বলতে পরোপকার করা একটি মানবিক কাজ। তবে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট অনুসারে কারোর উপকার করার আগে নিজেদেরকে নিরাপদ জায়গায় রাখাটা নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো সুমনা আপুর মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
আপনি ঠিকই বলেছেন ভাই, সুমনা আপু মানুষ হিসেবে ভীষণ ভালো। আর এজন্যই হয়তো তার বোনেরা সুযোগ খোঁজে তাকে ঠকিয়েছে। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
যদিও আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি তবে লাস্টের পর্বটি পড়ে বেশ খারাপ লাগলো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবারই থাকে তাইতো তিনি তার ঘরে দুটি সন্তান রয়েছে জেনে বসতভিটা বিক্রি করাতে অনেক নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। ঋণের বোঝা সহ্য করার মতো ক্ষমতা অনেক কঠিন তাই তিনি বসত ভিটা বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিল। আসলে বর্তমান সময়ে সুমনা আপুর মত ভাল মানুষেরা এভাবেই বিপদে পড়ে। বর্তমান সময়টা এমন হয়ে গেছে কারো উপকার করতে গেলেও ভয় লাগে। অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনি ঠিকই বলেছেন আপু, বর্তমান সময়ে কারো উপকার করতে গেলেও ভয় লাগে। আর তাইতো সুমনা আপুরও নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে এই পৃথিবীতে এখন ভালো মানুষের কোন দাম নেই৷ ভালো মানুষরাই এখন নিঃস্ব হয়ে যায়৷ এখানে সুমনা আপু সেরকমই একটি ঘটনার স্বীকার হয়েছে৷ তিনি খুবই ভালো ছিলেন এবং খুব ভালোভাবেই অন্যের ঋণের বোঝা নিজের কাঁধে নিয়েছেন এবং তারপর থেকেই তার খারাপ সময় শুরু হয়ে গেল৷ আসলে ঋণের বোঝা কাঁদে নেওয়ার পরে তাকে তার ঘরবাড়ি বিক্রি করে দিতে হয়েছে শুনে খুবই খারাপ লাগছে৷ আসলে এরকম অনেক ভালো মানুষ রয়েছে যারা অন্যের কাজগুলোকে নিজের মত করে করে নিতে গিয়ে এরকম নিঃস্ব হয়ে যায়৷
সুমনা আপু ঋণের বোঝা শইতে না পেরে, বাধ্য হয়ে তার বসত বাড়ি বিক্রি করেছিল ভাই। যা আমাদের কাছে খুবই খারাপ লেগেছিল। আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আসলে ভালো মানুষের কোনো মুল্যই নেই এই পৃথিবীতে৷
সুমনা আপুর জীবনের এই লড়াই যেন এক কঠিন লড়াই। নিজের সাথে নিজের লড়াই কিংবা জীবনের সাথে। আসলে এরকম পরিস্থিতি কারো জীবনে না আসুক এই প্রার্থনা করি সব সময়। যাইহোক তিনি যেন সব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন এই দোয়া করি।