বাইক ট্যুর (Bike Tour) : পর্ব - ১১... || ১০% বেনিফিশিয়ারি shy-fox এর জন্য
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ এর ভাই ও বোনেরা, মুসলিম ভাই ও বোনদের জানাই আসসালামু আলাইকুম। সনাতন ধর্মালম্বী ভাই ও বোনদের জানাই আদাব এবং অন্যান্য ধর্ম অবলম্বনকারী ভাই ও বোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় সবাই বাড়ির সকল সদস্যকে নিয়ে ভালো আছেন সুস্থ আছেন। আমিও আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং আপনাদের সকলের দোয়ায় ভালো আছি, সুস্থ আছি।
আজ আবারো ফিরে আসলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজকে আমি আমার বাইক ট্যুর (Bike Tour) : পর্ব - ১১... উপস্থাপন করব। আমরা পদ্মা সেতু থেকে একটানা জার্নি করে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সদরঘাটে এসে পৌঁছেছিলাম। এখন আমাদের গন্তব্য স্থল হবে পটুয়াখালী। আর এই পটুয়াখালী থেকে আমরা বাইকে করে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা হব। আমার জীবনে এই প্রথম আমি লঞ্চে উঠবো এবং পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা যাব। তাই লঞ্চে উঠার কথা চিন্তা করতে আমার মনের ভেতর ভীষণ রকম ভালোলাগা কাজ করছিল। আমি অনেকের মুখেই এই লঞ্চের কথা এবং কুয়া কাটার অপরূপ সৌন্দর্যের কথা শুনেছিলাম। তখন থেকেই আমার খুবই শখ ছিল লঞ্চে ওঠার এবং কুয়াকাটা দেখতে যাওয়ার।তাই যখন এই লঞ্চে করে কুয়াকাটা গিয়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল আমার মনের ভেতর পুষে রাখা শখটি পূরণ হয়েছিল।
গত পর্বে আমি সদরঘাটের মালবাহী যাত্রী ছাউনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর সেখান থেকেই লক্ষ্য করেছিলাম বিশাল একটি ভবনের পাশে, বরিশাল ও পটুয়াখালীগামী লঞ্চগুলোর যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য খুব সুন্দর করে ছোট্ট একটি ব্রিজ তৈরি করেছে সদরঘাট কর্তৃপক্ষ। আমরা দূর থেকে অনেকগুলো লঞ্চ ও যাত্রী ছাউনিতে থাকা লোকজনদের চলাচল অবলোকন করছিলাম। আর এই যাত্রীছাউনি থেকে অগণিত লঞ্চগুলো যাতায়াত করছে তার গন্তব্য স্থলে। আমি আগে কখনো সদরঘাটে আসিনি, তাই এতগুলো লঞ্চ একসাথে দেখতে পেয়ে আমার ভালোলাগাটা অনেক অনেক ছিল।
আমরা যেহেতু মনস্থির করেছিলাম কুয়াকাটা যাব, তাই আমাদের ওই ছোট্ট ব্রিজ দিয়ে বরিশাল ও পটুয়াখালী যাত্রী ছাউনিতে যেতে হবে। তাই সেখান থেকে মোটরবাইকে করে আবারও আমরা রাস্তা দিয়ে ঘুরে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। এখানে এসে দেখেছিলাম, এই ছোট্ট ব্রিজের নিচে অনেক অনেক খেয়া নৌকা দাঁড়িয়ে আছে। এই খেয়ে নৌকাগুলো বুড়িগঙ্গা নদীর এপার থেকে ওপারে যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে। অবশ্য এখানে একটি ব্রিজ রয়েছে বুড়িগঙ্গা নদী পার হওয়ার জন্য, কিন্তু এই ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে গেলে যাত্রীদেরকে অনেক হয়রানি হতে হয়। তখন দেখা যায় (৫) পাঁচ মিনিটের রাস্তা, তারা (৫০) পঞ্চাশ মিনিটে পার হতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে। তাই তারা সহজতর যোগাযোগ রাস্তা হিসেবে এই খেয়া নৌকা দিয়ে বুড়িগঙ্গা এপার থেকে ওপার পার হয়ে যাচ্ছে।
![]() | ![]() |
---|
এই যাত্রী ছাউনিতে প্রবেশের রাস্তার মাথায় একটি ভেলপুরীরর ছোট্ট দোকান দেখতে পেয়েছিলাম। যদিওবা এই দোকানটি অস্থায়ী, কিন্তু এই ভেলপুরি দোকানে কাস্টমারের অভাব ছিল না। ছোট্ট এই দোকানের ভেলপুরি খেতে এতটা স্বাদ তা আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। আমি এর আগে অনেকবার ভেলপুরি খেয়েছি, কিন্তু কেন জানি এই ছোট্ট দোকানের ভেলপুরি আমার কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। তবে এর গুণগতমান ও স্বাস্থ্যসম্মত ছিল কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কেননা সদরঘাটের খোলা মার্কেটে এভাবে ভেলপুরি বিক্রি করা, এবং তা খাওয়া কতটা স্বাস্থ্যসম্মত তা বুঝতেই পারছেন। কিন্তু কি আর করার, স্বাদের জিনিস চোখের সামনে থাকলে তা না খেয়ে উপায় আছে। ভেলপুরি খাওয়া শেষে, এই মামার দোকান থেকে আমরা কিছুটা ঝাল ছোলা বুটও কিনে খেয়েছিলাম।
খাওয়ার পর্ব শেষ করে আমরা এবার এই ছোট্ট ব্রিজ পার হয়ে, বরিশাল ও পটুয়াখালীগামী লঞ্চগুলোর পাশে এসে দাঁড়ালাম। বুড়িগঙ্গা নদীতে সারিবদ্ধভাবে লঞ্চগুলো দাঁড়িয়ে আছে, তাদের কাঙ্খিত যাত্রীদের জন্য। যাত্রী হওয়া পর্যন্ত এই লঞ্চগুলো নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। এই লঞ্চগুলো বিকেল থেকে শুরু করে, রাত অবধি পর্যন্ত সদরঘাট থেকে বরিশাল ও পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
আমরা পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য যে লঞ্চটিতে টিকিট কেটেছিলাম, সেই লঞ্চটির নাম ছিল এম . ভি . কাজল-৭ । আমাদের লঞ্চটির সময় ছিল সন্ধ্যা সাতটার সময়। তাই সন্ধ্যা হওয়ার আগেই বিকেলবেলা টুকু এই বুড়ি গঙ্গা নদীর ফুরফুরে হাওয়ায় কিছুটা ঘোরাফেরা করে সময়টা পার করে দিয়েছিলাম। তবে অপেক্ষা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তাই মনে হচ্ছিল আমার সময়টুকু একদমই পার হচ্ছিল না। কিন্তু কিছুই করার নেই, সময় না হলে লঞ্চটি কখনোই ছাড়বেনা। তাই ঘোরাফেরা করে সময় পার করার সময়, আমার বিধ্বস্ত চেহারার একটি সেলফি তুলে নিলাম। কেননা আমরা শুধু সারাদিন জার্নির উপরেই ছিলাম, কোন ধরনের বিশ্রাম নিতে পারিনি। এবার লঞ্চে উঠে বিশ্রাম নিতে পারব বলে অনেক খুশি হয়েছিলাম।
যখন সন্ধ্যা হয়ে আসলো, তখন আমরা আমাদের বাইকটি লঞ্চে উঠিয়েছিলাম এবং সেই সাথে আমাদের লঞ্চের টিকিট কাটা রুমে গিয়ে ব্যাগ পত্র রেখেছিলাম। তারপর আবারো লঞ্চ থেকে নেমে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে আলোকিত লঞ্চটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম। সন্ধ্যা হওয়ার জন্য লঞ্চটিতে অগণিত লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আর সেই দৃশ্য দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এরকম দৃশ্য আমি আগে কখনো দেখিনি। এই লঞ্চটি দেখে আমার কিছুটা টাইটানিক জাহাজের কথা মনে পড়ে গেল। এই আলোকিত লঞ্চটির অপরূপ সৌন্দর্য কেউ না দেখলে কখনো উপলব্ধি করতে পারবে না।
আশা করি আমার আমার বাইক ট্যুর (Bike Tour) : পর্ব - ১১... পোস্টটি আপনাদের কাছে অনেক অনেক ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই অবশ্যই আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। আজ আর নয়, দেখা হবে আগামীতে নতুন কোন পোস্ট নিয়ে।
আমি মোঃ মাহবুবুল ইসলাম লিমন। বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। বাংলা ভাষা আমার মাতৃভাষা। আমি এই অপরূপ বাংলার কোলে জন্ম নিয়ে নিজেকে অনেক অনেক গর্বিত মনে করি। এই বাংলায় আমার ভালো লাগে, বাংলায় চলতে, বাংলায় বলতে, বাংলায় হাসতে, বাংলায় গাইতে, বাংলায় শুনতে, আরো ভালো লাগে এই অপরুপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে নিজেকে হারিয়ে যেতে দিতে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন এবং আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি যেন আগামীতেও আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পারি। সবাই পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। এই প্রত্যাশাই সর্বদা।
আপনার বাইক ট্যুর এর এই পর্বটি আপনি খুবই সুন্দরভাবে প্রকাশ করেছেন। এই পর্বে আপনি বাইক নিয়ে যখন ট্রলারের মধ্যে উঠলেন সেখানে খাওয়া-দাওয়া করলেন সেই খাবারগুলো দেখতে খুবই সুস্বাদু লাগছিল।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু, সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে সহযোগিতা করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ভাই আমি আপনার আগের একটি পর্ব পড়েছিলাম। মনে হচ্ছে ভাবীকে নিয়ে আপনি সমগ্র বাংলাদেশ ট্যুরে বেড়িয়েছিলেন। এই প্রথম দেখলাম বউকে নিয়ে কেও বাইকে এত বড় লং ট্যুর দেয়। মনে হচ্ছে দারুন উপভোগ করেছিলেন। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ভাই আপনার ভাবিকে নিয়ে আমি বাইকে করে ঢাকা ভ্রমণ করেছিলাম। আর তখন থেকেই চিন্তা ভাবনা করেছিলাম সময় সুযোগ করে পদ্মা সেতু দেখে কুয়াকাটা ভ্রমণ করে আসবো। অনেকদিন পরে হলেও আমাদের চিন্তা ভাবনাকে বাস্তবায়ন করেছিলাম। এখন আবার চিন্তা ভাবনা করছি আপনার ভাবি সহ সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করে আসবো। ধন্যবাদ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার বাইক ট্যুর ১১ পর্ব এসে পটুয়াখালী যাত্রার বিস্তারিত আলোচনা করেছে। তবে সবগুলো ফটোগ্রাফি ছিল বেশ ধারুণ এবং কি আপনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। আপনার স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে জেনে খুবই খুশি হলাম। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
ঠিক বলেছেন ভাই, ঢাকা সদর ঘাটে লঞ্চে উঠে পটুয়াখালী পর্যন্ত যাওয়া আমার স্বপ্নই ছিল। আর সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলে আমি খুবই আনন্দিত। ধন্যবাদ
আপনার বাইক ট্যুরের সব পর্ব না পড়তে পারলেও অনেকগুলো পর্ব আমি পড়েছি। প্রতিটি পর্বে নতুন কিছু জানা যায়। এই পর্বে আপনি সদরঘাটের লঞ্চসহ বেশ কিছু বেপারে লিখেছেন। লঞ্চে আপনার প্রথম যাত্রা শুনে আমি খুবই এক্সাইটেড যে আপনার কেমন লেগেছে। সদরঘাটের এই ছোট নৌকা দিয়ে ওপারের লোকজন খুব আনন্দের সহিত পারাপার হয় কারন, ব্রীজ দিয়ে পার হতে গেলে টাকাও বেশি খরচ হয় আর সময় অনেক লাগে। আপনার ভেলপুরির ছবি দেখে খেতে ইচ্ছে করছে। আপনার লঞ্চ জার্নি শুভ হোক। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আমিও লক্ষ্য করেছি, সকলেই ছোট্ট নৌকা করে বুড়িগঙ্গা নদী পার হচ্ছে একদম সানন্দে। কেননা ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হলে তাদের নাকি অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার লেখনী অনেক চমৎকার।খুব সুন্দর ভাবে আপনি সদরঘাট থেকে পটুয়াখালির লঞ্চে ওঠা এবং লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করার সময় টুকুর বর্ণনা দিয়েছেন। অনেক সময় ছোট ছোট দোকান তার খাবারের স্বাদ দিয়ে অবাক করে দেয়।ব্লগটি অনেক ভাল হয়েছে।ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
সেদিন সদরঘাটের সামনে ছোট্ট ভেলপুরীর দোকানে ভেলপুরি খেতে দারুন লেগেছিল। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জেনে ভালো লাগলো যে আপনি প্রথম লঞ্চে উঠছেন। আমি কখনো লঞ্চে উঠি নি। আমার ইচ্ছা খুব তাড়াতাড়ি লঞ্চে ওঠা। দেখতে দেখতে আপনি ১১ পড়বে চলে এসেছে। আমার আপনার আগের কিছু পর্ব পড়া হয়নি। ভাবছি সময় পেলে পড়ে নেব। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপু, আমিও এই প্রথম লঞ্চে উঠেছিলাম। আর লঞ্চে উঠে এতটা সুন্দর সময় উপভোগ করেছি তা হয়তো কখনো বলে বোঝানো যাবে না। তাই একদিন সময় সুযোগ করে লঞ্চে করে ভ্রমণ করে আসবেন। ধন্যবাদ
বাংলাদেশ নদীমাতৃক হওয়ায়, এখানে লঞ্চ ব্যাবস্থা দেখছি বেশ ভালো। আমি এত বড় লঞ্চ আগে কখনও দেখি নি। আপনার যাত্রা আশা করি শুভ হয়েছে। আর আপনারা যেটাকে ভেলপুরি বলেন, আমরা পাঁপড়ি চাট বলি।ভালোই খেতে।
আপু আমিও কখনো এত বড় লঞ্চে উঠিনি, এই প্রথম বউকেসহ এত বড় লঞ্চে উঠেছি। তাই ভালোলাগাটা অনেক অনেক বেশি ছিল। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনি প্রথমবার লঞ্চে উঠেছেন এই বিষয়টা ভীষণ ভালো লাগলো। আসলে যে কোন কিছুর প্রথম অনুভূতিটা একটু অন্য রকমের হয়। ভেলপুরি খাওয়ার বিষয়টি বেশ ভালো লাগলো। আসলে কখনো কখনো ছোট দোকানে খাবার ভীষণ মজাদার হয়ে থাকে। যা আপনি খোলা ভেলপুরি দোকান থেকে পেয়েছেন। লঞ্চে ওঠার পুরো মুহূর্তটা ভীষণ ভালো লাগলো। এই ধরনের বিষয়গুলো ভীষণ মজা লাগে।
একদম ঠিক কথা আপু, কোন কিছু প্রথম অনুভূতিটা একটু অন্য রকমের হয়। তাই লঞ্চে উঠে মনে হয়েছিল, আমি যদি কখনো লঞ্চে না উঠতাম তাহলে হয়তো জীবনের সুন্দর সময় টুকু পূর্ণতা পেত না। আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।