বছর শেষের আগে প্রথম পিকনিক

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা,

বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রথম পিকনিক হয়ে গেলো। আদপে শীত আসা মাত্র মনটা কেমন যেন পিকনিকের জন্য উশখুশ করতে থাকে। শীতের ঠান্ডা আবাওয়া বলে এরকম হয় কিনা জানিনা। আসলে আজকের পিকনিক টা হুট করেই হলো। সত্যি কথা বলতে গেলে বিকেল সোয়া চারটার আগেও জানতাম না যে পিকনিক হচ্ছে। বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছি এক দাদা বললো রাতে পিকনিক হচ্ছে তোকে থাকতে হবে। আমি আবার খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে খুব একটা না করিনা। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম যে কিসের মাংস দিয়ে পিকনিক হচ্ছে। উল্টোপাশ থেকে উত্তর পেলাম হাঁস দিয়ে। আমাকে আর পায় কে? হাঁস দিয়ে পিকনিক হচ্ছে শুনে আমিও এককথায় রাজি হয়ে গেলাম।

সন্ধ্যা ছয়টা বাজতেই ডাক পড়লো। বেরিয়ে দেখি সবে উনুন খোঁড়া খুঁড়ি প্রস্তুতি হচ্ছে। আমার দায়িত্ব পড়লো মুদির জিনিস পত্র কেনার। ন'জন ও আড়াই কিলো মাংসের মাপে মুদি কিনতে চলে গেলাম। মুদি কিনে যখন ফিরলাম তখন হাঁসের লোম ছাড়ানো চলছে আর ঠিক পাশে উনুনে গরম জল হচ্ছে।

PXL_20221127_184911871_copy_1209x907.jpeg

আসলে হাঁসের মাংসের এটাই হয়তো সবচেয়ে কঠিন কাজ। প্রথমে হাঁসের লোম গুলো তুলতে হবে। ফের গরম জলে পরিষ্কার করে হাঁসের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম লোম গুলো খুঁটিয়ে তুলে ফেলে দিতে হবে। তারপর আবার হাঁস গুলোকে আগুনে পোড়াতে হবে। যারা হাঁস খায়না বা খায়নি তারা হয়তো বলবে এত ঝামেলার কি প্রয়োজন, হাঁসের চামড়াটা তুলে ফেললেই তো হয়। কিন্তু তাদের বোঝানো যাবে না যে হাঁসের চামড়া না থাকলে হাঁস খেতে মোটেই ভালো লাগবে না।

সন্ধ্যে ছটা থেকে রাত্রি সাড়ে আটটা বাজলো শুধু হাঁস গুলোকে ছাড়িয়ে পরিষ্কার করতে। আরেকটু সময় কম লাগতো কিন্তু ছাড়াতে বসেছিলো মাত্র দুজন। কাজের জন্য পিকনিকে অংশগ্রহণকারীরা অনেকেই ততক্ষণে এসে পৌঁছায়নি তাই দুজন উপরেই চাপটা বেশি ছিলো। কাজ জোর কদমে এগোচ্ছে না দেখে আমিও শেষ মুহূর্তে হাত লাগিয়ে দিলাম। বাইরে থেকে ছোটো ছোট লোমগুলো টেনে বের করতেই লোম বড় মাপের হয়ে যাচ্ছিলো। পেটে গেলে যে কি হবে সেটা ভেবেই আমি আরো খুঁটিয়ে তুলছিলাম। হাঁস ছাড়াতে ছাড়াতে বাকিরা আসতে শুরু করলো। বাকিরা পৌঁছতেই বাড়তি দুজনকে হাঁসের দায়িত্বে লাগিয়ে ভাতের জন্য তোড়জোড় করে দেওয়া হলো।

PXL_20221127_205219550_copy_1209x907.jpg

ভাত উনুনে চড়তে না চড়তেই মাংস পরিষ্কার হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করার তাগিদে মাংস ছোটো ছোটো পিস করে কেটে প্রস্তুত করে নেওয়া হলো।

PXL_20221127_205426040_copy_1209x907.jpeg

ভাত নামলো যখন তখন ঘড়িতে প্রায় সাড়ে নটা বাজে, হাতে সময় বেশি নেই তাই ঝটপট করে মাংস তুলে দেওয়া হলো। পেঁয়াজ, রসুন, মসলা ও মাংস সবকিছু একসাথে দিয়ে রান্না চালু হলো।

PXL_20221127_213757087_copy_1209x907.jpeg

PXL_20221127_222134238_copy_1146x818.jpeg

মাটির উনুনে রান্না বেশ তাড়াতাড়ি হয় তবুও মাংস রাঁধতে ঘন্টা দেড়েক লেগে গেল। ঘড়িতে তখন পৌনে এগারোটা। আর অপেক্ষা করার সময় নেই তাই সবাই হুরমুরিয়ে খেতে বসে পড়লো।

PXL_20221127_224020488_copy_988x707.jpeg

মেনুতে বিশেষ কিছুই ছিল না। হাঁসের মাংস, মাথাপিছু দুখানা গোটা রসুন সাথে কিছু ব্যাট পাপড় আর লেবু। আহা ঠাণ্ডার রাতে এ যেন অমৃত।




IMG_20220926_174120.png

Vote bangla.witness


Support @heroism by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

|| Join HEROISM ||

Sort:  
 2 years ago 

ইশ!! দাদা দেখে তো লোভ সামলানো যাচ্ছে না। আমার তো ইচ্ছে করছে এই প্লেট আমি খেয়ে ফেলি। আপনি কিন্তু একেবারে ঠিক বলেছেন হাঁসের মাংস খাওয়ার যতটা মজার এবং এটা প্রস্তুত করতে ঠিক ততটাই কষ্টের। বেশ ঝামেলা পোহাতে হয় হাঁস খেতে গেলে। লারকির চুলায় রান্নাও বেশ তাড়াতাড়ি হয় এবং লারকির চুলার রান্না গুলো খেতেও ভালো হয়। মেনু বেশি না হলেও যা হয়েছে তা আসলেই অমৃত।

 2 years ago 

হাঁস পরিষ্কার করা খুবই ঝামেলার একটি কাজ। এজন্য আমি বাসায় হাঁস খুব একটা আনি না। আমার শ্বশুরবাড়িতে গেলে তখন আমার শাশুড়ি পরিষ্কার করে দিয়ে দেয়। তাছাড়া খাওয়া হয় না এই পরিষ্কার করার ঝামেলায় । মাটির চুলায় রান্না করলে যে কোন খাবারের স্বাদ আরো বেড়ে যায়। আপনার হাঁসের মাংসের পিকনিক শুনে তো আমারই মনে হচ্ছে আমিও জয়েন করি। পিকনিকে খুব মজা হয়েছিল নিশ্চয়ই।

 2 years ago (edited)

আসলে সবাই মিলে খাওয়ার মজাই আলাদা মেনুতে যাই হোক না কেন।ইশ মাটির চুলার রান্না আসলেই অমৃত।মাটির চুলার রান্নার স্বাদেই আলাদা।আসলেই হাঁসের মাংস খেতে অনেক ঝামেলা আছে।পশম পরিষ্কার করার চেয়ে আর কোন ঝামেলা আছে আমার মনে হয় না।আসলেই চামড়া সহ হাঁসের মাংসের স্বাদই আলাদা ।শীতের সময় পিকনিক বেশ জমেই উঠে।সব মিলিয়ে বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

এটা ঠিক বলেছেন হাঁসের মাংসর চামড়া ফেলে দিলে হাঁসের মাংসের টেস্টটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর চামড়ার উপরের লোমগুলো তুলতে গেলে তখন আর হাঁসের মাংস খেতে মন চায় না। আমাদের ঢাকাতে তো বাইরের লোকদের কাছে চুলতে দিলে ওরা চামড়া টাই ফেলে দেয় তখন আর ভালো লাগেনা খেতে। আর হাঁসের মাংস শক্ত হওয়ার কারণে সিদ্ধ হতে আপনার দেড় ঘন্টা সময় লাগে গিয়েছে । মাংসের কালারটা অনেক সুন্দর হয়েছে। শীতের শুরুতেই আপনি পিকনিক করে নিলেন তাহলে শীত যেতে যেতে আরো কয়েকটি পিকনিক হবে কে জানে। ভালই লাগে শীতের ভিতরে রাত জেগে পিকনিক করতে।

 2 years ago 

হাঁস পরিষ্কার করা আসলে অনেক ঝামেলার কাজ। কিন্তু খেতে মন্দ নয়। আর পিকনিকে এমনটা হয়ে থাকে অনেকেই কাজের ভয়ে দেরিতে আসে। আমরা যখন পিকনিক করি তখন আমার কিছু বন্ধু আছে যারা কাজ করতেই যায় না। পিকনিকের আমার একটা জিনিস ভালো লাগে সবাই মিলে একসাথে কাজ করা। আবার সবাই মিলে একসাথে খেতে বসা। এগুলা আসলে অনেক ভালো লাগে।

 2 years ago 

এই সময় পিকনিক তো দারুন মজার ব্যাপার। তবে ঠিক বলেছেন হাঁসের চামড়া ছাড়ানো ভীষণ কষ্টকর একটা ব্যাপার। আর হাঁসের চামড়া ফেলে দিলে তো হাঁসের মাংসের মধ্যে কোন মজাই থাকে না। এটা আমি জানি। দেখছি রান্না করতে করতে একেবারে বেশ রাত হয়ে গেল। তবে উনুনে রান্না করেছেন যেহেতু এক্ষেত্রে টেস্ট একটু ভালো হয়। মেনুতে আর কি লাগবে ভাইয়া, এখন তো শুধু হাঁসের মাংস তাহলেই চলে। সত্যি সবাই মিলে এভাবে খাওয়ার মজাই আলাদা।

 2 years ago (edited)

বছর শেষের আগেই প্রথম পিকনিক খাওয়ার অনুভূতি দেখে অনেক ভালো লাগলো। এখন শীতকাল আর এই সময় সবাই পিকনিক খাওয়ার জন্য মেতে উঠে। হাঁসের মাংস আমারও অনেক পছন্দের । তবে একটু ঝামেলা মনে হয় পশম গুলো পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে। সবাই মিলে পিকনিক হওয়ার এত সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

পিকনিক মানে আনন্দ পিকনিক মানে মজা ।পিকনিক করতে কার না ভালো লাগে। আসলে সবাই একসঙ্গে খাওয়ার মজাদার আলাদা কে কেমন খেতে পেল সেটা বড় কথা নয়। হাস পরিষ্কার করতে একটু কষ্ট লাগে বটে কারন হাসে অনেক ছোট ছোট লোম থাকে। কষ্ট হলেও তেমন একটা ব্যাপার হয় না কেননা হাসের মাংস খেলে সবকিছু কষ্টের কথা ভুলে যাই। আসলেই আপনাদের পিকনিকটা অনেক মজা হয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। দেখি কয়েকদিনের মধ্যে আমরাও পিকনিক করবো ।ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য দাদা।

 2 years ago 

শীতকালে যদি এরকম পিকনিক না করা যায় তাহলে তো জীবনের আনন্দই বৃথা হয়ে যাবে। হাঁসের মাংসের তুলনা কোন কিছুর সাথে চলে না। এটি খেতে যেমন লোভনীয় এবং সুস্বাদু হয়, এটি প্রসেস করা ততটাই কঠিন এ বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই, দাদা। কাঠের চুলায় হাঁসের মাংস রান্না করলে তার ঘ্রানেই পেট ভরে যায় অর্ধেক।

 2 years ago 

শীত হল পিকনিকের আমেজ,বনভোজনের আমেজ। এভাবে রাতের বেলা হাঁসের মাংস দিয়ে ভাত খেলে ভীষণ পাপ লাগে। কারণ আমাকে না দিয়ে খাওয়া হচ্ছে।আমাকে ডাকলে হত।মাংসটা এমনি এত লোভনীয় দেখতে হয়েছে। যে নিজেকে আটকে রাখা দায়।হাঁসের মাংস দেখে একটা বান্ধবীর কথা মনে পড়ল। সে হাঁস খায় না।কারণ তার ধারণা হাঁস মা সরস্বতীর বাহন। ওকে আমি বললাম,"ওরে সেটা তো রাজহাঁস! "ও তাও খেলো না। বলল,"আমি ঝোল আর আলুটা খাব।কিন্তু মাংস খাব না। "আমি বললাম,"কেন ঝোল আর আলুতে মাংসের জুস যায়নি? উত্তরে বলল যে, "না ডাইরেক্ট তো যায়নি।"যাক আপনারা বেশ ভালই আনন্দ করেছেন বছর শেষের আগেই একটা পিকনিক করে। আমাদের সব পিকনিক গুলো নেক্সট ইয়ারি।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 66750.09
ETH 3474.88
USDT 1.00
SBD 2.80