জেলা আইনি পরিষেবা শিবিরে // ১০% পেআউট লাজুক খ্যাঁক-কে

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago


৩-রা অক্টোবর, ২০২১


নমস্কার,

বাড়ি আসাটা একদিক থেকে হয়তো সার্থকতা পেলো, যখন শনিবার সকালে জেলা আইনি কর্তৃপক্ষ থেকে আইনি পরিষেবা শিবিরে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রন পেলাম।

নিজস্বী | w3w
আজকের রবিবারটা অন্য সব রবিবারের থেকে একটু ভিন্ন ছিলো। প্রতি ছয় মাস অন্তর জেলা আইনি কর্তৃপক্ষ দ্বারা আইনি শিবির করে নারী সুরক্ষা এবং বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে সাধারণ মানুষদের অবগত করানো হয়। এইবারে শিবিরে আমি থাকতে পারে বেশ খুশি।


আইনি পরিষেবা শিবির | w3w


বিগত কয়েকবছরে আমার জেলায় নারীপাচার, বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে, আর এসবই হচ্ছে সাধারণ মানুষের নাকের তলায়। কেউ বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, কেউ ভালো পাত্রের সুযোগ না ছাড়ার আশায়। বর্ডার এলাকা হবার সুবাদে দিন দিন যেন এগুলো বেড়েই চলেছে কমবার প্রবণতা নেই। অথচ এগুলো সাধারণ চোখে আসে না কিংবা আসে না কোনো খবরের পাতায়। একবিংশ শতাব্দীতেও মেয়েদেরকে বাবা-মায়ের বোঝা ভাবার মানসিকতা বহাল তবিয়তে বর্তমান। কর্মসংস্থানের অভাবেই হোক, বা আর্থিক অনটনেই হোক পড়াশোনা শেষ না হতেই বিয়ে দেবার প্রবণতা দিনদিন বাড়ছে। সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা অনুসারে কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে বাল্যবিবাহ ব্যাপক ভাবে বেড়েছে, প্রায় ৪০ শতাংশের বেশি মেয়েদের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর এরই সুযোগেই নারীপাচারকারীরা বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক ক্ষেত্রে বাইরের রাজ্যের পাত্র এনে কম বয়সী মেয়েদের সাথে বিয়ে দিয়ে তাদের নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে কাজের লোভ দেখিয়ে।


আজকের আইনি মেলা ছিলো প্রান্তিক গ্রামের মানুষের এসবের ব্যাপারে অবগত করার। উপস্থিত ছিলেন জেলার সব স্তরের অধিকারিকেরা।

অধিকাকারিকের বক্তৃতা | w3w
জেলা বিচারপতি থেকে ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার থেকে নারী ও শিশু সুরক্ষা দপ্তরের প্রধানরা। বেশ কিছু স্টল বানিয়ে সেখান থেকেই চলছিলো নানান পরিষেবা দেওয়া। মাঝে মধ্যে বৃষ্টির জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে সবাই চলে আসছিলেন মূল প্যান্ডেলের তলায়।


শিবির | w3w

নানান আইনি পরামর্শের পাশাপাশি কিছু ঘটনা শুনে আমি বেশ আশ্চর্য হচ্ছিলাম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স ১১ বা ১২ বছর বয়স থাকতেই তাদের বিবাহ দেবার চেষ্টা শুনে আঁতকে উঠছিলাম। ২০২১ সালে এসেও বাল্যবিবাহের মতো ঘৃণ্য একটা কাজ চলছে সেটা ভেবেই কেমন লাগে, তার উপরে ১১-১২ বয়সী নাবালিকাদের পড়াশোনা ছাড়িয়ে বিয়ে দেবার কথা ভেবে বেশ মর্মাহত হলাম।

আমার তরফ থেকে বিনে পয়সায় আইনি সহায়তার আশ্বাস দিলাম। বর্তমানে তার থেকে বেশি কিছু করবার ছিলো না। কখন তিন ঘন্টা কেটে, দুপুর ২ টো বেজে গেলো বুঝতেই পারলাম না। শিবির প্রায় শেষার্ধে।

শিবিরের শেষ দিকে মঞ্চে বেশ কিছু সাহসী মেয়েদের সংর্বধনা দেওয়া হলো, যারা বাড়ি থেকে জোর করে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে। কারো ক্লাস ১২, কারো ক্লাস ৯ কারো আবার ৬। প্রশাসনের তরফ থেকে তাদেরকে কুর্ণিশ জানানো হলো। তাদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ এবং বাবা মায়ের ১০০ দিনের কাজের অন্তর্ভুক্তি পুরো দায়িত্ব জেলা অধিকারিকেরা নিলেন। এরপরেই শিবিরের সমাপ্তি হলো।


সংবর্ধনা | w3w


সঠিক শিক্ষার যান থাকার কারণেই প্রতিদিন পৃথিবীর প্রায় কয়েকলক্ষ নাবালিকা বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। আমরা কি পারিনা, আমাদের এলাকায় বাল্যবিবাহের কুফল নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে? আমরা কি পারিনা মেয়েদের জন্য সুস্থ স্বাভাবিক পৃথিবীতে বাঁচার সুযোগ দিতে?

10 million additional girls at risk of child marriage due to COVID-19 - UNICEF

Sort:  
 3 years ago 

প্রশাসনের তরফ থেকে তাদেরকে কুর্ণিশ জানানো হলো। তাদের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ এবং বাবা মায়ের ১০০ দিনের কাজের অন্তর্ভুক্তি পুরো দায়িত্ব জেলা অধিকারিকেরা নিলেন।

এই ব্যাপারগুলো অনেক বেশি ভালো লেগেছে।
আমাদের দেশেও এর হার অনেক বেশি।
এইযে এক বান্ধুবির ভাইয়ের দাওয়াত পেলাম।মেয়ে হলো মাত্র ক্লাস টেনের।
আমি তো পুরোই অবাক।

 3 years ago 

ভারত,বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া এইসব দেশে বাল্যবিবাহের হার সবচাইতে বেশি।

ক্লাস টেন একবারে বাচ্চা মানুষ তো। ১৫ কিংবা ১৬ বছর বয়স হবে, নাবালিকা। এরম আকছার হচ্ছে। আমাদের দুর্ভাগ্য।

 3 years ago 

ভালো এবং প্রিয় কাজের পাশে থাকলে কখন সময় পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায় না। আপনি বিভিন্ন স্টলে এবং কাজে খুব মজা ছিলেন এবং বিভিন্ন ঘটনা গুলো আপনাকে আতঙ্কিত করছিল তাই আপনি সময়ের কথা চিন্তা করতে পারেন না। আসলেই খুব কম বয়সে বাল্যবিবাহ খুবই সমস্যার একটি বিষয়। দারিদ্রতা হচ্ছে প্রধান সমস্যা আর এ কারণেই এ বিষয়গুলো বেশি ঘটছে আর পাশাপাশি শিক্ষার ব্যাপারটিও আছে।

আমাদের দেশে এরকম করে মেলা বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে আইনি পরিষেবা ও পরামর্শ দেয়ার তেমন কোনো নজির নেই তবে এই আইডিটি আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে যেটি করে আসলে জনগণকে অনেক বেশি পরিমাণে উপকৃত করা যাবে। আমার সাথে কখনো কোনো প্রশাসনের কথা হলে আমি এ বিষয়টি শেয়ার করব।

 3 years ago 

দারিদ্রতা মুক্তির পথ খোঁজা বেশি জরুরি, বিয়ে দিয়ে অব্যাহতি পাওয়া যাবে এটা তো ঠিক নয়। বিয়ের পরে নানান ভাবে নির্যাতন চলে মেয়েদের উপর। আসলে আমাদের মতো দেশে মেয়েদের বোঝা ভাবার মানসিকতা রয়ে গেছে। এর আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।

সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে, আর্থিক ভাবে অনগ্রসরদের আইনি সহায়তা বা বাল্যবিবাহের মতো কুপ্রথার বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ করতে, এটাই একমাত্র পথ।

 3 years ago 

নির্যাতন এর ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগে আমার কাছে। ঠিক বলেছেন

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64364.24
ETH 3416.30
USDT 1.00
SBD 2.48