আসুন ঘুরে নিই উড়িষ্যার দ্বিতীয় পুরী জগন্নাথ মন্দির
চাঁদিপুর উড়িষ্যার ইমামি জগন্নাথ মন্দির
আজ উড়িষ্যায় অবস্থিত চাঁদিপুরের একটি মন্দিরের ছবি আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেব। এই মন্দিরটি চোখের সামনে থেকে দেখলে আপনার মন ভরে যাবে অতুলনীয় কারুকার্যের শোভায়। মন্দিরটি খুব একটা পুরনো নয়। কিন্তু দর্শনীয় হিসেবে গন্তব্য হওয়া উচিত সকল শিল্পপ্রেমী মানুষের। আসুন আজ এই মন্দিরের ছবি এবং ডিটেলের ব্যাপারে একটু আলোকপাত করি।
আমরা সকলেই জানি উড়িষ্যা এবং জগন্নাথদেব প্রায় সমার্থক। অর্থাৎ জগন্নাথ হলেন প্রধানত উড়িষ্যার দেবতা। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে তিনি সেবিত হয়ে আসছেন যুগ যুগ ধরে। সেই মন্দিরের খ্যাতি ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। সারা পৃথিবী থেকেই মানুষ আসেন জগন্নাথ দর্শন করতে। আর উড়িষ্যার যে কোন স্থানে গিয়েই আমি দেখেছি জগন্নাথ দেবের অবস্থান। প্রায় সব জায়গাতেই জগন্নাথ মন্দির বিদ্যমান যেখানে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা একত্রে পূজা পান ভক্তদের থেকে। চাঁদিপুর গিয়েও চলে গেছিলাম সেখানে অবস্থিত ইমামি জগন্নাথ মন্দিরে। ইমামি কোম্পানি ২০১৬ সালে এই জগন্নাথ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। এখানে পুজো পেয়ে আসছেন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। বিশাল এই মন্দির প্রায় পুরোটাই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি। এমনকি অবাক করার বিষয় হলো, এই মন্দিরের চার কোণে পুরীর মন্দিরের মতো মাতা বিমলা, বজরংবলী, মহাদেবের মন্দিরও অধিষ্ঠিত। পুরীর মন্দিরের মতো মন্দিরের সামনে বাইশটি সিঁড়ি এবং গরুড়স্তম্ভ রয়েছে। মন্দিরের মতো এখানেও মন্দিরের ওপরে উড়ছে জগন্নাথের ধ্বজা।
এই মন্দিরের প্রধান বিশেষত্ব হল মন্দিরগাত্রে করা বিভিন্ন মূর্তি এবং কারুকার্য। যে কারুকার্য দেখে মোহিত হয়ে যেতে হয়। কে বলে বর্তমান শিল্পীরা আগেকার মন্দিরের মতো কারুকার্য করতে জানেনা? এই মন্দির মানুষের এই প্রচলিত কথাকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। হালফিলের শ্রমিক শিল্পীদের হাতে তৈরি এই মন্দিরের গায়ে যে কারুকার্য নিজে চোখে দেখে এলাম তা এক কথায় অনির্বচনীয়। মূর্তির মধ্যে বিভিন্ন দেবদেবী এবং তাদের বহুল ঘটনা ও লীলা চোখে পড়ার মত।
এই মন্দিরে পুরীর মন্দিরের মতো পাণ্ডার আনাগোনা নেই। এখানে কোথাও কোনো ময়লা পড়ে থেকে ভক্তদের যাওয়ার পথকে বাধা দেয় না৷ সবটাই ভীষণ পরিচ্ছন্ন এবং সংরক্ষিত। মন্দির থেকে ফেরার পথে উপরি পাওনা হিসেবে পেয়ে গেছিলাম ভোগ প্রসাদ। সকলে মিলে সেই ভোগ প্রসাদের স্বাদ নিলাম। তারপর ধীরে ধীরে বেরিয়ে পড়লাম পরবর্তী গন্তব্যের জন্য। শুধু মনের মধ্যে নিয়ে এলাম এক অভূতপূর্ব আনন্দ। শিল্পপ্রেমী মানুষ হিসেবে এই মন্দিরের স্থাপত্য আমাকে মুগ্ধ করেছে। একেবারে নতুন এই মন্দির বর্তমানে চাঁদিপুর অঞ্চলের প্রধান আকর্ষণ। সমুদ্র সৈকতে ঘোরার সাথে সাথে মানুষ ঘুরে যান এই মন্দিরে। পুরীর মন্দিরের আদলে তৈরি এই মন্দির প্রচুর ভক্তকে আকর্ষণ করে।
আজ এই পোস্টে সেই মন্দিরের কিছু ছবি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। যদি আপনাদের এই পোস্ট ভালো লাগে তবে অবশ্যই জানাবেন। অনুপ্রাণিত হব নতুন গল্প আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য।
(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 6/7) Get profit votes with @tipU :)
চাঁদিপুর উড়িষ্যার ইমামি জগন্নাথ দেবের এই মন্দিরের কথা প্রথমবার শুনলাম ভাই। মন্দিরটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ন্যায় তৈরি করা হয়েছে দেখছি। দারুন কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন মন্দিরটির, যার মধ্যে দিয়ে মন্দিরটির বিভিন্ন অংশের কারুকার্য খুব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। দারুন একটি উপস্থাপনা ছিল আপনার।
হ্যাঁ এই মন্দিরের পরিবেশ এবং কারুকার্য ভীষণ সুন্দর। চাঁদিপুর গেলে অবশ্যই এখান থেকে ঘুরে আসবেন। এমন পরিচ্ছন্ন মন্দির ভারতবর্ষে খুবই কম আছে। মন্দির ছাড়াও চাঁদিপুর সত্যই এক মনোরম জায়গা। কম মানুষ যায় বলে আজও এই জায়গা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ধরে রাখতে পেরেছে।
পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন পরিবেশ আসলে সবাই অত্যন্ত পছন্দ করে। চাঁদিপুর জায়গাটা এত পরিষ্কার - পরিচ্ছন্ন শুনেই আমার ঘুরে দেখতে ইচ্ছে করছে। কখনো সুযোগ হলে অবশ্যই ঘুরে আসব জায়গাটা ।
তোমার পোস্ট পড়ে জানলাম, কিন্তু আমি চাঁদিপুর যাইনি৷ আবার এও বলব ট্যুর গাইড হিসেবে তুমি দারুণ৷ যা জানো৷ এবার পুরীতে না বলে দিলে আমি হয়তো কোনদিনই ওইসব জায়গা দেখতাম না৷ ভেবেছি ওইগুলো নিয়ে পোস্ট লিখব৷
তোমার এই পোস্টটিও খুব গুছনো হয়েছে। যেভাবে দারুণ করে লেখো। অনেক কিছু জানলামও।