আজ ফটোগ্রাফি পোস্ট। কক্সবাজার ভ্রমণের অ্যালবাম থেকে কিছু বাছাই ছবি
কক্সবাজার ভ্রমণের অ্যালবাম থেকে কিছু ছবি
এই বছর মার্চ মাসে আটদিনের জন্য গিয়েছিলাম বাংলাদেশ সফরে৷ উদ্দেশ্য ছিল দুই বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন৷ সেই উপলক্ষ্যে অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়ে ছিল এই বাংলাদেশ সফরটি৷ আমন্ত্রণ ছিল টাঙ্গাইলের শালিয়াবহ গ্রাম থেকে। আর ডাক ছিল ঢাকা একুশে বইমেলায়। সেইসব এক করেই পৌঁছে গেছিলাম প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের মাটিতে। আর সেই সফরের মধ্যেই একটু বিনোদনের জন্য দুদিনের জন্য গেছিলাম বাংলাদেশের সবথেকে মনোরম সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজারে। কলকাতায় বসেই ঢাকা কক্সবাজার বাসের টিকিট কেটে রেখেছিলাম আগেই৷ একটা দিন ঢাকায় কিছু কর্মসূচির পর রাত ১১ টায় চেপে বসেছিলাম কক্সবাজারগামী বাসে। বাসটি ছিল বাংলাদেশের বিখ্যাত হানিফ পরিবহনের। যাত্রী স্বাচ্ছন্দে এদের ব্যবস্থাপনা বেশ চোখে পড়ার মত।
পরিচ্ছন্নতায় ও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে বেশ সুন্দর কক্সবাজার সৈকত। পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকত হিসাবে বিখ্যাত এই জায়গা বাংলাদেশ থেকে শুরু হয়ে চলে গেছে সেই মায়ানমার পর্যন্ত। সমুদ্রের তীর ঘেঁষে রাস্তা চলে গেছে সোজা মায়ানমার সীমানায়। সেই রাস্তা দিয়ে অনেকটা গাড়ি নিয়ে গেলেও শেষে শুনলাম বাংলাদেশ - মায়ানমার সীমান্ত তখন উত্তপ্ত। তাই আর এগোতে পারলাম না। তাছাড়া সন্ধেও হয়ে গেছিল অনেক আগেই৷ তাই ফাঁকা ও মনোরম কয়েকটি বীচ ঘুরে আবার ফিরে এলাম হোটেলে। আমার কক্সবাজার সফরের সঙ্গী ছিলেন লেখালেখির জগতেরই ঘনিষ্ঠ দাদা কিংশুক চক্রবর্তী। তিনি যেভাবে আমায় এই ভ্রমণে সঙ্গ দিয়েছিলেন, তা কোনোদিন ভোলবার নয়। দাদার সৌজন্যে জীবনে প্রথমবারের জন্য দুদিন ছিলাম কোনো পাঁচতারা হোটেলে। সেখানকার আতিথেয়তাও ভোলবার নয়। হোটেলটির নাম ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ।
কক্সবাজার ঘুরে এসে সেখানকার সৌন্দর্য যেন মনে গেঁথে গেছে আজীবনের জন্য। সাদা বালির সৈকত ও অকূল সাগর যেন ছুঁয়ে যায় মনের অন্তঃস্থল।
আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম আমার কক্সবাজার ভ্রমণের সময় তোলা কয়েকটি মূল্যবান ছবি। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে যেমন দীঘা, মন্দারমণি সৈকত, বাংলাদেশে ঠিক তেমনই কক্সবাজার। আসুন দেখে নিন আমার মোবাইলে তোলা কক্সবাজারের মন ভালো করা ছবিগুলি।
কক্সবাজারে হোটেল ওয়েস্টার্ন হেরিটেজের ছাদে সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছি। পিছনে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ কক্সবাজার শহরটি। এই হোটেল আমার জীবনে থাকা সর্বশ্রেষ্ঠ হোটেলগুলির মধ্যে একটি। এখানকার আতিথেয়তা এবং স্বাচ্ছন্দ আজীবন মনে রাখবার মতো।
এই সেই হোটেল ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ। কক্সবাজার কলাতলি মোড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাশে অবস্থিত অন্যতম একটি পাঁচ তারা হোটেল এটি। অসাধারণ অভিজ্ঞতা নিয়ে থেকেছি এই দুটি দিন।
আমার ক্যামেরায় বন্দি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ছবি। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটির দিনগুলোয় অসংখ্য পর্যটক ঘুরতে আসেন এখানে। আমার মতো ভারতবাসী খুব একটা চোখে না পড়লেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা বাংলাদেশী পর্যটকদের সঙ্গে কথা হয়েছে, আলাপ হয়েছে অনেক। এখানে সমুদ্রের সৌন্দর্য চোখে লেগে থাকবার মত। আর এত দীর্ঘ পরিচ্ছন্ন সৈকত খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে।
সারা ভারতবর্ষের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত ঘুরেও আমি এমন নৌকা কোনদিন দেখিনি। কিংশুকদার কাছে জানতে পেরেছি বাংলাদেশে এই নৌকাগুলিকে বলা হয় শাম্পান। অদ্ভুত এর গড়ন। শুনলাম বড় বড় ঢেউকে প্রতিহত করে সমুদ্রে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে এই নৌকাগুলি ভীষণ বিজ্ঞানসম্মত ভাবে তৈরি। প্রায় অর্ধচন্দ্রাকর এই নৌকাগুলি মাছ ধরার কাজে বাংলাদেশে বহুল ভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি নৌকা যেন এক একটি সাহিত্যের পটভূমি। সেখান থেকে তৈরি হয় উপন্যাস। অসাধারণ এই শাম্পানগুলি আমি মাঝে মাঝেই ছবিতে দেখি এবং মিশে যাই কোন এক দূর অজানায়।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে সূর্যাস্তের ছবি। এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। সূর্যোদয়ের সময় থাকবো বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেছিলাম ফাঁকা বীচের দিকে। তারপর আমি আর কিংশুকদা দুজনে সমুদ্রের পাড়ে বসে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেছি সূর্যের দিকে। ধীরে ধীরে দিকচক্রবালে ঢলে পড়া সূর্যের রঙ পরিবর্তন হয়েছে আপন খেয়ালে। আমরাও মিশে গেছি সেই রঙে। সেই অসাধারণ মুহূর্তটিকেই বন্দি করেছিলাম নিজের ক্যামেরায়।
সমুদ্রের ধারে এক জায়গায় এমন ভাবেই সারিবদ্ধ হয়ে রাখা ছিল শাম্পান গুলি। অসাধারণ এই দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি না করে উপায় ছিল না। ছবিতে যা দেখাতে পেরেছি, চোখের সামনে তার রূপ আরও অনুপম। এই মনোরম পরিবেশে এমন খালি নৌকাগুলি যে আবহের সৃষ্টি করেছে, তা যে ভাষাতেই প্রকাশ করার চেষ্টা করি, কম পড়ে যায়।
কক্সবাজারে জনমানবহীন খালি সৈকতের ছবি। এখানে একমাত্র হেঁটে বেড়ায় লাল কাঁকড়ার দল।তারাই রাজা। মানুষের সঙ্গে তাদের অহরহ লুকোচুরি খেলা। একদিকে সমুদ্র, অন্যদিকে ঝাউবন এবং মাঝখানে মানবহীন বীচে লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি, এ যেন এক অপার্থিব পসরার ডালি সাজিয়ে প্রকৃতি বসে আছে আমাদের জন্য।
জনমানবহীন সমুদ্র সৈকতের আরো একটি ছবি। যেখানে ফেনিল সাগর ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। এই সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশের নয়। আমরা সাধারণত কোলাহল মুখর সৈকত দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু সেসবের বাইরে এই কোলাহলহীন সমুদ্র সৈকত যেন এক টুকরো প্রাণের আরাম হয়ে জাঁকিয়ে বসেছিল মনের গভীরে।
এই সেই লাল কাঁকড়া। যা দাপিয়ে বেড়ায় কক্সবাজার সৈকতের সিংহভাগটাই। একজন স্থানীয় বালক আমাদের জন্য এমন একটি লাল কাঁকড়া ধরে এনেছিল চোখের সামনে। একদম কাছে থেকে এই কাঁকড়ার সৌন্দর্য দেখে ক্যামেরায় বন্দি না করে পারিনি। যেন একদৃষ্টে দাবীহীন তাকিয়ে আছে আমার দিকেই। আজ সেই ছবিটি দিয়েই শেষ করলাম আমার কক্সবাজার ঘোরার অ্যালবামটি।
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে ভাইয়া।
আপনার মন্তব্য ভীষণ ভালো লাগলো। বাছাই করা কিছু ছবি তুলে এনেছি আপনাদের জন্য। আপনাদের ভালোলাগাটাই আমার প্রাপ্তি।
বেশ ভালো লাগলো আপনার কক্সবাজার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জেনে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি গুলো সুন্দর হয়েছে, সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ করলাম পুরো ব্লগটা।
শুভেচ্ছা রইল।
অনেক ভালোবাসা ও ধন্যবাদ শুভ ভাই। আমার পোষ্টের ছবিগুলি তোমার ভালো লাগার জন্য অনেক খুশি হলাম। সকাল সকাল এমন সুন্দর মন্তব্য দেখে মন ভালো হয়ে গেল।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
লাল কাঁকড় দেখতে আমার কাছে ভালোই লাগে।
হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন। লাল কাঁকড়া দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। ভারতেও দীঘার কাছে কয়েকটি বীচে প্রচুর লাল কাঁকড়া আছে।
সেই দারুণ ছবিগুলো আবার দেখলাম। সাথে চমৎকার সাবলীল গদ্যে ভ্রমন অভিজ্ঞতা৷
বাংলাদেশ ভ্রমণের এই অংশটা কিন্তু তোমার খুব আরামের ছিল। আর মজাদারও। একদিন হোটেল আর তুমি যেই আতিথেয়তা পেয়েছ তার কথা শেয়ার করো। খুব ভালো লাগবে সবার আশাকরি।
ঠিক আছে তাই করব। একদিন হোটেলের অভিজ্ঞতা এবং তার সঙ্গে সমস্ত ছবি শেয়ার করব।
ভাইয়া আপনার কক্সবাজার ভ্রমণের পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো।দারুন কিছু ফটোগ্রাফি দেখতে পেলাম পোস্টটির মাধ্যমে।বেশ সুন্দর সময় কাটিয়েছেন জায়গাটিতে বুঝতে পারলাম।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আমার ফটোগুলি আপনার অনেক ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগলো। কক্সবাজার ভ্রমণ সত্যিই চিরকাল আমার অন্তরে লেখা থাকবে।
আপনার ভ্রমন অনুভুতির কথা শুনে মন চাচ্ছে আজই কক্সবাজার ঘুরে আসি। আসলে অনেক সুন্দর একটি জায়গা কক্সবাজার জীবনে এখনও সুযোগ হয়নী ওখানে যাওয়ার তবে আপনার ভ্রমন অনুভুতির কথা শুনে যাওয়ার ইচ্ছে টা অনেক বেড়ে গেল। অনেক সুন্দর সুন্দর ছবিও আপনি তুলেছেন। আপনার সুন্দর ভ্রমন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সেকি! আমি অন্য দেশের লোক হয়ে কক্সবাজার ঘুরে চলে এলাম, আর আপনি এখনো যাননি? ঘুরে আসুন ভাই। আমার তো দুর্দান্ত লেগেছে। আমি ভারতের অনেক বীচ ঘুরেছি। ভাইজাক, পুরী, দীঘা, চাঁদিপুর, গোপালপুর আরো অনেক। কিন্তু কক্সবাজার ভীষণ সুন্দর লেগেছে।
নিশ্চয় যাব ভাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
বেশ সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি উপস্থাপন করেছেন ভাইয়া।আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো।নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা দারুন তুলে ধরেছেন।যা পড়ে ও ফটো গুলো দেখে খুবই ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার পোস্ট পড়ে সুন্দর মন্তব্য করায় অনুপ্রাণিত হলাম। ছবিগুলোও ভালো লাগলো শুনে খুব খুশি হলাম।
আমাদের বাংলাদেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ করেছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো দাদা। আমিও কক্সবাজার ভ্রমণ দুইবার করেছি এখানকার সৌন্দর্য সত্যি আমাকে মুগ্ধ করে। আপনার তোলা চমৎকার ফটোগ্রাফি গুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে বিস্তারিতভাবে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দাদা।
আমার ছবি এবং পোস্ট আপনার ভালো লাগায় ভীষণ খুশি হলাম। সত্যই কক্সবাজার আমার দেখা এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এই অঞ্চলের এই অঞ্চলের সৌন্দর্য আমার মোহিত করেছিল।
কক্সবাজার ভ্রমণ করে অনেক সুন্দর একটি ফটোগ্রাফির পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার তোলা প্রত্যেকটি পোস্ট দেখতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে। আর প্রত্যেকটি ফটোগ্রাফির খুবই সুন্দর ভাবে বর্ণনা উপস্থাপন করতেছেন। দারুন একটি ফটোগ্রাফির পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। যেভাবে আমার ফটোগ্রাফি গুলির আন্তরিক প্রশংসা করলেন তা মন খুশি করে দিল। কক্সবাজার সত্যিই এক অসাধারণ পর্যটন কেন্দ্র। অনেক সমুদ্র সৈকত দেখেছি। তার মধ্যে এই সৈকত এক অন্যতম ভালোবাসার জায়গা হয়ে রইলো।