সোর্স

☘️ কবিতার পাতায় স্বাগত ☘️

আশপাশে চলছে বৃষ্টি। বর্ষার দিনে কখনো আকাশে ধেয়ে আসে কালো মেঘ, আবার এক পশলা বৃষ্টির পর আবার উঁকি দেয় নীল আকাশ। এমনই লুকোচুরি খেলে বর্ষার মেঘ। কবিদের কাছে এ বড় প্রিয় ঋতু। মন মানে না বর্ষা বিকেলে। বৃষ্টি তখন কার্নিশ বেয়ে ঝরে পড়ে গায়ে, কবিরাও কলম ধরেন সেই সৌন্দর্য কে লিপিবদ্ধ করবেন বলে। আমারও প্রিয় ঋতু বর্ষা। গ্রীষ্মের দাবদাহের পর বর্ষা যে আশ্চর্য প্রলেপ বয়ে আনে, এক কথায় সে যেন প্রাণের সুখ। হয়তো বৃষ্টি বাদলে দৈনন্দিন জীবনে কিঞ্চিৎ অসুবিধা হয়, কিন্তু সেই স্থুল চিন্তাভাবনার একটু বাইরে বেরোলে বৃষ্টির রূপ ব্যাখ্যা করবার নয়। প্রতি যুগেই কবিতার হাত ধরে কবিরা তাদের অনুভূতি ব্যাখ্যা করেছে। মৈথিল কবি বিদ্যাপতি লিখেছিলেন -

ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর।
ঝঞ্ঝা ঘন গরজন্তি সন্ততি
ভুবন ভরি বরিখন্তিয়া।
কান্ত পাহুন, বিরহ দারুণ,
সঘনে খরশর হন্তিয়া।

কবিদের চোখে বর্ষার এমন বহু রং। সেই রং আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে কলমের মুখ। যেন মনে হয় বর্ষা কবিদের সাবালক করে। এক অদ্ভুত চেতনা। প্রতিটি জলের ফোঁটা তুলে যেন ইচ্ছে করে আলাদা আলাদা রূপে রঙিন করে রাখতে। আর কলম ছাড়া কবিদের হাতে আছে কি? তাই প্রেমের রঙে বর্ষাকে রাঙিয়ে তাঁদের পথ চলা। জানালায় বসে বর্ষার রোদরং দেখতে কার না ভালো লাগে। তারপর যখন আকাশ পরিষ্কার হয়ে স্পষ্ট হয় রঙিন রামধনুর সাতরং, তখন যেন নতুন আঙ্গিক ঘিরে ধরে কবিতার দেহ। বর্ষা এবং বৃষ্টি নিয়ে আমারও অনেক লেখা আছে। কখনো কবিতা কখনো মুক্তগদ্য লিখে উদযাপন করতে চেষ্টা করেছি বর্ষার রং। ঠিক সেভাবেই এক বৃষ্টি দুপুরে লিখে ফেলেছি একটি কবিতা। আজ ইচ্ছে হলো সেই কবিতাটাই ভাগ করে নিই আপনাদের সাথে। কবিতাটি নির্দিষ্ট ছন্দ বজায় রেখে অন্ত্যমিলে লেখা। তবে পড়া যাক বর্ষা ও প্রেমের আঙ্গিকে আমার লেখা সেই কবিতাটা। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আর বর্ষায় কবিরা বারে বারে প্রেমে পড়ে জানেন তো? বর্ষার জলে পা ভিজিয়ে কোন নির্ভরতার হাত আঁকড়ে ধরে মনের দুটো কথা বলতে কার না ভালো লাগে? আসুন বৃষ্টি উপভোগ করি। বর্ষাকে চিনতে চেষ্টা করি নতুন নতুন রঙে এবং নতুন পরিসরে। তবে এই বর্ষায় কারো প্রেমে পড়ে গেলে অবশ্যই জানাবেন চুপি চুপি।

☘️ কবিতা ☘️

বৃষ্টি যখন
কৌশিক চক্রবর্ত্তী

বৃষ্টি একা খেলতে দিলাম তোকে
বৃষ্টি একা আমার দিকে ঝোঁকে
এমন দিনে সন্ধে হতে বাকি
আমার হাতে জ্বালিয়ে প্রদীপ রাখি।

বৃষ্টি একা রাতের পরিণামে
পা বাড়িয়ে কুড়িয়ে তোলা খামে
একলা তবু লেখেনা সংবাদ-
আমার শুধু গা ভেজানোর সাধ।

বৃষ্টি খোঁজে নদীর মত কেউ
জল শুধু না, জলজ জমবেও
জানলা খোলা, আসবে নাকি ফোঁটা?
ভিজুক না হয় একলা চিলেকোঠা।

তোমার ঘরে জল আসেনা যাতে
আড়াল করে লুকিয়ে জানলাতে
আমিও মেটাই বর্ষাকালের দাম
বৃষ্টি বোঝে জলের পরিণাম।

সংক্ষেপে তাই ভিজিয়ে নিয়ে গা টা
আমিও বোঝাই মধ্যেখানে হাঁটা
যখন জলে ডুববে আঙুল ঠিকই
সব কবিতায় তোমার কথা লিখি।

---

(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)

---

---

---

--লেখক পরিচিতি--

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার সহ সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

---

---

কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

---