শৈশবের স্মৃতিচারণ!

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

12-11-2022

২৮ কার্তিক,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি ভালো আর খারাপ মিলিয়েই আছি! তবে ভালো থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু আপন মানুষগুলো যখন ভালো থাকে না, তখন কি আর ভালো থাকা যায়। তবে দিনশেষে ভালো থাকতে হয়। যাক, আজকে এসব না বলি!

beach-7084237_1280.jpg

copyright free image from pixabay

ছোটবেলা থেকেই আমার খেলা দেখা প্রতি আলাদা আকর্ষণ ছিল! বিশেষ করে ক্রিকেট খেলা । তবে খেলা বুঝা থেকে শুরু করে সবকিছু আমার আপুর কাছ থেকে শেখা। আমি তখন অনেক ছোট! বয়স সাত বা আট হবে! ঘরে সাদা কালো টিভি। ১৪ ইঞ্চি টিভি! তখন কার সময়ে সাদা-কালো টিভিগুলোই বেশি চলতো। রঙিন টিভি খুব কম পাওয়া যেত। তবে সাদা কালো টিভির একটা প্রবলেম ছিল এন্টেনা বড় না হলে সিগন্যাল পেত না। বিটিভি দেখা হতো। সেবার মনে হয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ ছিল! সামনে ফাইনাল পরীক্ষাও ছিল। এজন্য টিভি দেখা হতো না তেমন। তবে খেলা হলে না দেখে কি উপায় আছে!

আমার আপু আমাকে খেলার স্কোরকার্ড থেকে শুরু করে প্লেয়ার চেনা পর্যন্ত সবকিছু শিখিয়েছে। আপু রাত জেগে পড়াশোনা করতো। আর যখন খেলা হতো আমাকে ডাক দিত। দুই ভাইবোন একসাথে মিলে খেলা দেখতাম। তবে গ্রামে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল ইলেকট্রিসিটি! ১৮ ঘন্টার মতো বিদ্যুৎ থাকতো না! গ্রামের মানুষ বিদ্যুৎ এর কারণে একদম অতিষ্ট তখন। সব থেকে খারাপ লাগতো যখন খেলার সময় বিদ্যুৎ চলে যেত। ঘরের ভিতরে সুইচ বোর্ড লাগানো। ঠিক কোণায় লাল ইন্ডিকেটর ল্যাম্প লাগানো। পাচঁ মিনিট পর পর গিয়ে চেক করি ল্যাম্প জ্বলেছে কি না! অনেক অস্তিরতা কাজ করতো তখন। বিদ্যুৎ না আসলে ফোনে রেডিওতে খেলার খবর শোনা হতো! কিন্তু সেভাবে কি আর খেলা দেখার আসল ফিলটা আসতো!

এক ঘন্টা চলে যাওয়ার পর হঠাৎ ইন্ডিকেটর ল্যাম্প জ্বলে আছে। তাড়াতাড়ি গিয়ে টিভি অন করে খেলা দেখা শুরু করি। যখন দেখি বাংলাদেশের উইকেট পড়ে গেছে কয়েকটা তখন খুব খারাপ লাগতো। খেলা দেখার সময় দোয়া করা হতো যেন বাংলাদেশ জিতে। আম্মাকে গিয়ে বলতাম আজকে কে জিতবে? আম্মা কখনো বলেনি যে বাংলাদেশ জিতবে। কারণ বাংলাদেশ এর আগেও জিততে পারেনি। এজন্য আম্মা সবসময় বলতো বাংলাদেশ জিততে পারবে না। খুব হতাশ হতাম আম্মার কথা শোনে। সেবার রাতে অস্ট্রেলিয়া আর ইন্ডিয়ার খেলা। রাত একটায় খেলা! কিন্তু এতো রাতে খেলা দেখবো কি করে! সবাই তো ঘুমাবে। ভারতের একজন প্লেয়ার ছিল ইউসুফ পাঠান। অসাধারণ ব্যাটিং করতো। আপু আর আমি মিলে প্লেন করি আমাদের বাড়ির পাশে একজন কাকি আছে। উনার এখানে গিয়ে দেখবো। উনার আবার এক ছেলে আছে। নাম হৃদয়। আমার আর আপুর মতোই খেলা দেখতো!

রাতে বিদ্যুৎ তেমন যেত না। হৃদয়দের বাড়িতে রঙিন টিভি। কিছুদিন হলো এনেছে! তার আগে অবশ্য আমাদের বাড়িতে এসেই খেলা দেখতো। আমি আর আপু রাতে বেরিয়ে পরি। আস্তে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দেয়! আম্মা জানতে পারলে রক্ষা নেই! বাটন ফোনের লাইট জ্বালিয়ে আমি আর আপু কাকিদের বাড়িতে চলে যায়। গিয়ে দেখি অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং! রিকি পন্টিং আর মাইক হাসির খেলা আমার কাছে ভালো লাগতো! ওয়ানতে খেলা! অনেক্ষণ ধরেই হবে! আমি আর আপু খেলা দেখতে থাকি। এদিকে খেয়ালই নেই যে রাত সাড়ে তিনটা বেজে গেছে! কিন্তু খেলা শেষ না করে আসতেও চাইলো না। অস্ট্রেলিয়ার পুরো ব্যাটিং উপভোগ করেছিলাম। সম্ভবত ৩০০ রানের উপরে টার্গেট দিয়েছিল।

খেলা শেষে চল্লিশ মিনিটের ব্রেক! বাড়িতে এসে পরি তখন। ব্রেক শেষ হলে আবার যাবো দেখতে। একটু পরেই ঘুম থেকে আম্মা উঠে যায়! এখন তো আর যাওয়া যাবে না! এদিকে খেলা শুরু হবে কিছুক্ষণ পর। আম্মাকে তখন অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছিলাম। আমাকে আর আপুকে তারপর দিয়েছিল খেলা দেখার জন্য। খেলাটা আসলে অনেক উপভোগ করেছিলাম। সেই ম্যাচটা ইউসুফ পাঠান ব্যাটিং করে জিতিয়েছিল আমার এখনও মনে আছে। তবে এভাবে রাত জেগে এর পরে আর খেলা দেখা হয়নি। আপু মারা যাওয়ার পর থেকে খেলা দেখাটাও এখন উপভোগ করা হয়না। বড্ড মিস করি দিনগুলোকে।

যায়হোক, আপনাদের সাথে শৈশবের কিছু কথা শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগছে। আসলে দিনগুলো যে কিভাবে চলে গেল টেরও পেলাম না! মনে হচ্ছে এই তো সেদিন! তবে জীবন বহমান। সময়ের সাথেই যে আমাদেরও তাল মিলিয়ে চলতে হয়! আপনাদেরও এমন শৈশবের স্মৃতি থাকলে শেয়ার করতে পারেন। সবার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আল্লাহ হাফেজ 🌼



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

তখনকার সেই টিভির কথা মনে পড়লে অনেক হাসি পায়।আমাদের বাড়িতে ও একটা সাদা কালো টিভি ছিল। সেটা যখন নষ্ট হয়ে যায় আমি টিভি দেখার জন্য আমাদের পাশে নানোর বাড়ি চলে যেতাম।সেই সময় গুলো অনেক মজার ছিল।শুক্রবার আসলে ফিল্ম দেখার জন্য বসে থাকতাম।আপনারা ভাই-বোন দুইজন মিলে তো বেশ মজা করে খেলা দেখতেন।

 2 years ago 

জি আপু। শৈশবের সময়টা আসলেই অনেক মজার ছিল। এখন সাদা কালো টিভির যুগটাকে বড্ড মিস করি 🌼

 2 years ago 

জানিনা আপনি কোন সময়ের কথা বলছেন, তবে আমি যেহেতু ৯০ এর জাতিকা, তাই আমাদের সময়ে ক্রিকেট খেলা পাড়ার সবাই মিলে এক বাড়িতে বসূ দেখার একটা ক্রেজ ছিল। আমার বাবা একটা বড় কালার টিভি কিনেছিলেন সেই সময়ে অনিডা কম্পানির। আমার ঠাকুমা বাড়ির উঠোনে একটা সন্ধ্যেবেলা সেই টিভি ফিট করে পাড়ার ছেলেরা সব খেলা দেখেছিলো সেই সময়ে, আমার হাল্কা মনে পরে।

 2 years ago 

২০০৭ বা তার আগের দিকে হবে দিদি! সবাই একসাথে খেলা দেখার মজাই ছিল অন্যরকম 🌼

 2 years ago 

আপনার শৈশবের স্মৃতি পড়ে ভালোই লাগছিল। তবে লাস্টে এসে অনেক কষ্ট লাগল আপনার আপুর মারা যাবার কথা শুনে। আসলে জীবন চলমান সুখ আর দুঃখ মিলেই জীবন। আমরা ভাই বোন মিলে এভাবেই খেলা দেখতাম। এখন খেলা দেখলে ও আগের মতো আর আনন্দ পায়নি। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জি আপু। মানুষ মারা গেলেও স্মৃতিটুকু রয়ে যায়। আপুর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো এখনও মনে পড়ে 🌼

 2 years ago 

আপনার কথাগুলো শুনতে শুনতে আমার ছেলেবেলার কথা মনে পরে গেলো। সাদা কালো টিভির ঐ এন্টেনা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ছবি ক্লিয়ার করে দেখতাম। কি যে একটা অস্থিরতা কাজ করতো বলে বোঝাতে পারবো না। আর বাংলাদেশের খেলা হলে তো বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যেতো। সবমিলিয়ে টিভি সাদা কালো হলেও আমি বলবো সেই সময়গুলো রঙিন ছিল। আপনার আপু মারা গিয়েছিল জেনে কষ্ট পেলাম।
ভালো স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট ছিল।

 2 years ago 

জি ভাইয়া বাঁশের এন্টেনা ঘুরাতে ঘুরাতে টিভি ক্লিয়ার করতে হতো! এখন আর এভাবে খেলা দেখা হয়না। সময়গুলো বড্ড মিস করি 🌼

 2 years ago 

আপনার মত আমার ও ছেলেবেলা এমনই ছিল।আমরা ভাই- বোন মিলে ই দেখতাম। সেদিন গুলোর কথা মনে পড়ে গেল। বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক নাটকের জন্য অপেক্ষা করতাম।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

জি আপু। আর ছবি শুরু হলে তো ৩৪ টার মতো এডসই দিতো! তারপর গণনা করা শুরু করে দিতাম! 🌼

 2 years ago 

ছোটবেলার এই সব স্মৃতি গুলোই আসলে থেকে যায়। আপনি সাদাকালো টিভির কথা একদম মনে করিয়ে দিলেন। ঠিকই বলেছেন তখন এন্টেনা অনেক উঁচু না হলে ক্লিয়ার হতো না। আসলে তখন আমিও এরকম ছিলাম টিভিতে সাপ্তাহিক মুভি কিংবা নাটক দেখার জন্য বসে থাকতাম। আস্তে আস্তে যখন রঙিন টিভি এসেছিল আমাদের অনেক বড় সাইজের একটা টিভি এনেছিল আব্বু। তখনো কিন্তু এন্টেনা দিয়েই চালাতে হতো। আপনাদের দুই ভাইবোন মিলে খেলা দেখার বিষয়টি সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো। একেবারে দুইজন চুরি করে কাকার বাসায় রঙিন টিভিতে এত রাত পর্যন্ত খেলা দেখেছেন। সবকিছুই অনেক অসাধারণ লেগেছে। কিন্তু সব শেষে আপনার আপু যে আর নেই, এই কথাটা সত্যিই অনেক বেশি কষ্ট পেলাম। যে মানুষটার সাথে এত বেশি স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, সেই মানুষটা আজকে নেই এটা অনেক বেশি কষ্টকর।

 2 years ago 

জি আপু! দিনগুলে অনেক মিস করি। কিন্তু এখন আর আগের মতো এভাবে আর খেলা দেখা হয়না।

 2 years ago 

ভাইয়া, জানিনা আপনার আপু কবে মারা গেছে, তবে তার জন্য দোয়া রইলো। ক্রিকেট খেলা সব সময়ই একটা ইন্টারেস্টিং খেলা। ক্রিকেট খেলা দেখা এবং খেলার জন্য অনেক মার ও খেয়েছি। অনেক দূরে দুরে যেতাম খেলা দেখতে। তবে আপনার মতো এভাবে রাত জেগে কখনো খেলা দেখা হয়নি।

 2 years ago 

২০১২ সালে মারা গিয়েছিল ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 🌼

 2 years ago 

আপনার পোস্টটি পড়ার পরে আবারও আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। বৃহস্পতিবার আসার অপেক্ষা করতাম সব সময় কারণ বৃহস্পতিবার আসলেই আলিফ লাইলা দেখতে পেতাম। শেষের দিকে আপনার পোস্টটি পড়ে একটু খারাপ লাগলো আপনার বোনের মৃত্যুর কথা শুনে।

 2 years ago 

জি ভাইয়া। আপনাকে ধন্যবাদ 🌼

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.034
BTC 63935.74
ETH 2749.19
USDT 1.00
SBD 2.65