৩য় পর্বঃ মেঘ বালিকা
09-01-23
২৬ পৌষ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি ভালো এবং সুস্থ্য আছেন! যাক, আপনাদের সাথে ইতোমধ্যে একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম! আজকে গল্পের তৃতীয় পর্বটি লিখলাম! আপনারা জানেন যে আমি স্টরি লিখে থাকি! নতুন নতুন প্লট নিয়ে স্টরি লিখতে আমার ভালো লাগে! যদিও এটা কঠিন একটা কাজ! তবে আমি লিখে যাচ্ছি! চেষ্টা করি আপনাদের সাথে ভালো ভালো প্লটের স্টরি ক্রিয়েট করে শেয়ার করা!
২য় পর্বের পর থেকে
রিধি সারাদিন বই নিয়ে পড়াশোনা করতো! কলেজে তেমন যাওয়া হতো না! কলেজের ফার্স্ট মেয়ে ছিল রিধি! স্যারেরা অবশ্য মাঝে মাঝে রিধিকে খুজঁতো! কিন্তু রিধির কোনো খবর নেই! মিতুর কাছ থেকে অবশ্য স্যার জানতে পেরেছিল! স্যার তখন বলে মিতুকে রিধি যেন নিয়মিত ক্লাস করে! কলেজের ক্লাস করলে পড়াটা কভার দিতে পারবে! বাড়িতে পড়ে রসায়ন, ফিজিক্স কাভার দেয়া সম্ভব না! মিতু সেদিনই রিধিদের বাড়িতে আসে! কলেজ থেকে আসার পথে! মিতু এসে জানায় যে স্যার রিধিকে ক্লাসে যেতে বলেছে! কলেজে নিয়মিত ক্লাস না করলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারবে না! তারপর থেকে মিতু কলেজে নিয়মিত যায়! আতিক স্যার, ফিজিক্স ক্লাস নিয়ে থাকে! রিধি প্রথমদিনেই আতিক স্যারের ক্লাস করে ভালো লাগে! কি সুন্দর করে টপিকসগুলা বুঝিয়ে দিয়েছে! সপ্তাহে তিন দিন ফিজিক্স ক্লাস! আতিক স্যারের ক্লাস করার জন্য হলেও কলেজে যেতে হবে!
কিন্তু ঝামেলা হলো ইংরেজি নিয়ে! ইংরেজির কিছু টপিক রিধি বুঝে উঠতে পারছে না! রিধি তার মায়ের কাছে বলে ইংরেজী প্রাইভেট পড়ার জন্য! দু-তিনমাস পড়ে দেখবে! মিন্টু স্যার তখন রিধিদের গ্রামের মধ্যে সেরা একজন শিক্ষক! খুব সুন্দর করে ইংরেজি পড়িয়ে থাকে! রিধি মিন্টু স্যারের প্রাইভেটে ভর্তি হয়ে যায়! মিন্টু স্যারের প্রাইভেটে আরও অনেক মেয়ে প্রাইভেট পড়তে আসতো। কিন্তু রিধির অন্যসব মেয়েদের সাথে এতো সখ্যতা তৈরি হয়নি!
মিতু ছাড়া তেমন কারো সাথে কথা হতো না রিধির! চুপচাপ মেয়ে! প্রাইভেটেও রিধি চুপচাপ থাকে! পিছনের সারির বেঞ্চে এসে সবসময় বসে! মিন্টু স্যার ন্যারেশন পড়িয়েছিল! তার উপর পরীক্ষা নিবে! মাত্রই পেয়েছে কয়েকদিন ক্লাস! এরই মাঝে ন্যারেশন এর উপর পরীক্ষা। রিধি আরও বেশি পড়তে থাকে! যে করে হোক ভালো রেজাল্ট করতে হবে! সেবার মিন্টু স্যারের পরীক্ষায় রিধি প্রথম হয়েছিল! উপহার হিসেবে পেয়েছিল একটি কলম! কলেজ জীবনের প্রথম উপহার! সবাই মোটামোটি অবাক হয়ে গিয়েছিল! চুপচাপ থাকা মেয়েটি প্রথম হয়ে গেল!
মিন্টু স্যারের প্রিয় ছাত্রী হতে বেশিদিন লাগেনি! কিন্তু রিধি বেশিদিন প্রাইভেট পড়বেনা। যে বিষয়গুলো প্রবলেম ছিল বুঝতে সেগুলো বুঝা হয়ে গেলে মিন্টু স্যারের প্রাইভেট পড়বে না! তিনমাসে মিন্টু স্যারের প্রিয় ছাত্রী হয়ে যায় রিধি। কিন্তু মিন্টু স্যার জানতো রিধির পারিবারিক অবস্থা এতোটাও স্বচ্ছল নয়। গ্রামের সহজ-সরল মেয়েদের মতোই জীবনযাপন করে রিধি! রিধি তিনমাস প্রাইভেট পড়ার পর সিদ্ধান্ত নেয় আর প্রাইভেট পড়বে না! স্যারের প্রাইভেটের বেতন মিটিয়ে শেষ করে দিতে চাই! ঠিক তখন মিন্টু স্যার বুঝতে পারে কেন সে প্রাইভেট পড়বেনা! রিধি একটা খামে টিউশন ফি দিয়েছিল! ঠিক সে খামটাই রিটার্ন রিধিকেই দিয়েছিল এবং খামের উপরে লেখা ছিল, "তোমার টাকা দিতে হবে না! " রিধি সেদিন অনেক লজ্জা পেয়েছিল! নিজেকে ছোট ভাবতে থাকে! আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকার কারণে স্যার তার প্রতি সহানুভূতি দেখালো! এর পর কয়েকদিন রিধি মিন্টু স্যারের প্রাইভেটে যায়নি রিধি! রিধির বাবার কাছে মিন্টু স্যারের ফোন! " কাকা, আপনার মেয়ে প্রাইভেটে আসে না? "
রিধির বাবা তখন স্যারকে বলে, " কিছু তো বলেনি প্রাইভেট এ না যাওয়ার ব্যাপারে! আমি বলবো রিধিকে কাল যাওয়ার জন্য! "
পরেরদিন রিধির বাবার কথামতো রিধি মিন্টু স্যারের প্রাইভেটে যায়! রিধি খুব লজ্জা পাচ্ছিল! স্যার সেটা ভালো করেই বুঝেছিল! ঠিক তখন মিন্টু স্যার রিধিকে বলে, " মা! তুমি আমার এখানে পড়ো! এক কানা কড়িও দিতে হবে না! এতো লজ্জা পাবার কিছু নেই! সবাই যেভাবে পড়বে তুমি ঠিক সেইভাবে পড়বে!" রিধি স্যারের কথা শুনে কেধেঁ দেয়! এটা হয়তো আনন্দের কান্না! চোখের জল গাল দিয়ে নিচে পরছে! কান্না কোনোভাবেই থামছে না! স্যার তখন রিধিকে বুঝায়! বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ হতেই পারে! তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে! " সেদিনের পর রিধি যেন নতুনভাবে আরেকবার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পায়! তারপর থেকে মিন্টু স্যার কখনো রিধির কাছে টিউশন ফি চাইনি! মিন্টু স্যারের প্রাইভেটে যতবার পরীক্ষা দিয়েছিল ততবারই রিধি প্রথম হয়েছিল!
রিধির পড়াশোনা ভালোই চলছিল! ঠিক কিছুদিন পরে জানতে পারে তার বান্ধবী মিতুর বিয়ে হবে! শুনে তো রিধি পুরাই অবাক হয়! সবে এইসএসসি ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে আর এখনি তার ফ্যামিলি তাকে বিয়ে দিবে! মিতুর বাড়ি রিধিদের বাড়ি থেকে কাছেই! সোজা চলে যায় মিতুদের বাড়িতে! গিয়ে জানতে পারে আরেক ঘটনা! মিতুর বাবা হার্ট এ্যাটাক করেছে! নির্বাচনে এবার দাড়িঁয়েছিল কিন্তু জয়ী হতে পারেনি! যার জন্য হাই প্রেসারে হার্ট এ্যাটাক হয়! নির্বাচন করে প্রায় সব শেষ মিতুদের! বাড়িটুকু ছাড়া আর কিছুই নেই!
মিতু রিধিকে ধরে কাদঁছে! কোনোভাবেই কান্না থামছে না! একদিকে তার বাবা আরেকদিকে বিয়ে! বাবার শেষ ইচ্ছে মেয়ের বিয়েটা দেখে যাওয়া! মিতু অবশ্য না করতে পারেনি! ছেলে দেখাও হয়েছে। শহরে মস্তবড় বাড়ি। বিরাট বড়লোক বলা যায়! মিতুদের পরিবারও যথেষ্ট নাম-দাম আছে গ্রামে! মিতুর বিয়ে হয়ে যায় শহরের মস্তবড় ব্যবসায়ীর ছেলে আবিদের কাছে! রিধির মন ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল সেদিন! তার সব থেকে প্রিয় বান্ধবীকে হারিয়ে ফেলছে! এখন চাইলেই আর একসাথে কলেজে, প্রাইভেটে যাওয়া-আসা করা যাবে না! যাওয়ার আগে রিধি মিতুকে বলে দিয়েছিল,মিতু তুই ভালো থাকিস! "
চলবে.....
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share link
দারুন লাগলো গল্পটি। আমি আগের পর্বগুলো পড়েছি। সত্যি বলতে খুব দারুণ গল্প লিখেন ভাইয়া। এত ক্রিয়েটিভ গল্প গুলো আমাদের মাঝে উপস্থাপন করছেন যা দেখে আমার বেশ ভালোই লাগছে। আমিও যদি এরকম লিখতে পারতাম। অবশ্য চেষ্টা করলে হয়তোবা সবই সম্ভব। যাই হোক খুব আকর্ষণ লাগছে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনাদের কাছে ভালো লাগলেই আমার গল্প লেখা স্বার্থক! অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 😍
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
মিতুর ভাগ্য কত ভাল,তার বাবা নির্বাচনে হেরে যাওয়াই তারাতারি স্বামী পেয়ে গেল,হা হা হা। রিধির তো মন খারাপ হবেই, তাদের জোড়া ভেঙ্গে গেছে। এখন একা কলেজে যেতে হবে। পরের পর্বে দেখি রিধির ভার্গ্যে কি আছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
রিধি মিন্টু স্যারের প্রত্যেকটি পরীক্ষায় প্রথম হয় এটা জেনে খুবই ভালো লেগেছে। আসলে মিন্টু স্যার খুবই ভালো মানুষ এটা ওনার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু রিধির প্রিয় বান্ধবী মিতুর কথা শুনে খুবই খারাপ লেগেছে। তাকে খুবই অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে তাই। রিধির অনেক মন খারাপ হওয়ারই কথা। এরকম একটি চুপচাপ মেয়ের প্রিয় বান্ধবী যদি তার কাছ থেকে দূরে সরে যায় তাহলে কত কষ্ট হয়। যাইহোক আশা করছি পরবর্তী পর্বে আরো দারুণ কিছু দেখব। অসংখ্য ধন্যবাদ।
জি আপু! আপনি গল্পটি পড়ে চমৎকার একটি মন্তব্য করলেন! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 🌼🦋
মেঘ বালিকা এই গল্পটির প্রত্যেকটি পর্ব আমি পড়েছি যেগুলো আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। আজকের পর্বটিও খুব ইন্টারেস্টিং ছিল। আমার মনে হয় পরবর্তী পর্বগুলো আরো বেশি ইন্টারেস্টিং হবে। রিধি এবার একা হয়ে গেল কথা বলার মতও কেউ নেই। সত্যিই রিধি এবং মিতু দুজনেই খুবই কষ্ট পেয়েছে। আশা করছি মিতু ভালো থাকবে। এবং রিধি তার পড়ালেখা ভালোভাবে চালিয়ে দিতে পারবে। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ধন্যবাদ।
জি ভাইয়া! আপনাদের কাছে গল্প ভালো লাগলেই আমার লেখা স্বার্থক! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🌼