৪র্থ পর্ব || জীবনের ব্যর্থতার গল্প
26-03-2024
১২ চৈত্র , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
রেজাল্ট দেখে আমি সেখানেই থ মেরে বসে পরলাম। মনের অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। আমি কি করবো তখন মাথায় কাজ করছিল না। বলতে গেলে আমার ভিতরটা মনে হচ্ছিল ভেঙেচুরে শেষ! একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, জীবনের কঠিন মুহূর্তে সান্তনা দেয়ার মতোও কাউকে পাশে পাবেন না। একে তো নাথপারা স্কুলে পড়ার কারণে গ্রামের মানুষদের কথা তার উপর বন্ধুদের থেকেও দূরে থাকা। তবে জীবনে একশোটা বন্ধুর দরকার নেই আসলে। আপনার মনের মতো একজন হলেই যথেষ্ট! আমার বেলায় সে একজন বন্ধু ছিল মেহেদী। জীবনের কঠিন সময়ে আমি সবসময় ওর সাথে শেয়ার করতাম সবকিছু।
রেজাল্ট যখন দিলো, কিন্তু ওয়েটিং লিস্টে! আমি অনেক মন খারাপ নিয়েই বাড়িতে চলে গেলাম। মা বাবাকে কিছু জানায়নি যে এবারেও আমি পরীক্ষা দিয়েছি। অনেকটা অভিমান জমে গিয়েছিল চন্ডীপাশা সরকারি স্কুলের প্রতি। টানা দুইবার ব্যর্থ হলাম। জানতাম যে ওয়েটিং লিস্ট থেকে ডাকবে না কখনো। তবে জীবনে ছোট ছোট ভুল থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত আমাদের। আমি তখন যদি আমার বাবাকে জানাতাম যে ওয়েটিং লিস্টে আমি সিলেক্ট হয়েছি তাহলে হয়তো আমি চন্ডীপাশা পড়তে পারতাম তখন। কারণ আমার নিচে আরও দুজন ওয়েটিং লিস্টে ছিল। পরে জানতে পেরেছিলাম কিছু টাকা আর লোকের মাধ্যমে নাকি ভর্তি হতে পেরেছিল।
আমার কাছে হাতে অপশন ছিল আর মাত্র একটা! ক্লাস অষ্টমে ভর্তি হতে না পারলে নাথপাড়া স্কুলেই মাধ্যমিকের জীবন শেষ করতে হবে। বন্ধুরা তো সবসময় কানের কাছে এসে বলতো সরকারি স্কুলের সার্টিফিকেট এর মূল্যায়ন নাকি বেশি। আর নাথপাড়া স্কুলে আমাদের প্রধান শিক্ষকের ছেলে চন্ডীপাশা স্কুলে পড়াশোনা করতো। স্যার তো সবসময় ক্লাসে এসে ছেলের ব্যাপারে বলত। স্যরের ছেলের নাম ছিল আসিফ। আমাদের সাথেই মানে একই ক্লাসে পড়াশোনা করতো। স্যারের ছেলের প্রশংসা শুনে আমার নিজেরই অনেক আফসোস হতো। কই স্যার আমাদের মোটিভেট করবে তা না করে উল্টো ডিমোটিভেট হওয়ার মতো কথা শোনাত। তো নাথপাড়া স্কুলে আমার প্রিয় শিক্ষক ছিল লতিফ স্যার। স্যার আমাকে খুবই আদর করতো। কারণ ম্যাথে আমি সবসময় ভালো করতাম। ক্লাসের সবাই স্যারের হাতে বেতের আঘাত খেয়েছে শুধু আমি খাইনি। মজার ব্যাপার হলো ক্লাস সেভেনে বার্ষিক পরীক্ষায় একমাত্র আমিই পাশ করেছি। সেটাও আবার ৫২ নাম্বার পেয়ে। বাকি সবাই ফেল করেছিল ম্যাথে।
স্যারকে আমি বলেছিলাম যে চন্ডীপাশা স্কুলে দুইবার পরীক্ষা দিয়েছি। কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হলাম। স্যার আমাকে শুধু একটা কথায় বলেছিল, " তুই আরেকবার পরীক্ষা দে। মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। মনে রাখবি ব্যর্থতা না আসলে জীবনে সফলতার স্বাদ পাবি কি করে ইমতিয়াজ! " স্যারের কথাটা কেন জানি আমার অনেক ভালো লেগেছিল। তবে স্যার আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছিল। সেটা হচ্ছে চন্ডীপশা স্কুলের রাজ্জাক স্যারের কাছে যেন প্রাইভেট পড়ি। স্কুলের টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়লে হয়কি প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে জানা যায়। শুরু করলাম স্যারের কাছে প্রাইভেট। আসলে পরীক্ষার আগে দেড় মাসের মতো সময় পেয়েছিলাম প্রাইভেট পড়ার জন্য। কিন্তু সমস্যা টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবো। স্যার প্রাইভেট ফি ১৫০০ টাকা করে নিতো। আমি সহ মোট সাতজন পড়তাম স্যারের কাছে। তারপর আমার মামাকে বলে টাকাটা ম্যানেজ করলাম। তো আবারো সেই ডিসেম্বরই পরীক্ষা ছিল। এবার মা বাবাকেও জানালাম যে পরীক্ষা দিবো!
পরীক্ষা দিয়েই আমি সিউর ছিলাম চান্স মিস হবে না! কারণ পুরোপুরি সবি দিতে পেরেছিলাম সবকিছু। বলে রাখা ভালো। আমার ফ্রেন্ড মেহেদী ও আমি একসাথেই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তারপর আবারও সেই রেজাল্টের অপেক্ষা। এবার নিশ্চিত যে আমি চান্স পাবো। আটজনের লিস্টে দেখতে পেলাম আমার নাম দ্বিতীয়তে! আমি রেজাল্ট পেয়ে খুবই খুশি হয়েছিলাম। সোজা চলে গেলাম লতিফ স্যারের বাসায়। স্যারকে বললাম আমি পেরেছি স্যার। স্যার তো শুনে অনেক খুশি। তারপর থেকে শুরু হলো নতুন জীবনের আরেকটি অধ্যায়। তবে জীবনে ব্যর্থতার পরেই সাফল্যের দেখা মিলে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম। জীবনের প্রাথমিক ধাপ পেরিয়ে যখন চাকরির জগতে পা দিলাম। তখন যেন আবারো হোচঁট খেয়ে বসলাম।
চলবে,,,,,
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
twitter share
ভাইয়া আপনার নিজের জীবনের এত সুন্দর গল্প পড়ে সত্যি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আপনার জীবনের সাথে একটু হলেও নিজের সাথে মিল খুঁজে পেলাম। আমি যখন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেই তখন এভাবেই ওয়েটিং লিস্টে নাম আসে। কিন্তু আপনার মতো আমিও ভেবেছিলাম হয়তো কখনো ডাকবে না তাই আর যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করিনি। কিন্তু বেশ কয়েক মাস পর জানতে পারি আমার নিজে যারা ছিল তার কিছু টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। তখন খুব খারাপ লেগেছিল আর সেই সময়ে জেদ করে আর কোথাও ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। কিন্তু আপনি এতবার ব্যর্থ হয়েও থেমে থাকেননি দেখে খুব ভালো লাগলো। আপনার স্যারের কথা আমার কাছে সত্যি অনেক ভালো লেগেছে। খুব সুন্দর একটি উপদেশ দিয়েছেন। তাছাড়া যদি স্কুলের টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়া হয়, তাহলে তার কাছ থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্যাটার্ন সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়। আপনি প্রাইভেট পড়ে খুব ভালো করেছেন। যাক অবশেষে চান্স পেয়েছেন দেখে খুব ভালো লাগলো। তবে শেষে চাকরির ক্ষেত্রে আবারো হোঁচট খেয়েছেন, এরপর কি হলো জানার অপেক্ষায় রইলাম।
জি আপু, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনারও যে আমার মতো হয়েছিল এটা জেনে খারাপ লাগলো।
অবশেষে আপনি চান্স পেয়ে গেলেন স্কুলের সেই বিষয়টি পরিবেশ ভালই লাগছে। জীবনে যতবার ব্যর্থ হয় কেন সফলতা ততবারই কাছে এসে কড়া নড়াই সেটা আমি বিশ্বাস করি। কারণ একজন মানুষ যখন ব্যর্থ হয় তখন সফলতার জন্য আরও বেশি জেদ বেড়ে যায়। বারবার ব্যর্থ হওয়ার সত্ত্বেও আপনি সফলতা পেয়েছিলেন সেটা খুবই আনন্দের বিষয়। ধন্যবাদ পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
জি আপু, ব্যর্থতার পরেই সফলতা আসে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। 🌼