৩য় পর্ব || জীবনের ব্যর্থতার গল্প
19-03-2024
০৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
সন্ধ্যার দিকেই রেজাল্ট পাবলিশ হয়ে যায়। আমি তখন খুব ভয়ে ছিলাম। কারণ আমি জানি আমার পরীক্ষা ভালো হয়নি। লিস্টে আসবে কি না! আমার বাবা চলে গেল রেজাল্ট দেখতে চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। তখন বাটন ফোনের যুগ। আব্বা রেজাল্ট দেখে বলে সিরিয়ালে আমার নাম আসে নাই। আমি জানতাম আসবে না। কিন্তু মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে যে পারলাম না। তখনকার সময়ে চন্ডীপাশা স্কুলে চান্স পাওয়া মানে সোনার খনি পাওয়া বিষয়টা ছিল এমন। কারণ সরকারি বিদ্যালয়ে আলাদা সুবিধা থাকে। তবে সিট সংখ্যাও সীমিত। আমাদের সময়ে আমার বেশ কয়েকজন বন্ধু চান্স পেয়ে যায়। তারাও এক্সপেক্ট করছিল আমি চান্স পাবো। জীবনে দ্বিতরয়বারের মতো ব্যর্থ হলাম। ব্যর্থ হওয়ার পরের অধ্যায়টা আরও কঠিন ছিল। কারণ তখন সেকেন্ড অপশন ছিল আচারগাওঁ উচ্চ বিদ্যালয় যেটাকে মানুষজন নাথপারা বিদ্যলয় বলেই চিনতো!
গ্রামের মানুষ আসলে আপনার ব্যর্থতার সময়ে দেখবেন বেশি খোচা মেরে কথা বলবে। জেনেশুনেই আপনালে হার্ট করার চেষ্টা করবে। আমার বেলায়ও তাই। বুঝার বয়স তো ছিল। সবই বুঝতাম আসলে কে কি বলে। শুরু হলো নাথপারা স্কুল দিয়ে মাধ্যমিকের যাত্রা! এ স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর নিজেকে যেন ছিলা গরু মনে হচ্ছিল। কোনো ফ্রেন্ডের কাছে উঁচু গলায় কখনো বলতে পারেনি আমি যে নাথপারা স্কুলে পড়াশোনা করি। একবার তো আমার ফ্রেন্ডের মা আমাকে বলেই দিল, "তুমি তো নাথপারা স্কুলে পড়াশোনা করো। " আমি কোনো কথা বলে নি। কারণ আমার বন্ধু আবার চন্ডীপাশা স্কুলে চান্স পেয়েছে। সেদিনের পর থেকে বন্ধুর সাথেও মেশা বাদ দিয়ে দিছি। শুরু করলাম নিজের সাথে আবার যুদ্ধ। ক্লাস সিক্সে নাথপাড়া স্কুলে প্রথম হলাম। গণিতে বরাবরই ভালো ছিলাম আমি। তো ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণীতে উঠার সময় চন্ডীপাশা স্কুলে আবার ভর্তি পরীক্ষা হয়।
এবার প্লেন করে নিয়েছিলাম চান্স পেয়ে দেখিয়ে দিবো। বাড়িতে সে অনুযায়ী পড়াশোনা শুরু করে দিলাম। ম্যাথ প্র্যাকটিস করেছিলাম অনেকবার। ইংরেজি, বাংলা সব মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হতে পারবে মাত্র সাতজন। আর তখন আমাদের সাথে পরীক্ষা দিয়েছিল ৭০ জনের মতো। আবার একশো টাকা দিয়ে একটা ফরম কিনে নিলাম। আমি যে আবার চন্ডীপাশা স্কুলে পরীক্ষা দিবো মা বাবা এবং বন্ধুদেরও জানায়নি। কারণ আগেই বলে দিলে পরে যদি না হয়। একটা সংশয় কাজ করছিল মনে। তবে আমার বিশ্বাস ছিল এবার আমি পারবো। আমিও ফ্রেন্ডদের দেখিয়ে দিবো যে চন্ডীপাশা সরকারি স্কুলে চান্স পেয়েছি। যাক, আবারো ডিসেম্বরের দিকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরীক্ষা ছিল সকাল দশটায়। কাউকে কিছু না বলে পরীক্ষা দিতে গেলাম!
এবারে পরীক্ষা ভালোও দিলাম। আশা ছিল এবার চান্সটা মনে হয় হয়ে যাবে। সন্ধ্যার দিকেই আগের বারের মতো রেজাল্ট পাবলিশ করে দেয়। সারাদিন চুপচাপ থেকে নিজের রেজাল্ট দেখতে গেলাম স্কুলে। স্কুলে গিয়ে দেখি এখনও রেজাল্ট পাবলিশ করেনি। পাবলিশ করতে রাত আটটা বাজবে বললো! আমাদের বাড়ি থেকে চন্ডীপাশা স্কুলও দূরে ছিল। তখন এতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও ছিল না। টেম্পু চলতো আমাদের দিকে আর প্যডেল চালিত রিকশা। তো রেজাল্ট যেহেতু আটটায় দিবে, বাড়িতে গিয়ে আবার ফিরে আসাটা কঠিন হয়ে যাবে। তাই ভাবলাম রেজাল্টটা দেখে একেবারে বাড়িতে যায়। বহুল অপেক্ষার পর রেজাল্ট র শিট পাবলিশ করা হলো। আমার শরীর কাপঁছে। নিজের রেজাল্ট দেখতে খুবই ভয় হচ্ছিল। তারপর রেজাল্ট শিটের একদম তলায় আমার নাম! কিন্তু পাশে লেখা ওয়েটিং লিস্ট!
চলবে,,,,,,,,
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
twitter share
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
ইস প্রথম পর্বটা পড়েছিলাম কিন্তু দ্বিতীয় পর্বটা মিস করলাম। অবশ্যই পড়ে নেব আপনার দ্বিতীয় পর্বটা। কিন্তু তৃতীয় পর্বে দেখলাম আপনি আবারও ব্যর্থতার অনেক গুলো গল্প শোনালেন। যদিও প্রথমবারে ব্যর্থ হলেন দ্বিতীয়বারেও আবার একদম নিচের তলায় ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন। ভীষণ ব্যর্থতার গল্প আপনি শেয়ার করতেছেন ধাপে ধাপে। দেখি অবশেষে আপনি চতুর্থ পর্বে কি শেয়ার করেন।
জি আপু। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🌼
আপনার এই গল্পের পূর্ববর্তী দুটি পর্ব আমি পড়েছিলাম৷ আজকে এর তৃতীয় পর্বটি পড়ে অনেকটাই ভালো লাগছে। আসলে আপনার জীবনের ব্যর্থতার অনেকগুলো বিষয় আপনি আপনাদের গল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন৷ আজকেও সেরকম একটি পর্ব শেয়ার করেছেন। যদিও আপনি প্রথমবার ব্যার্থ হয়েছিলেন৷ তবে দ্বিতীয়বার ওয়েটিং লিস্ট এ ছিলেন। আশা করি পরবর্তীতে আরো অনেকগুলো পর্বের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা জানতে পারবো।
জি ভাই। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🌼