৮ম পর্বঃ অধরা পরী

26-05-2023

১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন!
ভালো থাকাটাই সবথেকে বড় বিষয়। যাক আপনাদের মাঝে নতুন একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আপনাদের সাথে নতুন একটি পর্ব নিয়ে হাজির হলাম। আসলে গল্পের পর্বগুলো নোটসে লিখে রাখি কিন্তু সময় সুযোগ হয়ে উঠে না শেয়ার করার। আশা করি আজকের পর্বটিও উপভোগ করবেন।

heart-3085515__480.jpg

copyright free image from pixabay

৭ম পর্বের পর

কিরে! কি জন্য হঠাৎ ডাকলি!
"একটা হেল্প করতে হবে বন্ধু! তুই ছাড়া আমাকে কেউ হেল্প করতে পারবে না! "
"কি হেল্প করবো? সেটা বল আগে! "
"আজকে সন্ধ্যায় আমার সাথে ঝর্ণাদের এখানে যেতে হবে। ঝর্নার সাথে দেখা করতে! ঝর্ণার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে! "
" ঝর্ণার বড় ভাইকে তো চিনিস! যদি জানতে পারে, কি হবে বুঝতে পারতেছিস! "
"আমি এখন কিছুই বুঝতে পারতেছি না। শুধু একবার ঝর্ণার সাথে দেখা করতে চাই! "
"আবার কি না কি করতেছিস আল্লাহই জানে। ঠিক আছে যাবো নে। তবে শর্ত আছে! "
"কি শর্ত! "
" বেশিক্ষণ লেইট করতে পারবি না। দেখা করেই চলে আসবি! "
"ঠিক আছে বন্ধু! ভরসা পেলাম এখন রে! তুই ছাড়া সাহসই পাচ্ছিলাম না! "
" এসব নিয়ে চিন্তা করিস না! এবার তোর কথা বল! কেমন হলো কোচিং এর পড়াশোনা! "
" হয়েছে ভালোই। এখন ঝর্ণার বিয়ের কথা শুনে সব যেন ভুলে যাচ্ছি! "
" এস এস সি টা পাস কর ভালো করে। ঝর্ণাকে নিয়ে বেশি চিন্তা করাটাও বোকামি হয়ে যাবে। পরে ঠিকই পস্তাবি। "
" ঝর্ণাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারি না রে! "
" ঠিক আছে। আগে দেখা কর, তারপর দেখ কি বলে! সন্ধ্যা তো হয়েই যাচ্ছে। একটু পরেই বের হবি।"
" হুমম। তোর কোনো কাজ আছে! "
" না, তেমন কাজ নেই। মাগরিবের নামাজ পড়ে বের হই। "
" ঠিক আছে। আমি তোকে ফোন দিবো নে। "

যত সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আসিফ যেন ঝর্নার সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছে। এরই মাঝে আসিফের বাবা বাসায় এসে উপস্থিত। বাসায় বাবা থাকলে সন্ধ্যার সময় বের হতে দিবে না। বাবা আসতেই ভদ্র ছেলের মতো আসিফ বই নিয়ে বসে পড়ে। বাবা যেন কিছু বুঝতে না পারে! মাগরিবের আযান দিচ্ছে। মাথায় শুধু ঝর্নার সাথে দেখা করার চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে! আযান শেষ হলে আসিফ তার মাকে বলে, "
আম্মা, একটু বাহিরে যাচ্ছি! "
" এ সময়ে কোথায় যাচ্ছিস! "
"সৌরভদের বাড়ির দিকে যাবো। অনেকদিন হলো সৌরভের সাথে দেখা হয় না! "
" ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি বাসায় আসবি। তোর বাবা নয় হয় চিল্লাচিল্লি করবে! "
" ঠিক আছে আম্মা! "

আসিফ আস্তে আস্তে হেটেঁ মসজিদের সামনে গিয়ে দাড়ায়ঁ! সৌরভ নামাজ পড়ে বের হলেই যাবে। কিছুক্ষণ পর সৌরভ নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়।
" এখনি চলে যাবি! "
" সন্ধ্যা তো হয়েই গেল! এখন যেতে বললো! "
" এখন গেলে সবাই দেখে ফেলবে! আরেকটু আধার হোক! "
" যেতে যেতে আরও অন্ধকার হয়ে যাবে, দেখিস। "
" ঠিক আছে চল তাহলে! "

অনেকদিন পর সৌরভের সাথে বাহিরে বের হয়েছে। আগে সারাক্ষণ কাটতো সৌরভের সাথে। কোচিং এর জন্য আর এক সাথে কোথাও বের হওয়া হয়নি। দুজন একসাথে গল্প গল্প করতে করতে যাচ্ছে। হঠাৎ-ই সৌরভ বলে উঠলো -
"ঝর্ণার বিয়ে হয়ে গেলে কি করবি তুই! "
" সত্যি মারা যাবো রে! অনেক ভালোবাসি আমি ঝর্ণাকে! "
" আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলে না রে বন্ধু! কথাটা কে বলেছে জানিস! "
" কে বলেছে? "
" শান্ত ভাইয়ের কথা তোর মনে আছে! "
" প্রিয়া আপুকে যে ভালোবাসাতো। "
" হুমম! ! শান্ত ভাই কিন্তু প্রিয়া আপুকে পায়নি। বরং অন্য একজনকে বিয়ে করে সংসার করছে। আমাকে বলেছিল কথাটা! বাস্তবতা অনেক কঠিন! "
" হুমম বুঝেছি রে! আমি যে কি করবো এখন! সামনে পরীক্ষা। এরই মাঝে ঝর্নার বিয়ে পরীক্ষার পরে! "
" এসব নিয়ে ভাবিস না। ভাগ্যে থাকলে ঠিকই পাবি! আজকে দেখা করে দেখ কি বলে! "
" ঠিক আছে বন্ধু! "

দেখতে দেখতে দুজন শিমুলতলা চলে আসে। রাস্তারপাশে মস্তবড় তাল গাছ। এ এলাকার সৌন্দর্য তালগাছটি। ঝর্নাদের বাড়ি দেখা যায় এখান থেকে। সন্ধ্যা হলে এদিকটায় মানুষের আনাগোনা কমে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকার বুঝা যায়।

আসিফ পকেট থেকে ফোন করে সজিবকে ফোন দেয়! " সজিব, আমি দাড়িঁয়ে আছি তালগাছের এখানে! "
" দাড়াঁ, ঝর্ণা আসবে একটু পরে। "
" ঠিক আছে। "

কিছুক্ষণ পর ঝর্ণা আসে। ঝর্ণাকে দেখেই আসিফ কেঁদে দেয়! আসিফের কান্না দেখে ঝর্ণাও কেঁদে দেয়!
"কেমন আছো তুমি! "(আসিফ)
ঝর্ণা কথা বলতে পারছে না। শুধু কান্না করছে। আমি, আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
" আমিও যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি! একটা দিন নাই যে তোমাকে আমি মিস করি নাই! "
"আমি জানি । ভাইয়া আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলছে! তুমি একটা ব্যবস্থা করো। "
" পরীক্ষাটা শেষ হোক। তারপর একটা কিছু ব্যবস্থা করবো। তুমি চিন্তা করো না! "

"আসিফ তাড়াতাড়ি কথা বলা শেষ কর! মানুষ আসছে!" (সৌরভ)

আসিফ ঝর্ণাকে এক মুহূর্তের জন্য জড়িয়ে ধরে। ঝর্ণার চোখ দিয়ে তখনও পানি ঝরছে। কিন্তু মুহূর্তটা ছিল কিছুক্ষণের জন্য! ভালোবাসার মানুষটির জায়গা বুকের বামপাশে হয়। আসিফ ঝর্নাকে বলে, "আমি তোমার পাশে আছি! তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি একটা কিছু ব্যবস্থা করে তোমার ভাইয়ের কাছে যাবো! "
"হুমম, আমি গেলাম। "

" চল এবার! আরেকটু দেরি করলে ধরা খাবি! "
সৌরভের কথা শুনেও যেন আসিফের শরীর নড়ছে না। ঝর্ণা বাড়ি না যাওয়া অবধি তালগাছের নিচেই দাড়িঁয়ে আছে। কিছুক্ষণের জন্য আসিফ থমকে যায়।

শরীর ধরে ধাক্কা দিতেই আসিফের হুশ এলো! "শালা, তুই তো ঝামেলার লোক রে! বলছিলি বেশিক্ষণ কথা বলবি না। এখন দেখছি যেতেই চাচ্ছিস না! "
" যেতে ইচ্ছে করছে না রে। ঝর্ণাকে যেন আমি হারিয়ে ফেলছি মনে হচ্ছে! এতো শূন্যতা অনুভব হচ্ছে কেন? "
" এখনে দাড়িঁয়ে না থেকে যেতে যেতে বল কি বলেছে ঝর্ণা! চল, এবার! "

আসিফ ধীরে ধীরে হাটঁতে থাকে। ঝর্ণার চেহারাটা যেন মাথায় সেট হয়ে গেছে। এতো অল্প সময়ের জন্য এলো। অথচ এক ঘন্টা ধরে কথা বলেছে! প্রিয় মানুষের সাথে থাকলে সময় কিভাবে চলে যায় টেরই পাওয়া যায় না।

চলবে....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

খুবই খারাপ লেগেছে অধরা পরী গল্পটির অষ্টম পর্ব পড়ে। ঝর্ণার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে তার ভাইয়া। আসিফ এক মুহূর্তের জন্য ও অন্য কিছু ভাবতে পারতেছে না ঝর্ণাকে ছাড়া। অল্প সময় কথা বলবে বলিও প্রায় এক ঘণ্টার মতো কথা বলেছিল ঝরনা এবং আসিফ। আসলেই প্রিয় মানুষটার সাথে কথা বলার সময় কোন দিক দিয়ে যে সময় চলে যায় তা কেউই টের পায় না। আপনি খুব সুন্দর ভাবে অষ্টম পর্ব লিখেছেন। দেখতে দেখতে অষ্টম পর্ব ও শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন অপেক্ষায় থাকলাম পরবর্তী পর্বে জন্য। কি হল তা জানার খুবই আগ্রহ হচ্ছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব নিয়ে হাজির হবেন।

 last year 

জি আপু। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। পরের পর্বটি খুব শীঘ্রই আসবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 59887.64
ETH 2670.13
USDT 1.00
SBD 2.47