১ম পর্বঃ জবার স্বপ্নপূরণ

21-10-2022

০৬ কার্তিক ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো আছি। তবে রোদের যে তীব্রতা ভালো কি আর থাকা যায়। আজ ঢাকা আসলাম আপুদের নিয়ে। শরীর একদম টায়ার্ড জার্নি করে। ভেবেছিলাম এই নিয়ে একটি পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিন্তু তার আর হলো না। যায়হোক, গতকাল একটি গল্প লেখা শুরু করেছি। আশা করি কয়েকটি পার্টে গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আপনাদের কাছেই ভালো লাগলে আমার লেখা স্বার্থক!

watercolor-1020509__480.webp

copyright free image from pixabay

পরিবারের একমাত্র মেয়ে জবা। ছোটবেলা থেকেই গ্রামে বড় হয়েছে। গ্রামের আলো বাতাসের মধ্যে দিয়েই জবা বেড়ে উঠেছে। একমাত্র মেয়ে হওয়ায় বাবা মায়ের আদরও পেয়েছে। মেয়ের সব আবদার বাবা পূরণ করার চেষ্টা করে। জবার বাবা পেশায় একজন ব্যবসায়ী আর মা ঘরের কাজ নিয়েই ব্যস্ত। জবার বাবার ইচ্ছে ছিল মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ুক। বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য গ্রাম থেকে দূরে একটি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়। জবাদের বাড়ি থেকে স্কুল অনেক দূরে। হেটেঁ গেলে প্রায় এক ঘন্টা লেগে যায়। বাসে করে গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। জবা প্রথম প্রথম রেগুলার স্কুলে যাওয়া আসা করতো। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই গ্রামের কিছু ছেলে জবার পিছু পিছু যেতে শুরু করে। জবা সেটা ভালো করেই বুঝতে পারে। জবা বাড়িতে এসে তার বাবাকে সবকিছু খুলে বলে। জবার বাবা তাকে বলে সপ্তাহে ছয়দিন স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। মাসে একদিন গেলেই হবে! শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষাগুলো দিবে। বাবার কথা মতো জবা স্কুলে যায় না। বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা করে। এরই মাঝে জবার বাবা জবার জন্য একটি স্মার্টফোন কিনে নিয়ে আসে। অনলাইনে যেন ঘরে বসেই পড়াশোনা করতে পারে। নতুন ফোন পেয়ে জবা ভীষণ খুশি। ঘরে বসেই এখন পড়াশোনা করতে হবে।

কিছুদিন পর জবার স্কুল থেকে ফোন আসে। জবাকে স্কুলে যেতে বলে। জবা তার বাবাকে নিয়ে স্কুলে যায়। তারপর স্যারদের সবকিছু খুলে বিষয়টি। স্যাররাও অবশ্য জবার ব্যাপারটা বুঝতে পারে। কিন্তু ক্লাস না করলে জবা অনেক পিছিয়ে যাবে। রেগুলার ক্লাস করলে নতুন নতুন টপিক সম্পর্কে অবগত হতে পারবে। কিন্তু জবার বাবা চাই তার মেয়ে বাড়ি থেকেই স্কুলে আসুক। শুধু পরীক্ষাগুলো দিবে। তারপর জবা ও তার বাবা স্কুল থেকে চলে আসে। জবা বাড়িতে বসে অনলাইনে কোর্স কিনে পড়াশোনা করতে থাকে। এতে হেল্প করে কামাল স্যার। জবাদের স্কুলের গণিত শিক্ষক। জবাকে কিছু গাইড দিয়েছিল আর জবাগুলো সেগুলো ফলো করে। দেখতে দেখতে দশম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে। আর মাত্র তিনমাস বাকি। জবা পড়ার স্পিড আরও বাড়িয়ে দেয়। জবাদের বাড়ির পাশেই একটি মেয়ে ছিল নাম তার রুনা। সেও সেইম ক্লাসে পড়াশোনা করে। কিন্তু অন্য স্কুলে। জবার কোনো কিছুতে সমস্যা হলে রুনার কাছে চলে যায়। রুনা অবশ্য তাকে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়।

এসএসসি ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল। ইংরেজি পরীক্ষা বাদে সবগুলো সাবজেক্ট এর পরীক্ষা ভালে হয়েছিল। জবার আশাও ছিল ভালো রেজাল্ট আসবে এবং ভালো রেজাল্ট এসেও ছিল। এসএসসি তে জবা ৪.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সামনে জবার জন্য এখন অনেকটা পথ বাকি! বাবার যেহেতু ইচ্ছে মেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ুক। তাই জবা পলিটেকনিক এ ভর্তি হয়ে যায়। সাবজেক্ট হিসেবে পায় ইলেকট্রিক্যাল। সেখানেও আবার আরেক ঝামেলা! জবাদের এখানে যে পলিটেকনিক ছিল সেটিও তাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে। নরসিংদী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এ জবা ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্ট এ ভর্তি হয়। বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় তাকে বাড়ির বাইরে থাকতে দেয়নি ও কোনো বন্ধুদের সাথে কথা বলারও সুযোগ হয়নি। আগের মতোই জবা মাসে একবার কলেজে যেত। পলিটেকনিক তাই স্যারেরা এতো কিছু জিজ্ঞেস করতো না। ক্লাসের মেয়েরা পর্যন্ত তাকে চিনতো না। কারণ সে কলেজে খুব কম আসতো। যার কারণে কারো সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেনি। এই নিয়ে অবশ্য জবার আক্ষেপ নেই। কারণ বাবা মা সবসময় যে তার ভালোটাই চেয়েছে।

জবাদের এলাকার দুজন মেয়ে নরসিংদী পলিটেকনিক এ পড়াশোনা করতো। একজনের নাম শিলা আরেকজনের নাম দিনা। তবে তাদের সাথে পরিচয়টা হয়েছে তৃতীয় সেমিস্টারে এসে! ধীরে ধীরে একটা সময় তাদের সাথে জবার ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। যখন কলেজ যায় তখন জবাকেও সাথে করে নিয়ে যায়। এভাবে দেখতে দেখতে তিনটি সেমিস্টার চলে গেল! জবা ফেইসবুক ব্যবহার করতে শিখে যায়। আইডিটা অবশ্য নিজে নিজেই খুলেছে জবা। প্রথম প্রথম জবা শুধু ফেইসবুকের নিউজফিডে ঘুরেই সময় পার করতো। একটা সময় দেখতে পায় অনেকেই তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে। কিন্তু জবা কাউকে চেনে না । শুধু শুধু একসেপ্ট করে লাভ কি! জবা একদিন দেখতে পায় একটি স্টাডি গ্রুপ খোলা হবে পলিটেকনিক ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে। জবা সেখানে ইন্টারেস্টেড হয়। তারপর সে গ্রুপে জবা জয়েন হয়। জয়েন হওয়ার পর জবা খেয়াল করে অনেকেই এখানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শেয়ার করে এবং যারা একটু ভালো তারা সে সমস্যাগুলো সলভ করার চেষ্টা করে।

গ্রুপে কেউ কাউকে চেনে না কিন্তু কারো কোনো ম্যাথ বা টপিক বুঝতে সমস্যা হলে সবাই সাহায্য করার চেষ্টা করে। জবা শুধু সবার প্রশ্নের উত্তর আর সমাধান দেখতো কিন্তু সে কখনো কোনো প্রবলেম সেখানে শেয়ার করেনি। একদিন জবার একটি প্রবলেম বুঝতে সমস্যা হয়। তারপর সে সমস্যাটির ছবি গ্রুপে শেয়ার করে। কিছুক্ষণ পরেই রায়হান নামের একটি ছেলে জবার প্রশ্নের উত্তর দেয়। জবা উত্তরটা পেয়ে খুশি হয়। দুদিন পর খেয়াল করে রায়হান নামের সেই ছেলেটি তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। ছেলেটি খুব ভালো জবা আগেই জানতো তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে। তারপর.....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 2 years ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

জার্নি করে কোথাও গেলে সে দিনে ওই বিষয় নিয়ে পোস্ট করার ইচ্ছা থাকলেও পরে আর করা হয় না, আমারও এরকম অনেক হয়। আপনার গল্পটি পড়ে ভাল লাগলো। আজকাল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস করেও অনেকে অনেক দূর এগিয়ে যাচ্ছে। জবা স্কুল জীবনে অনলাইনের মাধ্যমিক ক্লাস করে উতরে গিয়েছে, কিন্তু কলেজে এসে জবা কারো সাথে মিশতে পারেনি বলে তাই একটু সমস্যা হয়েছে। পরবর্তীতে সে স্টাডি গ্রুপে জয়েন করার কারণে হয়তো তার পরে ভালো হবে। ছেলেটির ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করাতে ঘটনাটি মনে হয় অন্যদিকে মোড় নেবে আমার মনে হচ্ছে।

 2 years ago 

জি আপু আপনি ঠিক বলেছেন জার্নি করে কোথায় গেলে পরে আর পোস্ট করতে শরীরে টায়ার্ডনেস চলে আসে। আর বাস জার্নি একটু বেশিই খারাপ লাগে। পরের পর্বটি খুব শীঘ্রই পাবলিশ করা হবে। আপনার মন্তব্য পড়ে খুশি হলাম 🌼

 2 years ago 

তারপর আর কি সম্ভবত পরবর্তী পর্বে আমরা জানতে পারবো রায়হান এবং জবার মধ্যে কোন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। যাই হোক পড়ে খুব ভালো লাগলো। তবে এভাবে সারাদিন ঘরে বসে থেকে পড়ালেখা করা বাইরের দুনিয়ার সম্পর্কে না জানা বা কারো সাথে বন্ধুত্ব না হওয়া এগুলো কিন্তু আমি মনে করি জবার জন্য খুব একটা ভালো ছিল না। জবার বাবা এক্ষেত্রে তিনি বা জবার মা জবাকে নিয়ে স্কুলে বা কলেজে যাতায়াত করতে পারতেন এতে করে তার ভবিষ্যতের জন্য ভালো হতো।

 2 years ago 

জি ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন। কিন্তু বাধ্যবাধকতার মধ্যে দিয়েই জবা বড় হয়েছে। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া চমৎকার একটি মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

জবার জীবনের এত সুন্দর কাহিনী পড়তে পড়তে বেশ ভালই লাগছিল। বিশেষ করে জবা স্কুলে ক্লাস না করেও বাবার কথামতো ফোনে অনলাইনে ক্লাস করে অনেক ভাল রেজাল্ট করেছে। আমার কাছে বিষয়টি বেশ ভালোই লেগেছিল। পরবর্তীতে আবার দেখলাম পলিটেকনিকেল ভর্তি হয়েছে। কিন্তু সময়টা তো ভালোই যাচ্ছিল। এখন দেখছি রায়হান নামে একটা ছেলে ওর প্রশ্নের উত্তর বের করে দিয়েছে। রায়হানের পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে। পরবর্তীতে কি হবে আসলে সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

জি আপু পরের পর্বটি আগামীকাল পাবলিশ করা হবে 😁। ধন্যবাদ আপনাকে 🌼

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64349.87
ETH 2775.11
USDT 1.00
SBD 2.65