১ম পর্বঃ- হঠাৎ দেখা
26-12-2022
১২ পৌষ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
শুভ সকাল সবাইকে 🌼। মিষ্টি সকালের শুভেচ্ছা। খুব সকাল সকাল আজ ঘুম ভেঙ্গে গেল! এর কারণও অবশ্য আছে। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েছি। শীতের বেলায় বেশি রাত পর্যন্ত জাগাও কষ্টকর! বিছানা থেকে কোনোভাবেই উঠতে মন চায়না আসলে। সবারি একই অবস্থা হওয়ার কথা, হাহাহা! সকাল সকাল উঠে দেখি বাহিরে কুয়াশা পরেছে অনেক। পাশেই ফোন রাখা ছিল। ফোনটা অন করেই দেখি সাড়ে ছয়টা বাজে! এখন আর ঘুমানোও যাবে না। একবার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমার আর ঘুমেও ধরে না! যায়হোক, আজকের মিষ্টি সকালটা শুরু করলাম একটা গল্প দিয়ে। ফোনের নোটসটা ওপেন করেই বসে পড়লাম গল্প লিখতে। আপনারা হয়তো জানেন যে, আপনাদের সাথে আমি গল্প শেয়ার করে থাকি। আজকের গল্পের প্রথম পার্ট লিখে ফেললাম। দ্বিতীয় পার্ট খুব শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে।
দীর্ঘ পাচঁ বছর পর শুভ্রার সাথে দেখা! ছোটবেলা থেকেই শুভ্রাকে ভালোবাসত নিলয়! কিন্তু হঠাৎ করেই নিলয়ের জীবন থেকে শুভ্রা হারিয়ে যায়, কিছু না বলেই! ঠিক সেই জায়গাটাই, যেখানে বসে তারা আড্ডা দিতো প্রাণখুলে! শুভ্রা শাড়ি পরে দাড়িঁয়ে আছে। হাতে চুরির বদলে ঘড়ি! ঠোঠেঁ কোনো লিপস্টিক নেই। অতি সাধারন একটা মেয়ে! অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে শুভ্রা। নিলয়, শুভ্রাকে দূর থেকেই দেখছিল। প্রথমে দেখা করতে যায়নি। যাবেই বা কেমন করে! হঠাৎ করে কেউ যখন জীবন থেকে চলে যায়, তখন স্মৃতিটুকুই যে রেখে যায়। আর সেই স্মৃতিটুকু বয়ে চলতে আজীবন, হয়তো বা না। তারও আগে কেউ এসে পরে আমাদের জীবনে। তবে প্রথম প্রেমের অনুভূতি কি আর ভুলা যায়? নিলয় শুভ্রাকে ঠিক মনে রেখেছে। শুভ্রার হয়তো বিয়ে হয়ে গেছে!
পহেলা ফাল্গুনে শুভ্রাকে শেষবারের মতো শাড়ি পরতে দেখছিলাম। অসম্ভব সুন্দর লেগেছিল সেদিন। আজ অনেকটা বছর পর দেখছি। নিলয় শুভ্রার কাছে যায়! শুভ্রা, নিলয়কে দেখেই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে! কোনো কথা বলছে না! নিলয় তখনই কথা বলতে শুরু করে!
-কেমন আছো তুমি? (নিলয়)
-ঠিক যেমন দেখছো, তেমনি! তুমি ভালো আছো?
-আসলে আমাদের ভালো থাকতে হয়। পরিবার, প্রিয়জন সবার মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও।
-এভাবে কথা বলছো কেন? এখনও কি রেগে আছো আমার উপরে?
-রাগ করার অধিকার থাকলে তো! জীবনের কঠিন মোমেন্টে আমার লাইফ থেকে চলে গিয়েছিলে! একটিবারও কি মনে হয়নি কিভাবে আমার সময়গুলো কাটবে?
-আমার এছাড়া কোনো উপায় ছিল না!
-ওহহ, আচ্ছা! বিয়ে করে ঠিকই এখন ভালো আছো! আসলে একটা কথা কি জানো! জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে ফ্যামিলি ছাড়া কেউ পাশে থাকে না, কেউ না!
-ছেড়ে যাওয়ার পিছনেও কোনো এক কারন ছিল। কখনো জানানো হয়নি, বলতে পারো জানানোর প্রয়োজন হয়নি।
-ঠিক আছে! তবে ভালো থেকো তুমি!
নিলয়ের প্রাইভেট কার এসে হাজির! নিলয়, শুভ্রাকে বিদায় জানিয়েই প্রাইভেট কারে উঠে পড়ে। শুভ্রা কিছু বলার সুযোগ পেল না। এই পাচঁ বছরে অনেক কিছুই হয়ে গেছে। নিলয়কে কখনো বুঝার সুযোগ দেয়নি। নিলয় যে এখনও রেগে আছে সেটা শুভ্রা ভালো করেই বুঝতে পারছে। কিন্তু কোনো উপায় ছিল না শুভ্রার!
শুভ্রা আর তার ফ্যামিলি শহরেই থাকতো। হঠাৎ করেই তাদের বাসা থেকে বের করে দেয়! তিন মাসের ভাড়া বাকি ছিল! উপায় না পেয়ে শুভ্রা ও তার মা একটা নরমাল রুমে উঠে পড়ে! শুভ্রা তখনও অনেক ছোট! কদিন পর কলেজ থেকে পাস করবে! এখন চাইলেই আর চাকরি করাও সম্ভব না! পরিবারের বড় মেয়ে শুভ্রা। ছোট একটি বোন আছে। পরিবারের দায়িত্ব এসে পরেছিল তখন শুভ্রার কাধেঁ! শুভ্রার বাবাও মারা গিয়েছিল সেই ছোটবেলায়! কিছু টাকা ব্যাংকে জমিয়ে রেখেছিল তারা বাবা। মেয়ে দুটির ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করে।
এই মুহুর্তে টাকার প্রয়োজন আরও। ব্যাংকে রাখা টাকাও প্রায় শেষের দিকে। শুভ্রা কলেজ থেকে এইস এসসি পাস করে। পরিবারকে নিয়ে চলে যায় গ্রামে। নিলয় তখন কিছুই জানে না। শুভ্রার ফোনটিও বিক্রি করে দিয়েছিল। গ্রামে শুভ্রাদের কিছু জায়গা-জমি আছে। শুভ্রার বাবার একটা বসতভিটাও আছে। সেখানে গিয়ে থাকা যাবে। কিন্তু শুভ্রার মায়ের শরীরটাও ভালো নেই। মেয়ে দুটিকে নিয়ে চিন্তা করে শুভ্রার মা। বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি! কিন্তু গ্রামের পরিবেশে থেকে পড়াশোনা করতে পারবে না মেয়ে দুটি। তার মা সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামের জায়গাটুকু বিক্রি করে শহরে চলে যাবে। শুভ্রা প্রথমে রাজি হয়নি, মায়ের কথায়। বাবার স্মৃতিটুকুও বিক্রি করে দিবে! শুভ্রার মা সিদ্ধান্ত নেয়, তার মামার কাছে জমিটা বিক্রি করে যাবে! যখন টাকা হবে তখন যেন জমিটা আবার ছাড়িয়ে নিতে পারে।
শুভ্রার মামা আসাদ বাড়িতে আসে শুভ্রাদের! আসাদ মামা সন্তান নিয়ে গ্রামেই থাকে। গ্রামে কিছু কৃষি জমি আছে সেগুলোতে ফসল ফলিয়ে ভালোই আয় রোজগার করছে। মাঝে মাঝে আসাদ মামা শুভ্রাদের জন্য সবজি নিয়ে যেত, যখন শুভ্রা ও তার পরিবার শহরে থাকতো। বাবার শেষ জমিটা আসাদ মামার কাছে রেখে যাবে। বিনিময়ে আসাদ মামা কিছু টাকা দেয় শুভ্রাদের! গ্রামের জায়গায় দাম সস্তা! সেই অনুযায়ী তিন লাখ টাকা দেয়। শেষ সম্বলটুকু রইলো না! শুভ্রা ও তার ভীষন কান্না করেছিল সেদিন। বাবার শেষ জমিটুকু বিক্রি করে চলে আসে শুভ্রা শহরে। তারপর.......
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শীতের দিনে শীতের সকালটা সবার এভাবে কেটে যায়।আসলেই ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করে না আপনি ঠিক বলেছেন অনেক অলস লাগে উঠতে।কোন আপন মানুষ যখন নিজের জীবন থেকে মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যাই তখন বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।এমন পরিবর্তন হয়েছে শুভ্রা আর নিলয়ের জীবনে।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
আপনাকেও ধন্যবাদ আপু গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য 🌼
দারুন একটি গল্প লিখেছেন ভাইয়া। আসলে এই রকম গল্প গুলো পড়তে আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। আর আমি আগে যখন ফেসবুক দেখতাম তখন একটি আপুর গল্পগুলো পড়তাম। যআমার খুবই ভালো লাগতো। কিন্তু সেই আপুটা লিখা বন্ধ করে দিয়েছিল। আজকে আপনার লেখাটা পড়ে সত্যিই ভালো লাগলো।
আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক খুশি হলাম আপু! আপনাদের উৎসাহ পেলে সামনে আরও ভালো ভালো গল্প নিয়ে হাজির হবো। ধন্যবাদ আপনাকে
কিছু কিছু সময় মানুষ অনেক অসহায় হয়ে পরে।শুভ্রা বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের কেউ দায়িত্ব নেওয়ার ছিলো না,তাই হয়ত বাড়ি ভাড়া জমে গিয়েছিলো।যাই হোক শুভ্রা কেন নিলয় কে সব কিছু জানাইনি, পরিবর্তে পর্বে হয়ত জানতে পারবো।ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ
হয়তো এমনও হতে পারে,
পরবর্তী পর্ব খুব শীঘ্রই আসবে। ধন্যবাদ আপনাকে 🌼
আমার জন্য শীতের সকালে উঠা টা কষ্টকর, রাত জাগতে পারি আমি😜।
গল্পের মধ্যে "শুভ্রা" নামটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। আসলে কিছু কিছু সময় মানুষ এমন অসহায় হয়ে পড়ে। আর তখন খুব কাছের কিছু মানুষ পরিস্থিতি বুঝতে পারেনা এবং বুঝতে চায়ও না। আর যে কোন মানুষের জন্য নিজের শেষ সম্বল টুকু বিক্রি করা খুবই কষ্টকর। যাই হোক, পরের পর্বে শুভ্রার পরিবার শহরে আসার পরের ঘটনা গুলো জানতে পারবো আশা করি। দারুন লিখেছেন।
হাহাহা! রাত জাগা শরীরের জন্য ক্ষতিকর! আপনি জানেন না নাকি! হুমম আপনি ঠিকই বলেছেন। কাছের মানুষগুলো বুঝতে পারলে তো ভালোই হতো! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 🌼
হঠাৎ দেখা গল্পটার প্রথম খন্ড পড়লাম। শুভ্রা এবং নিলয়ের দেখাটা ছিলো হঠাৎ। আর এখান থেকেই গল্পের শুরু। জীবনের প্রথম প্রেম ভুলে যাওয়া আসলেই অনেক কঠিন। যেটা নিলয় মেনে নিতে পারেননি। মানুষ হিসেবে আমরা অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ি তিন মাসের বাসা ভাড়া বাকি পড়াতে শুভ্রাদের যেমন হয়েছে।এটা খুবই কষ্টদায়ক। শেষ- মেষ লেখা পড়ার খরচ চালানোর জন্য শুভ্রা তাদের শেষ সম্বল জমিটা ও তার মামা আসাদের কাছে বিক্রি করে দিলেন তিন লক্ষ টাকায়..সুন্দর একটা গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। পরের খন্ডের অপেক্ষায় রইলাম।
গল্পটা কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছেন! খুব শীঘ্রই পরবর্তী পর্ব নিয়ে হাজির হবো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
শীতের সময় কেউই বিছানা ছেড়ে উঠতে চায় না। আমার কাছে এরকম গল্প গুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। শুভ্রা শেষ পর্যন্ত বাবার সেই স্মৃতিটুকু হারালো। তাদের দুজনের জীবনেই অনেক পরিবর্তন এসেছে। আসলে এরকম গল্পগুলো পড়ার সময় শুধু ভাবতে থাকি পরের পর্বে কি আসবে। এখন তো ভাবছি এই গল্পটির পরের পর্বে কি আসবে। যাইহোক আশা করি খুবই তাড়াতাড়ি গল্পটির পরের পর্ব শেয়ার করবেন আমাদের মাঝে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
হুমম ভাইয়া! গল্পের স্বার্থকতা সেখানেই! আপনারা পড়ে ভালো বললেই, আমি অনেক অনুপ্রেরণা পায়! অনেক ধন্যবাদ, খুব শীঘ্রই পরের পর্ব আসবে 🌼
"হঠাৎ দেখা" এই কথাটির মধ্যে কিন্তু অন্যরকম একটি বিষয় লুকিয়ে আছে। শুভ্রার কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো। বাবার শেষ স্মৃতিটুকুও বিক্রি করে দিল শেষ পর্যন্ত। যদিও তার মামার কাছে বিক্রি করেছে কিন্তু কে জানে কখন কি হয়ে যায়। যদিও শুভ্রা চাকরি পাওয়ার মতো এত বেশি বড় হয়নি। তার বড় যদি একটি ভাই থাকতো তাহলে কোন কিছু করে ঘর সংসার চলতো।কিন্তু শুভ্রা বড় মেয়ে হওয়ার কারণে তার মাথায় অনেক চাপ এখন। যাইহোক পরবর্তীতে শুভ্রা শহরে আসার পর কি হয়েছে তা জানার অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ্রা বড় মেয়ে হওয়ায় তার এই অবস্থা! পরের পর্বটি পড়লে আরও বুঝতে পারবেন আপু 🌼