প্রথমবার সাইকেল চালানো
15-10-2022
৩০ আশ্বিন ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো আছি।
আচ্ছা আপনাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করি, সাইকেল চালাতে পারেন? তাহলে বেশিরভাগ উত্তর আসবে, "হ্যা" পারি। এই সাইকেল শেখা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই সবার মনে কৌতুহল কাজ করে। আমিও এর ব্যতিক্রম নয়। সেদিন স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরতেই দেখি ঘরের সামনে সাইকেল দাড়ঁ করানো! সাইকেল দেখে নতুন মনে হলো না। ভাবলাম কোনো মেহমান হয়তো সাইকেল নিয়ে এসেছে। আমি এতোটা আগ্রহ দেখালাম না। ঘরে ঢুকেই ব্যাগ রেখে হাত পা ধুতে গেলাম। আপু আমার কানে কানে এসে বলছে সাইকেলটা কেমন হয়েছে! আমি তো অবাক। এটা তাহলে আমাদের সাইকেল! আহ! কত যে খুশি হয়েছিলাম সেদিন সাইকেলটা দেখে। আপুর বৃত্তির টাকায় সাইকেলটা কেনা। ফনিক্স সাইকেল। উচ্চতায় যেন আমার থেকে বড় সাইকেল। কিন্তু সমস্যা হলো এই সাইকেল আমি চালাবো কি করে? সাইকেলটা মূলত আব্বার জন্য কিনেছিল। আব্বার ফার্মেসী তখন বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে। প্রতিদিন হেটেঁ হেটেঁ যেতে হয়। আবার লেইট নাইট বাড়িতে ফিরতে হয়। তাই একটি সাইকেল প্রয়োজন ছিল। আর আপু সেই সাইকেলটি কিনে দিয়েছিল।
আমি তখন চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। আব্বা রাতে সাইকেল বাড়িতে নিয়ে আসতো। সকাল হলেই আমাদের বাড়ির উঠোনে সাইকেল চালানোর প্র্যাকটিস শুরু করে দিতাম। যেহেতু সাইকেল আমার থেকেও বড় ছিল এজন্য সাইকেলের সিটে বসে সাইকেল চালাতে পারতাম না। সাইকেল এর নিচ দিয়ে হাত সিটের মধ্যে রেখে সাইকেল চালানো শুরু করি। প্রথম প্রথম খুব সমস্যা হচ্ছিল। কোনোভাবেই ব্যালেন্স করতে পারতেছিলাম। বার বার শুধু পড়ে যেতাম। আবার উঠে চালানো শুরু করে দিতাম। এভাবে চার পাচঁ দিন প্র্যাকটিস করতে থাকি। একটা সময় সাইকেল এর প্যাডেল দেয়া শিখে যায় এবং ব্যালেন্স করতেও পারি আমাদের বাড়ির উঠোন অনেকটা ঢালু ছিল। উপর থেকে নিচের দিকে সাইকেল চালানো সহজ হতো। আবার বিপরীতে করলে সাইকেল চালাতে পারতাম না। এভাবে উপর থেকে কয়েকবার চালানোর পর একদম পাক্কা ড্রাইভার! প্লেন করি আগামীকাল থেকে রাস্তায় সাইকেল চালাবো। সকাল সকাল রাস্তা ফাকাঁ থাকে। সকাল হতেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ফাকাঁ রাস্তা পেয়ে ফুল স্পিডে সাইকেল এর প্যাডেল মারতে থাকি। কিন্তু সাইকেল এর ব্রেক কোনোভাবেই যেন কাজ করছিল না। সোজা ক্ষেতে নামিয়ে দিলাম সাইকেল। সাইকেল এর চাকা কাদাঁয় যেন গেথে গেছে একদম। সকাল রাস্তায় কেউ নেই। সাইকেল এর ওজনও আমার কাছে অনেক মনে হচ্ছিল। খুব কষ্টে সাইকেলটা উপরে তুলে আনলাম। সাইকেল বাড়িতে নিয়ে ধুয়ে ফেলি। আব্বা দেখতে পারলে বকাজকা করতে পারে। যাক, এবারের মতো বেচেঁ গেলাম।
আমাদের বাড়ির কাছেই জুলহাস কাকার বাড়ি ছিল। সাইকেল ঠিক করে দেয়। সেসময় সাইকেল ভাড়াও দিতো। পাচঁ টাকা দিয়ে এক ঘন্টা সাইকেল চালানো যাবে। তখন পাচঁ টাকা নিজের কাছে থাকা মানা স্বপ্ন কেনার মতো ছিল। দুই চাকার ছোট সাইকেল। সাইকেল এ বসে মাটিতে পা দিয়ে স্পর্শ করা যেত। পড়ে গেলেও কন্ট্রোলে রাখা যেত। আমাদের পাড়ার ছেলেরা জুলহাস কাকার কাছ থেকে সাইকেল ভাড়া নিয়ে শিখতো। একদিন আমিও সাইকেল ভাড়া করলাম পাচঁ টাকা দিয়ে। এক ঘন্টার বেশি চালানোও যাবে না। সাইকেল নিয়েই চলে আসলাম আমাদের বাড়ির উঠোনে। কয়েকবার সাইকেল চালানো প্র্যাকটিস করলাম। সিটে বসে কোমড়ের ব্যালেন্স যেন ঠিক রাখতে পারছিলাম না।। ডানে প্যাডেল দিলে বায়ে হেলে যেতাম আবার বায়ে প্যাডেল দিলে ডানে হেলে যেতাম। এ যেন কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পরে গেলাম আমি।
আমাকে আসলে সাইকেল চালাতে কেউ হেল্প করেনি। যেহেতু সাইকেল এর সিটে বসে মাটি স্পর্শ করা যেত তাই ভেবেছিলাম পারবো। উঠোনের শেষ মাথা থেকে চালানো শুরু করে দিতাম। ছোট সাইকেল এর সমস্যা ছিল এতে কোনো ব্রেক ছিল না। পা দিয়েই ব্রেক করতে হতো। সাইকেল চালাতে চালাতে একসময় মেহগুনি গাছের সাথে দিলাম ধাক্কা! আমি মুহূর্তেই উল্টে পরে গেলাম। হাতে অনেক ব্যাথা পেয়েছিলাম। গাছের সাথে অনেক জোরে ধাক্কা লেগেছিল এজন্য শব্দ ও হয়েছিল। ঘরের ভিতর থেকে আম্মা তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলো। টিউবওয়েল এর কাছে নিয়ে হাতে কিছুক্ষণ পানি দিলাম। এবার ব্যাথা কমেছে। কিন্তু যখনই বললাম সাইকেল ফেরত দেয়ার টাইম হয়ে গেছে, আরেকটু চালায়! তখনই মায়ের বকুনি। সাইকেল আর চালানো হলো না। তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আরেকবার দশ টাকা দিয়ে দুই ঘন্টা সাইকেল চালাবো।
যাক, এর পরে কি হয়েছিল যদি জানতে চান তাহলে অবশ্যই জানাবেন। সাইকেল চালানোর মুহুর্ত আপনাদের কাছে ভালো লাগলে মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ 🌼
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
ভাই আপনার সাইকেল চালানোর মুহূর্ত গুলি পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো । আপনার বাবার জন্য কেনা সাইকেল নিয়ে আপনি বেশ আনন্দে চালাতে চালাতে ক্ষেতের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। তারপর আবার ভাড়া করে এক ঘন্টা চালানোর জন্য এনেছিলেন আরেকটি সাইকেল। সেখানেও আপনি পড়ে গিয়েছিলেন।আসলে সাইকেল চালানো শিখতে গেলে এরকম বারবার পড়তেই হয়। আবার আপনার ঘন্টার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে সেই পড়ে যাওয়া অবস্থা থেকে সাইকেল চালাতে চেয়েছিলেন এবং মায়ের বকুনি খেয়েছিলেন সত্যি ভীষণ মজার ছিল ।ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য।
জি আপু সাইকেল চালানোর দিনগুলো অন্যরকম ছিল। কত যে ব্যথা পেয়েছি এই সাইকেল চালানো শিখতে গিয়ে হিসেব নেই।
Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
আমিও ছোটবেলায় দেখেছি ভাইয়া অনেকেই ভাড়া করে নিয়ে সাইকেল চালায়।এক ঘণ্টা সাইকেল চালানোর জন্য ৫ টাকা করে নিত। তখনকার দিনের একটা সাইকেল কিনা মানে অনেক টাকা।আমি অনেকের কাছে দেখেছি সাইকেল ক্রয় একটা স্বপ্নের ব্যাপার ছিল কিন্তু সেই সাইকেল চালানো টা আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে।এখন সাইকেল চালানোর পরিবর্তন মানুষ মোটর সাইকেল কিনতেছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি কষ্ট পেলেও তখন সাইকেলের নিয়ে একবার ক্ষেতে নেমে গেছেন। আরেক বার গাছের সাথে ধাক্কা খেলেন।এই লেখা পড়ে খুব হাসি পেয়েছে আমার।আপনার সেই সাইকেল চালানোর স্মৃতির কথাগুলো শেয়ার করেছেন আমাদের সাথে পড়তে পেরে আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে।
জি আপু সময়ের বিবর্তনে সাইকেল থেকে এখন মানুষ মোটরসাইকেল চালায়। সাইকেল চালানোর শৈশবটা এখনকার সময়ে মিস করে। সাইকেল নিয়ে পরে গিয়েছিলাম ক্ষেতে আপু 😁। ব্যথা পায়নি অবশ্য 🤭
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
চতুর্থ বা পঞ্চম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় আপনি সাইকেল চালানোর প্র্যাকটিস করেছেন, তাহলে তো আপনি খুব ছোটবেলায় সাইকেল চালানো অভ্যাস করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অত ছোটবেলায় কি বড় সাইকেল চালানো যায় তারপরও তো আপনি চেষ্টা করে গিয়েছেন। মাঝে একবার কাঁদার ভিতরে চুবানি খেয়েছেন। আবার আপনার জুলহাস কাকার কাছ থেকে ভাড়া করে নিয়েও চালাতে গিয়ে ব্যথা পেয়েছেন, ভালোভাবে চালাতে পারেননি। পরে কি দশ টাকা দিয়ে সাইকেল ভাড়া করেছিলেন এবং সাইকেল কি এখন ঠিকমতো চালাতে পারেন এটা আমার জানার ইচ্ছা?
জি আপু এখন একদম পারফেক্ট সাইকেল চালাতে পারি 😊। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
আপনি দেখছি অনেক ছোটবেলায় সাইকেল চালানোর
প্র্যাকটিস করেছেন তাও আবার ফনিক্স সাইকেল। এ সময় তো বাচ্চারা ছোট চার চাকার সাইকেল চালায়।আপনার আপু বৃত্তির টাকা দিয়ে সুন্দর ফনিক্স সাইকেল কিনেছে আপনার বাবার জন্য। আপনি সাইকেল নিয়ে রাস্তায় গিয়ে কাঁদায় পড়ে গেছেন, শিক্ষার সময় অনেকে এভাবে হয়তো পড়ে।আর ৫ টাকা দিয়ে সাইকেল ভাড়ার ব্যাপারটা অসাধারণ।
জি আপু ছোটবেলা থেকেই একটু দূরন্তপনার মধ্যে বড় হয়েছি তাই তখন থেকে সাইকেল চালানো শুরু 😊। আর পাচঁ টাকা দিয়ে সাইকেল চালানোর ব্যাপারটা এখনও আমার মনে পড়ে
আপনার ঠিক উল্টোটা আমি। সাইকেল চালানো শিখতে আমার বেশ অনেকটা সময় লেগেছে। এবং ছোটবেলা আমি বেশ ভয়ও পেতাম। আপনি যে ভাড়া নিয়েও সাইকেল চালিয়েছেন এটা বেশ দারুণ ছিল। অনূভুতি গুলো কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব না। ভালো লাগল সাইকেল নিয়ে আপনার অনূভুতি গুলো।
আসলেই ভাই সাইকেল চালানোর অনুভূতিগুলো কখনো ভুলা যাবে না, স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে 🌼
সত্যি বলতে ভাই পোস্ট টা খুব আবেগী করে দিল। ঈশ কি মিষ্টি শৈশবে ফিরে গেলাম মুহূর্তেই। এই সাইকেল প্রথম চালাতাম হালফ প্যাডেল করে, ফনিক্স সাইকেলের নিচে থেকে। কত বার যে পরে গেছি রে ভাই,, মামার বাড়ি গিয়ে শিখেছিলাম। আর ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পাওয়ার পর জীবনে প্রথমবার নিজের জন্য একটা সুন্দর সাইকেল কিনে দিয়েছিল বাবা। সেদিন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিলাম। সত্যিই আপনার পোস্ট টা কোথায় যেন নিয়ে গেল। আর পাঁচ টাকা দিয়ে সাইকেল ভাড়া পাওয়ার ব্যাপারটা দারুন লাগলো এক কথায়। এমন প্রথম শুনলাম আমি।
আসলেই দাদা সাইকেল চালানোর শৈশবটাকে এখনও বড্ড মিস করি । পাচঁ টাকা দিয়ে এক ঘন্টা সাইকেল চালাতাম, এতেই যেন সুখ খুঁজে পেতাম।
আমি বৃত্তি পায়নি, পেয়েছিল আমার বড় আপু এবং উনার টাকা দিয়েই সাইকেলটা কেনা হয়েছিল। দঃখের ব্যাপার হলো সাইকেল আমার থেকেও বড় ছিল 😁
আপনি সাইকেল শিখার জন্য এত কষ্ট করলেন। ক্লাস ফোর বা ক্লাস ফাইভ এ সময় আপনি প্রথম সাইকেল চালানো শুরু করলেন। প্রথম দুই একদিন অনেক কষ্ট হলো। সাইকেল আপনার থেকে বড় তাই। এরপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। আপনার বাড়ির উঠানে সাইকেল চালানো শিখলেন। আপনার জুলহাস কাকার বাড়ি ছিল। সে আপনার সাইকেল ঠিক করে দেই। সে সময় ৫ টাকা করে ঘন্টা সাইকেল ভাড়া দিতেই। আপনি অনেক সুন্দর করে আপনার সাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
জি আপু পাচঁ টাকা দিয়ে সাইকেল চালানোর মুহূর্তটা সত্যি বলতে অন্যরকম ছিল। এ মুহূর্তগুলো চাইলেই ভুলা যাওয়া সম্ভব না।