৩য় পর্বঃ মুঠোফোনে প্রেম

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

23-11-2022

০৯ অগ্রহায়ণ ,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন 🌼। আমি বরাবরের মতো ভালো থাকার চেষ্টা করছি। তবে ভীষণ একাকীত্ব যেন আমাকে প্রতিনিয়ত গ্রাস করছে। কি যেন নেই! আপন মানুষগুলোর রূপ যখন পরিবর্তন হয় তখনই নিঃসঙ্গতা ভীড় করে আমাদের মাঝে। মনের অনুভূতি কারো কাছে শেয়ার করারও উপায় থাকে না! তবে এই নিঃসঙ্গতা কিন্তু ভালো। জীবনের অনেকটা পথই যে চলতে হয় একা! যায়হোক, আপনাদের সাথে ইতিমধ্যে একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম। আজকে গল্পের তৃতীয় পার্টটি লিখলাম। আগের পর্বটি না পড়ে থাকলে লিংকে প্রবেশ করে পড়ে আসতে পারেন।

love-1100255_1280.jpg

copyright free image from pixabay

২য় পর্বের পর


"আমি তোমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখিনাই। আর তুমি সামনে তাকিয়ে ছিলে তাহলে জানলে কিভাবে আমি তোমাকে দেখেছি? " শ্রাবন্তী আমাকে বলেছে। তুমি তাকিয়েছিলে। আবির তখন বলে তোমার গালের কালো তিলটার জন্য অদ্ভূত রকমের মায়াবী লাগে তোমাকে, জানো ! নীলা আবিরের মেসেজ দেখে হাসছে! এই প্রথম কেউ তার গালের কালো তিলটার প্রতি ভালো লাগা কাজ করলো। আবির তখন জানতে চাই," রাকিব তোমাকে পছন্দ করতো! তুমি তাকে ভাই বানিয়ে ছেড়ে দিলে! " নীলা তখন বলে এরকম চাপাবাজ ছেলেকে ভাই বানানো ছাড়া উপায় নেই। বয়ফ্রেন্ড হলে কপালে শনি আছে! তারপর আবির নীলাকে প্রশ্ন করেই বসে, "তোমার কেমন ছেলে পছন্দ,শুনি ?" আমার একদম সাদাসিধে একজন হলেই হবে। যে শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। আমার ভালো লাগা খারাপলাগা সব শুধু আমাকে ঘিরেই হবে। "এমন ছেলে পেলে তো তুমি লাকি হয়ে যাবে। মন থেকে চাইলে সেটা পাওয়া সম্ভব।"

নীলার কথাশুনে আবিরের ভালোই লাগছে। আবির ভাবতে থাকে এরকম সাদাসিধে ছেলের মধ্যে আমিও একজন। আবিরেরও ইচ্ছে সে শুধু একজনকেই ভালোবাসবে! কিন্তু সমস্যা হলো আবির নীলার সামনে গিয়ে ভালোভাবে কথাই বলতে পারে না। হাত পা কাপঁতে থাকে। আর নীলা একটু রাগী মেয়ে। যদি অন্য কিছু ভেবে বসে! মেসেজের মাধ্যমেই আবির সব কথা বলতে পারে। সামনে গিয়ে তেমন আসে না কথা। আবির জানে নীলার ফুচকা খেতে খুব ভালো লাগে। কলেজের কাছে একটি জায়গা আছে সেখানেই কাওসার মামার ফুচকা পাওয়া যায়। একবার নীলাকে এই মামার ফুচকা খাওয়াতে পারলে ভক্ত হয়ে যাবে একদম। আবির প্লেন করে দুদিন পর যেহেতু কলেজ বন্ধ, এই সময়টাতে নীলাকে নিয়ে ফুচকা খেতে যাবে। কিন্তু কথা হলো নীলা যাবে তো তার সাথে ফুচকা খেতে? আবির পরক্ষণেই নীলাকে মেসেজ দেয়! "দুদিন পর তো কলেজ বন্ধ! আমি চাচ্ছিলাম তোমাকে একটা ফুচকা ট্রিট দেয়ার জন্য! " নীলা তখন অফলাইনে কাজ নিয়ে ব্যস্ত! মেসেজ দিতেও লেইট হচ্ছে!

রাত নয়টার দিকে নীলার মেসেজ! হঠাৎ ফুচকা খাওয়ানোর প্লেন যে! একসাথে দুজন মিলে ফুচকা খেতে পারলে ভালোই হবে, তুমি যাবে কি না? নীলার আম্মু জানতে পারলে তো কখনই যেতে দিবে না। নীলা তখন বলে, কাল কলেজ আসো পরে কথা হবে! আবির আর কিছু বলেনি। তবে নীলার প্রতি যে আবির কিছুটা দূর্বল হয়ে যাচ্ছে সেটা ভালো করেই বুঝা যাচ্ছে। আবির প্লেন করে নীলার জন্য একটি কবিতা লিখবে! রাতে বসে আবির ভাবতে থাকে। কিন্তু কোনোভাবেই যেন কবিতার লাইন মেলাতে পারছে না। তবে দুই ঘন্টার চেষ্টার ফলে কয়েক লাইন বানাতে পেরেছে আবির।
"তোমার টানা টানা চোখের মায়ায়
আমি পরেছি
তোমার গালে টোল পরা,
হাসির মায়ায় আমি পরেছি
তোমার স্নিগ্ধ হাসি,
আমার মনে শিহরণ জাগায়। "

এই পাচঁ লাইনের কবিতা হয় কখনো! নীলা কি ভাববে এই কবিতা দিলে? আবির দুটানায় পরে যায়। কিন্তু লিখেছে তো এটাই কম কিসের। এতো কষ্ট করে লিখেছে, দুই ঘন্টা ভেবে চিন্তে।

মেয়েদের চকলেট অনেক পছন্দ! আবির প্লেন করে চিরকুটের সাথে একটি চকলেট দিবে। দোকান থেকে আবির চকলেট কিনে ব্যাগে রেখে দেয়! কাল কলেজে নীলাকে চকলেট আর চিরকুটটা দিবে। কিন্তু সেটা নীলাকে না জানিয়ে! পরদিন কলেজে যায় আবির আর নীলা! আবির তখন নীলার কাছে যায়। একসাথে ফুচকা খাওয়ার বিষয়টা বলে। কিন্তু নীলাকে দেখে ততোটা খুশি মনে হলোনা। কিছু একটা হয়েছে। আজকে নীলাকে পুরোপুরি অন্যরকম মনে হচ্ছে। আবির চিরকুট আর চকলেট দিবে দিবে বলেও শেষ পর্যন্ত দিলো না! নীলা, তোমার কিছু হয়েছে?
না, তেমন কিছু না! আজকে ভালো লাগছে না। আবির তখন জানতে চায়, কিছু হয়ে থাকলে বলতে পারো! কিন্তু নীলার কোনোভাবেই ভালো লাগছে না। আবিরের মনে টেনশন ঢুকে যায়। হঠাৎ করে মেয়েটার কি হলো! রাতেও তো ভালোই ভালো কথা হলো! নীলা ক্লাসের রুমে চলে যায়। আবির নীলার বান্ধবী শ্রাবন্তীকে ডেকে নিয়ে আসে! শ্রাবন্তীকে জিজ্ঞেস করে, নীলার কিছু হয়েছ কি না! শ্রাবন্তীর কাছে তেমন কিছু বলেনি। কিছু হলে তো তাকে জানাতো।

আবিরের টেনশন যেন আরও বাড়তে থাকে। কাউকে ভালোবাসলে এমন টেনশন হয়! নীলা ক্লাসের রুমে এসে মাথা নিচু করে বসে আছে। একদম চুপচাপ। আজকে ক্লাসে স্যারেরাও আসছে না। আজাদ স্যারের ক্লাসের টাইমও ওভার হয়ে গেছে। আবির যে চিরকুট আর চকলেট এনেছিল দেয়ার জন্য সেটা রেখে দিয়েছে ব্যাগে। নীলাকে অন্যদিন দিবে! আজ এমনিতেই মন ভালো নেই। কলেজে আজ ক্লাসও হয়নি! কলেজ ছুটি দিয়ে দেয়! নীলা একা একা ক্লাসের রুম থেকে সিড়িয়ে দিয়ে নামছে। আবির নীলার পিছু পিছু হাটঁছে। ঠিক তখন খেয়াল করে নীলা কেউ একজনকে ফোন দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ফোনে কোনোভাবেই যেন পাচ্ছে না! আবিরের মনে হাজার হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে! নীলা কাকে ফোন দিতে পারে? আবির জানে না যে নীলা কার কাছে ফোন দেয়ার চেষ্টা করছে! আর নীলা তার জন্যই মন খারাপ করছে যে কি না ফোন ধরছে না। আবিরকে বিষয়টা খুব ভাবাচ্ছে। নীলা কলেজ গেইটের সামনে গিয়ে দাড়াঁয়। অনেকক্ষণ ধরেই রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে! আবির তখন একটি রিকশাচালককে নিয়ে এসে নীলাকে রিকশায় তুলে দেয়। নীলা সেই রিকশা দিয়ে বাসায় চলে যায়। এদিকে আবির একা একা দাঁড়িয়ে আছে! আজ নীলার মুখের হাসিটাও দেখা হলো না!

চলবে...



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

গল্পটা খুব ভালো লিখেছেন। আমি তো প্রথম পর্ব পড়ে ভেবেছিলাম রাকিব আর নীলারই কিছু হবে।কিন্তু মাঝখান থেকে কখন আবির চলে এলো সেটাই ভাবতে পারিনি। যাই হোক গল্পের প্লট তো চেঞ্জ হতেই থাকবে, পথ অন্যদিকেও ঘুরবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে প্রকৃত ভালোবাসে সেই যেন তার ভালোবাসাকে পায়। এটাই চাইবো। ধন্যবাদ এত সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

জি দিদি। পরের পর্বটি পড়লে বিষয়টা কিছুটা বুঝতে পারবেন 🌼🦋

 2 years ago 

যারা সত্যিকারের লেখক তারা গল্পের প্লট পরিবর্তন করে দেয়। যেন দর্শকদের মন বেশি আকর্ষন করতে পারে। যেটা আপনার গল্পের মধ্যে দেখতে পেলাম। পরের পর্বে দেখা যাক নীলার ভাগ্যে কি আছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আপনার মন্তব্য পরে অনেক খুশি হয়েছি! নিজেকে কিছুটা হলেও স্বার্থক মনে হচ্ছে একজন লেখক হিসেবে 🍂🦋

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 68156.06
ETH 3517.56
USDT 1.00
SBD 2.81