৩য় পর্বঃ অধরা পরী
11-03-23
২৭ ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন!
ভালো থাকাটাই সবথেকে বড় বিষয়। যাক আপনাদের মাঝে নতুন একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আপনাদের সাথে নতুন একটি পর্ব নিয়ে হাজির হলাম। যদিও তৃতীয় পর্বটি বেশ কদিন পর লিখলাম! এখন থেকে রেগুলার গল্পগুলো লেখার চেষ্টা করবো! আশা করছি শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন।
২য় পর্বের পর
আসিফ তার বাবাকে দেখেই চায়ের দোকানের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। দেখতে পারলে খবর আছে! প্রাইভেট অনেক আগেই শেষ হয়েছে এখন এখানে কি করি জিজ্ঞেস করবে! চায়ের দোকানে আসিফ কতক্ষণ বসে থাকে। আসিফের বাবা দোকান পার হয়ে অনেকটা দূর চলে যায়! তখনই আসিফ সোজা বাসায় চলে যায়! বাসায় গিয়ে ভালো ছেলের মতো পড়তে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আসিফের বাবা বাসায় চলে আসে। যাওয়ার সময় মুকশোদ স্যারকে পেয়েছিল আসিফের বাবা! কেমন পড়াশোনা করছে জিজ্ঞেস করে। মুকশোদ স্যার অবশ্য বলে দিয়েছিল ছেলেটাকে একটু দেখাশোনা করতে। কখন, কোথায় যায় খেয়াল রাখতে। আসিফ মাথা নিচুঁ করে সব শুনছে। আজকে যে ঝর্ণার পিছনে গেল সেটা জানতে পারলে রক্ষে ছিল না আসিফের!
সকালে স্কুল আছে! ঝর্নার সাথে দেখা করবে আসিফ। মুকশোদ স্যারের ম্যাথগুলো করেই শুয়ে পড়ে। আসিফের মাথায় শুধু এখন ঝর্ণা! ভালোবেসে ফেলেছে ঝর্ণাকে। চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে আসিফ! মস্তিষ্কে ঝর্নার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে! ঝর্নার হাসি, চোখ, কানের পাশে দোলে থাকা চুল সবকিছুই যেন দেখতে পাচ্ছে। মানুষ প্রথম প্রেমে এমনই হয়! শুধু ভাবনায় তাকে প্রিয় মানুষটি। মনের ভিতরে তৈরি হয় হাজার রকমের স্বপ্ন, অনুভূতি। কখন ঘুমিয়ে পরে আসিফ খেয়াল করেনি।
ঘুম থেকে উঠেই চলে যায় চৌরাস্তার মোড়ে! শীতের সময়টার শেষের দিক তখন। রাস্তায় তেমন কুয়াশা নেই। আসিফ স্কুলের সাদা ড্রেস আর নেভি ব্লু প্যান্ট পরে দাড়িঁয়ে আছে। কিন্তু ঝর্না তো আসছে না। ত্রিশ মিনিট যাবত দাড়িঁয়ে আছে। ঘড়ির কাটা যেন আসতে আসতে চলছে। অপেক্ষা জিনিসটা এমনই! আর সেটা যদি হয় প্রিয় কিছুর জন্য তাহলে সময় যেন চলেই না! ধীর গতি হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পায় ঝর্ণা আসছে। সাথে আরেকটি ছেলে! বুঝার বাকি রইল না যে সাথে ঝর্ণার বড় ভাই!
আসিফ দেখেই সামনের দিকে হাটঁতে থাকে। যেন বুঝতে না পারে ঝর্ণার জন্য দাড়িঁয়ে আছে। ঝর্নার ভাই চৌরাস্তার মোড় পর্যন্ত আগিয়ে দিয়ে চলে যায়। তখনই আসিফ চলে আসে। ঝর্নাকে গিয়ে হেটেঁ হেটেঁ ধরে।
-তোমার ভাই কি প্রতিদিন আগায় দিতে আসে?
-হুমম, কেন?
-না এমনি! আমি থাকতে তোমার ভাই আগায় দিতে আসে কেন?
-আপনি কে? আপনার সাথে কেন যাবো আমি!
-আমি তোমার প্রিয় কেউ! নিবে কি আমায় তোমার সাথে!
ঝর্না মুচকি হাসছে। আসিফের কথা শুনতে ভালোই লাগে। ঝর্ণাও আসিফকে পছন্দ করে!
-না, আপনাকে নিবো না!
-কেন নিবে না?
-এমনি!
-এমনি কেউ নিতে চাই না!
-হ্যা! এতো সকাল সকাল উঠে এসে পরেছেন!
-হুম! তোমাকে এক পলক দেখার জন্য!
-এক পলক দেখছেন! এবার যান!
-স্কুল পর্যন্ত হেটেঁ যায় একসাথে!
-না! সামনে আমার ফ্রেন্ডরা দাড়িঁয়ে আছে। দেখলে কি ভাববে!
-কি ভাববে! আমি আমার প্রিয় মানুষের সাথে হাটঁছি!
-হয়ছে, এবার যান! মুকশোদ দেখে ফেলবে।
-আচ্ছা, যাচ্ছি! স্কুল ছুটির শেষে দাঁড়াবে আমার জন্য!
-জানি না! (মুচকি হাসছে)
আসিফ তখন ব্রিজের পাশে এসে দাড়ায়ঁ । ঠিক সামনে ঝর্নার জন্য কয়েকজন বান্ধবী দাড়িঁয়ে আছে। বান্ধবীদের কাছে গিয়ে ঝর্না পিছন ফিরে তাকায়! আসিফ এখনও তার দিকে তাকিয়ে আছে। বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে বলতে ঝর্ণা স্কুলে চলে যায়। আসিফ সৌরভের জন্য দাড়িঁয়ে থাকে। সৌরভকে নিয়ে একসাথে স্কুলে যাবে। কিছুক্ষণ পর সৌরভ চলে আসে। কিছুক্ষণ পর সৌরভ চলে আসে।
-বন্ধু! কাজ তো হয়ে গেছে!
-কি হয়ে গেছে!!
-ঝর্ণার সাথে দেখা হয়েছিল আজ! একসাথে দুজন হেটেঁ হেটেঁ আসছি।
-ভালোই তো হলো। প্রেম তো করেই ফেললি তাহলে।
-হুম! চল তোকে আজকে টিফিনের সময় খাওয়াবো!
-যে ছেলের পকেট থেকে এক টাকা বের করতে কষ্ট হতো, সেই ছেলে কি না আমাকে খাওয়াবে, হাহা!
-হ! আজকে তোকে খাওয়ামু। আমার কাজটা তোর জন্যই সফল হয়েছে।
-ঠিক আছে। রিলেশনটা ঠিকায়া রাখিস।
-হ বন্ধু! আমি ঝর্ণাকে সারা জীবনের করে পেতে চাই! যা আছে কপালে।
কথা বলতে বলতে দুজন স্কুলে চলে আসে। এসেম্বলি শুরু হয়ে গেছে। ক্লাসে ব্যাগ রেখে এসেম্বলিতে জয়েন করে দুজন! জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় এসেম্বলি। সবাই সিরিয়ালভাবে দাড়িঁয়ে আছে। জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। এসেম্বলি শেষে যে যার ক্লাসরুমে চলে যায়।
ক্লাসের টিফিন টাইমে আসিফ ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পরে। ঝর্নাকে দেখার জন্য। ঝর্না প্রথম শিফটে ক্লাস করে! একটার সময় তার স্কুল ছুটি হয়ে যায়। আসিফ সোজা চলে যায় পাইলট স্কুলের কাছে। অনেক মেয়েই বের হচ্ছে। সবাই একই ড্রেস পড়া! ঝর্নাকে দেখতে পাচ্ছে না আসিফ। ঝর্ণা কি তাহলে চলে গেল! ঠিক কিছুক্ষণ পর ঝর্ণা বেরিয়ে আসে। সাথে দিনা। ঝর্নার বেস্ট ফ্রেন্ড দিনা! তার সাথেই সে চলাফেরা করে। দূর থেকেই দিনা ইশারা করে বসে! "ঐ দেখ আসিফ তোর জন্য দাড়িঁয়ে আছে। " আসিফের বুঝার বাকি রইল না। ঝর্না দিনাকে নিয়ে আসিফকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে থাকে। আসিফ ঝর্ণাদের পিছন পিছন হাটঁতে থাকে। কিছুদূর যেতেই নবাব বাড়ির মোড়! সেখানে রাস্তা খালি থাকে। সেখানে যেতেই আসিফ তখন ঝর্নার সাথে কথা বলে! দিনাকে একটু সামনে যেতে বলে! দুজনে কিছুক্ষণ কথা বলার জন্য।
দুজন পাশাপাশি হাটঁছে। ঝর্নার দিকে আসিফ তাকিয়ে আছে। ঝর্না মাথা নিচুঁ করেই হাটঁছে! "ক্লাস কয়টা হয়েছে! " আচমকা প্রশ্ন করে বসে আসিফ। ক্লাস তিনটা হয়েছে! আপনার কয়টা হলো? "আমার দুইটা হলো আরও তিনটা বাকি! " তার মানে টিফিন চুরি করে এসেছেন!
হুমম! কেন এসেছেন টিফিন চুরি করে? "তোমাকে দেখার জন্য! " দেখেছেন! এবার ক্লাসে চলে যান! "ভাবছি, আজকে ক্লাসে যাবো না!"
কেন? "তোমার সাথে আরেকটু সময় থাকি! " না, থাকতে হবে না। দিনা একা একা সামনে হাটঁছে! আপনি চলে যান ক্লাসে, কাল কথা হবে আপনার সাথে! "কি কথা বলবে! " জানি না! আমি গেলাম! পিছন পিছন আসবেন না! "ঠিক আছে, সাবধানে যেও!"
ঝর্নাকে বিদায় জানিয়ে আসিফ চলে আসে। ঝর্নার সাথে কথা বলার পর আসিফের মনে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করে। মনে হয় জীবনটা আসলেই সুন্দর! যদি প্রিয় মানুষটা পাশে থাকে। সময়গুলো উপভোগ করা যায়!
চলবে...
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
twitter share link
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
স্কুল জীবনে যখন স্কুল ছুটির পরে বাড়িতে আসতে দেরি করতাম তখন বাবা জেরা করতো এত দেরি হয়েছে কেন? আসলে প্রতিটা বাবা-মা এটা তার দায়িত্ব। যেহেতু আসিফের বাবাকে মোকশোদ স্যারকে সব কিছু বলে দিয়েছে। আসিফ তার বাবার কথা মাথা নিচু করে সব কিছু শুনলো। যেহেতু আসিফ এখন ঝর্ণাকে ভালোবেসে ফেলেছে তাই তার মাথায় এখন ঝর্ণা ছাড়া আর কোন কিছুই ঢোকে না।সবাই একই রকম ড্রেস পড়ার জন্য ঝর্ণাকে সে খুঁজে পাচ্ছিল না। প্রথম প্রেমে পড়লে যে অনুভূতি হয় ঠিক সেই অনুভূতির উপরেই আপনার এই লেখাটি। পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
জি ভাইয়া। আপনি একদম ঠিক ধরেছেন প্রথম প্রেমের অনুভূতিটাই এমন! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🍃
ঝর্না আর আসিফের স্কুলে যাওয়ার সময় যে সব কথা বলতেছিল আমার সেই কথাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো। হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে গেল। আসলেই স্কুল জীবনের প্রেম গুলো এমনই হয়। যতই চোখে প্রিয় মানুষটা বেশি ওঠে ততই যেন ভালো লাগে। ঠিক তেমনি আসিফ এর ক্ষেত্রেও ঘটলো। জীবনে যখন ভালোবাসা আসে তখনই মনে হয় জীবনটা আসলেই খুবই সুন্দর। আপনার মিষ্টি ভালোবাসার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। বাকি পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
জীবনে ভালোবাসা যখন চলে আসে তখন সবকিছু রঙিন মনে হয়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু 🍃🌼
আসিফ প্রথম প্রেমে পড়েছে। আসলে প্রথম প্রেম এরকমই হয় কখনো ভোলার নয় এটি। রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে উঠলে সব সময় মাথায় চিন্তা থাকে সেই মানুষটার। ঝর্না ও আসিফকে তাহলে পছন্দ করে। আসলে ফাস্ট লাভ সবসময় এরকম হয়। যখন জীবনে ফাস্ট লাভ আসে তখন মনে হয় জীবনটা একেবারে গোছালো এবং সুন্দর হয়ে উঠে। এরকম মিষ্টি প্রেমের গল্প পড়তে ভীষণ ভালো লাগে আমার কাছে। আজকে তৃতীয় পর্ব শেয়ার করেছেন। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
জি আপু! মিষ্টি প্রেমের গল্পগুলো আপনার কাছে ভালো লাগে জেনে খুশি হলাম। সামনের পর্ব খুব শীঘ্রই আসবে 🍃💟
অধরা পরীর গল্পটির তৃতীয় পর্ব পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। আসিফ তো দেখছি ঝর্ণাকে একটু বেশি ভালোবাসি। আসলে জীবনের ফাস্ট লাভ সত্যিই একটু বেশি সুন্দর হয়। তারা দুজনে হাটতে হাঁটতে দেখছি বেশ ভালোই কথা বলতো। আসিফ ঝর্ণাকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে তাইতো সারাক্ষণ শুধু ঝর্ণাকেই মনে প্রাণে দেখতে থাকে। তাকে ছাড়া তার এক মুহূর্তও চলে না। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পরের পর্ব শেয়ার করবেন অপেক্ষায় থাকলাম।
জি ভাইয়া পরের পর্বটি খুব শীঘ্রই পাবলিশ করা হবে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া 🍃💟