২য় পর্বঃ অধরা তুমি

20-02-23

০৮ ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই অনেক ভালো আছেন!
ভালো থাকাটাই সবথেকে বড় বিষয়। যাক আপনাদের মাঝে নতুন একটি গল্প শেয়ার করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আপনাদের সাথে নতুন একটি পর্ব নিয়ে হাজির হলাম। আশা করছি শেষ পর্যন্ত পাশে থাকবেন।

heart-3085515__480.jpg

copyright free image from pixabay

১ম পর্বের পর থেকে

কিরে কি বললো ঝর্ণা!!
-কিছু তো বললো না, তোকে দেখে শুধু হাসছে! মনে হয় তোকেও ঝর্ণা পছন্দ করে!!

সৌরভের কথা শুনে আসিফ মহাখুশি! এতো সহজে ঝর্ণাকে পেয়ে যাবে আসিফ ভাবতেও পারেনি। কিন্তু অল্পতে পাওয়া জিনিস কি বেশিদিন টিকে! আবেগের বয়সটা যে এখন! কত কিছুই করতে মন চাইবে। আসিফ, সৌরভকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। আসিফ কথা দিয়েছিল যদি কাজটা করিয়ে দিতে পারে তাকে কিছু খাওয়াবে। আসিফ তখন সৌরভকে ট্রিট দেয়! বাজারের নামকরা গাংচিল রেস্টুরেন্ট থেকে বিরিয়ানী খাওয়াই আসিফ! যদিও আসিফ অনেক কৃপন। কিন্তু আজকের দিনে না খাওয়ালে কি হয়! বন্ধু যে বড় একটা উপকার করে দিলো! খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আসিফ আর সৌরভ বাসায় চলে আসে।

আসিফ অনেক খুশি! মনের মানুষকে যে অনুভূতির কথা বলে দিতে পেরেছে সৌরভের মাধ্যমে। পরদিন বিকালে আগেভাগেই চলে যায় প্রাইভেটে আসিফ। স্কুল থেকে ফিরেই সরাসরি প্রাইভেটে। স্কুলের ড্রেস চেইঞ্জ করাও হয়নি! ঝর্ণার সাথে কথা বলবে তাই চলে এসেছে। ঝর্ণার স্কুলও ঠিক চারটায় ছুটি দেয়। আসতে আসতে কিছুক্ষণ সময় লাগে। কিছুক্ষণ পরেই ঝর্ণাকে দেখতে পায় আসিফ। দেখেই যেন বুক ধুক ধুক করছে। ঝর্ণার দিকে তাকালেই মনের ভিতর যেন অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করে। এতো মায়াবী চোখের চাহনী যে কাউকে আটকে ফেলবে সেই চোখের মায়ায়। প্রথম প্রেমে পড়লে এমনটাই মনে হয়। আসিফেরও হয়েছে তাই। ঝর্না আসিফের কাছে আসতেই মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যায়! প্রাইভেটে তখনও কেউ আসেনি! কি ব্যাপার! ঝর্ণা আমাকে দেখে হাসছে কেন! আসিফ ভাবতে থাকে। তার ভালোবাসা একসেপ্ট করেছে তাই হয়তো ঝর্ণা তাকে দেখে হাসছে। ঝর্ণা যেমন লাজুক মেয়ে, ঠিক আসিফও লাজুক ছেলে। মেয়েদের সাথে কথা বলতে পারে। যা পারে তা হলো সৌরভের মাধ্যমে!

আসিফ সাহস করেই ঝর্ণার কাছে যায়। পাশাপাশি দেয়াল ঘেষে দাড়ায়। মাঝে দুই ফিটের দূরত্ব। এর পাশেই মুকশোদ স্যারের প্রাইভেটের রুম! দুজনেই দাড়িঁয়ে আছে! কেউ কোনো কথা বলছে না! হঠাৎ-ই ঝর্ণা বলে উঠলো!
-কেমন আছেন?

তা শুনে আসিফের বুক যেন ধুক করে উঠলো। মনে হলো তাকে কেউ যেন পরম আদরে বলছে!
-হুমম ভালো আছি! তুমি?
-ভালো!
-সৌরভ যা বলেছে তোমাকে, তুমি কিছু জানাওনি আমাকে!
-কি জানাবো?
-এই যে ভালোবাসো কি না!
-যখন সময় হবে তখন জানাবো! এই বলেই মুচকি হাসছে ঝর্ণা!

মেয়েদের মন বুঝা যে সহজ বিষয় নয়, আসিফ সেদিন বুঝতে পারে। কিন্তু কতদিন অপেক্ষা করবে! না হয় আসিফের বুকের ভিতরের যে ঢেউ বইছে তা কি আর থামবে!

কিছুক্ষণ পরই মুকশোদ স্যার চলে আসে। প্রাইভেটেরও বাকি শিক্ষার্থীরাও চলে আসে। কিন্তু সৌরভ এখনও আসেনি। আসিফ তো তাকে মনে মনে খোজঁছে! সৌরভ না থাকলে প্রাইভেট পড়াটা যে জমে না! রুমের ভিতরে প্রবেশ করে ঝর্ণা মাঝের সারির বেঞ্চে বসে পরে। আসিফ ঝর্নার সোজাসুজি বেঞ্চে বসে। কাছে থেকেই ঝর্ণাকে দেখতে পায় আসিফ! আসিফ ঝর্নার দিকে তাকাতেই তার চোখ পরে যায় ঝর্নার দিকে! চোখে কাজল নেই ; অথচ মায়া ভরা। এই মেয়েটি এতোদিন কই লুকিয়ে ছিল! আসিফ যে ঝর্নার দিকে তাকাচ্ছে ঝর্না সেটা ভালো করেই বুঝতে পারে। কিন্তু কিছু বলছে না।

মুকশোদ স্যার আবার আসিফের ভাবমূর্তি কিছুটা বুঝতে পারে। স্যারেও যে বয়সটা পার করে এসেছে। আসিফের বাবা, নজরুল সাহেবকে মুকশোদ স্যার আবার কাকা বলেই ডাকে। সে হিসেবে আসিফ মুকশোদ স্যারের পরিচিত একজন মুখ। নজরুল সাহেব, মুকশোদ স্যারকে বলে দিয়েছিল যেন পড়াশোনার সব খেয়াল উনি রাখে। আসিফের ভাবমূর্তি মোটেও ভালো ঠেকছে না! এই বয়সে এমন ভালোবাসার অনুভূতি আসবেই। কিন্তু এখন এসবে ফোকাস দিলে ক্যারিয়ার সহ সব নষ্ট হয়ে যাবে। মুকশোদ স্যার বোর্ডে ম্যাথ করাচ্ছে! সবাই বোর্ড দেখে ম্যাথ তুলছে। মুকশোদ স্যার খেয়াল করলো, আসিফ বসে আছে বেঞ্চে মাথা নিচু করে!

  • কি ব্যাপার, আসিফ! মাথা নিচু করে বসে আছো যে?
  • না স্যার! এমনি।
  • শরীর খারাপ লাগছে!
  • না স্যার! ঠিক আছি।
  • তাহলে বোর্ডের ম্যাথগুলো তুলো।
  • জি,,,

তারপরেই আসিফ ম্যাথ তুলতে থাকে।। সবার ম্যাথ তোলা শেষ কিন্তু আসিফের এখনও বাকি সাথে ঝর্নারও! আসিফের হাতের লেখা এতোটাও ভালো না। বেশি স্পিডে লিখলে কিছুই বুঝা যায় না! ম্যাথ তোলা হয়ে গেলে স্যার বোর্ড মুছে ফেলে। প্রাইভেটও তখন ছুটি দিয়ে দেয়। মুকশোদ স্যারের প্রাইভেট শেষ হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। ঝর্নার বাড়ি আবার প্রাইভেট থেকে অনেকটা দূরের রাস্তা! আসিফ ঠিক করে আজ ঝর্নাকে আগিয়ে দিয়ে আসবে! সাথে ঝর্নাদের বাড়িটাও চেনা যাবে। ঝর্না রাস্তার একপাশে দিয়ে হাটঁছে, সাথে আসিফ আসছে! ঝর্না বুঝতে পারে তার পিছু পিছু আসিফ আসছে। কিন্তু কেন জানি ঝর্নার খুব ভালো লাগছে। আসিফ তার পিছু পিছু আসছে তাই। আসিফ তখন আরেকটু স্পিডে হেটেঁ ঝর্নার পাশাপাশি আসে। একসাথে হাটঁছে দুজন। রাস্তার পাশে শিশ গাছের পাতা লড়ছে। মৃদু হাওয়া বইছে। দুজন পাশাপাশি একসাথে হাটঁতে ভালোই লাগছে।

-আপনি আমার পিছু পিছু আসছেন কেন?
-কেন, আসতে পারিনা কি?
-মানুষ দেখলে কি ভাববে?
-কি ভাববে!!
-আমার ভাইয়া আগায় নিতে আসে, দেখলে সমস্যা হবে! আপনি চলে যান!
-তোমার বড় ভাই আছে!
-হুমম আছে!
-তাহলে তো ভালোই! একসাথে বসে চা-কফি খাওয়া যাবে!
-এতো শখ! সামনে পরলে বুঝবেন!
-আচ্ছা, তুমি আমাকে আপনি আপনি করে বলছো কেন?
-তাহলে কি বলবো?
-তুমি করে বলবে।
-আমি পারবো না!
-আমরা তো সেইম ব্যাচ! তুমি করে বললে সমস্যা কি!
-আপনি আমার থেকে বড়! আপনি করে বললেই সম্মানটুকু ঠিক থাকে

  • হাহাহা! আচ্ছা আচ্ছা তোমার যা ইচ্ছা ডাকো!
  • হাসলেন যে!
  • তোমার কথা শুনে!
  • এবার চলে যান, ভাইয়া দেখলে ঝামেলা করবে।
  • আচ্ছা, কাল স্কুলে কখন যাবে?
  • সকালে!
  • আচ্ছা, দেখা হবে কাল!

এই বলে আসিফ চলে আসে। শিমুলগলী পর্যন্ত হেটেঁ হেটেঁ এসে পরেছে আসিফ। মাগরিবের আযান দিয়ে দিয়েছে। রাস্তার পাশের লাইটগুলো অন করে দেয়া হয়েছে। ঠিক কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পাই আসিফের বাবা নজরুল সাহেবকে! একি, বাবা এখানে কি করে?

চলবে.....



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

আসিফ ও ঝর্ণার মিষ্টি প্রেমের গল্প বেশ ভালোই লাগছিল। স্যার ঠিক বলেছেন এই বয়সটা সবারই জীবনে থাকে। তবে যারা পার করে যেতে পারে, তারাই ভবিষ্যতে ভালো হয়ে যায়।যাইহোক আসিফ আর ঝর্ণার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক। পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

 last year 

জি আপু পূর্ণতা পাক! আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 🌼🦋

 last year 

এরকম ছোট্ট মিষ্টি প্রেমের গল্প গুলো পড়তে আমার কাছে একটু বেশি ভালো লাগে।আসিফ এবং ঝর্ণার এরকম মিষ্টি প্রেমের গল্প পড়ে সত্যি ভীষণ ভালো লাগলো আমার কাছে। সম্পূর্ণটা খুবই সুন্দর ভাবে লিখেছেন যার কারণে একটু বেশি ভালো লেগেছে। এখন তো শুধুমাত্র অপেক্ষায় আছি এই গল্পটির পরের পর্ব দেখার জন্য। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন।

 last year 

জি আপু! পরের পর্ব খুব শীঘ্রই পাবলিশ করা হবে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ 🌼🦋

 last year 

আসিফ আর ঝর্ণার মনে তাহলে প্রেমের ছোঁয়া লাগলো, সেজন্যই তাদের এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। তবে সত্যি বলতে কি, এরকম গল্প গুলো পড়তে আর লিখতে আমার কাছেও বেশ ভালো লাগে। মনের কল্পনাকে গল্পের মাধ্যমে রূপ দিয়েছেন ভাই। চরিত্রগুলো সুন্দর করে উপস্থাপন করে সবটা মিলিয়ে লিখেছেন, এজন্য পড়তে খুব ভালো লাগছে। পরবর্তী পর্ব পড়বো ইনশাল্লাহ।

 last year 

আপনাদের কাছে ভালো লাগলেই আমার লেখা স্বার্থক ভাইয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে 🦋

 last year 

আসিফ আর ঝর্নার প্রেম তাহলে হয়েই গেল।স্কুল লাইফের প্রেম গুলো এরকমই হয়ে থাকে আমার ক্লাসমেট বন্ধু বান্ধবীদের দেখতাম এরকমই।আপনার লেখা গল্পটি অনেকটাই বাস্তবমুখী।ভালো লিখেছেন তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।

 last year 

জি আপু। পরের পর্ব খুব শীঘ্রই আসছে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে 🌼🦋

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64669.52
ETH 3430.49
USDT 1.00
SBD 2.52