ছোটগল্পঃ- সুইসাইড নোট
07-02-2024
২৫ মাঘ , ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
" কিরে দোস্ত! কাজটা কি ঠিক করলাম! আমার কাছে খুব খারাপ লাগাছে রে! "
" আরে কি যে বলিস! এটা তো মজা ছিল রেহানের সাথে! তুই তো বাজিতে জিতে গেলি! কাল ভার্সিটিতে আসলে ট্রিট পাবি! "
" তুই আছিস ট্রিট নিয়ে। আমার কাছে এমনিতেই খারাপ লাগছে! "
এই বলে ফোনটি কেটে দেয় অর্পা। স্নিগ্ধা অর্পার একমাত্র বেস্টফ্রেন্ড। ভার্সিটিতে তাকে ছাড়া কিছুই দেখে না। কিন্তু অর্পাকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল স্নিগ্ধাকে! রেহানকে ভালোবাসার ফাদেঁ ফেলতে পারলে তাকে পুরষ্কার দেয়া হবে। সেটাও আবার মাত্র এক হাজার টাকা! কিন্তু রেহানকে ভালোবাসার ফাদেঁ ফেলতেই হবে। রেহান যাতে অর্পাকে ভালোবাসি এ কথাটা বলে। না হয় সে বাজিতে হার শিকার করতে হবে। অর্পা স্নিগ্ধার বাজি গ্রহণ করে।
ভার্সিটির সবচেয়ে সুদর্শন ছেলেটা রেহান! ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা-মাস্তি আর খেলা নিয়েই পরে থাকে। ছেলেটার নির্মল হাসি যেকোনো মেয়েকে গ্রাস করে! ভার্সিটির অনেক মেয়ের কাছ থেকেই প্রপোজ পেয়েছে সে। কিন্তু কাউকে সে পাত্তা দেয় না। কারণ মেয়েদের থেকে সে একশ হাত দূরে থাকতে পছন্দ করে।
রেহান বলিবল নিয়ে মাঠে খেলা করছিল বন্ধুদের সাথে। অর্পা একটি লাল গোলাপ নিয়ে সোজা চলে যায় রেহানের সামনে। সব বন্ধুদের সামনে রেহানকে প্রপোজ করে বসে। কিন্তু এ আর নতুন কি। রেহান অর্পার কাছ থেকে গোলাপ ফুলটা হাতে নিয়ে ধন্যবাদ বলে চলে আসে! স্নিগ্ধা মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে অর্পাকে দেখে হাসছে। কারণ সে কোনো পাত্তায় পেলনা রেহানের কাছে।
"কি বলছিলাম আমি! দেখছিস ছেলেটা তোকে পাত্তায় দিল না, হাহাহা! "
" আমি এতো সহজে হার মেনে নেওয়ার মেয়ে নয়। আমি ঠিকই রেহানকে দেখে নেবো! "
সেদিনের পর থেকে রেহান যেখানেই যায় অর্পাও সেখানে যায়। রেহানের ব্যাগে ছোট করে চিঠি রেখে আসে। রেহান চিঠি পড়ে আর চিড়ে ফেলে দেয়। স্নিগ্ধা শুধু হাসে অর্পার অবস্থা দেখে।
একদিন বিকালে অর্পা দাঁড়িয়ে থাকে রেহানের জন্য রাস্তার মাঝে। বৃষ্টি আরম্ভ হয়। রেহানকে ফোন দেয় অর্পা! "আপনি আমার প্রপোজাল গ্রহণ না করলে আত্মহত্যা করবো! "
" করো তুমি! তাতে আমার কি? "
সেদিন সত্য সত্যিই অর্পা এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে এডমিট হয়। দুদিন ধরে অর্পাকে না পাওয়ায় সে খোজঁ নিয়ে জানতে পারে অর্পা সত্যি সত্যি তার জন্য আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। রেহান ছুটে যায় হাসপাতালে। রেহান অর্পার অবস্থা দেখে কান্না করতে থাকে। কিন্তু অর্পা হাসছে! কারণ বাজিতে সে জিতে যাবে। রেহান সেদিনই অর্পাকে প্রপোজ করে ফেলে! তারপর থেকে রেহান আর অর্পার ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু রেহান বুঝতে পারছিল না অর্পা তার সাথে অভিনয় করছে।
অর্পার জন্মদিনে রেহান অর্পাকে একটা নীল শাড়ি উপহার দেয়। সন্ধ্যায় দুজন একসাথে জন্মদিন উদযাপন করবে। রেহান অর্পার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে ভার্সিটির পাশের কফিশপে! কফিশপ আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছে রেহান। অর্পাকে সারপ্রাইজ দিবে বলে।
হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসে রেহানের ফোনে!
" আমি তোমাকে ভালোবাসি না। ফ্রেন্ডদের সাথে বাজি ধরে আমি তোমাকে প্রপোজ করেছি। এ ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পারলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও! "
অর্পার মেসেজ দেখেই রেহানের ভিতরটা যেন ধুক করে কেপেঁ উঠল! সেদিনের পর থেকে রেহান আর ভার্সিটিতে আসেনি। ঠিক এক মাস পর! অর্পা বুঝতে পারে রেহানের সাথে এমনটা করা উচিত হয়নি। রেহানের দেয়া গিফট বক্সটা খুলে নীল শাড়িটা পরে অর্পা। শাড়িটা পরে রেহানের সামনে গেলে হয়তো অনেক খুশি হবে।
অর্পা রেহানদের বাড়িতে চলে যায়। কলিং বেল চাপতে থাকে অর্পা! মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক দরজা খুলে দেয়। তারপর জিজ্ঞেস করে রেহান কোথায়। লোকটা কিছু না বলে একটা হাতে ধরিয়ে দেয়! নোটটি খুলতেই অর্পার চোখে জলজল করে পানি পরতে থাকে। সেখানে লেখা ছিল!
" তোমার ভালোবাসাটা বাজি থাকলেও আমি তোমাকে সত্যিকার অর্থে ভালোবেসেছিলাম। তোমার কাছে হেরে যাওয়ার চেয়ে একেবারে চলে গেলাম ওপারে। তুমি ভালো থেকো! "
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। সম্প্রতি আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। এখন বিএসসি এর জন্য প্রিপারেশন নিচ্ছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত দু বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। যাক,
নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
twitter share
সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করেছেন আপনি। গল্পের শুরুতে আমার কাছে পড়ে বেশ ভালো লেগেছে ।রুহানের চলে যাওয়ার কথা জেনে আমার কাছে বেশ খারাপ লেগেছে। আসলে এরকম বাজি ধরে কারো জীবন নিয়ে খেলা কখনোই উচিত নয়। তামাশা বা বাজির জন্য একটা জীবন অকালে ঝরে গেল। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
হুমম আপনি একদম ঠিক ধরেছেন। জীবন নিয়ে খেলা করা ঠিক নয়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়ার জন্য 🌼
এটা তো আফরান নিশো এবং উর্মিলার মিউজিক ভিডিও, তুমি দূরে দূরে আর থেকো না গানের কাহিনীর মতো। যাইহোক মাত্র এক হাজার টাকার বাজির জন্য একটা জীবন শেষ হয়ে গেল। বাস্তবেও কিন্তু এমনটা হয় অনেক সময়। আসলে যারা প্রেম ভালোবাসা বিশ্বাস করে না, তারা যদি কারো সাথে সম্পর্ক করে, তাহলে একেবারে সিরিয়াস হয়ে যায়। যাইহোক সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই কামনা করছি। গল্পটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ভাই। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
হাহাহা! অনেকটা মিলে গেল তাহলে। যদিও গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক টাইপের। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য 🌼
আপনার লেখা গল্পটা কিন্তু দারুন হয়েছে ভাই। তবে অর্পা যদি রেহান কে ভালই না বাসবে, তাহলে ইচ্ছাকৃত এক্সিডেন্ট করলো কেন এটা আমার কাছে একটা কনফিউশন থেকে গেল। অভিনয় করলে তো এতটা পারফেক্ট অভিনয় হওয়া সম্ভব নয়! আমাদের সমাজে রেহানের মতো অনেক ছেলে রয়েছে যারা এ ধরনের প্রতারণার স্বীকার হয় মেয়েদের থেকে। তবে এই কয়দিনের প্রেমের সম্পর্কে একটা মেয়ের প্রতি এতটা দুর্বল হয়ে আত্মহত্যা করাটা আমার কাছে খুব বেশি একটা ভালো সলিউশন বলে মনে হয়নি। তবে সব শেষে যে সুইসাইড নোটটা লিখে গেছে রেহান, ওটা কিন্তু আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়। সবার কাছে ভালোবাসা যে শুধু অভিনয় নয়, এটা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আপনার লেখা গল্পটার ভিতরে কিন্তু দারুণ একটা মেসেজ রয়েছে ভাই।
গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক ভাই। চেষ্টা করেছি সবকিছুর সংমিশ্রণে গল্পটাকে পাঠকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার। আপনার মন্তব্যটা পড়ে ভালো লাগলো দাদা 🌼
হ্যাঁ ভাই, সেটা বুঝেছি। যাইহোক, এটাই বলবো সবকিছুর সংমিশ্রণে গল্পটাকে আপনি পাঠকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।