আবোল-তাবোল জীবনের গল্প [ নৈতিকতা ]

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

হ্যালো বন্ধুরা,

আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কারন যে কোন ক্ষেত্রে চেষ্টার কোন বিকল্প নেই, চাই সেটা সার্থক হোক কিংবা না হোক। জীবন সময়ের মতো সর্বদা গতিশীল হয় না, মাঝে মাঝে যেমন খুব বেশী ক্রিয়াশীল থাকে ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে স্থমিত হয়ে যেতে চায়। কিন্তু এর মাঝেও আমাদের সেরাটা দিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করে যেতে হয়। আজকে আবারও আবোল তাবোল জীবনের গল্প নিয়ে বাস্তবতার আলোকে কিছু অনুভুতি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিবো। আমি যথারীতি চেষ্টা করি নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তব অভিজ্ঞতাগুলোকে পাগলের মতো বলে যেতে, তাতে আপনাদের ভালো লাগুক কিংবা নাই লাগুক।

আসলে আমি আমার মতো এবং সব কিছুকে আমার মতো করে চিন্তা করার চেষ্টা করি। মাঝে মাঝে ছোট কিছু নিয়ে যেমন বেশ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাই ঠিক তেমনি মাঝে মাঝে বড় বিষয়গুলোকেও তুচ্ছতার সাথে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করি। আসলে পুরো বিষয়টি নির্ভর করে আমাদের মন ও মানসিকতার উপর। কিন্তু তাই বলে কি আমরা ভিন্ন পথে চলে যাবো? বুঝলেন নাতো প্রশ্নটা, আচ্ছা একটু পরিস্কার করার চেষ্টা করছি। ধরুন আপনার মন ও মানসিকতা দুটোই ভালো নেই কিংবা কোন কারনে খারাপ আছে, তখন কি আপনি বিবেক শূণ্য হয়ে যাবেন কিংবা নৈতিকতার দিক হতে নিজের অবস্থান নষ্ট করে ফেলবেন? প্রশ্নটি শুধুই প্রশ্ন না বরং এর সাথে অনেক কিছুই জড়িত আছে। নানা কারনে আমার মন খারাপ হতে পারে কিন্তু তাই বলে আমি যে মানুষ সেটা ভুলে যাবো? আমি কি পশুদের কাতারে চলে আসবো?

কেন বলছি এসব কিংবা কেন প্রশ্নটি উত্থাপন করলাম আপনাদের সাথে? হ্যাঁ, সেটাই বলার চেষ্টা করছি এখন। আমরা মানুষ কিন্তু সবচেয়ে বেশী সুযোগ সন্ধানী। যখনই কোন সুযোগ পাই সেটাকে ভিন্নভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করি কিংবা বেশী ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু মানুষ হিসেবে মনুষ্যত্ব বলে কিছু একটার অস্তিত্ব আমাদের মাঝে আছে সেটার কথা বেমালুম ভুলে যাই। এই ভুলে যাওয়াটা আমাদের আরো বেশী লোভী করে তোলে এবং নৈতিকতা হ্রাস করার ক্ষেত্রে দারুন ভূমিকা পালন করে। কারন বিবেকহীন মানুষ পশুর সমতূল্য, আর পশুদের সাথে কেন তুলনা করা হলো সেটাও বোধহয় আপনারা আমার থেকে ভালো জানেন। ভালো মন্দের বিষয়টি তখন পিছনে থাকে এবং নিজের মনের ভিন্ন ভাসনাটা সম্মুখে থাকে, হিতাহিত জ্ঞান দারুণভাবে লোপ পায় তখন।

man-g4ee392b3e_1920.jpg

সেদিন বৃষ্টির দিন, ভিআইপি সড়কগুলো একদমই ফাঁকা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে। যার কারনে বাসের সংখ্যাও বেশ কম ছিলো। আসলে বৃষ্টির সময় সাধারণ সড়কগুলোতে তুলনামূলকভাবে একটু বেশী জ্যাম থাকে আর ভিআইপি সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা থাকে। তো আমি ভিআইপি সড়ক ধরে নিজের গন্তব্যে যাবো কিন্তু গতিশীল বৃষ্টির কারনে বাস পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই সিএনজির দ্বারস্থ হলাম। আসলে তখন খুব একটা বিকল্প উপায় ছিলো না আমার কাছে। কিন্তু সুবিধাবাদী মানে সিএনজি পাইলট বেশ উচ্চ রেট হাঁকালেন, কারন এমন সুযোগ আর নাও আসতে পারে। নৈতিকতার দারুণ নিম্নমুখী রূপ দেখলাম আমি। উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে সেদিন সিএনজিতে গিয়েছিলাম, ভাড়া দিয়েছিলাম ২১০ টাকা। তবে বুদ্ধিমান পাইলট সেদিন মিটার অফ করে রেখেছিলেন, অবশ্য আমি বুঝতে পেরেছিলাম বড়জোর মিটারে ৮০-১০০ টাকা এর মাঝেই থাকতো।

কি দারুণ বাস্তবতা আমাদের সম্মুখে, অথচ স্কুল জীবন হতে শুরু করে পারিবারিক জীবনে সবাই আমাদের নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং নানাভাবে আমাদের সঠিক অবস্থানে থাকার জন্য অনুপ্রাণীত করে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা আমাদের কি শিক্ষা দেয়? স্কুল কিংবা পারিবারিক জীবনের শিক্ষাগুলো কি এখানে প্রাধান্য পায়? একদমই পায় না কিন্তু কেন? কারন আমাদের মানসিকতা এবং চতুরতা আমাদের ভিন্ন মুখী করে দিয়েছে। ভালো কিছুর করার চিন্তাতো দূরের কথা সেই পথটিও আমাদের কাছে অচেনা মনে হয়। বাস্তব জীবনে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমরা নীতি কিংবা নৈতিকার বিষয়গুলোকে বস্তায় ভরে নিশ্চল বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে দেই স্বেচ্ছায়।

leaves-g4b67f0683_1920.jpg

হ্যা, আমার কাছে সেদিন খারাপ লেগেছিলো বৈকি কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। আমরা যারা এই সকল মানুষদের সুবিধা দিয়ে থাকি, তারা অনেকটাই অনিচ্ছায় কিংবা পরিস্থিতির স্বীকার হয়েই করে থাকি। আমি চিন্তা করতেছিলাম সিএনজিতে যাওয়ার সময় যদি তখন কোন রোগী আসতেন তাহলে হয়তো তিনি আরো বেশী রেট হাঁকাতেন আর সেই রোগীর সাথে যারা থাকতো তারা তাৎক্ষনিক কোন চিন্তা না করেই রাজি হয়ে যেতেন। পরিস্থিতি মাঝে মাঝে আমাদের খুবই নাজুক অবস্থায় ফেলে দেয় এবং আমাদেরকে বাস্তবতা চোখে আঙ্গুল দিয়ে শিখিয়ে দেয়। কিন্তু আসলে বাস্তবতার আলোকে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়েই আমরা কিছুই করতে পারি না, কারন পরিস্থিতির নাটাই আমাদের হাতে থাকেনা কখনো।

উচিত কি ছিল? একজন মানুষ হিসেবে সব কিছু বিবেচনা করা। যতটুকু ভাড়া ঠিক ততোটুকু দাবী করা। কিন্তু নানা কারনে আমরা যেমন লোভী হয়ে উঠছি ঠিক তেমনি নানা কারনে আমরা নিজেদের নৈতিকতা বিসর্জন দিতে দ্বিধা করছি না। মানুষ, চারপাশের সবাই মানুষ হয়তো শুধু বাহ্যিক দৃষ্টিকোন হতে কিন্তু ভেতরের কথা কিংবা বিবেকের কথা বিবেচনা করলে প্রশ্নটা অনেক বড় হয়ে যায়। জানিনা আমরা কয়জন তখন মানুষের কাতারে থাকতে পারবো? আজ এই পর্যন্ত থামলাম, অন্য কোন দিন অন্য কোন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে আসবো আবোল তাবোল জীবনের গল্পের আড়ালে।

Image Taken from Pixabay 1 and 2

ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah

break .png
Leader Banner-Final.pngbreak .png

আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

break .png

Banner.png

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 years ago 

আসলে এই গাড়ি ভাড়ার কথা কি আর বলবো!সামান্য বৃষ্টির পানি পরলেও কিংবা আকাশ মেঘলা হলেও আমাদের এদিকে রিক্সাভাড়া পর্যন্ত হয়ে যায় ডাবল।

 2 years ago 

সত্যি বাস্তবতা আমাদের চারপাশের মানুষগুলোর সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা দেয় শুধু।

 2 years ago 

আপনার কথা একদম ঠিক ভাইয়া, দিনে দিনে আমরা আমাদের নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে চলেছি। এই তো কিছুদিন আগে আমি ও আমার অর্ধাঙ্গিনী ঢাকায় গিয়েছিলাম। মহিলা মানুষ সাথে থাকায় বাসে উঠতে চাইলাম না আর তাই এক সিএনজি মামাকে ডেকে আমার গন্তব্য স্থলের কথা বলতেই ভাড়া ৩০০ টাকা চেয়ে বসলো। অনেক খেচাখেঁচি করে ২৫০ টাকায় রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু যখন সিএনজিতে উঠে বসলাম তখন তার মিটারটি অফ করে দিল। আমি মিটারটি অফ করার কারণ জিজ্ঞেস করলে, উত্তরে বলে উঠলো মামা সিএনজির প্রতিদিনের ভাড়া দিয়ে আমাদের ঠিক পোষায় না। এই কথা শুনে আমি আর কিছু বলার ভাষা খুজে পেলাম না। তবে মিটারে চললে হয়তোবা তার সাথে কথার খেচাখেচি করতে হতো না। ওই যে ভাইয়া বললেন না, পরিস্থিতির নাটাই আমাদের হাতে থাকে না কখনো।

 2 years ago 

আমরা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ কিংবা সুবিধা নিয়ে ভাবি যার কারনে অন্যের বিপদ আমাদের চোখে পড়ে না।

 2 years ago (edited)

আসলে ভাই আমাদের মন মানসিকতা সব সময় ঠিক থাকে না বা সবসময়ই ভালো থাকে না। অনেক সময় মন-মানসিকতা খারাপ থাকে। তাই বলে সেই খারাপ মসয় বা মন খারাপ থাকবে তখন যদি আমরা মানুষত্ব ভুলে যাই। আমরা যদি পশুর মত হয়ে যায় তাহলে কি হবে। এটা কখনোই হবে না। মন মানসিকতা যতই খারাপ থাকুক আমাদের। আমরা যে মানুষ সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। কোন কাজটা করলে মানুষের পরিচয় পাওয়া যাবে আর কোন কাজটা করলে পশুর পরিচয় পাওয়া যাবে। সেটা আমাদের বিবেকের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। একটু বৃষ্টি হলে ভাড়া বেড়ে যায় এবং সিএনজির ড্রাইভার খুবই খারাপ ব্যবহার করে, রাত কিংবা বৃষ্টি হলেই তারা যেন অন্যরকম হয়ে যায়। আসলেই নৈতিকতার গল্পটি পড়ে ভালই লাগল এবং সব বাস্তব ঘটনা আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন।

 2 years ago 

ঠিক থাকবে কিভাবে ভাই, আমরাতো সর্বদা নিজেদের কথা চিন্তা অন্যের বিপদ দেখেও আমাদের বিবেক ন্যাড়া দেয় না।

Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.

Manually curated by @jasonmunapasee

r2cornell_curation_banner.png

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া মানুষ সুযোগে শত ব্যবহার করা বুদ্ধি মানের কাজ মনে করে ৷ এতে কেউ ভাবেনা বিপরীত দিকের কথা ৷ সুযোগ পেলেই মানুষের মনুষ্যত্ব বলে কিছু থাকেনা ৷ সেই দিন সেই সিএনজি চালক পেয়েছে সুযোগ তাই লুটিয়ে নিয়েছে আপনার থেকে ৷ আসলে আমার কিছু বলার নেই ৷ দিন শেষে সবাই স্বার্থপর ৷ নিজের স্বার্থ রক্ষায় মানুষ পশু সমান হতে পারে ৷ বিপদে পড়লে পাশে দারাবে , নিজের স্বার্থ না রেখে , এমন মানুষ খুব খুব কম আছে ৷

 2 years ago 

হ্যা, নিজের সুবিধা নিশ্চিত হওয়ার পর তারা ভাবে তারা বিজয়ী কিন্তু মানবতা কিংবা বিবেকের দিকটা তাদের মরে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারে না।

 2 years ago 

এটা ঠিক ভাইয়া, জীবন সময়ের মতো গতিশীল নয়,জীবন চলতে চলতে কখনো বাঁকে গিয়ে থেমে যায়।আপনার অভিজ্ঞতাগুলি খুবই বাস্তবসম্মত ও শিক্ষণীয় ভাইয়া।সত্যিই আমাদের অনেক কিছু মন ও মানসিকতার উপর নির্ভর করে এবং তা পরিবর্তন হলে সেটা কোনো জন্তুর মতই আচরনে পরিণত হয় মনুষ্যত্ব হারিয়ে।সিএনজি পাইলট এখানে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভালো মানুষকে ঠকিয়ে দিল এটাই নিজের বিবেককে জলাঞ্জলী দিয়ে।উনি চাইলেই ঠিক দাম নিতে পারতেন কিন্তু তা করেন নি।নৈতিকতাকে জাগ্রত রাখার চেষ্টা করতে হবে সর্বদা।অসাধারণ লিখেছেন,ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

ভাইয়া সিএনজি ওলাদের কথা বলে লাভ নেই। মাঝে মাঝে তাদের কাছে ভাড়া জিঙ্গেস করলে এমন চিন্তা ভাবনা শুরু করে যে কত বলবে বুঝতে পারে না। যদি আবার না বুঝে ভাড়া কম বলে ফেলে। মানে পারলে যাত্রীর কিডনি খুলে রেখে দিতো। ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74