সাঁতার শেখার শৈশব স্মৃতি- প্রথম প্রচেষ্টা
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমি? আগের মতো ভালো থাকার চেষ্টা করছি যদিও সেটা কোন ভাবেই সম্ভব না। এই যেমন আজ অফিসে আসতে আসতে ১১.৩৫ বেজেছে, তাই চাইলেও আগের মতো ১০টার ভিতর অফিসে প্রবেশ করা সম্ভব না। প্রতিদিন কোন না কোন কারনে আমরা ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ঢাকা শহরের সড়কগুলো শুধুমাত্র ভিআইপিদের জন্য তৈরী করা হয়েছে আর ট্রাফিক সিগন্যালগুলো বসানো হয়েছে আমাদের আটকে রাখার জন্য। দেখুন আমরা আটকে থাকলে না হয় কথা ছিলো, কিন্তু হাজার হাজার গাড়ি হাজার হাজার লিটার তেল পুড়ছে অকারনে, হাজার হাজার মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে অকারণে, আর কত অসুস্থ্য মানুষ যে জ্যামের কারনে জীবনের ইতি টেনেছেন সেটার হিসাব নাই করলাম।
বাস্তবতা আমাদের প্রতি নিয়ত নতুন নতুন শিক্ষা দিচ্ছে। হ্যা, এই সমস্যাটা আগেও ছিলো কিন্তু সেটা এতো দীর্ঘ সময়ের জন্য ছিলো না। আগে কোন ভিআইপি যাতায়াত করলে ১০ হতে ১৪ মিনিটের জন্য রাস্তা বন্ধ রাখা হতো কিন্তু এখন ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হচ্ছে। এক অসহনীয় যন্ত্রনা নিয়ে আমরা শহরের সড়কগুলোকে যাতাযাত করি, আমাদের এই যন্ত্রন সত্যি বুঝার ক্ষমতা কারো নেই। কারন এসির ঠান্ডা বাতাসে বসে লোডশেডিংয়ের গরমে বসে থাকার কষ্ট কিভাবে উপলব্ধি করতে পারবে কেউ? তাই আমাদের নিয়ে কারো যেমন মাথা ব্যথা নেই ঠিক তেমনি এই সমস্যা সমাধান হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
যাইহোক, আজকে অবশ্য শৈশবের স্মৃতি শেয়ার করবো। না না না জ্যাম নিয়ে না সাঁতার নিয়ে কিছু অনুভূতি শেয়ার করবো। আমার শৈশবের পুরো সময়টা কেটেছে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে। তখন অবশ্য নদীর তীরগুলো এখনকার মতো ব্যবসায়ীদের দখলে ছিলো না। দারুণ একটা পরিবেশ ছিলো, দুই পাশে বিস্তৃত কৃষি জমি ছিলো, ছিলো শরতের আকর্ষণ কাশফুল। সত্যি আমার এখনো মনে আছে তখন নদীর দুই পাড় ঘেষে পাট বোঝাই নৌকা যেতো কিন্তু সেগুলোকে তখন ইঞ্চিন ছিলো না চারজন মিলে দাড় টেনে নিয়ে যেতো নৌকাগুলো। এ এক অন্যরকম দৃশ্য ছিলো, দারুণ লাগতো দেখতে। এসব এখন আর কল্পনা করা যায় না, প্রকৃতি এবং নদীর সৌন্দর্য এখন পুরোটাই অতীত। অবসর সময়ে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা নদীর পাড়ে ঘাসের উপর বসে কাটিয়েছি, দারুণ একটা অনুভূতি কার্যকর থাকতো তখন।
Image taken from Pixabay
স্কুল ছুটির পর আমরা দল বেঁধে নদীর পাড়ে যেতাম, হৈ হুল্লর করতাম, তারপর গোসল সেরে দুপুরের খাবারের আগেই বাড়িতে ফিরে আসতাম। আমি যখন প্রাইমারী সেকশনে ছিলাম তখন আমাদের স্কুল ছুটি হতো সাড়ে দশটার দিকে। তারপর সোজা বাড়িতে এসে বই খাতা রেখে পুরো টীম নিয়ে চলে যেতাম নদীর পাড়ে। কখনো ফুটবল, কখনো দায়ড়া কোর্ট, কখনো গোল্রাছুট, কখনো বরফ পানি, কখনো কাঁদা ছোড়াছুরি, খেলার শেষ ছিলো না আমাদের। তখনো আমি সাঁতার জানতাম না। তাই নদীর পাড়েই চলতো সব, আর গোসলের সময় হলে আমি দ্রুত গোসল সেড়ে উঠে যেতাম।
কিন্তু একদিন বড় ভাইও আমাদের সাথে ছিলেন, আমার বড় ভাই আমার থেকে এক ক্লাস উপরে ছিলেন। আমরা ভালো বন্ধু ছিলাম তবে বিয়ের আগ পর্যন্ত হি হি হি। তো সেদিন সবাই সিন্ধান্ত নিলো আদমজী জুট মিলের জেটিগুলোতে যাবে, সেখান হতে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে গোসল করবে। কিন্তু সেদিকে হলে অনেকগুলো ছোট ছোট খাল আছে সেগুলো পাড় হয়ে যেতে হবে। সমস্যা হলো সবাই সাঁতার জানে কিন্তু আমি জানি না। তাই সবাই বললো তারা যাবে আর আমি এখানে বসে থাকবো, গোসল সেরে সবাই ফিরে যাওয়ার সময় আমাকে সাথে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমি মানার ছেলে নেই, সবার সাথে আমিও যাবো। এখন সবাই এক এক করে আমাকে বোঝাতে শুরু করলেন, সাঁতার না জানলে সেখানে কিভাবে যাবো? যেহেতু নৌকার ব্যবস্থা নেই সেহেতু আমি যেতে পারবো না।
আমার কথা সাঁতার শিখে হলেও আজ আমি সেখানে যাবো গোসল করতে। সবাই এক এক করে দ্বিতীয় খাল পার হয়ে গেলো আমি তখনও তাদের দেখছি। তারপর জেদ হলো প্রচন্ড মনে, আমি দৌড় দিয়ে ঝাঁপ দিলাম নদীতে, কতক্ষন ছিলাম জানি না, মাথা পানিতে ডুবে ছিলো, শুধু হাত আর পা গুলো যতটা সম্ভব পেরেছি আছাড় দিয়েছি। হঠাৎ হাতে মাটি লাগায় মাথা উঁচু করে দেখি একটা খাল পাড়ি দিয়ে ফেলেছি। দারুণ একটা উত্তেজনা কাজ করতে শুরু করলো, আমি ভাই বলে চিৎকার দিলাম, আর বললাম আমিও আসতেছি তোমাদের সাথে। আর একটা কথা বলে রাখছি, কি পরিমান পানি যে আমি সেদিন খেয়েছিলাম তা বলতে পারবো না তবে পেট ভরে গিয়েছিলো একদম, হি হি হি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।
একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া,ঢাকা শহরে রাস্তাগুলো বাড়ানো হয়েছে কেবলমাত্র ভিআইপিদের জন্য।আর আমাদের মত সাধারন মানুষদের জন্য রয়েছে ট্রাফিক রুলস।রুলস এর মধ্যে পড়ে আমাদের ঘন্টার বড় ঘন্টা সময় রাস্তার মধ্যে কাটাতে হয়।জানিনা এরকম পরিস্থিতি থেকে আমরা কবে মুক্তি পাবো।
যাইহোক আজকে আপনি আমাদের মাঝে শৈশবের সাঁতার শেখার অনুভূতি শেয়ার করেছেন।স্কুল শেষ করে বন্ধুবান্ধবের সাথে নদীতে গেছেন সাঁতার কাটতে।কত মজার সময়ই না তখন কাটিয়েছেন।একটা দুঃখজনক কথা হল এটাকে হাস্যকর বললেও ভুল হবেনা যে আমি এখনো সাঁতার পারিনা।এমনকি আমি কখনো ট্রাই করিনি সাঁতার কাটার।ছোটবেলায় আমার গ্রামের বন্ধুরা সব নদীতে গিয়ে সাঁতার কাটতো।আর আমি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে তাদের সাঁতার কাটা দেখতাম।পানিতে নামতে আমার ভয় করত।যাইহোক,আপনার শৈশবের সাঁতার শেখার অনুভূতিটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।
আমাদের এই নীতি হতে আমরা বের হতে পারবো না কোনদিনও, কারন মেধাবীরা কেউ দেশে থাকছে না, সবাই কোন না কোন ভাবে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। তাহলে পরিবর্তনটা করবে কে?
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সাঁতার জানেন না তবুও জেদ করে পানিতে নেমে অনেকটাই তো গেলেন।আর আমিতো এখনও সাঁতার জানি না😂।এমন জেদ আমিও করি কোন কিছু শেখার ক্ষেত্রে। তারপর আসলে কি হলো তা জানার অপেক্ষায় রইলাম। আর বিয়ের আগে অর্থাৎ ছোট থেকে ভাই-বোনের যে আন্তরিকতা তা বিয়ের জন্য নয় বরং বয়সের সাথে সাথে আন্তরিকতা কম মনে হয়।যাই হোক সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন এমনটাই প্রত্যাশা করি।ধন্যবাদ ভাইয়া।
হুম আপনার জেদ খুবই দুর্বল কিন্তু আমারটা সবল ছিলো, তাই আমি সার্থক হয়েছি হি হি হি।
তথন তো ছোট ছিলাম তাই দুর্বল ছিল।এখন কিন্তু সবলই আছে।🤗
হাহাহাহা!! হাসতে হাসতে শেষ আপনার গল্প পড়ে। আমি ভাবছি আপনি সাতারও শিখলেন না কখনো, এতো সাহস নিয়ে ঝাপঁ দিয়ে দিলেন নদীতে 😁। মজার ব্যাপার হলো পানি খেতে খেতে আপনি এক খাল পার ও হয়ে গেলেন। যাক, খুব মজা পেলাম কিন্তু। তবে উপরের জ্যামের কথাগুলো পড়ে মজা পেয়েছিলাম না 🙂😁। এসবই প্রতিদিনই ঘটে শহরবাসীর সাথে, কোনো ভিআইপি আসলেই রাস্তা ব্লক
ভাই জীবনটা তখনই রঙিন হয়ে যায় যখনই সেটার সাথে জেদ আর মজা দুটোর সমন্বয় হয়। সাঁতার পুরোটা না শিখতে পারলেও সেদিনের জন্য সফল হয়েছিলাম, হি হি হি।
ঢাকার শহরের জ্যাম আসলেই বিরক্তিকর। তবে আপনার জেদ করে সাঁতার শেখার কাহিনীটা খুব ভালো লাগলো। সাঁতার দিতে গিয়ে যে পরিমাণে পানি খেয়ে পেট ভরেছিলেন মনে হয় না সেদিন দুপুরে আর ভাত খাওয়ার প্রয়োজন হয়েছিলো। অসাধারণ লেগেছে আপনার সাঁতার শেখার শৈশবের কাহিনী। ধন্যবাদ ভাইয়া।
ঢাকা শহরের এই জ্যামের বিষয় আমার একদম ভালো লাগেনা।আর এই গরমে অস্বস্তির এই বিষয় জ্যাম।পানি না খেলে সাঁতার শেখা যায়না।আর জিদ টাই আসল সাঁতারের জন্য।অন্যরা পারে আমি কেন পারবোনা,এভাবে করেই আমারও সাঁতার শেখা হয়েছিল। সবারই দেখছি ভাইয়ের সাথে মিল থাকে ভাবী আসার আগ পর্যন্ত,এর কারণ কি ভাবীরা খলনায়িকা তাই,হাহা।ভালো লেগেছে ভাইয়া আপনার শৈশবের সাঁতার শেখার পোস্টটি ।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
এই জন্যই তো বলি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলে তো আর কষ্ট হতো না,আর তা না হলে একটা হেলিকপ্টার কিনে ফেলতে তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না🤣🤣।যাই হোক ছোটবেলা আমরাও দাড়িচা,বৌচি,গোল্লাছুট খেলেছি যদিও আমি নিজেও সাঁতার জানি না,ওরে বাবা সাঁতার না পেরেও কেমনে খাল পার দিলেন আপনার দেখি ভালো জেদ🤣🤣,যাক কেমনে সুযোগ কাজে লেগে গেলো, পানি খেলে ও সাঁতার কাটতে পেরেছেন তাই অনেক।ধন্যবাদ
আমিতো চেষ্টা শুরু করেছি, পাখাওয়ালা বাইক এর, যদি পেয়ে যাই তাহলে একটা নিয়ে নিবো, হি হি হি।
তাহলে ভাই আমারেও একটা গিফট করিয়েন পাখাওয়ালা লেডিস বাইক😄😄
ভাই ভিআইপিরা ভাবে শুধু ওরাই মানুষ, আর আমরা সবাই গরু ছাগল। বাহিরের দেশে জনগণকে টপ প্রায়োরিটি দেওয়া হয়, আর আমাদের দেশে বিন্দুমাত্র মূল্যায়ন করা হয় না। যাইহোক ভাই আপনি আমার বাসার এতো কাছাকাছি ছিলেন, কিন্তু আজকে জানতে পারলাম। আদমজী জুট মিলের পূর্ব দিকে নদীর এই পাড় যে মাঠ ছিলো আগে, সেই মাঠে সারাদিন ক্রিকেট খেলতাম একসময়। যদিও এখন আদমজী জুট মিল নেই। আদমজী ইপিজেড হয়ে গিয়েছে। আর আমাদের খেলার সেই মাঠ রুপায়ন গ্রুপ পোর্ট করবে বলে কাজ অসম্পূর্ণ ভাবে ফেলে রেখেছে। শীতলক্ষ্যা নদীতে কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তার কোনো হিসাব নেই। ভাই জিদ করে তো অবশেষে সাতার শিখে ফেললেন। দারুণ সাহস দেখিয়েছিলেন তো। পুরো একটা খাল পাড়ি দিয়ে ফেলেছিলেন। যাইহোক এতো মজার স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।