গল্প: মন যমুনার পাড়ে । (পর্ব: ০৪)
(পর্ব: ০৪) |
---|
মোর্শেদের মুখে ভালোবাসার কথা শুনে সুরাইয়ার মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। এই ভালোবাসার কথাগুলো শোনার জন্য দিনের পর দিন সে অপেক্ষা করেছে। অবশেষে অভাগী মেয়েটার মুখে হাসি ফুটেছে। এবার সুরাইয়া বলে মাঝি আমাগোরে তাড়াতাড়ি এই গাঁও ছাইড়া যাইতে হইবো, রজব শেখ আমার পিছনে লাগছে। এই বেডার মতলব বেশি ভালা লাগদাছেনা আমার। এবার মোর্শেদ বলে ওঠে, ঠিক আছে সুরাইয়া আমারে কয়ডা দিন সময় দেও। আমি তোমারে লইয়া দূরে কোথাও যামু গা খুব, তুমি চিন্তা কইরো না।
রাত ভোর হতে চলেছে, এবার দুজনেই বাড়ির পথ ধরলো। মোর্শেদ সুরাইয়াকে এগিয়ে দিয়ে এসে নিজেও ঘুমাতে যাবে এমন সময় বিভিন্ন এলোমেলো চিন্তা মাথায় আসছে মোর্শেদের। নতুন চড়ে নাকি থাকার মতো অবস্থা রয়েছে, কিছুদিন ওখানে থেকে সুরাইয়াকে নিয়ে আবারো এই গাঁয়ে কি ফিরতে পারবে? কারন এখানেই তার বাপের ভিটা, এইটুকু সম্পদ রয়েছে তার। এভাবেই এলোমেলো চিন্তা করতে করতে হঠাৎ চোখ লেগে আসে, ক্লান্তি আর ঘুমে। দশটা বাজতেই গাঁয়ের এক বুড়ো তার ঘুম ভাঙ্গায়। কি মোর্শেদ মাঝি লোক পারাপার করবা না আইজ? ঘাটে লোক বইসা রইছে। মোর্শেদ তাড়াতাড়ি চোখ মুখে পানি দিয়ে, মুড়ি আর গুড়ের পোটলা নিয়ে দৌড় দেয় ঘাটের দিকে।
এখন কদিন দিন রাত পরিশ্রম করে পয়সা জমিয়ে নেবে, এরপর সুরাইয়াকে নিয়ে হঠাৎ উড়াল দেবে। এই পরিকল্পনা মনের ভেতর আটছে মোর্শেদ। গত তিনদিন সুরাইয়ার সাথে আর দেখা হয়নি, কারন মোর্শেদ বলে দিয়েছে কদিন আর তার বাড়ির আশেপাশে না আসতে। কারন গাঁয়ের লোক সন্দেহ করলে আবার বিচার শালিস বসাবে।
এদিকে রজব শেখ সুরাইয়াকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। লোক পাঠিয়ে কাজ না হওয়ায়, সে নিজেই সন্ধ্যায় তার বাড়িতে হানা দেয়। প্রথমে সুরাইয়াকে সুন্দর করে বলে সে তাকে বউ করে নেবে, আর অনেক সম্পদের লোভ দেখায়। সুরাইয়া আচ্ছা তরফে তাকে অপমান করে, এবার রজব শেখ তাকে হুমকি দেয় সামনের শুক্রবার তাকে বিয়ে করবেই সে। সুরাইয়া বেশ ভয় পেয়ে যায়। রাতের আঁধারে আবারো ছুটে যায় মোর্শেদের কাছে। সে সব জানায় মোর্শেদকে, তারা পরিকল্পনা করে ঠিক তার আগের দিন সন্ধ্যায় তারা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাবে।
অবশেষে দিনটি চলে এসেছে, সন্ধ্যা থেকেই সুরাইয়া সবকিছু গুছিয়ে নিতে থাকে। রাত কিছুটা গভীর হলেই সুরাইয়া মোর্শেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে দৌড় লাগায়। এদিকে মোর্শেদ সব আগে থেকেই গুছিয়ে রেখেছে, সুরাইয়া এলেই নৌকায় টান দেবে। এদিকে গোপনে রজব শেখ তার লোকজন সেট করেছিলো, সুরাইয়ার পিছু নেয় সবাই। এদিকে খবর পেয়ে রজব শেখ তাদের ধাওয়া দেয়। কোনরকমে সুরাইয়াকে নিয়ে মোর্শেদ নৌকায় টান দেয়, এদিকে রজব শেখের নৌকা না থাকায় তারা ঘাট পাড়েই মশাল জ্বালিয়ে হুংকার ছাড়তে থাকে।
প্রথমে বেশ ভয় পেলেও এবার সুরাইয়ার মুখে হাসি ফুটেছে। মাঝি আমরা পারছি, শয়তান বেডা আমাগোরে আর ধরতে পারবো না। কত শখ আমারে বিয়া করতে চায়, এই বলে হাসতে থাকে। সুরাইয়া গুনগুনিয়ে গান করতে থাকে।
নাও ভাসামো মন যমুনায়
মন মাঝি তুই আমারে
আগলাইয়া লও মন পিন্জারে।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1630954893514248192?t=QXlJlZinHqfOj-Q2Ztrb2w&s=19