গল্প: মন যমুনার পাড়ে । (পর্ব: ০১)

in আমার বাংলা ব্লগlast year
গল্প: মন যমুনার পাড়ে।
(পর্ব: ০১)

গল্প.jpg

সংগ্রহশালা

মোর্শেদ সকাল বেলাতেই পান্তা ভাত লবণ মাখিয়ে একটা পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। ওহ্ বড্ড খিদে পেয়েছে, গতকাল রাতে তেমন ভালো কিছু পেটে পরেনি। গতকাল উপার্জন হয়েছে মাত্র দশ টাকা, সারাদিন তেমন লোক ঘাটে এলোই না। মাত্র পাঁচজন মানুষকে পারাপার করে দু টাকা করে দশটা টাকা পেয়েছে। এই দশ টাকা দিয়ে কিছুটা চাল আর শাক লতা পাতা কিনেছিল, মাছ কিনতে তো বিশ টাকা লেগে যায়। সপ্তাহে দু একটা দিন যদি ভালো উপার্জন হয় তাহলে হয়তো একটা মাছ খাওয়া হয় তার। কি আর করা বাপ-মা মরা মোর্শেদ বাপের ছোট্ট ভিটায় একাই বাস করে আসছে দশটা বছর, আর নৌকায় লোক পারাপার করেই সে কোনরকম খেয়ে পরে বেঁচে আছে।

এ গাঁয়ের প্রতিটা লোক ওকে ভীষণ আদর করে তবে সে নামে মাত্র। কোনদিন মোর্শেদ না খেয়ে থাকলেও কেউ তাকে দেখতেও আসেনা, একবার তো জ্বরে মরতে বসেছিল। দুটো দিন খাওয়া পর্যন্ত পায়নি সে।তবে একটা মানুষ আছে যে সবার থেকে আলাদা। আর মানুষটা হচ্ছে গনি বুড়ার ছোট বউ সুরাইয়া। গতবার সেই জ্বরের সময় গভীর রাতে লুকিয়ে এসে তাকে সেবা শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তুলেছে এই সুরাইয়া।

সুরাইয়া ভীষণ মিষ্টি দেখতে গরিব ঘরের মেয়ে, গনি বুড়া ওর বাবাকে অনেকটা চাপ দিয়েই মেয়েটাকে বিয়ে করেছে। সুরাইয়ার বাবা সুদখোর এই গনি বুড়ার কাছ থেকে কিছু টাকা সুদে ধার নিয়েছিল, কিন্তু টাকা আর শোধ করতে পারেনি। কি আর করার ছিল তার, থাকার ভিটে ছাড়া আর কিছুই যে নেই তার। সুরাইয়া যখন বিয়ে হয়ে তখন তার বয়স মাত্র বারো বছর, বুক ফাটিয়ে কান্না করেছিল। আর বারবার বলছিল বাপজান আমারে বিয়া দিও না, আমি যামু না তোমারে ছাইড়া। আল্লাহ আমারে তুই বাঁচা, এই বিয়া আমি করুম না। কি আর করার বুকে পাথর বেঁধে সুরাইয়াকে গনি বুড়ার হাতে তুলে দেয় ওর বাবা।

হয়তো উপর ওয়ালার এটাই লীলা খেলা বাসর রাতেই হঠাৎ গনি বুড়ার হার্টের গোলমাল শুরু হয় আর বিছানায় ছটফট করতে থাকে। ঐ রাতেই গন্জের ডাক্তার এসে তাকে ইনজেকশন দিলে তার জ্ঞান ফিরলেও শরীরের নিচের অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। সুরাইয়ার এতে বিন্দুমাত্র আফসোস নাই কারন বুড়া তাকে ভোগ করতে চেয়েছিল, আল্লাহ উচিত শিক্ষা দিয়েছে তাকে। কিন্তু কি আর করা বিয়ে তো হয়েছে এভাবেই তাকে এখন সেবা করে যেতে হবে। এদিকে আগের আরো দুই বউ আছে কেউ এই বুড়ার চরিত্রের কারনে ধারের কাছেও ঘেঁসে না। এখন সুরাইয়া ওর বাপের সম্মানের দিকে তাকিয়ে বুড়ার সেবা করে যাচ্ছে আর ওর মরার দিন গুনছে। তবে মোর্শেদকে ভীষণ পছন্দ করে সুরাইয়া আর ওকে নিয়েই আবার নতুন করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে সে। মোর্শেদ ব্যাপারটা ওর তাকানোর ভাব দেখেই বুঝতে পেরেছে, কিন্তু ও যে বড্ড গরীব। আপন মনে মোর্শেদ বিড়বিড় করতে থাকে।

"চলবে"



Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png


আমাদের উইটনেসকে সাপোর্ট করুন

"Please support Bangla Witness"

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6JTrGU8e1FPUaNdHG5vjXyg2xthV78bDEmEVvKCQpyzX1kq8gAVzGsPp9GqJVRWxb6T9y35PZmQehnLjELdKKmnhdxQjDuny4.png

https://steemitwallet.com/~witnesses



VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_vote.png

Sort:  
 last year 

বাপজান আমারে বিয়া দিও না, আমি যামু না তোমারে ছাইড়া। আল্লাহ আমারে তুই বাঁচা, এই বিয়া আমি করুম না।

সুরাইয়ার কথা গুলো পড়ে খারাপ লাগলো। সে তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে। তাই সে তার বাবাকে ছেড়ে এত অল্প বয়সে বিয়ে করতে চায়নি। কি আর করার অবশেষে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে সুদখোর গনি মিয়াকে বিয়ে করে। বাসর রাতে সে অসুস্থ হয়ে যায় যেনে একটু ভালো লাগলো। মোর্শেদ আর সুরাইয়ার প্রেমের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার গল্প পোষ্ট গুলো সব সময়ই ভালো লাগে। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 last year 

হ্যা সামনের পর্বে দারুন কিছু অপেক্ষা করছে।
ধন্যবাদ লিমন গল্পটা পড়ার জন্য।

 last year 

খুব খারাপ লাগলো গল্পটি পড়ে। আসলে আমাদের সমাজে এমনটাই হচ্ছে। টাকা বা ক্ষমতার দাপটে বুড়ো বয়সে ছোট ছোট মেয়েদের বিয়ে করে তাদের জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যাক গনি মিয়া প্যারালাইজড হয়েছে এখন মেয়েটির ভালো ই হলো।এখন সুয়াইয়া ও মোর্শেদের প্রেমের অপেক্ষায় রইলাম। আশাকরি মেয়েটির জীবনে এবার ভাল কিছু হবে। ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর ও বাস্তবতা নির্ভর গল্পটি শেয়ার করার জন্য।

 last year 

অনেক ধন্যবাদ আপু আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
সামনে চমৎকার মিষ্টি প্রেমের অনুভূতি আসছে।

 last year 

গল্পটা পড়ে অনেক খারাপ লাগল, আসলে আমাদের সমাজে এমন বাবা মার কারণে অনেক মেয়ের জীবন ধ্বংসের পথে।সুরাইয়া তার বাবার ভালোবাসার জন্য গনি বুড়া সাথে বিয়েতে রাজি হয়েছে। তবে বাসর রাতেই গনি বুড়ার প্যারালাইজড হয়েছে। যাইহোক আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। সুরাইয়া ও মোর্শেদের ভালোবাসার অপেক্ষায় থাকলাম।

 last year 

হ্যা সামনের পর্বে দারুন কিছু অপেক্ষা করছে আপু।
ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য।

 last year 

গল্পটি পড়ে কেন জানি নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। এ সমাজের কথা আর কি বলবো। সরাইয়ার মত ছোট ছোট মেয়েদের কেন যে টাকা জন্য বিয়ে দেয়। সেটাই বুঝি না। আসলে এতে করে হারিয়ে যায় হাজারও সুরাইয়া। যাক এবার যদি সুরাইয়ার জীবনে ভাল কিছু আসে তাহলে আমারও ভাল লাগবে।

 last year 

ধন্যবাদ আপু আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
সামনের পর্বে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার অনুভূতি থাকবে, তবে শেষটা অন্যরকম হবে।।

 last year 

খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন ভাই। তবে গল্পটি পড়ে সুরাইয়ার জন্য খুব খারাপ লাগলো। সমাজের বাস্তব চিত্র আপনি সুরাইয়ার চরিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই সমাজে প্রায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। যাহোক পরবর্তী পোস্টে জন্য অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই গল্পটি পড়ে চমৎকার মন্তব্য করার জন্য। আসলে আমাদের সমাজে সুরাইয়ারা এভাবেই কষ্ট করে, দিনের পর দিন।

 last year (edited)

মোর্শেদ মাঝির গল্পটাকে আপনি খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আসলে আপনি যে সময়কে সামনে রেখেই গল্পটা লিখেন না কেন, একদিনে দশ টাকা ইনকাম করে আসলে একটা পরিবারে কিছু হয় না। এদিকে বেচারি সুরাইয়ার স্বপ্নটা নষ্ট হয়ে গেলো গনি বুড়োর কারণে। কিন্তু বিয়ের প্রথম দিনেই বুড়োর প্যারালাইজড এর কারণে হয়তো বা মোর্শেদ এবং সুরাইয়ার স্বপ্নটা আবার পুরণ হতে পারে। অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের জন্য।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই মন্তব্যের জন্য।
বানানের প্রতি যত্নবান হবেন আশাকরি।
দোয়া রইল।

 last year 

গল্পে মোর্শেদ, সুরাইয়া,দুইজনের গল্প কাহিনী নিয়ে লেখা গল্প টা বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়লাম ৷ মোর্শেদ একজন বাবা মা হারা সন্তান সে ঘাটে নৌকায় পাড় করে কোনো রকমে জীবন চলে ৷ অন্য দিকে সুরাইয়া অল্প বয়সে তার বাবা বুড়োর সাথে বিয়ে ৷ আসলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিভাবকদের জন্য সন্তানের দুঃখ কষ্ট করতে হয় ৷ যেটা সুরাইয়ার জীবনে ঘটেছে ৷
যা হোক পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা ৷

 last year 

গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই, এখানে দুটো মানুষকে ঘিরে সবকিছু গুছিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে দুঃখ কষ্ট এবং ভালোবাসা।

Coin Marketplace

STEEM 0.23
TRX 0.12
JST 0.029
BTC 66015.85
ETH 3551.21
USDT 1.00
SBD 3.13