গল্প: মন যমুনার পাড়ে । (পর্ব: ০২)
(পর্ব: ০২) |
---|
সুরাইয়া গনি বুড়ার সেবা করে যাচ্ছে দিনরাত, হাজার হোক মানুষ তো। তার অন্য দুই বউ শুধু দিন গুনছে কতক্ষনে বুড়া প্রান ত্যাগ করবে, তবে সবাই সত্যিই সুরাইয়ার সেবা শুশ্রূষা দেখে প্রশংসা করতে থাকে। এদিকে হঠাৎ করেই গনি বুড়ার শরীর আরো খারাপ হতে থাকে, গন্জের ডাক্তার আবারো বাড়িতে এসেছে। সব চেক সে জানালো, যেকোন মুহূর্তে খারাপ কিছু হতে পারে। এই বলে সে চলে যায়, আর বাড়িতে লোকজন এবার কিছুটা শোকের মাতম শুরু করে দেয়। রাত সবে দশটা, হঠাৎ গনি বুড়ার শরীর জোরে জোরে কাঁপতে থাকে। একপর্যায়ে গনি বুড়ার শরীর নিথর হয়ে যায়, ক্রমশ হাত পা ঠান্ডা হতে থাকে। বাড়ির সব বউ বাচ্চারা মিলে কান্নার মাতম জুড়ে দেয়, কারোর বুঝতে বাকি নেই কি ঘটেছে।
যতই খারাপ মানুষ হোক তবুও আজ সে মৃত আর তার নিথর দেহ পরে রয়েছে, সুরাইয়ার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে। সে মনে মনে তাকে প্রশ্ন করলো, তোমার টাকা আর সম্পদ আজ কে খাবে? কিছুক্ষণ পর সুরাইয়া দেখলো তার পাশে আর কেউ নেই, সে একা মানুষ এই লাশটা পাহারা দিয়ে চলেছে। কি আর করা সকালের আগে আর কেউ কিছু করবে না। সত্যি বলতে সবাই যেন মুক্তি পেয়ে এখান থেকে চলে গেছে। এভাবেই লাশের পাশে নিয়েই সুরাইয়া রাত কাটিয়ে দেয়। ফজরের নামাজের পর মানুষজন ধীরে ধীরে আসতে থাকে। সকাল আটটার মধ্যে তার সমস্ত কাজ শেষ করে দাফন সম্পন্ন করা হয়।
গনি বুড়ার মৃত্যুর তিন দিন পর তিন বউয়ের মাঝে ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। পরে গাঁয়ের মাতব্বর এসে বাড়ি ভাগ করে দেয়, সুরাইয়া বাড়ির ছোট্ট একটা ঘর পায়। এভাবেই কেটে যায় কয়েকদিন, সুরাইয়ার মনে কিন্তু মোর্শেদের জন্য ভালোবাসা এক চুলও কমেনি। সুরাইয়া ছটফট করতে থাকে, গভীর রাতে লুকিয়ে মোর্শেদের ঘরে কড়া নাড়তে থাকে। মোর্শেদ দরজা খুলেই অবাক হয় সুরাইয়াকে দেখে। সুরাইয়া বলে কি ঘরে আইতে কইবানা আমারে? মোর্শেদ কি বলবে বুঝতে পারে না। সুরাইয়া ঠেলে ঘরে ঢুকে বলে তাড়াতাড়ি দোয়ার লাগাও কেউ দেইখা ফালাইলে বিপদ হইবো। সুরাইয়া বলে কেমুন আছো গো মোর্শেদ মাঝি? তুমি তো আমারে এহাবারে ভুইলাই গেছো। মোর্শেদ বলে না গো তুমারে কি ভুলবার পারি, তুমি আমারে সেই কালাজ্বরের সময় কি সেবাটাই না করছো। আইজ বাইচ্চা রইছি তুমার কারনে।
এরপর মোর্শেদ গনি বুড়ার জন্য আফসোস করতে থাকে, সুরাইয়া থামিয়ে দেয়। আল্লাহ যাই করে ভালার লাইগা করে, শয়তান বুড়ারে আল্লাহ উঢায়া নিছে ভালাই ওইছে। ওর কথা তুমি আর আমার সামনে কইবানা। অহন চলো দুইজনে লুকাইয়া মাছ ধরুম সৈয়দ হাজির পুকুরে আর টস টসা ফল চুরি কইরা খামু। কতদিন বাড়িত বন্দির মতো রইছি। মোর্শেদ বলে না না কেউ দেইখা ফালাইলে কেলেংকারি হইবো, সুরাইয়া বলে ধুর বোকা কেউ দেখবো না। আমরা লুকাইয়া লুকাইয়া মাছ ধরুম, এই বলে হাত ধরে টানতে থাকে পাগলী মেয়েটা।
সুরাইয়া ওর হাতটা ধরেই আছে সেই থেকে, মোর্শেদের কেন যেন ভীষণ ভালো লাগছে। সুরাইয়া আগে আগেই চলছে নিঃশব্দে, চাঁদনী রাতের আলোর মাঝে। মোর্শেদ কেমন যেন সম্মোহিত হয়ে পরেছে তার ঐ রুপ দেখে, চাঁদের আলো মাঝে মাঝেই ঐ ফর্সা সুন্দর মুখখানার উপর পরছে। মায়াবী চোখ দুটো বারংবার যেন বলছে কাছে টেনে নাও আমায়। সৈয়দ হাজির ফল বাগানের মাঝে চলে এসেছে ওরা, হঠাৎ সুরাইয়া পায়ের কাছে সাপের মতো কি একটা দেখে ভয়ে আছড়ে পড়ে মোর্শেদের বুকের উপর। মোর্শেদ নিজের অজান্তেই জড়িয়ে নেয় এই অবুঝ মনের মিষ্টি মেয়েটাকে। গন্ধরাজ ফুলের মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছিলো আর চাঁদের জোছনা যেন ঝরে পরছে পবিত্র ভালোবাসার এই আলিঙ্গনে।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/emranhasan1989/status/1626190573286854656?t=cTeG6RsxLt24KIpl0rwLIQ&s=19
দারুন গল্প লিখেছেন ভাই। সুরাইয়া মোর্শেদ কে নিয়ে তাহলে চলেছে মাছ ধরার জন্য। গল্পটা কিন্তু বেশ ভালোই লাগছে পড়ে। তাছাড়া গল্পের চরিত্রগুলোকে নিজের কল্পনায় এনে সুন্দর করে গুছিয়ে লেখাটাই হলো স্বার্থকতা। আমার কাছেও গল্প লিখতে ভালো লাগে। তাই মাঝেমধ্যেই লেখার চেষ্টা করি। পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ ভাই আমার গল্পটি পড়ার জন্য। আমার কাছেও বেশ ভালো লাগে, কল্পনার মানুষগুলোকে লিখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে।
গনি বুড়োর জন্য খারাপ লাগল আসলে মানুষ যতই খারাপ হোক সেবা করে পাশে থাকলে মায়া অনেক বেশি লাগে।সুরাইয়ার গনি বুড়োর জন্য মায়া লাগলে ও তার মোর্শেদের জন্য ভালোবাসা কিন্তু কম নয়।সুরাইয়া আর মোশেদের ভালোবাসা পূর্ণতা পাক সেই দোয়া করি।
অনেক ধন্যবাদ আপু গল্পটি পড়ার জন্য।
আসলে সুরাইয়া যথেষ্ট সেবা করেছিল গনি বুড়াকে। তবুও সে মারা গেছে। সামনের পর্বে দারুন কিছু হবে, আশাকরি পড়বেন।
চমৎকার একটি মুহূর্ত ছিলো। মোর্শেদের আর সুরাইয়ার। আপনার এই গল্পটির জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম। গল্পটি পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
মন যমুনার পাড়ে গল্পের প্রথম পর্ব আমি পড়েছি। খুবই ভালো লেগেছে আজকে আপনি খুব সুন্দর করে দ্বিতীয় পর্ব আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আজকের পর্বটিও বেশ দুর্দান্ত হয়েছে।সুরাইয়ার গনি বুড়োসহ অনেকগুলো চরিত্র আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছে। আসলে এধরনের গল্প পড়ার অনুভূতি খুবই অন্যরকম হয়ে থাকে। আপনার গল্প উপস্থাপন করার বেশ সুন্দর হয়েছে। আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা রইলাম। ধন্যবাদ ভাই।
অনেক ধন্যবাদ ভাই আমার গল্পটি পড়ার জন্য।
গল্পের চরিত্রগুলো গুছিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
গল্পের প্রথম পর্ব পড়েছিলাম খুব ভাল লেগেছে। আজও ভাল লাগলো। তবে গনি মিয়া মারা গেল। যাক সুরাইয়ার ভালোই হল।এবার তার জীবনে ভাল কিছু হবে। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর একটি গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
দেখা যাক সামনের পর্বে সুরাইয়ার ভাগ্যে কি ঘটে। পরের পর্ব পড়বেন আশাকরি।
যদিও এই গল্পটির প্রথম পর্ব আমার পড়া হয়নি কিন্তু দ্বিতীয় পর্ব পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। মানুষ যে রকমই হোক না কেন পাশে থাকলে এবং যত্ন করলে অন্যরকম একটা মায়া লেগে যায়। সুরাইয়া মোর্শেদ কে এখনও ভীষণ ভালোবাসে এটা পড়েই বুঝতে পারছি। পরের পর্বে কি হবে তা জানার জন্য খুবই আগ্রহ জাগছে মনের ভিতর। আশা করছি আপনি খুব তাড়াতাড়ি পরের পর্ব সবার মাঝে শেয়ার করবেন। অপেক্ষায় থাকলাম তাহলে।
অনেক ধন্যবাদ ভাই। প্রথম পর্বের লিংক দেয়া আছে, চাইলে পড়ে আসতে পারেন। আপনার কাছে গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে ভীষণ খুশি হলাম।