গল্প:) ধনকুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশা। (অন্তিম পর্ব) || হয়তো গল্পটা আপনার জন্য ছিল।

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago
গল্প:) ধনকুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশা

ছবিটি আনস্প্লেস থেকে নিয়ে কেনভা দিয়ে তৈরি

প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
তৃতীয় পর্ব
চতুর্থ পর্ব
পঞ্চম পর্ব
ষষ্ঠ পর্ব
সপ্তম পর্ব
অষ্টম পর্ব
নবম পর্ব
দশম পর্ব
একাদশ পর্ব

সাল: ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
শিবলিং শহর, ঘন নিশি


ছুরবালা হেথাংয়ের সুপ্রান পানীয় তৈরির সময় কৌশলে
আচ্ছন্ন-মেঘম দানা মিশিয়ে দিয়েছে, যাতে হেথাং সকালের সূর্য মাথার উপর না ওঠার আগ পর্যন্ত ঘুম থেকে না উঠতে পারে। এদিকে ছুরবালার রুপের জাদুতে মোহাচ্ছন্ন হেথাং দিন দিন এতোটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, যে কামুক অনুভূতি লাগাম ছাড়া। সুপ্রান পানীয় খেলে তার শরীর একদম চাঙ্গা হয়ে ওঠে, তাই প্রতিদিন রাতে ছুরবালার হাতে এক গ্লাস পান করে সুখের সাগরে হারিয়ে যায়। তবে আজকের এই হারানোটা যে শেষ বারের মতো সেটা হেথাং ঘুনাক্ষরেও টের পেল না। ছুরবালা হেথাংকে পানীয় দেয়ার সাথে সাথে ঢগঢগ করে খেয়ে ফেললো। কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর, হেথাং চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করলো আর তীব্র ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরলো।

ছুরবালা আজকে হাতে রত্ন খচিত খন্জর তুলে নেয়, শয়তান আর লম্পট হেথাংকে খুন করার জন্য। এতো দিন এই নরপিশাচ তার শরীর খুবলে খেয়েছে। না এভাবে না, একে শত শত মানুষের সামনে পিষে মারতে হবে, যাতে এমন নিকৃষ্ট কাজগুলো কেউ না করতে পারে। মানুষের ধন সম্পদের লোভ আর শারীরিক চাহিদা থাকবেই কিন্তু যখন সেটা পাপাচারের সীমা অতিক্রম করবে তখন ধ্বংস অনিবার্য। ওলট পালট অনেক কিছু চিন্তা করে খন্জর ফেলে দেয় ছুরবালা। তার হাতে থাকা জ্বল জ্বল করা আংটিটা সে হাত থেকে নিয়ে নেয়, এই সেই অভিশপ্ত নীলকন্ঠ রত্ন যার জন্য বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আর এতো চমৎকার একটা রাজ্য আজ পতিতালয়ে পরিণত হয়েছে।

ছুরবালা আজ এই আংটির রহস্য জানে, এটা এমন একটা রত্ন যেটা পাথরে ছোঁয়ালে রত্নে পরিনত হয়ে যায়। কিন্তু এই‌ অভিশপ্ত পাথরের উপর বিন্দু পরিমাণ আকর্ষণ বোধ হচ্ছে না তার কারন এটা সবার জন্য ক্ষতিকর। সে দ্রুত এই আংটি তার কব্জায় নিয়ে নেয়। এদিকে কার্লো অপেক্ষায় রয়েছে ছুরবালার, কারন আজ রাতেই সেই শত্রু বধংক্রিয়া, যেখানে হেথাংয়ের জীবদ্দশার ইতি টানা হবে।


সাল: ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
শিবলিং শহর, রক্তিম সূর্যোদয়


আজকের সকালটা কেমন যেন ভিন্নরূপে প্রতিয়মান হচ্ছে সবার কাছে। দূর দূরান্ত থেকে পুরো রাজ্যের মানুষ একত্র হতে শুরু করেছে রাজ দরবারে কারন ভোরের কিরন ফোঁটার আগ থেকেই হাতির পিঠে চড়ে ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাইকে রাজ দরবারে আসতে বলা হয়েছে, আর সেই সাথে বলা হয়েছে পিশাচ বধের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ব্যাপারটা কেউ বুঝতে না পেরে হুড়োহুড়ি করে রাজ দরবারের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এদিকে গতকাল রাতেই মিথপটাং শহরের রাজাকে সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে শিবলিং শহর আক্রমণ করার জন্য। মূলত এই কাজটা করা হয়েছে কৌশল করে যদি হেথাংয়ের কিছু অনুসারী তাদের কাজে বাঁধা দেয় সেই কারনে।

সভাসদগনকে নিয়ে গতকাল রাতে খুব গোপনে পরমর্শ করা হয়েছে কিভাবে হেথাংয়ের মৃত্যু কার্যকর করা হবে। প্রথমে হেথাংকে পুরোপুরি কাপড় বিচ্ছিন্ন করে তার পানশালার মেঝেতে চারটি খুঁটিতে বেঁধে ফেলা হয়। তার শরীর বরাবর উপরের দিকে একটা বিশাল পাথর দড়ির সাহায্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ধীরে ধীরে মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে এবং শোরগোল যেন কান ঝা ঝা করা। হঠাৎ মানুষের অট্টহাসি আর শোরগোলে হেথাং তার জ্ঞান ফিরে পায়। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে বিশাল এক পাথর তার শরীর বরাবর ঝুলানো আর চতুর দিকে মানুষ তার বস্ত্রহীন শরীর দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পরছে। পরিস্থিতি বুঝতে তার বেশ সময় লাগলো কারন সে তার আলিশান বিছানায় থাকার কথা কিন্তু তার এই অবস্থা কেন? একবার ভাবলো সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে, কিন্তু পরক্ষনেই সব জলের মতো পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। এদিকে হঠাৎ চারিদিকে হৈ হৈ আওয়াজ তুলে মিথপটাং রাজার সৈন্যদল পুরো রাজদরবার ঘিরে ফেলেছে। রাজা নিকোবিস ধীরে ধীরে পানশালায় প্রবেশ করেছে।

কার্লো, ছুরবালা, নিকোবিস আর সভাসদগন একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। রাজ্যের সবথেকে প্রবীণ মানুষটি ধীরে ধীরে এগিয়ে এসেছে হেথাংয়ের দিকে, আর উচ্চস্বরে বললো যুবক বলো তোমার শেষ ইচ্ছা কি?
হেথাং হেসে জবাব দেয়, শেষ ইচ্ছা 😄 আমাকে ছেড়ে দাও আমি তোমাকে রত্ন পাথরে মুড়িয়ে দেবো, পুরো একটা রাজ্য কিনে দেবো। প্রবীণ বলে আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি, তুমি আর মানুষ নেই, তুমি ধনকুবের পিশাচ হয়ে গেছো। তৈরি হও তোমার রত্ন তোমাকে পিষ্ট করে পরপারে নিতে আসছে। প্রবীণ বড় পাথরে নীলকন্ঠ ছুয়ে দেয় এবং সেটা বড় আর উজ্জ্বল রত্নে পরিনত হয়। এদিকে পুরো প্রাসাদ আলোয় ঝলমল করতে থাকে। হঠাৎ রত্ন পাথরের দড়ি কেটে দেয়া হয়, যখন পাথরটি হেথাংয়ের দিকে এগিয়ে আসছে তখন হেথাং কিছুক্ষণের জন্য সেই স্বপ্নটা আবার দেখে যেখানে তার ধনসম্পদ সাপ হয়ে গেছে আর তাকে গিলে ফেলতে চাইছে। হেথাংয়ের চোখ ভয়ে গর্ত থেকে বেড়িয়ে আসবে মনে হয় যেন। মূহুর্তের মধ্যে ধনকুবের পিশাচ হেথাং পিষ্ট হয়ে মারা যায়। সবাই এখান থেকে বেশ কিছু শিক্ষা নিয়ে বাড়ি ফেরে। তবে তার আগে আরো কিছু ঘটনা ঘটে যায়। রাজা নিকোবিস কার্লোর দেশপ্রেম, আর সততার জন্য তাকে রাজা হিসেবে নিযুক্ত করেন, মানে সৎ চোর হয়ে যায় দেশের রাজা। আর ছুরবালা সাদা শাড়ি পরে পবিত্র স্নান করে উপাসনালয় তৈরি করে নিজেকে তার ভেতর আবদ্ধ করে নেয়, এরপর থেকে কখনোই কেউ ছুরবালার মুখ দেখতে পায়নি মানে একজন খারাপ মহিলা হয়ে যায় সৃষ্টিকর্তার প্রেমি। আর সেই রত্ন পাথরের মালিকে তার রত্ন বুঝিয়ে দেয়া হয়, অর্থাৎ হেথাংয়ের পিতার কাছে। কিন্তু তিনি সেটা নিতে অস্বীকৃতি জানান, অবশেষে জ্বলন্ত আগ্নেয় গিরিতে অভিশপ্ত এই পাথর নিক্ষেপ করা হয়, মানে যেখান থেকে সেই পাথর এসেছিল আবারো সেই জায়গায় ফেরত চলে যায়।

ভাববেন না, এই নীলকন্ঠ পাথর হয়তো আপনার কাছেও চলে আসতে পারে 😄 কি করবেন এটা দিয়ে?



🌟 গল্পের শিক্ষা 🌟

  • লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। এতো লোভ করো না যা নিজেকে ভয়ংকর মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।

  • নিজের কামনা বাসনায় লাগাম দাও। এটা এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে যাবে না, যার কারণে তুমি সবার চোখে নিকৃষ্ট মানুষ হিসেবে পরিগণিত হবে।

  • টাকা মাটি, মাটিই টাকা। কখনো টাকাকে তুমি তোমার ঈশ্বর ভেবে নেবে না। কারন খুব তাড়াতাড়ি মাটি তোমার টাকা আর তোমাকে খেয়ে ফেলবে।

  • পিতা-মাতা আর রক্তের সম্পর্কের উর্ধ্বে কিছু নেই। তাদের দোয়া আর ভালোবাসা হয়তো তোমাকে শত মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে আনবে। আর একটা কষ্টের নিঃশ্বাস তোমাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেবে। তাই রক্তের সম্পর্ককে দাম দাও আর আগলে রাখো ভালোবাসায়।

  • আজ যে খারাপ কাল সে ভালো হতেই পারে, কখনোই কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না। বলা যায় না, কোন একদিন হয়তো তার সামনে তোমাকে মাথা নোয়াতে হতে পারে।

সমাপ্ত, ধন কুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশা



Black and White Modern Company Presentation (1).gif

banner-abbVD.png

ছোট্ট পরিসরে পরিচিতি

আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।

Sort:  
 5 days ago 

ধনকুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশা গল্পটি এত বেশি ভালো লেগেছে যে আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। গল্পটিতে শিক্ষনীয় বিষয় ছিলো। আপনার লেখা গল্পটি শুরু থেকেই পরেছি শেষ পর্ব পরে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কার্লো এবং ছুরবালা বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। অনেক কৌশল করে ধনকুবের হেথাং কে শেষ করে দিলো। সৎ চোর কার্লো রাজ্যের রাজা হয়ে গেলো বাহ্ দারুন। ছুরবালা ও একদমই ভালো হয়ে গেলো খুব ভালো খবর। অবশেষে ধনকুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশারং সমাপ্ত হয়ে গেলো। গল্পটিকে বিভিন্ন কৌশলে লেখার চেষ্টা করেছেন। আপনার গল্প লেখার দক্ষতার প্রশংসা করতে হয়। গল্পের শিক্ষা খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন। নতুন গল্পের অপেক্ষায় রইলাম ধন্যবাদ আপনাকে।

 4 days ago 

ধনকুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশার সম্পূর্ণ গল্পটি পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। প্রতিটি পর্ব অসাধারণ ছিল। গল্পের মাঝে লোভ লালসাতা ও শিক্ষনীয় বিষয় আপনি খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অতি লোভ এবং লালসাতার কারণে মূহুর্তের মধ্যে ধনকুবের পিশাচ হেথাং পিষ্ট হয়ে মারা যায়। কোথায় আছে লোভে পাপা, পাপে মৃত্যু। গল্পের শিক্ষা সম্পর্কে দারুন কিছু বানী আমাদেরকে উপহার দিয়েছেন, আপনি ঠিক বলছেন টাকায় মাটি মাটিই টাকা। তাই টাকাকে আমাদের প্রভু মনে করা উচিত নয়। পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভালো থাকবেন ভাই ।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 64741.88
ETH 3457.21
USDT 1.00
SBD 2.55