গল্প:) ধনকুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশা। (তৃতীয় পর্ব)
সাল: ৬৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ।
মিথপটাং শহর, প্রভাত
জগুলা তার গুনধর ছেলে হেথাংকে খুঁজতে বেরিয়েছে। সবাই জগুলাকে জিঙ্গেস করতে থাকে, সে এতো সকালে কি খুঁজতে বেরিয়েছে? কিন্তু সে কাউকে কোন কিছু না বলে, গরু খোঁজা খুঁজতে থাকে। ভেতরে ভেতরে ভীষণ রেগে আছে জগুলা। যদি একবার হেথাংকে পায় তাহলে আচ্ছা তরফে ধোলাই করবে। আনাচে কানাচে, অলি-গলি হব জায়গায় খোঁজা শেষ কিন্তু হেথাং কোথাও নেই। এবার জগুলার চিন্তা হতে থাকে, তাকে কেউ অপহরণ করে নিয়ে যায়নি তো? আর এই রত্ন পাথর তাহলে তার পরিবারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হেথাং সবেমাত্র শিবলিং শহরে প্রবেশ করেছে, বেশ সাজানো গোছানো আর পরিপাটি শহর শিবলিং। সবথেকে বড় বনিক শহরের মধ্যে প্রথম কাতারে রয়েছে এই শিবলিং, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ স্বর্নমুদ্রার বেচাকেনা হয়। এখানে যেসব সামগ্রী বিক্রি করা হয়, এরমধ্যে মূল্যবান রত্ন পাথর অন্যতম। হেথাং নিজেকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছে কারন সে ধরেই নিয়েছে এই শিবলিং তাকে বড়লোক বানাবে।
শিবলিং শহরে এসেই হেথাং প্রথমে একটা আশ্রয়ের খোঁজ করতে থাকে। তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বর্ণ মুদ্রা নেই যা দিয়ে সে কোথাও অবস্থান করতে পারে, ঠিক তখন মনে পরে যে তার কাছে বেশ কিছু রত্ন পাথর রয়েছে। যা বিক্রি করে সে হয়তো বেশ ভালো অংকের স্বর্ণমুদ্রা পেতে পারে। যেই ভাবা সেই কাজ সে বেশ কিছুক্ষণ পুরো বাজারটা পর্যবেক্ষণ করে একজন বয়স্ক দোকানির কাছে যায়। বয়স্ক দোকানি তাকে দেখে বেশ তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে ওঠে কিহে ছোকরা কি চাই তোমার?
হেথাং বেশ ভাব নিয়ে লোকটিকে বলল আমার কাছে বেশ কিছু মূল্যবান রক্ত পাথর রয়েছে সেগুলো আপনার কাছে বিক্রি করতে চাই। আপনি আমার রত্ন পাথরগুলো দেখে দাম হাঁকাবেন যদি আমার মন মত দাম পাই তাহলে সেগুলো আপনার হয়ে যাবে। বয়স্ক দোকানি বেশ হাসির ছলে বলল দেখি দেখাও কি এমন মূল্যবান পাথর রয়েছে তোমার ঝোলাতে। হেথাং শুরুতে চার থেকে পাঁচটা রত্ন পাথর লোকটাকে দেখালো। এই অতি আশ্চর্য রত্ন পাথরগুলো দেখে বয়স্ক লোকটা একেবারে হা হয়ে গেছে, এত চমৎকার আর ঝলমলে পাথর সে আগে কখনো দেখেনি। বয়স্ক দোকানি একটি পাথর হাতে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। লোকটার পাথরগুলো বেশ পছন্দ হয়ে যায় এবং ১০০ স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে সেগুলো কিনতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু হেথাং তার রত্ন পাথরগুলোর দাম ৫০০ স্বর্ণমুদ্রার চেয়ে বসে। দোকানি একেবারে আকাশ থেকে পড়বে এরকম একটা ভাব ধরে।
বয়স্ক দোকানির সাথে হেথাংয়ের বেশ কিছু সময় দর কষাঘষি চলে, তবে হেথাং কিছুতেই তার দাম কমাতে রাজি নয়। অবশেষে বয়স্ক দোকানি ৫০০ স্বর্ণ মুদ্রা দিয়েই তার কাছ থেকে এই রত্ন পাথরগুলো নিতে রাজি হয়। এতগুলো স্বর্ণমুদ্রা পেয়ে হেথাং মনে মনে ভীষণ খুশি হয় এবং তার ভাগ্যকে সাধুবাদ জানায়। এদিকে বয়স্ক দোকানি তাকে জানায় সে যখন খুশি তার কাছে এরকম অতি আশ্চর্য রত্নপাথর বিক্রি করতে পারে।
হেথাং মনে আনন্দ নিয়ে একটি অতিপানশালায় ঘর নেয়ার জন্য এগিয়ে যেতে থাকে। বেশ জাকজমকপূর্ণ একটি প্রতিপানশালায় হেতাং তার আশ্রয় গাড়ে। অতি পানশালা এমন একটি জায়গা যেখানে টাকার বিনিময়ে একজন মানুষ বেশ আরামে থাকতে পারে এবং চাইলে তার মনের খারাপ প্রবৃদ্ধিগুলো মেটাতে পারে। যেহেতু হেথাং সবেমাত্র যৌবনে পা বাড়িয়েছে তাই তার কাছে জায়গাটা বেশ আদর্শ মনে হয়েছে। প্রতিদিন ১০০ স্বর্ণ মুদ্রার বিনিময়ে একটি কামরা ভাড়া নেয়, খাওয়া এবং অন্যান্য আরো কিছু বিষয়ের জন্য অতিরিক্ত ৫০ স্বর্ণমুদ্রা গুনতে হবে তাকে। তাতে কি আসে যায়, সে এখন চাইলেই অঢেল স্বর্ণমুদ্রার মালিক হতে পারবে। তাই তো নিশ্চিন্ত মনে তার কামরায় প্রবেশ করে গরম জলে স্নান সেরে নেয় এবং খাবার খেয়ে বেশ শান্তির একটা ঘুম দেয়।
ঘুমের ঘোরে হেথাং স্বপ্ন দেখতে থাকে তার চারপাশে সুন্দরী মহিলারা ঘুরে বেড়াচ্ছে কেউ তাকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। আবার কেউ তাকে সুরা পান করাচ্ছে। সে অনেক বিশাল ধন-সম্পদ এর মালিক ও হয়ে গেছে। এরপর হুট করে একটি বড় অজগর সাপ এসে তাকে গিলে ফেলতে চায়। যখনই সেই অজগর সাপটি তাকে খাওয়ার জন্য হা করে এগিয়ে আসে, তখনই চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠে হেথাং।
হুট করেই সে ভয় পেয়ে যায় কারণ এত খারাপ স্বপ্ন সে কখনোই দেখেনি। যাইহোক তার ঘুম ভেঙে যায় এবং আবারও তার সেই রত্ন পাথরের কথা মনে পড়ে যায়। গভীর রাতে হেথাং আবারও তার মূল রত্ন পাথর দিয়ে বেশ কিছু রত্ন পাথর তৈরি করতে থাকে। কারণ সে শিবলিং শহরে টিকে থাকতে চায় এবং প্রচুর স্বর্ণমুদ্রার মালিক হতে চায়। এক রাতের মধ্যেই হেথাং প্রায় ৫ হাজার স্বর্ণ মুদ্রা মূল্যের রত্ন পাথর তৈরি করে তার বিছানার নিচে রেখে দেয়।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
হেথাং ঘুমের ঘরে স্বর্গের সুখ নিয়েছে 😜😆
ধনকুবের হেথাং এবং তার জীবদ্দশার দেখতে দেখতে তৃতীয় পর্ব চলে এসেছে। আমার কাছে আজকে পর্ব খুবই ভালো লাগলো। হেথাং তার স্বর্ণ মুদ্রা বিক্রি করে অনেক টাকা পেলো এবং গোসল করে ঘুমিয়ে যায়।স্বপ্নে ভয়ংকর সাপ গিলে খাওয়ার চেষ্টা করেন। এ বিষয়টি দেখে সে অনেক ভয় পেল। এই কাহিনীটা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আশাকরি আগামীতে আরো সুন্দর কিছু উপহার পাব। চতুর্থ পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।