গল্প: তৃষ্ণার্ত পৃথিবী ৪৪৪৪ সাল (শেষ পর্ব) || Story: Thirsty Earth 4444.
(শেষ পর্ব) |
---|
আজ গভীর রাতে আক্রমণ করা হবে এভোনাকের ডেরায়, সব প্রস্তুতি নিয়েছে লুবেন আর কুইনি। এরমধ্যে লুবেনকে মোটামুটি অস্ত্র চালোনায় দক্ষ করে তুলেছে কুইনি। রোবট অবলী এক এবং দুই দু'টোকেই তাদের সকল প্রোগ্রাম নিখুঁতভাবে সেটাপ করা হয়েছে। ওদের মূল টার্গেট রোবট রিবলী। লুবেন জানে রাত একটার পর এভোনাক গভীর ঘুমে থাকে, আর এই সময়ে অতর্কিত হামলা করে এই পানির দস্যুকে শেষ করে দেবে ওরা। পুরো দিনের মধ্যে লুবেন আর কুইনির কিছুই খাওয়া হয়নি, কারন বোন রোজেলার মৃত্যু শোকে দুজনেই পাথর হয়ে গেছে।
অনেকটাই জোর করে কুইনি লুবেনকে কিছু খাবার খাইয়ে দিয়েছে আর নিজেও খেয়েছে কারন এই যুদ্ধ শক্তি এবং বুদ্ধির সর্বোচ্চ ব্যাবহার করতে হবে। কিছুটা খাবার এবং পানি পান করার পর ওরা বিশ্রাম নিয়েছে। রোবট অবলী এক এবং দুই কে পাহারায় রাখা হয়েছে কারন কোন ভাবে তাদের অবস্থান এভোনাক পেয়ে গেলো অতর্কিত হামলা হতে পারে।
রাত বারোটা তারা তৈরি সবদিক থেকেই , এখনই মোখ্যম সময় বেরিয়ে পরার। কুইনি লুবেনকে বলে শোন কোন কারনে যদি আমরা কেউ আহত কিংবা মারাও যাই তবুও পেছনে ফিরে তাকানো যাবেনা, এটা আমাদের একে অপরের সাথে প্রমিজ করতে হবে। লুবেন অনিচ্ছা সত্ত্বেও কুইনির হাত চেপে ধরে বলে, শয়তানটাকে মেরে আমরা দুজনেই ফিরে আসবো তুমি চিন্তা করোনা। সমস্ত অস্ত্র গুছিয়ে নিয়ে এভোনাকের ডেরায় যাবার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে তারা। একদমই নিঃশব্দ যাত্রা যাকে বলে ঠিক তাই। ভীষণ সতর্কতার সাথে এগিয়ে চলেছে দুজন মানুষ এবং দুটো অত্যাধুনিক রোবটের দলটি।
একেবারে কাছাকাছি পৌঁছার পর লুবেন সবাইকে থামতে বলে, সে এক পাক সবার গতিবিধি দেখে নিতে চায়। সে খেয়াল করলো প্রথম স্তরে যে পাঁচজন রয়েছে তাদের মধ্যে দুজন ঘুমিয়ে এবং বাকী তিনজন পাহারা দিচ্ছে। প্রথম টার্গেট ঐ তিনজন, লুবেনের ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র কুইনি এবং দু'টো রোবট অবস্থান নিয়েছে। অতর্কিত গুলি শুরু হলো ঐ পাঁচজনের উপর, নিমেষেই তাদের লাশ লুটিয়ে পরেছে মাটিতে। এবার গুলির আওয়াজ পেয়ে দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দলটি বেরিয়ে আসে, ততক্ষণে এভোনাক লাফ দিয়ে জেগে ওঠে। দ্বিতীয় স্তরের লোকগুলো বেশ সাবধানে লুবেনদের গুলির জবাব দিতে থাকে। হঠাৎ একটি গুলি কুইনির হাতে এসে লাগে, ব্যাথার তীব্রতায় সে মাটিতে লুটিয়ে পরে। কুইনি ভীষণ শক্ত মনের মেয়ে, সে লুবেনকে ইশারায় বলে সে প্রমিজ করেছে তার কিছু হলেও সে পিছু হটবে না।
এবার লুবেন ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করতে থাকে একসময় বাকি পাঁচজন তার গুলিতে প্রান হারায়। এদিকে দ্রুত সামনের দিকে এগুতে থাকে লুবেন কারন জানে এখন এভোনাক আর তার রোবট রিবলী রয়েছে। দুই অবলীকে সামনে রেখে ক্ষীপ্রতার সাথে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে লুবেন। এবার রোবট রিবলী গুলি বর্ষণ করতে থাকে এবং অবলী দুই এর কৃত্রিম অনুভূতি হৃদয় ছিদ্র হয়ে সে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। ততক্ষনে লুবেন এবং অবলীর গুলিতে রিবলী কুপোকাত হয়ে গেছে। এভোনাক কে তারা যতটা সাহসী আর ভয়ংকর মনে করা হতো আসলে সে ঠিক তার উল্টো, মানে ভীরু মানুষ যাকে বলে। এভোনাক এলো পাথারী গুলি শুরু করলেও লুবেনের একটি গুলি তার পায়ে লাগে। এভোনাক মাটিতে লুটিয়ে পরেছে আর অস্ত্র হাত থেকে ছিটকে পরে যায়।
কুইনীর হাত থেকে ভীষণ রক্তক্ষরণ হয়েছে তবুও সে ছুটে ভেতরে প্রবেশ করেছে। চিৎকার করে লুবেনকে নিষেধ করে এভোনাককে গুলি করতে। লুবেন ওকে আমি মারবো, ও আমার পিতা মাতা আর ভাইকে মেরে ফেলেছে। কুইনি তার রক্তাক্ত হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে এভোনাকের বুকটা ঝাঁঝড়া করে দেয়। এভোনাক কিছু বোঝার আগেই লাশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে রইলো।
এবার পুরো পানির পানির প্লান্ট ওদের দখলে চলে আসে এবং সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ইতিমধ্যে একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে কুইনিকে সুস্থ করা গেছে। কুইনি লুবেনকে তার জীবন সাথী হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর সবথেকে বড় বিষয় এই পানির প্লান্টের তারা যথেষ্ট সংস্কার করে পুরো এলাকার মানুষের জন্য অন্তত কোনরকম বেঁচে থাকার মতো পানি সরবরাহ করতে থাকে। এভাবেই বেঁচে থাকার যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকলো পানিশূন্য এই ৪৪৪৪ সালের বেঁচে থাকা হাতে গোনা কিছু মানুষ।
হয়তো একদিন সব থাকবে কিন্তু পৃথিবীতে পানি থাকবে না। পুরো পৃথিবী হয়ে উঠবে মরুভূমি আর এভোনাকের মতো অমানুষেরা টাকা পয়সা সব ছেড়ে শুধুমাত্র পানি জমিয়ে রাখার চেষ্টা করবে নিজেকে বাঁচাতে। পানি ব্যাবহারে আমাদের এখনই সতর্ক হবো এবং অপচয় রোধ করবো। এছাড়াও পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের সর্বোচ্চ সক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে, না হলে মানবজাতি হুমকির মুখে পরে যাবে।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR