সরকারি চাকরির নেশা; বেকার তৈরির কারখানা।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
সরকারি চাকরি বহুল প্রত্যাশীত বহুল সাধনার একটা জিনিস। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মনে হয় করা হয় সফল হওয়ার মাধ্যম একটাই সেটা হলো সরকারি চাকরি। কিছুদিন আগে আমি নিজেই একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম বিষয়টা এমন ছিল যে মেসি বিশ্বকাপ জেতার পর যদি বাংলাদেশের কোনো মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তবে সেই মেয়ের বাবা বলবেন "মেসি বিশ্বকাপ পেয়েছে তো কী হয়েছে সরকারি চাকরি তো পাইনি" হা হা। আমার কথাটা হাস্যকর মনে হলেও এটাই কিন্তু সত্য। সরকারি চাকরি কে সোনার হরিণ ধরে নেওয়া হয়। যদি একটা সরকারি চাকরি থাকে আর যাইহোক না কেন আপনি একটা ভালো সুন্দর কম বয়সী বউ পাবেন এটা নিশ্চিত থাকুন হা হা। কিছুদিন আগে ঢাকা থেকে রাতের ট্রেনে আমরা বাড়ি ফিরছিলাম। তো ট্রেনে আমাদের সামনের সিটে সুন্দর করে একটা আপু বসেছিল। ঐ আপুকে দেখে আমার বন্ধু ইকরা আমাকে বলেই ফেলল ইমন ঐ ভাই মানে আপুর স্বামী সরকারি চাকরি করে। আমি কৌতূহল নিয়ে বললাম কী ভাবে বুঝলে! জবাবে আমার বন্ধু ইকরা বলল ঐ আপুকে দেখে ; দেখ কত সুন্দর হা হা। বিষয়টি আসলেই এমন। আজ হঠাৎ এটা নিয়ে কেন পড়লাম সেটা বলছি এখন।
আজ স্যোসাল মিডিয়া, নিউজ পেপার নিউজ জুড়ে একটা নিউজই ঘোরাফেরা করছে। শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশী রা অবরোধ করছে যেন সরকারি চাকরিতে আবেদন এবং যোগদানের বয়স ৩২ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা হয়। অধিকাংশই সহমত পোষণ করছে। বলছে হ্যা তাদের দাবি ঠিক আছে। কিন্তু আমি বলছি না তাদের দাবি ঠিক নেই। তারা ভুল ধারণার আছে। আমার মতে সরকারি চাকরির বয়স ২৮ করা হোক এতে করে বেকারত্ব কমবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ যুবক এখন নিজের লেখাপড়া শেষ করার পর ১০ বছর কাটিয়ে দেয় সরকারি চাকরির পেছনে ছুটে। এবং সেই সময় টা সে বেকার থাকে। না হয়তো সামান্য কিছু করতে পারে। কিন্তু অধিকাংশই থাকে বেকার। আমার নিজের বাড়ির মধ্যে এখন একটা উদাহরণ আছে। আমার চাচাতো ভাই রোহান প্রায় ৮ মাস হলো বুয়েট(বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে ইইই তে বিএসসি শেষ করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটা ভালো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি থেকে ভালো টাকা বেতনে চাকরির অফার পেলেও ও সেটা করেনি। ঐ সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারি চাকরির পেছনে ছুটে তারা ঐ সময় টা একেবারে নষ্ট করে। পরবর্তীতে যখন চাকরি পেয়ে যায় তখন ঐ ৩৫-৩৬ বছরে বিয়ে করে একটা ১৮-২০ বছরের মেয়েকে। আর বাংলাদেশের মেয়ের বাবা মা গুলো ঐরকমই। তাদের ধারণা ছেলে সরকারি চাকরি করে মানেই মেয়ের ভবিষ্যত ভালো।
কিন্তু একবার ভাবুন যদি সরকারি চাকরির পেছনে ১০ বছর ছোটা ছেলেটা উদ্যোক্তা হয় লেখাপড়া শেষ করেই। তাহলে ছেলেটা ঐ দশ বছরে কতটা এগিয়ে যাবে। তাহলে এমন হবে যখন সে চাকরি করবে অন্যের উদ্যোক্তা হলে ঐ বয়সে সে কয়েক কোটি টাকার মালিক অনেক যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে তার ব্যবসা প্রতিষ্টানে। বাংলাদেশের ছেলেদের সমস্যা এটাই কেউ উদ্যোক্তা হতে চাই না ব্যবসা করতে চাই না। সবাই চাই অন্যের গোলাম হতে সরকারের গোলাম হতে। অথচ পৃথিবীতে যত ধনী ব্যক্তি আছে সবাই কিন্তু উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী। তারা সেটা অনুসরণ করে না। সত্যি বলতে আমারও আপাতত প্রধান লক্ষ্য সরকারি চাকরি। তবে আমি আমার ২৪-২৫ বছর পযর্ন্ত চেষ্টা করব সরকারি চাকরির। এরপর আর করব না। আমি চাই না নিজের জীবনের অর্ধেকটা চাকরির পেছনে দৌড়ে কাটিয়ে দিতে। বতর্মানে বাংলাদেশের সরকার যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে যেন তারা উদ্যোক্তা হয়। উদ্যোক্তা হলে আপনি নিজেই অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে ফেলবেন।
অন্য দেশের জনগণ সরকারি চাকরির পেছনে এতোটা ছোটে না বাহ এতোটা সময় ও নষ্ট করে না। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ এক ভাইয়ের পোস্ট পড়লাম এটা নিয়ে। উনি লিখেছেন লেখাপড়া শেষ করার পর উনার সব বন্ধুরা সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করল শুরু করল পরীক্ষা দেওয়া। উনার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় উনি একটা কোম্পানিতে সেলস ম্যানের জব নেয়। তার দশ বছর কেটে গেছে। এখন ঐ ভাইয়ের মাসিক বেতন প্রায় লক্ষাধিক টাকা। অথচ উনার যেসব বন্ধুরা দশ বছর বেকার থাকার পর কোনোরকম একটা সরকারি চাকরি জুটিয়েছে তাদের বেতন ২৫-৩০ হাজারের মতো। এটাই বাস্তবতা আপনি মানেন আর না মানেন। আমাদের এই সমাজে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়ে মাসে ২০ হাজার টাকা বেতন পাওয়া ছেলেটাকে সবাই সফল বলে। অথচ ঐ ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করে মাসে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করলেও আপনি ব্যর্থ হা হা। এটাই বাস্তবতা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার প্রয়োজন। এবং আমি চাই সত্যি সত্যি যেন বাংলাদেশ সরকার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ২৮ করে দেয়। এতে করে বেকারত্বের সংখ্যা অনেক কমবে।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনি একেবারে বাস্তব কথা বলেছেন ভাই । আপনার বিষয়বস্তু পড়ে খুব ভালো লাগলো। সত্যি সরকারি চাকরির নেশা আমাদের বেকার তৈরির করে থাকে। সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় আশায় নিজেই উদ্যোগী হয়ে কোন ধরনের কাজকর্ম করা হয় না। এতে করে বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এত সুন্দর বাস্তবধর্মী পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
দারুন খুবই দারুণ একটা বিষয় আপনি আপনার আজকে পোষ্টের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, আমি আপনার সাথে একমত। আমাদের দেশের এই সরকারি চাকরির পিছনে ছুটার প্রবণতা অনেক বেশি। তবে বর্তমানে যে পরিস্থিতি ঘুষ ছাড়া তো চাকরি হওয়ার কোন সুযোগই দেখি না। এছাড়াও দেশের যা পরিস্থিতি ব্যবসা বাণিজ্য করে যে টিকে থাকবে তাও এখন আকাশচুম্বি ব্যাপার। যাই হোক সবার আগে নিজেকে ঠিক করতে হবে নিজের যোগ্যতা নিজেকে বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত যে আমি সরকারি চাকরির জন্য যোগ্য কিনা যদি সেরকম না হয় তাহলে শুধু শুধু সময় নষ্ট না করে ভালো একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে বা নিজে কোন ব্যবসা শুরু করে দেওয়াই উত্তম।
হাহা, দারুন একটা লিখনী ছিল।
একেবারে কতগুলো বাস্তব কথা তোমার পোষ্টের মাধ্যমে পড়তে পারলাম। সত্যি বলতে সরকারি চাকরি নামক এই সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে ছুটতে অনেকের বয়সটা এত দ্রুত চলে যায় সেটা অনুভব করতে পারে না। একটা সময় যখন সরকারি চাকরির আর বয়স থাকে না তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে, তখন আবার অর্ধেক বেতনের একটি প্রাইভেট কোম্পানির চাকরির জন্য ছুটে বেড়ায় দুয়ারে দুয়ারে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর ওই সরকারি চাকরি ওয়ালাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেয়া হয়। হ্যা তুমি ঠিক বলেছো তারা কিন্তু সুন্দরী অল্পবয়সী বউ পেয়ে যায়। তাতে কি বয়স কি আর থেমে থাকে।