দাদার স্পেশ্যাল রেসিপি ||বিনা তেলে জলে চিকেন।
♥️আসসালামুআলাইকুম♥️
আমি @bristy1, আমার বাংলা ব্লগ এর একজন সদস্য। আর আমার এই প্রিয় কমিউনিটির প্রিয় বন্ধুগণ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি৷সবার সুস্থতা কামনা করেই আজকের পোস্টটি শুরু করতে যাচ্ছি।
আজ আমি আপনাদের সাথে একটি রেসিপি পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি। তবে স্বাভাবিকভাবে আজকের এই রেসিপিটি একদম নরমাল রেসিপি নয়। এটি হচ্ছে আমাদের প্রিয় @rme দাদা কর্তৃক শেয়ার করা একটা ইউনিক রেসিপি। কিছুদিন আগেই তিনি একটি রেসিপি পোস্ট করেছিলেন। যদিও তিনি রেসিপি তৈরি করে পোস্ট করেননি।শুধুমাত্র প্রসেসিং গুলো আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন এবং সেরা রাধুনীদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন। কিন্তু যদিও আমি সেরা রাধুনী নই তবে এই রেসিপি তৈরি করতে আগ্রহী ছিলাম বলেই একদম হাতে কলমে মাঠে নেমে পড়লাম।
তবে এই রেসিপিতে স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন রকম মসলাগুলো পোড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকটা হিমশিম খেতে হয়েছে। কারণ প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ না থাকলে ঝামেলা তো হওয়ারই কথা,তাই না। আর যেহেতু আমি বর্তমানে বাসায় রয়েছি সেই হিসেবে অনেকগুলো জিনিসপত্র হাতের কাছে ছিল না। রান্না করার সময় সে ক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন রকম টেকনিক ইউজ করেছি। তবে এই বিষয়ে মজার ঘটনাগুলো আমি আপনাদের সাথে নিচেই শেয়ার করব।
রেসিপি শুরু করার আগে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই এই রেসিপিটি কেমন হয়েছিল খেতে সেই ব্যাপারে। আসলে যেদিন রেসিপিটি করব ভেবেছি সেদিন আমার নানু এবং আম্মু আমার বাসায় এসেছিল। আর ভাবলাম যেহেতু তারা আসবে সেই হিসেবে রেসিপিটা করলে তারাও খেতে পারবে। নতুন রেসিপির স্বাদ নিতে পারবে। কারণ ইতোপূর্বে আমার ফ্যামিলিতে কেউই এরকম তেল আর জল ছাড়া রান্না করেনি। যেখানে চিকেন সেদ্ধ করা লাগে পানির সাহায্যে সেখানে এটা পানি ছাড়া কিভাবে সিদ্ধ হবে সেটাই হল মুখ্য বিষয়। তবে আমার কাছে বেশ মজা লেগেছে এটাই যে আমি দাদার দেয়া প্রত্যেকটি স্টেপ ফলো করে একুরেটলি রান্না করার চেষ্টা করেছি এবং সময় বিবেচনা করেই রান্না করেছি। প্রত্যেকটা উপকরণের পরিমাণ দাদা যা বলেছে তাই ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। তবে এর মধ্যে কারি পাতা এবং লেমন গ্রাস আমাদের এখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেজন্য ব্যবহার করতে পারিনি। এই দুটো মসলা ব্যবহার না করার কারণে আমি আরো দুটো মসলা এড করলাম। যেগুলো হলো জায়ফল আর জয়িত্রী। সামান্য পরিমাণ জায়ফল এবং জয়ত্রী আমি মাংসের মধ্যে দিলাম যাতে টেস্ট একটু বাড়ে।
সর্বোপরি আমার নানু প্রথমবারের মত এইরকম রান্না খেয়ে বলে এই রান্না আমি কোথায় শিখেছি। তেল এবং পানি ছাড়া কিভাবে রান্না করা হয়। তেল ছাড়াও মাংস এভাবে সুস্বাদু হয় এটা তো জানা ছিল না। তখন আমি দাদার কথা বললাম। আমি যেখানে কাজ করি সেখানেই আমাদের দাদা এই রেসিপিটি দিয়েছেন। তখন আমার নানু বললেন তাকে তো সাধুবাদ জানানো উচিত এত সুন্দর একটা রেসিপি দেয়ার জন্য। যাইহোক সর্বোপরি পুরো রেসিপির কৃতিত্ব তাই দাদার। শুধুমাত্র রান্নাটা করেছি আমি। সত্যি বলতে খেতে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছিল। মসলাগুলোর কারণে আলাদা একটা ফ্লেভার ছিল এবং গ্রেভিটা অনেক ঘন হয়েছিল।
চলুন তাহলে শুরু করা যাক আমার আজকের রেসিপিটি |
---|
আজকের রেসিপির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণসমূহ |
---|
পরিমাণ |
চিকেন | ১ কিলো | টক দই | ৫০ গ্রাম | গোল আলু | ৪ টি | টমেটো | ৪ টি | পেঁয়াজ | ৪ টি | গোটা রসুন | ৪ টি | আদা | ১ টি মাঝারি খন্ড | কাঁচা মরিচ | ৪ টি | শুকনো মরিচ | ৪ টি | তেজ পাতা | ৪ টি | গোটা জিরা | দুই চিমটি | জিরের গুঁড়ো | আধা চা চামচ | হলুদ | দুই চা চামচ | লবন | স্বাদ মতো | ধনে পাতা | ৮-১০ টা | দারচিনি | ৫-৬ টি | লবঙ্গ | ৫-৬ টি | গোলমরিচ | ৫-৬ টি | এলাচ | ৫-৬ টি | জায়ফল | সামান্য পরিমাণ | জয়িত্রী | সামান্য পরিমাণ |
প্রথমে একটি মুরগি বড় বড় সাইজ করে কেটে নিলাম। তারপর মাংসকে ভালো করে ধুয়ে নিলাম। এখন যে কড়াইতে রান্না করবো সে কড়াইতেই মাংস নিয়ে নিলাম। এর মধ্যে ৫০ গ্রাম পরিমাণ টক দই দিলাম। অল্প একটু জিরে, হলুদ আর লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে ৪০ মিনিট ম্যারিনেশন এর জন্য রেখে দিলাম।
আলু গুলো খোসাসহ প্রতিটা দু'টুকরো করে নিলাম এবং পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে প্রত্যেকটা বড় বড় চার টুকরো করে নিলাম। পাশাপাশি চারটি টমেটোকেও চার টুকরো করে নিলাম।
এলাচ,দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ শিল নোড়ার সাহায্যে হালকা ভেঙে থেঁতো করে নিলাম। এক্ষেত্রে আমি আরো দুটো মসলা এড করেছি। এগুলো হলো জয়িত্রী আর জায়ফল। জায়ফল একদম সামান্য পরিমাণ দিলাম এগুলো থেঁতো করে নিলাম।
যেহেতু তারের জালি ছিল না সে হিসেবে আমি প্রথমত গ্যাসের চুলার উপরে দুটো চামচ দিয়ে দিলাম,যাতে ফাঁকা জায়গা কমে আসে। তারপর এক চুলায় আলু দিয়ে পোড়াতে থাকলাম।চুলার আঁচ একদম লো করে দিলাম।
আর অন্য চুলায় পেঁয়াজ এর টুকরো গুলো দিয়ে পোড়ালাম । সেই সাথে গোটা রসুন পোড়ালাম। রসুনের কোয়াগুলো আলাদা করলে সেগুলো পোড়ানো সম্ভব হবে না সে ক্ষেত্রে আমি গোটাই পুড়িয়ে নিলাম।
আদা, কাঁচামরিচ আর শুকনো মরিচ গোটা রেখে একইভাবে পুড়িয়ে নিলাম ।
পোড়ানো রসুন থেকে কোয়াগুলো আলাদা করে খোসা ছাড়িয়ে নিলাম। তারপর এক এক করে এই পোড়ানো রসুন, অর্ধেক পরিমাণ পোড়ানো পেঁয়াজ, আদা, কাঁচামরিচ এবং শুকনো মরিচ হালকা করে পিষে নিলাম।
ম্যারিনেট করা চিকেনের এর মধ্যে লবণ, হলুদ, গোটা জিরে আর টমেটোর টুকরো গুলো দিয়ে দিলাম।তারপর ৫মিনিটের জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে একদম লো আঁচে রান্না করলাম।
পাঁচ মিনিট পরে ঢাকনা তোলার পর দেখলাম বেশ ভালো পরিমাণ পানি চিকেন থেকে বেরিয়েছে । তারপর এরমধ্যে আলু, পেঁয়াজ এর টুকরো দিয়ে দিলাম।
এখন পোড়া রসুনের কোয়া, আদার টুকরো,পেঁয়াজের টুকরো, পোড়া কাঁচা ও শুকনো মরিচ বেটে নেওয়া মিক্সটা দিয়ে দিলাম। তেজপাতা দিয়ে দিলাম।কারিপাতা খুঁজে না পাওয়ায় দিতে পারিনি। এগুলো অ্যাড করার পর ঢাকনা দিয়ে ঢেকে কিছুক্ষণ রান্না করলাম। তারপর আবার মাঝে মাঝে নেড়ে দিয়ে সবকিছু রান্না করতে থাকলাম। এক্ষেত্রে অনেক পানি বের হল এবং সেই মাংসের পানিতেই মাংস রান্না হল।
রান্না মোটামুটি শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই আমি এর মধ্যে দারচিনি, লবঙ্গ, গোলমরিচ, এলাচ,জায়ফল জয়িত্রী একসাথে বাটা যে মিক্সটি ছিল সেটি দিয়ে নাড়তে থাকলাম ।
মাংসের ঝোল এক্কেবারে কমে এসেছে, গায়ে গায়ে ঝোল রয়েছে আর সেই সময় আমি চুলার ফ্লেম অফ করে দিলাম। এর মধ্যে ধনেপাতা কুচি দিয়ে দিলাম। এক্ষেত্রে লেমন গ্রাসও খুঁজে পাইনি তাই সেটা দিতে পারিনি। এরপর আমি আবার ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখে দিলাম। এভাবেই তৈরি করে ফেললাম মজাদার তেল জল ছাড়া চিকেন রেসিপি।
রেসিপি প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে মজার ঘটনা হলো যেহেতু বাসায় আছি সেই হিসেবে শিল পাটা ব্যবহার করার কোন সুযোগ নেই। কারণ আমি ব্লেন্ডার নিয়েই এসেছিলাম। তখন ভাবলাম কি করা যায়। এক্ষেত্রে আমরা যেদিন প্রথম বাসায় এসেছিলাম তখন কিচেনে একটা পাটা দেখেছিলাম যেটা মাঝখান থেকে ভাঙ্গা ছিল। ভেঙে যাওয়ার কারণেই হয়তোবা পূর্বের ভাড়াটিয়া এই পাটা নিয়ে যায়নি। যাইহোক তখন তো মনে মনে খুশি লাগছিল, অবশেষে এই ভাঙ্গা পাটাটার একটা অংশ আমার কাজে লাগবে। তারপর আসি জালি কোথায় পাব।জালি নেই বলে কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। আর যেহেতু রেসিপি শুরু করে দিয়েছিলাম এখন জালি আনার জন্য বাজারে গেলে রেসিপি আর আজকে করা হবে না। সেই ক্ষেত্রে আমি কাঁটা চামচ নিয়ে চুলার উপরে আলাদা আরো একটা স্ট্যান্ড বসিয়ে দিলাম। বসানোর পরে তার উপর কাটা চামচ দিয়ে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, কাঁচা মরিচ, শুকনো মরিচ এগুলো পোড়া দিলাম। তবে এর মধ্যে পেঁয়াজ ছোট হওয়ার কারণে বারবার চুলার মধ্যেই পড়ে যাচ্ছিল। বেশ কষ্ট করে এগুলো পোড়াতে হয়েছিল। গরম চামচ লেগে আমার হাত পুড়ে গিয়েছিল। তবুও কি আর করার অবশেষে রেসিপিটা তৈরি করলাম। এগুলোই ছিল রেসিপি তৈরির পিছনের মজার ঘটনা। আমি তাহমিনা আক্তার বৃষ্টি। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাংলায় কথা বলি,আমি বাংলায় নিজের মনোভাব প্রকাশ করি। আমি নিজের মত করে সবকিছু করার চেষ্টা করি। আমি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি বিভিন্ন জিনিস আঁকতে পছন্দ করি। বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকা, রঙ করা, নতুন নতুন কিছু তৈরি করা আমার পছন্দের কাজ। তবে রান্নাবান্না আমার ভালোলাগা, চেষ্টা করি সবসময় নিজে নতুনভাবে কিছু রান্না করার। ভ্রমণপ্রেমীদের মত আমিও ঘুরতে পছন্দ করি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। |
---|
ওয়াও দাদার স্পেশাল রেসিপি যেহেতু খেতে ভালো হবে আমি জানতাম।আপনার রেসিপি তৈরির প্রক্রিয়া দেখে বোঝা যাচ্ছে বেশ মজা করে খেয়েছিলেন আপু। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
এরকম কষ্ট করে হলেও আপনি এই রেসিপিটা তৈরি করেছেন দেখে খুব ভালো লেগেছে। তবে আপনার নানুতো দেখছি অনেক বেশি প্রশংসা করেছে এই রেসিপিটির। আসলে বাসায় থাকলে সবকিছু হাতের মধ্যে থাকে না। আর আপনি বিভিন্ন পদ্ধতিতে এটি তৈরি করেছেন দেখে খুব ভালো লেগেছে। শেষের পরিবেশন টা অনেক সুন্দর ভাবে করেছেন দেখে আরো বেশি ভালো লাগলো।
Your post has been rewarded by the Seven Team.
Support partner witnesses
We are the hope!
https://twitter.com/bristy110/status/1683543683617128449?s=20
আপু আপনি দাদার কাছ খুবই মজাদার রেসিপি শিখেছেন। সেই রেসিপি দেখে আজ খুব সুন্দর ভাবে মজাদার রেসিপি শেয়ার করেছেন। আপনার উপস্থাপনা খুব সুন্দর হয়েছে। ধাপগুলো খুব সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছেন। আমার কাছে আপনার এই রেসিপি ইউনিক লেগেছে। ধন্যবাদ মজাদার রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
জয়ত্রী এবং জয়ফল দেওয়ার কারণে তরকারির স্বাদ এমনিতে বেড়ে যাই আপু। আপনি ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন দেখে ভালো লাগলো। তবে আপনার বেশ পরিশ্রম হলো দেখে বুঝা যাচ্ছে। দাদাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত এত সুন্দর একটি রেসিপি আমাদের সাথে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেওয়ার জন্য। সবাই নতুন একটি রেসিপি তৈরি করার সুযোগ পেল সবাই সাথে স্বাস্থ্যকর একটি রেসিপি খাওয়ার সুযোগ হলো।
বিনা তেলে জলে চিকেন তৈরি করছেন দেখে খুব ভালো লাগলো। এ ধরনের রেসিপি কখনো খাওয়া হয় নি নিশ্চয়ই অনেক মজাদার এবং সুস্বাদু হয়েছে। আপনার রন্ধন প্রক্রিয়া বেশ দুর্দান্ত হয়েছে। আমাদের মাঝে ধাপে ধাপে উপস্থাপন করেছেন। শ্রদ্ধেয় দাদার এই ধরনের রেসিপি তৈরির উদ্যোগ অসাধারণ। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
!upvote 40
This post was manually selected to be voted on by "Seven Network Project". (Manual Curation) Your post was promoted on Twitter by the account josluds
the post has been upvoted successfully! Remaining bandwidth: 80%
বাহ বেশ চমৎকারভাবে ডেকোরেশন করেছেন এবং বিনা তেলে রান্না করেছেন সত্যিই পদ্ধতিটি আমার অনেক ভালো লেগেছে। আমিও বাসায় ট্রাই করে দেখব, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।