বাচ্চাদের মাঝে তুলনা বন্ধ করে ওদেরকে স্বাভাবিকভাবে বড়ো হতে দিন ।
![]() |
---|
আমার এক কাজিনের ছেলে আছে যে ছোট থেকেই অতিরিক্ত দুষ্ট প্রকৃতির।বলা যায় সব বাচ্চাদের থেকে অন্যরকম। সব বাচ্চাকে ছোট বেলাতে ঘুম পাড়াতে গেলে মায়েরা নিরিবিলি জায়গা খুঁজে আর ওকে ছোট বেলাতে ঘুম আনতে শব্দ করতে হতো। বিকট শব্দ না'হলে ঘুমাতো না ও।
পড়াশোনাতেও একই অবস্থা ছিল ছোট থেকেই যদিও এখন অনেকটাই চেঞ্জ এসেছে ওর মাঝে। কিন্তু দুষ্টমি রয়ে গেছে আগের মতোই। পাশাপাশিই ওর বড়ো ভাই শান্ত ,ভালো ছাত্র। এককথায়, বাবা মা যেমন সন্তান চায় ঠিক তেমনটাই। কিন্তু সমস্যাটা হয়েছে এখানেই।
ওর বাবা মা ওকেও ওর বড়ো ভাইয়ের মতোই দেখতে চায় সব জায়গাতেই। যেটা ওর পক্ষে হওয়া সম্ভব না।এমনিতে ওকে যথেষ্ট আদর করে কিন্তু ছোট থেকেই তুলনা করতো বড়ো ছেলের সাথে কথায় কথায়। ওর রেজাল্ট কত ভালো ,ওর নামে কখনো স্কুল থেকে কোনো কমপ্লেইন আসে নাই ,তোমার নামে কেন এতো আসে ব্লা ,ব্লা ,ব্লা,।
যার কারণে ছোট থেকেই ওর ধারণাই হয়ে গেছে যে ওর চেয়ে ওর বাবা- মা ওর বড়ো ভাইকে বেশি ভালোবাসে।
![]() |
---|
ও সব সময়ই বলে ' বড়ো ছেলেতোএই জন্য '। আর এটার প্রভাব যে শুধু ওর উপর পড়েছে এমনটা নয় ,এই জিনিসটা সে ইদানিং দেখতেছি আমার ছোট ছেলের মাথাতেও অনেকটাই ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।ওকেও মাঝে মাঝে একই কথা বলতে শুনতেছি যা ও কখনোই আগে বলতো না।
আমরা বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন পাশাপাশি এই এলাকাতে বাস করি। যার কারণে সব বাচ্চারা একসাথেই বড়ো হয়েছে। ওদের খেলাধুলা ,ঘুরাঘুরি সব একসাথেই ,যার কারণে ওদের চিন্তাভাবনাও অনেকটা একই রকম আর একজনের প্রভাব আরেকজনের উপর খুব দ্রুতই পরে।
এই সমস্যা যে যে শুধু ওর বাবা-মায়ের মাঝে এমনটা কিন্তু না। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায় যে হারহামেশাই আমাদের চারপাশে বাবা -মায়েরা তুলনা করে থাকেন আর এটা যে শুধু বড়ো ভাইবোনের মাঝে এমনটা না। কাজিন কিংবা পাশের বাড়ির ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে স্কুলের বাকি বাচ্চাদর সাথেও।
এমনকি রাস্তাঘাটে চলার পথে কোনো নিজেদের পছন্দমতো ছেলেমেয়ে দেখতে পেলেই শুরু হয়ে যায় ,দেখো কি সুন্দর করে খাচ্ছে কিন্তু তুমি খাও না ,ও ক্লাসে ফার্স্ট হয় আর তুমি দেখো কি করছো ,ও কত ভালো ছবি একে অথচ তুমি ছবি আঁকা শেখার পরও পারো না ,কিংবা গান পারো না এমন হাজারো কমপ্লেইন।
![]() |
---|
এগুলো শুনে ও কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু সেটা আপনাকে বুঝতে দিতেছে না। বাচ্চাদের আমরা যত বোকা ভাবি ওরা তত বোকা না।
সব বাচ্চা সব কিছু পারবে না,এটাই স্বাভাবিক। সবাই ফার্স্ট বয় হবে না ,আর এটা সম্ভবও না। আমি নিজে কেজি টু -থ্রি তে পড়া অনেক বাচ্চাদের মাকে রেজাল্ট বের হবার দিন এতো বেশি সিরিয়াস হতে দেখেছি যে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম।
সবার পক্ষে সব কিছু করা সম্ভব না।
আমার বড়ো ছেলে চমৎকার ছবি আঁকে ,গিটার বাজায় কিন্তু আমার ছোট ছেলে ছবি নামে মাত্র আঁকতে পারলেও গিটার বাজাতে পারে না আর ওর মাঝে শেখার কোনো ইচ্ছেও নাই।। আবার ছোট ছেলের রান্নার দিকে ঝোঁক ছোট বেলা থেকেই , যা ওর ভাইয়ের মাঝে নেই।
এখন আমি যতই প্রেশার দেইনা কেন ও ছবি আঁকতে পারবে না কারণ আমি দুইজনকেই একই টিচারের কাছে ছবি আঁকা শিখিয়েছি। একজন শিখেছে আরেকজন শিখে নাই,আর এটাই স্বাভাবিক। আর এই জিনিসটা আমরা যত দ্রুত মেনে নিতে পারবো ততই মঙ্গল।
![]() |
---|
না'হলে ওদের কচি মনে ধীরে ধীরে জেলাসী নামক বিষ বাড়তেই থাকবে। ওদের মনকে বিষিয়ে না তুলে ওদেরকে ওদের মতো করে বড়ো হতে দিন। কিছু বুঝাতে হলে সময় নিয়ে ধৈয ধরে বার বার বোঝান । কোন না কোনো একসময় সে বুঝবেই।
একেক জন মানুষ একেক রকম হয় আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা প্রযোজ্য। আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি যে দুষ্টু বাচ্চারা সাধারণত বেশি মেধাবী হয়। বাচ্চাদের মধ্যে কখনোই তুলনা করাটা উচিত নয়। এতে অদের মনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে।
আমিও আপনার সাথে একমত।আমি ছোটবেলায় খুব মেধাবী কয়েকজনকে বড় হয়ে অনেকটা ঝড়ে যেতেই দেখেছি। আবার অনেক মাঝারি মানের ছেলেমেয়েদের অনেক ভালোও করতে দেখেছি।
আবার দুই-একজন একদমই পিছনে থাকা ছেলেমেয়েকে অনেক ভালো করতে দেখেছি আর এই এটা আমার নিজের পরিবারের ভেতরই দেখেছি। তাই তুলনা না করে ওদেরকে ভালো ভাবে বোঝাতে পারলেই অনেক কাজে দিবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময়।
আমরা সকলেই জানি যে ,সবার মেধা একরকম হয় না। কিন্তু আমরা জেনেশুনেও এই কথাটা বিশ্বাস করতে চাই না ।
এটা শুধু আপনার বাচ্চাকে শুনতে হয় না এটা আমাদের বাচ্চাকে শুনতে হয় । আমরা বাবা-মা যখন অন্য কোন বাচ্চার ভালো গুন দেখি প্রথম সেটা নিয়ে আমাদের বাচ্চার উপরে প্রেসার দিয়ে থাকি। ও এত ভালো করেছে, ও এত নাম্বার পেয়েছে তুমি কেন পেলে না, তোমাকে কিন্তু কম সুযোগ দেওয়া না, চিটার দেওয়া হচ্ছে, এরকম নানা কথা ।
এই কথাগুলো শোনার মাঝে বাচ্চার উপর একটা মানসিক চাপ পড়ে যায় যা তার ভালো হবার থেকে খারাপের দিকে নিয়ে যায় বেশি। আত্মীয় স্বজন, মা-বাবা সবাই এটা বুঝেও না বোঝার ভান করি ।
কিন্তু এই বাচ্চাটির যে একটি ভালো গুণ আছে সেটিকে যদি আমরা তুলে ধরি তবে সে আরো অনুপ্রাণিত হবে এবং আরো ভালো কাজ করার চেষ্টা করবে ।
সুন্দর একটি সচেতনমূলক পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন সেজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে আমরা মানুষ আলাদা আমরা একেকজন একেকরকম হব এটাই স্বাভাবিক। তবে আপনি আজকে যে দুইটা ছেলের কথা আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন। এই ধরনের হাজারো ছেলে রয়েছে বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশের প্রত্যেকটা পরিবারে। আমরা যদি সবার সাথে তাদের তুলনা করতে যাই, তাহলে আমরা নিজেরাই একপ্রকার বোকা বলা যায়।
কারণ একজন মানুষের মতো আরেকজন মানুষ কখনোই হতে পারে না। তার মধ্যে সামান্য পরিমাণে পরিবর্তন হলেও অবশ্যই পাওয়া যায়। তাই আপনার কাজিন এর ছেলেকে নিয়ে এভাবে কথা বলাটা আমার মনে হয় না ঠিক। কেননা আমার ছেলেদের ক্ষেত্রে যদি বলি, আমার বড় ছেলে অতিরিক্ত দুষ্টামি করে, কিন্তু আমার ছোট ছেলে খুব কম। এখানে যদি আমি তাদের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বেড়াই বা আমি যদি বলি তারা দুইজন দুই রকম কেন? এক রকম হলো না কেন? এটা আমার বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়! অবশ্যই তাদেরকে পার্থক্য ছাড়াই তাদের মত করে বেঁচে থাকতে দিতে হবে। ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আপনার কাজিনের ছেলের পুরো গল্পটা পড়ে বেশ ভালই লাগলো।
আপনি যে দুজন ছেলের গল্প বললেন, এরকম আমাদের বাংলাদেশে হাজারো পরিবারের সন্তান রয়েছে।
কিন্তু আমাদের সবারই মনের ধারনা ভুল। কারণ সবারই মেধা একরকম হবে এটা কখনোই নয়।
বর্তমান সময়ের অভিভাবকরা অন্য অভিভাবকের ছেলেমেয়েদের সাথে নিজের সন্তানদের তুলনা করে পড়াশোনায় অনেক চাপ দেয়। শুধু পড়াশুনায় নয় সবকিছুতেই দেখা যায় অনেকেই চাপ দেয় ।
কিন্তু এরকমটা আসলে সন্তানদের সাথে করা ঠিক না।
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঠিকই বলেছেন বাচচাদের সাথে তুলনা করে ওদেরকে এক ধরনের মানসিক চাপের মুখে ফেলা হয়, যা একদমই অনুচিত।
এটা বেশিরভাগ বাবা- মা'ই বুঝেন কিন্তু তারপরও এটা সবচেয়ে বেশি করে যখন রেজাল্ট খারাপ হয়।
জিপিএ ফাইভ পায় নাই বলে সুইসাইড করেছে বাবা-মায়ের কথা সহ্য করতে না পেরে এমন ঘটনাও বিভিন্ন নিউজে চোখে পরেছে।
যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সবাইকেই এই কালচার থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইল আপনার জন্য।