অর্ধেক ডিম @hasnahena
pixabay
ডিমের সাথে আমাদের প্রতিদিন দেখা হয় সকালেই ।একই ঘরে কেউ পোচ, কেউ অমলেট, আর কেউ আধা সেদ্ধ ডিম খায় ।সামর্থ্যবানের জন্য এটি কোন ব্যাপার নয়। তবে যাদের আয় কম বা অধিক সদস্যের পরিবার তাদের জন্য সকালের নাস্তার পদে একটি ডিম দেওয়া অনেক কঠিন। বুদ্ধিমতী গৃহকত্রী তখন একসাথে কয়েকটি ডিম ভেঙে বেশি করে পেঁয়াজ-কাঁচামরিচ দিয়ে যতজন সদস্য ততগুলো ডিম ছোট-বড় করে ভেজে দেন।বাংলার ঘরে ঘরে এটি খুবই সাধারণ ব্যাপার। কিন্তু এই দিন ভেঙ্গে বা অর্ধেক করে খাওয়ার মত সাধারণ ব্যাপারটিতে যে কত অদ্ভুত ঘটনার জন্ম দিতে পারে তা আজ দেখবো।
pixabay
গল্পটি আমার আব্বার কাছ থেকে শোনা।আমাদের গ্রামের বাড়িতে ধান তোলার সময় বদলা বা বদিল্লা (যারা ধানের কাজ করে) দের দুপুরে খাওয়াতে হতো এবং একটু ভালো খাবারই দিতে হতো। নতুবা এলাকায় বদনাম হয়ে যায়। এলাকার আবুল কাশেম নামের এক গৃহস্থ একদিন খুব পেরেশান ছিলেন। ঘরে জবাই করার মত মুরগি নেই আর পুকুর থেকে মাছ ও তোলা হয়নি।তখনকার দিনে ব্রয়লারের জামানা ছিল না। ঘরে পালা হাঁস-মুরগি ,মাছ আর ডিমের উপরে গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল ছিল। ঘরে ছিল সেদিন ই পআড়আ হাঁসের সাতটি ডিম। অনেক ভাবনা চিন্তার পর তিনি সাতটি ডিম সেদ্ধ করে, অর্ধেক করে ডিমের ঝোল রান্না করতে বললেন তার স্ত্রীকে। এতে তার ১৩ জন বদলার দুপুরের খাবার হয়ে যাবে। স্ত্রী ও সেভাবেই করলেন। কিছুটা লজ্জিত থাকার কারণে খাবার পাঠালেন ছেলে আবুল ফজলকে দিয়ে।খাবার খেতে গিয়ে বদলারা অসন্তুষ্ট হলেন। কোন এক রসিক বদলা ছড়া কাটলেন -
অর্থ: ডিম কাটা সাত ভাগ তার নাম ফজলের বাপ।
pixabay
মানুষের মুখে মুখে লাইনগুলো ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না।যেখানেই যেতেন তাকে দেখলেই ছোট ছোট বাচ্চারা ছড়া কাটতো। বড়রা ও লুকিয়ে হাসতো। পুরো এলাকায় নাম হয়ে গিয়েছিল "আন্ডা কাডা"। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ তাকে এই নামেই চিনতো এবং এখনো চেনে। আপাত দৃষ্টিতে গল্পটি মজার হলেও আসলে এটি গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থার চরম দৈনতার রূপ।আবুল কাশেমের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা কি ছিল তা আমরা সহজেই ভাবতে পারি না। উনি জীবনে আর ডিম খেয়েছিলেন কিনা তাতেও আমার সন্দেহ আছে।
আরেকটা গল্প বলি। ঘটনাটি টি অনেক আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম।ময়মনসিংহের কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামের গরীব পিতা তার মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে দেড়শ মানুষের আয়োজন করেন। পোলাও- রোস্টের ব্যবস্থা করতে পারলেও টাকা ফুরিয়ে যাওয়ায় দেড়শ ডিমের ব্যবস্থা করতে পারেননি। ফলে ওই একই ঘটনা।অর্ধেক করে বরযাত্রীকে ডিম দেওয়া হলো।বরযাত্রী প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয় তাতে। নতুন বউকে ঘরে উঠিয়ে পিতার কাজের শাস্তি স্বরূপ কন্যার (নতুন বউ)মাথায় দেড়শ ডিম ভাঙ্গা হয় ।ভেবে দেখুন তো কি ভয়াবহ ঘটনা!
pixabay
ঘটনাগুলো অনেক আগের কিন্তু এ ঘটনা যদি বর্তমানে ঘটতো তাতে কি তার ফলাফল খুব বেশি আলাদা হতো? না!কেউ কিছু বলতো না, প্রতিবাদও করত না।ঘটনাগুলো সবাই রসিয়ে রসিয়ে এর-ওর কাছে বলতো আর মজা নিত । এ ধরনের মানুষগুলো তো আমাদের চারপাশেই ঘুরছে। আসলে আমাদের অন্তর মরে গেছে। আর মরা গাছে কি কখনো ফুল ধরে!?
আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। প্রতিবেশীর হক আদায় করি না। আমার পাশের মানুষটা কি সুখে কি দুঃখে আছে তাও জানতে চাই না। আমরা যেন শুধু নিজের প্রতি দায়বদ্ধ ।অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ছেড়ে দিয়েছি তো বহু আগেই। প্রতিবাদের ভাষা শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ।নেতা শ্রেণীর গ্রামের যে পুরুষ আগে লুঙ্গির কোনা উঠিয়ে হাঁটতো, তার সে হাত ব্যস্ত এখন মোবাইল ধরায়। চোখ এখন সামনে নয় নিচের দিকে থাকে। সমাজ পরিবর্তনের যে গুরু দায়িত্ব তারা নিয়েছিল তারা এখন গর্ব ভরে ভাবে আমি তো শুধু পুরুষ না মহাপুরুষ।
আসলে আপনি আমাদের সাথে যে গল্পগুলো শেয়ার করেছেন! গল্পগুলো সত্যিই অসম্ভব সুন্দর! অনেক আগের যখন মানুষ বসে বসে গল্প করত! আর সেই গল্পের মধ্যেই,,, খুঁজে বেড়াতো নতুন নতুন সব মজার জিনিস।
পরিশেষে আপনি সমাজের বাস্তবতাটা তুলে ধরেছেন সত্যিই বলেছেন! যে মানুষগুলো বসে গল্প করত,, আড্ডা দিত! আজকে সেই মানুষগুলো মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত! লোকটা সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটার সময় নেই! চোখটা এখন নিচের দিকে,,,, মোবাইলে কি চলছে তা দেখা নিয়ে ব্যস্ত।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা টপিক আমাদের সাথে আলোচনা করার জন্য! আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল! ভালো থাকবেন।
আপনার জন্য ও অনেক শুভকামনা রইল।
This is a manual curation from the @tipu Curation Project.
Also your post was promoted on Twitter by the account josluds
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 5/7) Get profit votes with @tipU :)