অপ্রিয় সত্য
ধরুন এই মাঝরাতে আমি স্ট্রোক করেছি, তাহলে সর্বপ্রথম আমার পরিবারের লোকজন কি করবে, দেখে শুনে ঐ সরকারি হসপিটালেই নিয়ে যাবে, কারণ তাদের যাওয়ার সামর্থ্য অতটুকুই। আচ্ছা আরও একটু পরিষ্কার করে বলি।
আমি যে জায়গাটাতে থাকি, এটা মোটামুটি মফস্বল একটা শহর। খুব যে উন্নত তেমনটা না, তবে এখানকার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা আরকি অনেকটাই আমাকে ব্যথিত করেছে।
১০০ শয্যার একটা সরকারি হসপিটাল আছে এখানে , তবে তার আশেপাশে অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। এককথায় মানুষের জীবন নিয়ে খুব সুন্দর বাণিজ্য। দেখার কেউ নেই বা বলার কেউ নেই। তবে মনেহয় যারা দেখা বা বলার জন্য আছে, তারা হয়তো এসব বিষয়ে খুব একটা কর্ণপাত করে না।
আচ্ছা ধরুন, আমি এই মাঝরাতে স্ট্রোক করেই ফেললাম, তাহলে সর্বপ্রথম আমার পরিবারের লোকজন কোনরকমে সরকারি হসপিটালের জরুরি বিভাগে আমাকে নিয়ে গেল। তখন সেখানে গিয়ে কি হবে, ডাক্তার প্রথমে আমার শারীরিক অবস্থার লক্ষণ দেখে ইসিজি বা সিটি স্ক্যান করতে বলবে। ইসিজি বা সিটি স্ক্যান কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস, তবে দুঃখের বিষয় এগুলোর কিছুই জরুরী বিভাগে নেই। যদি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেটাও তাৎক্ষণিক পাওয়া যাবে কিনা, সেটা নিয়েও বেশ সন্দেহ আছে।
এক্ষেত্রে আমি কর্তব্যরত ডাক্তারের কোন দোষ দেবো না। আসলে সবকিছু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে। আর ডাক্তার, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট, নার্স বা টেকনোলজিস্ট সব এখানে হুকুমের গোলাম। তাদের আসলে যা আছে ততটুকু দিয়েই চেষ্টা করবে। দেখা গেল এই মাঝরাতে টেকনোলজিস্ট নেই। তারপরেও ডাক্তার আমার শারীরিক অবস্থার কথা চিন্তা করে, দ্রুত সিটি স্ক্যান বা ইসিজি করতে বলল। বাধ্য হয়ে আশেপাশের ডায়াগনস্টিক বা ক্লিনিক থেকে, কোনরকমে তা করে নিয়ে আসলাম।
এরপর রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলল, আপনার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন । আপনাকে এখানে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার মত অবস্থা নেই, আপনি দ্রুত মেডিকেল কলেজে যাওয়ার চেষ্টা করুন। অন্যথায় যেকোনো সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। তবে যাওয়ার আগে ইকোস্প্রিন জাতীয় ট্যাবলেট মুখের ভিতরে জিব্বার নিচে দিয়ে দেবে নতুবা শ্বাসকষ্ট হলে বলবে, অ্যাম্বুলেন্স উঠে অক্সিজেনের মাত্রাটা একটু বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।
এই মফস্বল এলাকার সরকারি হসপিটালে, এর থেকে বেশি আর কিছুই পাওয়া যাবে না। ঐ যে রাত্রিবেলা মনে করেন, হসপিটাল থেকে বের হয়ে মেডিকেল কলেজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করবেন, তখন সর্বদা সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না বললেই চলে। অনেকটা বাড়তি পয়সা খরচ করে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হবে।
এই যে বাসা থেকে সরকারি হসপিটালে এসে এমনিতেই এতগুলো সময় নষ্ট হয়ে গিয়েছে তারপরে আবার কোন সঠিক চিকিৎসাই পাওয়া যায়নি, এখন যখন ধরুন এই মাঝরাতে মেডিকেল কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি, তখন মেডিকেল কলেজে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আমি বাঁচতেও পারি বা আমার জীবনটা যাত্রাপথেই ফুরুত করে নাই হয়ে যেতে পারে। যদি বেঁচে যাই তাহলে ভালো, আর না হলে তো কিছুই করার নেই।
যদি সময় মত, মোটামুটি মেডিকেল কলেজে পৌঁছেও যাই, তাও ওখানে বেশ ভালই ধকল সামলাতে হবে। কারণ ওখানে আরও বেশি সিন্ডিকেট বিরাজমান। এমন ঘটনা নতুন না, প্রতিনিয়তই ঘটছে। কেউ বেঁচে যাচ্ছে, আবার কারো জীবন ফুরুত হয়ে যাচ্ছে।
তবে এই দায়ভার গুলো কে নেবে, এখানে অবশ্যই চেষ্টা করার সুযোগ ছিল, সেটা মফস্বলের সরকারি হসপিটালেই। তবে সেই ব্যবস্থা এখানে নেই বললেই চলে। লোকজনের সামনে এক প্রকার মুলো ঝুলিয়ে রেখে দিয়েছে সিন্ডিকেট। তাতে বলিদান হচ্ছে আমার আপনার মত সাধারন মানুষ। তাহলে কি দরকার এত কোটি কোটি টাকা খরচা করে, এই মফস্বলে এত বড় সরকারি হসপিটাল বানানোর। যদি তা জরুরী মুহূর্তে কাজেই না আসে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
হাসপাতালগুলো কতটা কসাইবৃত্তি চলছ সেটা আমি আমার স্বচক্ষে দেখেছি এবং রীতিমত ভুক্তভোগী ছিলাম। এরা চাইলে জীবন্ত মানুষকে মেরে ফেলতে পারে শুধুমাত্র টাকার জন্য। যাইহোক আপনি যেখানে রয়েছেন সেখানকার অবস্থা শুনে সত্যিই খারাপ লাগলো। যাইহোক উপর ওয়ালা বাঁচিয়ে রাখলে কারো সাধ্য নেই বিপদে ফেলার। আপনার ঐ ধরনের কোন দূর্ঘটনা না ঘটুক এই কামনা করছি।
এমন ঘটনা আসলে কারো সঙ্গেই না ঘটুক, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এখন ভাইয়া অলিতে গলিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেবা আসলেই বাণিজ্য হয়ে গেছে এখন মানুষের কাছে।আমিও খেয়াল করে দেখছি আমি আমার আম্মুকে নিয়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলাম। আম্মুর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। একটা মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত তাকে বলা হচ্ছে তাকে এক্সরে করতে হবে কিন্তু এক্সরে মেশিন নাই। বাইরে যয়ে করে আসতে হবে। লোকটি আমার কাছে কান্না করছিলো।লোকটির ছেলে-মেয়ে সবই আছে। আজ দেখার কেউ নাই। সরকারি হসপিটালে তাহলে মানুষ কি সেবা নেবে। তারা তো দরিদ্র বলে এখানে আসে। এই দিকটা আমার দেখে খুবই খারাপ লাগলো মানুষ। প্রতিটা জায়গায় সরকারি হসপিটাল এ কোন চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারাও যাচ্ছে অনেক জায়গায় দেখছি। খুবই খারাপ লাগলো ভাইয়া। আপনি বাস্তবতা তুলে ধরেছেন
আপনার ব্যাপারটা জেনেও বেশ ব্যথিত হলাম।
সত্যি এই বিষয়গুলো বেশ দুঃখজনক। আসলেই এত টাকা খরচ করে হসপিটালের বিল্ডিং করে লাভ কি যদি সেখানে ইমারজেন্সি চিকিৎসা না পাওয়া যায়। জানিনা এগুলো কখনো ঠিক হবে কিনা। তবে যেহেতু কিছু করার নেই তাই আমাদের এভাবেই চলতে হবে।
সিন্ডিকেট সবকিছুকে ধ্বংস করে ফেলেছে ভাই।
আপনার লেখার শেষের লাইনগুলো অনেকেরই প্রশ্ন ভাইয়া। তবে উত্তর দেয়ার দ্বায় কারোর নেই। আপনার-আমার ট্যাক্সের টাকা দিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নামমাত্র সরকারি হাসপাতাল তুলে রেখেছে।" সেবা " পাওয়ার যায়গায় হতাশা নিয়েই ফিরতে হয় বেশির ভাগ মানুষের।
বেশ হতাশা নিয়েই, লিখে ছিলাম লেখাটা। পারিপার্শ্বিক অবস্থা দিন দিন বড্ড জটিল হয়ে যাচ্ছে।
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1713466212116836503?t=hg2wrr2iug-c5cuxpl8rcQ&s=19
বর্তমানে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসা চলছে। তাইতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার এতো পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারি হাসপাতালের অবস্থা সত্যিই করুণ। ফর্মালিটি পূরণ করতে করতে রোগী মারা যাওয়ার উপক্রম হয়ে যায়। ভাবতেই অবাক লাগে আমরা কেমন দেশে বসবাস করি। প্রতিটি সেক্টরে শুধু দুর্নীতি আর দুর্নীতি। আর সেজন্য জনসাধারণের দুর্ভোগের কোনো শেষ নেই। যাইহোক আমাদের সবাইকে যতটা সম্ভব সতর্কতার সাথে চলতে হবে। পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
সচেতন থাকুন, সতর্ক থাকুন এবং নিজ অবস্থানে ভালো থাকার চেষ্টা করুন, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
ভাইয়া,আমিও সরকারি হাসপাতালে গিয়ে সেবা না পাওয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। আমার তো মনে হয় শুধু আমি আপনি কিংবা আমরা নই, বরং প্রতিটি মানুষ যারা যারা সরকারি হাসপাতালে গিয়ে সেবা পাওয়ার আশা করেছে, তারা সকলেই সেবা তো নয় বরং সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হেনস্থার শিকার হয়েছে। আমাদের এখানেও কোটি কোটি টাকা খরচ করে ৮ তলা সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এখানে চিকিৎসার নামে যা হয় তা আসলে ভাষায় বলে প্রকাশ করার মতো নয়। আসলে যাদের দায়িত্ব এসব কিছু দেখার তাদের তো চোখ নেই, তাদের কানও নেই, তাই তারা কিছু দেখেও না শুনেও না, যার কারণে প্রতিটি মানুষ সরকারি হাসপাতালে গিয়ে ভুক্তভোগী হয়ে ফিরে আসে। যাইহোক ভাইয়া,এমন করুন অবস্থার অবসান ঘটুক শুধু এই কামনায় করি।
এখানে শুধু আপনি নিজেকে উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছেন ভাই। কিন্তু এমন টা প্রায়ই হয়। আমাদের দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষেরা এই চিকিৎসা নিয়ে বেশ ঝামেলা ভোগ করে। আমাদের শহরের হাসপাতালে যদি জ্বর ছাড়া অন্য কোন অসুখ নিয়ে যাওয়া হয় তারা বলে জেলা সদর হাসপাতালে যেতে এইতো অবস্থা। সবমিলিয়ে এক এলোপাথাড়ি পরিবেশ ভাই।।
গ্রামগুলোতে এই একটাই সমস্যা! উন্নত চিকিৎসা করার সরঞ্জামাদির অভাব! ডাক্তারা শুধু তাদের কর্তব্য পালন করে কিন্তু সিন্ডিকেটের কারণে কাজের কাজ হয় না। আমি দুদিন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নান্দাইল হসপিটালে থেকে যা বুঝলাম, একটা রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে সেখানে একদল কিছু টাকা পায়। আবার হসপিটালে যে তিনবেলা খাবার দেয়া হয় সেখানে প্রতিনিয়ত চলছে সিন্ডিকেট! রোগীদের জীবন নিয়ে তো আছেই। এর দ্বায়ভার আসলে কাকে দিবেন ভাইয়! মাঝে মাঝে খারাপ লাগে যে এমন একটি দেশে জন্মেছি!