প্রসূতি মায়ের মৃত্যু
কিছু মৃত্যু আসলেই অপ্রত্যাশিত সেটা মেনে নেওয়া খুবই কষ্টদায়ক। ঘটনাটা এখন থেকে সপ্তাহ তিনেক আগের, আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতেই অনেকটা দেরি হয়ে গেল। তারপরও মনে হল যে, ঘটনাটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত। সেই চিন্তাধারা থেকেই, আজ ঘটনাটা লেখার চেষ্টা করব।
আমাদের সরকারি হসপিটালের সামনের ২০০ গজের ভিতরে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র প্রচুর ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। যাদের কাজই হচ্ছে সরকারি হসপিটালে আগত সাধারণ রোগীগুলোকে দালালের মাধ্যমে ভাগিয়ে নিয়ে যাওয়া ঐ সকল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গুলোতে।
এককথায় মানুষের জীবন নিয়ে রমরমা ব্যবসা। দেখার কেউ নেই, বলারও কেউ নেই। কিংবা যারা বলবে, তারাও এক্ষেত্রে নীরব। আসলে পয়সা দিয়েই সবার মুখ বন্ধ রাখা হয়।
গ্রাম থেকে ২২ বছরের এক প্রসূতি মা এসেছিল সরকারি হসপিটালে ডেলিভারি সেবা নেওয়ার জন্য। ঐ দম্পতির প্রথম সন্তান এটাই। দালালের খপ্পরে পড়ে সোজা হসপিটালে ভর্তি না হয়ে, ক্লিনিকে গিয়ে তার জায়গা হল। এমনিতেই ব্যথা উঠে গিয়েছে তার, সেইক্ষেত্রেও ক্লিনিকে ডাক্তার আসতে ক্রমাগত দেরি করছিল।
মূলত এই ডাক্তার গুলো অনেকটা ভ্রাম্যমান, যেখানেই ডাক পায় সেখানেই ছুটে যায় সিজার করতে। আবার যখন অন্য ক্লিনিক থেকে ডাক আসে, তখন তাদের বলে রুগী আটকিয়ে রাখুন, আমরা খুব দ্রুত চলে আসছি। মানে তারা রোগী কে ছাড়বেও না, আবার দেরি করে আসলেও দ্রুত কাজ সারিয়ে ফেলবে।
ধরুন আমাদের এলাকায় কমবেশি ৩০ টার উপরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার কিংবা ক্লিনিক আছে, সেই তুলনায় সার্জনের সংখ্যা খুবই কম, তার থেকেও বেশি কম অজ্ঞানের ডাক্তার। শুনেছিলাম এদের নাকি সরকারি চাকরি হয়েছিল, তবে সেই বেতনে তাদের চলছিল না, বিধায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে এই মফস্বলে এসে, ক্রমাগত নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলেছে, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের সার্জারির কাজে।
পূর্বের সার্জারি করে এসেই, দ্রুত নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সার্জারি করার জন্য তারা প্রস্তুত। এক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক যে অবস্থা গুলো কথা জানার দরকার ছিল, সেগুলোর দিকে তারা ভুলেও কর্ণপাত করেননি। এসেই অপারেশন রুমে ঢুকে অ্যানাস্থেসিয়া দিয়ে, তারপরে তারা সার্জারির কাজ শুরু করে দিয়েছিল।
মানলাম আপনি একজন ভালো সার্জন, আপনার কাজের হাত খুবই ভালো। খুবই দ্রুত প্রত্যেকটা সার্জারি করেন। এটা ভীষণ প্রশংসনীয়, তবে আপনার তো ভাই,মানুষ মেরে ফেলে দেওয়ার অধিকার নেই। প্রসূতি মায়ের ডেলিভারি ঠিকই হল, তার বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হলো এই পৃথিবীতে। তবে ২২ বছরের প্রসূতি মায়ের অপারেশন থিয়েটারে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মৃত্যু হয়ে গেল। যেটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এখানে অবশ্যই কোন ত্রুটি ছিল। যদি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে সেই ব্যাপারগুলো আগে থেকেই নোটিশ করা উচিত ছিল এবং উচিত ছিল রোগীর লোক কে, রক্ত সংগ্রহ করে রাখতে বলা। এসবের কোন কিছুই আপনারা করেননি। এই দায় কিন্তু আপনাদের। কোনভাবেই তা এড়িয়ে যেতে পারেন না।
আপনাদের প্রতিনিয়ত দৌড়াদৌড়ির কারণে এভাবে অনেক প্রাণ অসময়েই শেষ হয়ে যায়। যাইহোক ঘটনাটা এরকমই ছিল, তবে যখন সম্পূর্ণভাবে ভিতর থেকে জানার চেষ্টা করেছিলাম, আমাকেও থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বলেছিল, রোগীর লোকজনের সঙ্গে আমাদের মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। মানে দেড় লাখ টাকায় বিষয়টা মীমাংসা। একটা জীবনের দাম মাত্র দেড় লাখ টাকা, ভাবা যায় বিষয়টা।
তারপরেও এসব যত্রতত্র গড়ে ওঠা ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের কখনো ব্যবসা বন্ধ হবে না, মানুষকে এরা ভুলিয়ে ভালিয়ে ব্যবসা করেই যাবে, আর আমরা সচেতন মহল যদি কথা বলতে যাই, তাহলে বলবে ব্যাপারটা মীমাংসা হয়ে গিয়েছে। এই হচ্ছে মূলত অবস্থা। তারপরেও আপনাদের ভিতরে সচেতনতা ছড়িয়ে যাক, এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
এমন ডাক্তারের অবহেলার কারণে রুগির মৃত্যু এমন ঘটনা অহরহই খবরে জানতে পারি আমরা।আসলে ডাক্তারকে কষাই উপাধি দিয়েছে এজন্যই। রুগীদের কে তারা রুগিমনে করেন না। ঠিক বলেছেন ভাইয়া চিকিৎসার নামে ক্লিনিক গুলো রমরমা ব্যাবসা খুলে বসে থাকে ওতপেতে। খুব মর্মান্তিক ঘটনা প্রসূতি মায়ের মৃত্যু। ধন্যবাদ ভাইয়া বর্তমান ক্লিনিক গুলোর বর্তমান চিত্র তুলে ধরার জন্য।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
প্রতিনিয়ত আপনার লেখা গুলি পড়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। আজকেও আপনি আমাদের মাঝে কিছু কথা নিয়ে এসেছেন। আমি তো হসপিটালে গিয়েছিলাম আমার আম্মুকে নিয়ে সেখানে এতটাই দালাল। বলে বোঝাবার নয়।ডাক্তারদের থেকে মনে হয় তাদের ইনকাম ই বেশি। ওখানে আমি একটা জিনিস বুঝি না সরকারি হাসপাতাল কি জন্য তৈরি করেছে? সাধারণ মানুষের সেবার জন্য তাহলে কেন বাইরে কেন এত ক্লিনিকে ঘোরাঘুরি করতে হয়?সরকার কিন্তু ঠিকই অনেক টাকা পয়সা দিচ্ছে কিন্তু মানুষ এটার অপব্যবহার করতেছে।ঠিক কথা বলেছেন মানুষ এখন সেবা না। এটা ব্যবসার কারখানা বানিয়ে ফেলেছে। এটা খুব খারাপ লাগে এখন বেশির ভাগ ডাক্তারি মানুষের সেবা না। নিজের ব্যবসা দিকে নজর দেয়। সে যদি না পারে তাহলে তাকে কেন ধরে রাখবে। একটা জীবনের দাম সে ডাক্তার কি দিতে পারবে?কখনোই না। তাদের কাছে টাকাটাই মুখ্য। আমাদের এখানেও অনেক দেখেছি যারা সরকারি চাকরি ছেড়ে এরকম ক্লিনিক চালাচ্ছে। কারণ সরকারি চাকরি থেকে এখানে ব্যবসা করাটা একটু বেশিই যাবে মানুষের জীবন নিয়ে।কিছু একটা হলেই রিপোর্ট করতে একটা মানুষের ১২০০/১৩০০ টাকা চলে যায়। আরো বাকি সবকিছু তো বাদই দিলাম। জি ভাই মানুষ মেরে ফেলার অধিকার তার নাই। আপনার যদি সময় না থাকে তাহলে আপনি তাকে ছেড়ে দিন। আমাদের আশপাশে এরকম অনেক মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। খুবই খারাপ লাগতেছে যে একটা জীবনের দাম ১.৫ লাখ টাকা। হায়রে মানুষ। দুনিয়াটা কেমন হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। এমন অনেক ক্লিনিক আছে কোন ভালো ডাক্তারি নাই কিন্তু ব্যবসা করার জন্য সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করতেছে তারা। তাদের কোন অভিজ্ঞতাই নাই। আমরাও চাই এরকম গড়ে ওঠা ক্লিনিক গুলো বন্ধ করা হোক। মানুষ যেন সঠিকভাবে সেবা পায় এই কামনাই আমাদের। খুব খারাপ লাগলো বিষয়টি পড়ে ভাইয়া।
বেশ দারুন সময় উপযোগী একটি বিষয় আজ শেয়ার করলেন ভাইয়া। আমার আসলে এই বিষয়গুলোকে ঘেন্না লাগে। কিন্তু কিছুই করতে পারি না। এইতো চোখের সামনে গত দুদিন আগে আমার এক পরিচিত লোকও দালালের খপ্পরে। পড়েছে। এগুলো দেখার মত কেউ নেই। সবাই আছে টাকা কামানোর ধান্দায়। তবে আমার মনে হয় আমাদেরও একটুও সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত। জেনেশুনে তারপর প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া উচিত। বেশ ভালো লাগলো আজকের পোস্টটি।
সব তো অন্ধকারের চাদরে ঢেকে গিয়েছে, কে কাকে সচেতন করবে বলুন। ব্যাপারটা বেশ জটিলতা সম্পন্ন।
সত্যি এখন দেশে ক্লিনিক এর অভাব নেই। আরে ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য দালালের অভাব নেই। আমিও একবার এই দালালের কবলে পড়েছিলাম। যদি বা পরে আমি আমার টেস্টটা সরকারি হসপিটাল থেকেই করিয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমে যখন আমাদেরকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তখন মনে হলো যে এটা তো আমাদের চেনা পরিচিত একজন বড় ভাই । যাই হোক আপনার শেয়ার করা ঘটনাটা পড়ে বেশ খারাপ লাগলো। সত্যিই রোগীর কন্ডিশন না জেনে রক্ত ম্যানেজ না করে তাড়াহুড়া করে সার্জারি করা কখনই উচিত নয়। তবে শেষে একটা জিনিস বেশি খারাপ লাগলো যে টাকার মাধ্যমে এই সমস্ত বিষয় গুলো মিটমাট করে নিয়েছে। জানিনা এই ধরনের রোগীর জীবন নিয়ে ব্যবসা গুলো কবে শেষ হবে। আর আমাদেরও এসব বিষয় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাই হোক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এই ঘটনাটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জেনো আমরাও সতর্ক হতে পারি।
এখানে সবকিছু টাকার মাধ্যমেই মিটমাট হয়, এই ব্যাপার গুলো খুবই স্বাভাবিক এখন।
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1728326125959684119?t=lg36wZVNNBc4ztOvNQMQkg&s=19
সত্যি ভাইয়া বর্তমান ডাক্তারা আর ডাক্তার নেই হয়েছে কসাই। আসলে এরা সামান্য কিছু টাকার জন্য এভাবে রোগীকে মেরে ফেলল।বর্তমান সিজার করতে গিয়ে রোগী মারা যায় তেমন শুনা যায় না। আসলে ভালো ডাক্তার না হলে যা হয় আরকি।আগে থেকে রক্ত যোগাড় করলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।আসলে আমাদের সবারই উচিত এই ধরনের ক্লিনিকে না যাওয়া। ধিক্কার জানায় এসকল ডাক্তারদের।
ঘটনাটি আসলেই হৃদয়বিদারক। মানুষের জীবন নিয়ে এমন রমরমা ব্যবসা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। মানুষের জীবনের দাম মাত্র দেড় লাখ টাকা, এটা ভাবতেই অবাক লাগছে। এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এসব ঘটনা অহরহ ঘটলেও, প্রশাসনিকভাবে তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। আসলে বর্তমানে এমন ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় দেখা যাচ্ছে। ছোট ছোট ক্লিনিক গুলোতে এই ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। তাই আমাদের উচিত আরো বেশি সচেতন হওয়া। যাইহোক এমন সচেতনতামূলক একটি পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
এখানে কেউ কারো বিচার করে না, সবাই আসলে চোখ থাকতে অন্ধ আর মুখ থাকতে বোবা হয়ে গিয়েছে।
আসলেই ভাইয়া, সরকারি হসপিটালের পাশে অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। এখন চিকিৎসার নামেও ব্যবসা হচ্ছে। কতো শত প্রাণ নিয়ে খেলা করছে এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো। সঠিক চিকিৎসার অভাবে মহিলাটি মারা গেল। আমিও বলবো এ দ্বায়ভার ডাক্তারই! আগে আত্মীয়স্বজনদের বলে রাখা উচিত ছিল। তবে টাকার কাছে সব যেন পানিভাত! এক টা লাশের দাম দেড় লাখ টাকা!
সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ুক চতুর্দিকে, এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি নিজের জায়গা থেকে।
একটা মানুষের জীবনের দাম মাএ দেড়লাখ টাকা। আমার আর কিছু বলার ভাষা নেই ভাই। পুরো বাংলাদেশেই হাসপাতালের আশপাশে এমন ক্লিনিকের সংখ্যা অনেক। আর একটা বিষয় হাসপাতাল থেকেই অনেক সময় বলে একে অপারেশন করা লাগবে ঐ ক্লিনিকে চলে যান। চারিদিকে একটা রমরমা ব্যবসা চলছে ব্যবসা।
দিন যত গড়িয়ে যাচ্ছে, পারিপার্শ্বিক অবস্থা তো জটিলতা সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে ভাই।