শূন্যতা
আসসালামু আলাইকুম,
কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয়ই সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। প্রতিদিনকার মতো আজ আমি আবারও আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি। আশা করি আজকের ব্লগটি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে। আজ সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি ব্লগ আপনাদের সামনে শেয়ার করছি।
শূন্যতাও মানুষকে অনেক কিছু শেখায় সেটা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি। আমি যখন একা থাকি তখন আমার চারপাশে মানুষ আমি নিজে আমার নিজের সংসার নিয়ে চিন্তা করতে বেশি পছন্দ করি। আমি প্রতিদিনই দিনের কোন একটা সময় চেষ্টা করি নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার নিজের ভুলগুলো নিয়ে চিন্তা করার। নিজের নিজেকে কিছু নতুন কিছু শেখার আমার কাছে বলে মনে হয়। জীবনে প্রতিদিনই শিখার মত অনেক কিছু আছে সেটা হোক বা কাজের বুয়া হোক রিক্সাওয়ালা হোক বা একজন গরীব দুঃখী মানুষ হোক বা আশেপাশের কেউ। আমাদের প্রতিদিনই কেউ না কেউ নতুন কিছু শিক্ষা দিয়ে যায়।
গত সপ্তাহে আমার মেয়ে জাহিরা তার নানুর সঙ্গে নানু বাড়ি গিয়েছিল। অনেকবার নিষেধ করেছি কিন্তু সে শোনেনি তার নানুর সঙ্গে সে যাবেই। ছি এই ছোট্ট মনে কিছু একটা অভিমান জমেছে তারপরেও নানুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য সবার ইচ্ছা হয় এ জন্য গিয়েছে। কিন্তু কোথাও একটা ছোট্ট অভিমান আছে এটা মা হিসেবে আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আসলে প্রথম সন্তান হলে মায়েরা সবসময় চেষ্টা করে তার সবটুকু সময়ে তার প্রথম সন্তানকে দেওয়ার। আমিও সেটাই চেষ্টা করেছি তার সময় গুলোকে ছোট ছোট আনন্দ দেওয়ার ভালো থাকার নিজেকে আনন্দ দেওয়ার। এজন্য আমি কখনো চাকরির কথা চিন্তাও করিনি। বিয়ের আগে চাকরির অনেক চিন্তাভাবনা করতাম অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু বিয়ের পরে আমার মেয়ে হওয়ার পরে আর চাকরি করতে একদম ইচ্ছা করে না। মনে হয় আমি মা হিসেবে যদি ওদেরকে সময় না দেই তাহলে কে দেবে। আমার দ্বিতীয় সন্তান আমার ছেলে শানিত যহওয়ার পরে মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপরাধী বলে মনে হয় আমার মেয়েটাকে হয়তো আমি ঠিকঠাক সময় দিতে পারছি না। একা একা দুজনকে সামলাতে গিয়ে কোথাও না কোথাও একটু ফাক ফোকর তো থেকেই যায়। মেয়েটাকে খুব বেশি কাছে নিতে পারি না এটা আমার প্রতিদিন ই কষ্ট দেয়।
সেদিন আমার মেয়েটা চলে যাওয়ার পরে পুরো বাসাটাই যেন আমার ফাঁকা হয়ে গেছে। বাসায় সবকিছুই যেন শূন্য হয়ে গেছে।আর ওর এই শূন্যতাটা আমাকে যেন গ্রাস করে খাচ্ছিল। ছেলেকে নিয়ে ও যেন সময় কাটাচ্ছিল না।আমার মেয়েদের তো খুবই হাসিখুশি সব সময় হাসে অনেক কথা বলে দৌড়াদৌড়ি করে। ও না থাকার কারণে সব সময় ওর বাজছিল আর ভাবছিলাম আমাকে একটু পর পর এসে মা করে ডাকছে না আর একদমই ভালো লাগছে না আমার।আমার মেয়ের কিছু কিছু ব্যবহার মাঝে মাঝে আমাকে খুব অবাক করে দেয় রিক্সায় উঠতে গেলে আগে আমাকে হাত বাড়িয়ে দেয় সিঁড়িতে নামতে গেলে আমাকে হাত বাড়িয়ে দেয় যাতে আমি পড়ে না যাই। রাতে ঘুমানোর আগে পানি খেয়ে আমার জন্য পানি নিয়ে আসে। খাবার খেতে গিয়ে আমার ঝাল লাগলে ওর চকলেট এনে দেয় বলে মা খাও তোমার ঝাল কমে যাবে।এক কথায় আমার সংসার জীবনের ক্লান্তি দূর করতে মেয়ের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না।সবই বুঝি তারপরও মেয়েটার সঙ্গে মাঝে মাঝে রাগ করি হয়তো কথা শুনছে কথা শুনছে না আবার ঠিক মতো খাবার খাচ্ছে না।রাগ করি পরে আবার নিজেই কষ্ট পাই। কেন মেয়েটার সঙ্গে রাগ করি ও তো অনেক ছোট ও এখনো সবকিছু বুঝে উঠতে পারে না। এরকম হয় কোন কারণ ছাড়াই ওর সঙ্গে জোরে কথা বলে ফেলি। ওরে ছোট মনে হয় হয়তো এসব নিয়ে কোথাও একটু অভিমান জমে গেছে এজন্য আমার মার সঙ্গে যাওয়ার জন্য খুব কান্নাকাটি করছিল। যাওয়ার পরে আমার এত বেশি খারাপ লাগছিল বারবার ফোন দিয়ে আনতে বলছিলাম পরে আমি যখন বলেছি যে আমি তোমার জন্য কান্না করছি। তখন সে তাড়াতাড়ি করে আমার ছোট ভাইয়ের সঙ্গে একদিন পর চলে এসেছে।
ওকে কাছে পেয়ে কি যে ভালো লাগছিল তা বলে বোঝাতে পারবো না। এটা থেকে মনে হলো শূনয়তা ও মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দেয়া। নিজেকে বারবার ওয়ার্নিং দিয়েছি আর ওর সঙ্গে রাগ করব না। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আসলেই আপু বাচ্চারা কাছে না থাকলে এরকমটাই মনে হয় ।আমার বাচ্চা যখন নানুর বাড়িতে যায় তখন আমারও এরকম মনে হয় যেন মা মা করে ডাকছে। ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
এই শূন্যতা কোন কিছু দিয়েই মেটানো যাবে না।আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল।
মাঝে মাঝে শূন্য থাকা ভালো শূন্যতা মানুষকে অনেক কিছু শিখায়। সবসময় যে পরিপূর্ণ থাকলে তখন আসলেই ভালো মন্দ কিছু বোঝা যায় না। একদম ঠিক বলছেন আমরা ছোট বাচ্চাদের অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলি। তারা এখনো অনেক কিছু বোঝেনা। কিন্তু আমরা এমন ভাবে আচরণ করি যেন তারা বয়স্ক মানুষ। যাক অবশেষে মেয়েকে নানুর বাসা থেকে ঘুরে আসলো। বেশ ভালো হলো আপু আপনি মেয়েকে ফিরিয়ে আনলেন।
খুব কষ্টে কাটিয়েছি দুটো দিন। অনেক ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য টি করার জন্য।
শূন্যতা বড়ই কষ্টের।খুব আপন জন যদি কাছ ছাড়া হয় তখন সেই শূন্যতার অভাব কোনভাবেই পূরণ করা যায় না।জাহিরা সারাদিন হাসিখুশি কথাবার্তায় পুরো ঘরটাকে ভরিয়ে রাখে সেই সাথে আমাদের বাসাটাকেও।সত্যি কথা বলতে আপনি তো ওর মা আপনার খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক কিন্তু জাহিরা যদি না থাকে আমাদেরও খুবই খারাপ লাগে ও থাকলে মনে হয় যে না অনেক মানুষজন আছে আরো যখন গাইবান্ধায় যায় তখন আমরা অনেক শূন্যতায় ভুগি আর অপেক্ষা করতে থাকি কবে আসবে।ও সব সময় সবদিক মাতিয়ে রাখে তাই ওর অভাবটা বেশি অনুভব করা যায়।কষ্টের অনুভূতিগুলো শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ ভাবি।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ বৌদি আমার অনুভূতি বোঝার জন্য যদিও আপনি আমাকে অনেক বোঝেন এটা আলাদা করে বলার কিছু নাই। জাহিরাকে এতটা ভালোবাসেন সেটা দেখলেও খুব ভালো লাগে।অনেক ভালো থাকবেন।
জাহিরা নানু বাড়ি গিয়েছিল বলে আপনার বেশ কষ্ট হয়েছে আপু। আসলে সন্তান কাছে না থাকলে মায়ের ভেতরে কষ্টের অনুভূতি তৈরি হয়। আর অদ্ভুত এক শূন্যতা কাজ করে। আপনি আপনার সন্তানদের অনেক ভালোবাসেন এবং সন্তানদের জন্য নিজের স্বপ্নগুলো বিসর্জন দিয়েছেন। চাকরি না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি আপনার নিজের সন্তানদের সময় দিয়েছেন জেনে সত্যিই ভালো লাগলো।
আমার পোস্ট টি পড়ে এতো সুন্দর মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।