বাবার সাথে ১২৫ বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী মেলা পরিদর্শন ||

in Steem For Lifestyle4 months ago

কভার ফটো



আসসালামু আলাইকুম!!
আশা করি সকলে ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও অনেক ভালো আছি। আজকে আমি আমাদের এলাকার একটি ১২৫ বছরের পুরাতন মেলা নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আজকে আমি আমার বাবার সাথে আমাদের এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা পরিদর্শন করেছি। আমার বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মেলাটি। এই মেলাটি যে এলাকায় হয়ে থাকে সেই এলাকার নাম শালঘরিয়া এলাকা। অর্থাৎ এই এলাকাটি স্বপ্নপুরীর গেট থেকে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। এই মেলাটির নাম মন্ডমের মেলা। এই মেলাটি ১২৫ বছর ধরে পালন করে আসছে আমাদের এলাকার হিন্দু এবং আদিবাসী সম্প্রদায় ।




এখন আমি আপনাদেরকে বলব মেলাতে আমি কি কি দেখেছি। আমি গত ৫ বছর ধরে মেলাটিতে যাই কিন্তু এবার মেলাটি একটু ব্যতিক্রম ভাবে সাজানো হয়েছে। মেলাতে প্রথমেই মোটরসাইকেল রেখে প্রবেশ করেই দেখতে পাই একটি লটারির ঘর। সেখানে পুরুষ্কার হিসেবে রেখেছে দুটি মোটরসাইকেল এবং আরো অনেক পুরুষ্কার। তারপর একটু সামনে গেলেই চোখে পড়ে শুটকি মাছের দোকান। আমার বাবা অবশ্য ১২০ টাকা দিয়ে টাকি মাছের ১০০ গ্রাম শুটকি মাছ ক্রয় করেছে। তারপর একটু সামনে গেলেই দেখা যায় বিভিন্ন রকমের ভাজাপোড়া এবং মুখরোচক খাবার। এই খাবারের দোকান গুলোতে দেখা যায় বিভিন্ন রকমের চপ। এই চপ গুলোর প্রতিটির মূল্য ২০ টাকা করে। চপের দোকানের পাশের বসেছে আস্তবড় একটি সার্কাস। এই সার্কাসের নাম ঢাকা এ কে সার্কাস।


020240525_170936642__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg

020240525_170927710__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg

020240525_170922879__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg

এই মেলার একটু সামনে গেলেই দেখা যায় ৩ টি লাইন। প্রথম লাইনটিতে দেখতে পাওয়া যায় ছোট বাচ্চাদের খেলনার দোকান। এই দোকান গুলোতে শিশুদের খেলনা সবচেয়ে বেশি পরিমানে বিক্রি করতেছে দোকানওয়ালা। এই দোকানে যেসকল খেলনা দেখতে পেয়েছি তা হলো: ছোট বাচ্চাদের টমটম গাড়ি, ঘ্যারঘ্যারি গাড়ি, ঝুনঝুন গাড়ি সহ নাম না জানা আরো অনেক খেলনা। মেয়ে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকমের প্লাস্টিকের খেলনা এবং সিলভার দিয়ে বানানো হাড়ি পাতিল। মেলায় প্রতিটি দোকানওয়ালার নিয়ত থাকে এই মেলাতে বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করা। আজকে মেলার ৪র্থ দিন তাই দোকান ওয়ালাদের এখনো ভালো বিক্রি শুরু হয়নি কারন এই মেলা সর্বনিম্ন ১৫ দিন হয় (আবহাওয়া উপর নির্ভর করে)। তারপর একটু সামনে গেলেই চোখে পড়ে দা,বটি,কুঠার এই গুলোর দোকান। আমার বাবা আজকে আমাকে মেলায় নিয়ে গিয়েছে বাসার জন্য বটি ক্রয় করার জন্য।

আমার বাবা বটি ক্রয় করতেছে এবং আমি পিছন থেকে ছবি তুলতেছি। এখানে প্রায় ৪০-৫০ টি লোহার আসবাবপত্র বিক্রির দোকান বসেছে। তাই এখানে অনেক কম দামে লোহা দিয়ে বানানো আসবাবপত্র পাওয়া যায়। অবশেষে তারা একটি বটির মূল্য রাখে ২২০ টাকা। এই দোকান গুলো থেকে আমরা সোজা বাহির হয়ে কিছু খাবার ক্রয় করতে যাই। খাবারের দোকানের পাশেই আমি একটি ঢোলের দোকান দেখতে পাই। এই ঢোল গুলো সাধারণত হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরা বাসায় পুজা করার জন্য ক্রয় করে। এই ঢোলের মূল্য ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়েছে।


020240525_171444056__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg
020240525_171202585__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg

একটু সামনে গিয়েই সন্দেশ ক্রয় করে বাবা। এই সন্দেশ গুলোর প্রতি কেজির মূল্য ১৮০ টাকা। এই দোকান থেকে কয়েক রকমের আইটেম ক্রয় করে বাবা। আমি এই সব মিষ্টি জাতীয় খাবার খাই না তাই এতো বেশি আকর্ষণ ছিল না আমার। এই মিষ্টি জাতীয় খাবার ক্রয় করা হলে আমি বাবাকে নিয়ে যাই পুকুরে মাছ ধরার জাল ক্রয় করতে। এই এলাকাতে অনেক জাল বানানোর কারখানা রয়েছে তাই কম দামে জাল পাওয়া যায়। আমি অনেক জালের দাম জিজ্ঞেস করছিলাম কিন্তু তারা আমার মনের মতো জাল দেখাতে ব্যর্থতা প্রকাশ করে এই জন্য জাল ক্রয় করা হয় নি। তারপর আমি সেখানে বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনা গুলোর দিকে তাকাতে থাকি। এই খেলনা গুলো অনেক সুন্দর ভাবে সাজানো হয়েছে।


020240525_172600684__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg
020240525_172153096__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg
020240525_172146287__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg

এখানে বাচ্চাদের খেলনার মধ্যে ছিল নাগরদোলা, ট্রেন চালানো, ঘোড়ায় চলাচল এবং আরো অনেক রাইডিং। বাচ্চারা অনেক আনন্দ করতেছে এই সমস্থ খেলাধুলা করে। অনেকেই আবার জাদুর খেলা দেখতেছে। এই মেলার দৃশ্য গুলো দেখতে দেখতে অনেক কিছু আমি খেয়েছি। বাচ্চাদের খেলাধুলার স্থানের পাশেই রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি সার্কাস এবং বাংলাদেশ চলচিত্রর সাজানো বেশ কয়েকটি থিয়েটার। আমি এই পোস্টার গুলো পড়েই বুঝতে পেরেছি এখানের শো-তে চলচিত্রের নায়ক এবং নায়িকাদের দেখানো হয়।


IMG_20240525_172652.jpgIMG_20240525_172648.jpg
020240525_172634627__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg

এই স্থান গুলোতে প্রবেশ মূল্য অনেক চড়া। আমি বাবার সাথে থাকার কারনে এই দৃশ্য গুলোর দিকে ভালো করে তাকাইনি। তারপর এই রাস্তা দিয়ে আমি এবং বাবা সোজা একটি বেলুনের দোকানে চলে যাই। এই দোকান গুলোতে অনেক রকমের বেলুন এবং উড়ন্ত গ্যাস প্লেন বিক্রি করতেছে। আমি আমার ভাতিজার জন্য ক্রয় করতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরক্ষনেই মনে পড়লো সে অনেক ফাজিল তার জন্য এটি ক্রয় করা বৃথা হয়ে যাবে।



এই বেলুনের দোকান থেকে সোজা চলে যাই কাপড়ের দোকানে। সেখানে আমার ভাতিজার জন্য টাউজার এবং গেঞ্জি ক্র‍য় করি। এই দোকান গুলোতে অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমি আমার ভাতিজার কাপড় ক্রয় করার টাকা দোকান ওয়ালাকে দিয়ে দেই। তারপর আব্বা বাসার জন্য মিষ্টি ক্রয় করতে একটি দোকানে প্রবেশ করে। এই দোকানে এতো পরিমানে মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে তা বলার বাহিরে। এই দোকানের প্রতিটি মিষ্টির ওজন ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত।


020240525_173826457__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg
020240525_173753194__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg
020240525_173034747__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg
020240525_172944892__storage_emulated__Gcam_Configs8.4_Dslr.zip.jpg

আজকের মেলার অনেক দৃশ্য আপনাদের সাথে তুলে ধরা হয়নি। বাবার সাথে গিয়েছিলাম তাই ছবি তুলতে কিছুটা সংকোচ বোধ করতেছি। এই মেলাতে ২০০ মিটার লম্বা এলাকা জুড়ে শুধু মনিহার পন্যের দোকান বসতে দেখা যায়। এই দোকান গুলোতে প্রচুর ভিড় থাকে সবসময়। আজকের মেলাতে বাবার সাথে অনেক সময় অতিক্রম করেছি। আমার অনেক ভালো সময় অতিক্রম হয়েছে। একটা মজার বিষয় হলো বাবা আমাকে সেই ছোট কালের মতো প্রতিটা খাবার দেখিয়ে দিতেছে আর কিনে দিতেছে। বাবার সাথে এই মেলা ভ্রমন আমার জীবনে একটি বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে। পরিশেষে সবার বাবার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ সবার বাবাকে দৃর্ঘজীবী করুক।
---- আমিন---


Support @pennsif and @pennsif.witness for the growth of this creative platform. Vote for @pennsif.witness here

Sort:  
 4 months ago 

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.

Loading...

TEAM BURN

Your post has been successfully curated by @kouba01 at 35%.

Thanks for setting your post to 25% for @null.
We invite you to continue publishing quality content. In this way you could have the option of being selected in the weekly Top of our curation team.

Team Burn (22).png

Burning STEEM by sending it to the @null account helps reduce the supply of STEEM and so increase its price.

 4 months ago 

@kouba01 thanks a lot sir, ❤️
I wish your long life 🤲

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57951.76
ETH 2347.51
USDT 1.00
SBD 2.36