গ্রামীণ সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ "নাগরদোলা"

in Steem For Traditionlast year (edited)

1000028218.jpg

গ্রাম-বাংলায় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিচিত নাগরদোলা। যে কোন মেলা কিংবা লোকজ উৎসবে নাগরদোলা হল বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। নাগরদোলা ছাড়া এসব অনুষ্ঠান যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এটি আমাদের শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। শৈশবে যখন কোন মেলায় যেতাম তখন দেখতাম সকল বয়সের ছেলেমেয়েরা নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ করছে। ছোট বড় অনেক বিনোদন পার্কে কিংবা শিশু পার্কেও বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলার ব্যবস্থা থাকে।

1000028216.jpg

নাগরদোলা শুধু মেলা কিংবা পার্কে সীমাবদ্ধ নয়, গল্প কিংবা সিনেমাতেও এর ব্যবহার রয়েছে। হাজার বছরের বাঙালি গ্রামীণ সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছ এটি। নাগরদোলা ছাড়া গ্রামের কোন মেলা বা উৎসব কল্পনাই করা যায় না। এটি হাজার হাজার বছর ধরে গ্রামীণ সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে আছে। ছোটবেলায় প্রায়ই নাগরদোলায় চড়তাম। আমার কিছু বন্ধু-বান্ধব আবার নাগরদোলায় চড়তে ভয় পেত। নাগরদোলা এমনই একটি রাইড ছিল, যা নিয়ে আমাদের মধ্যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করত। নাগরদোলায় উঠার সময় ভয় লাগত, যদি পড়ে যাই! কিন্তু উঠার পর মনে হত, সারাদিন নাগরদোলায় চড়ে মজা করি। নব্বই দশকের ছেলেমেয়েদের কাছে নাগরদোলায় উঠার স্মৃতি আজও রঙিন।

1000028217.jpg

বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে আফতাবগঞ্জ মেলায় গিয়েছিলাম। সেখানে বেশ কয়েকটি নাগরদোলা দেখেছিলাম। কিন্তু সেগুলোতে শিশুদের তেমন ভিড় ছিল না। এখন প্রযুক্তির প্রসারে বিনোদনের সংজ্ঞা অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা মোবাইল কিংবা টিভিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাবা-মাও চান বাচ্চারা ইউটিউব দেখে আনন্দ পাক, বাচ্চাদের খাওয়ানোর জন্য কিংবা কান্না থামানোর জন্য তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেয়া হয়।

1000028194.jpg

যে বয়সে বাচ্চাদের বাইরের মুক্ত বাতাসে বিচরণ করা উচিত, সে বয়সে বাচ্চারা হয়ে যাচ্ছে ঘরমুখো এবং মোবাইল কেন্দ্রিক। যে বিনোদনগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত, যেখানে সবাই মিলে আনন্দ কিংবা হৈ হুল্লোড় করা যায়, সেগুলোতে তাদের অংশগ্রহণ কম। অথচ এই বিনোদনগুলো শিশু-কিশোরদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে অনেক সহায়তা করে, যা তাদের প্রাণবন্ত থাকতে সহায়তা করে। নাগরদোলায় চড়তে কিন্তু বেশি অর্থ প্রয়োজন হয় না, অথচ নাগরদোলায় চড়ে কোন শিশু বা কিশোর যে আনন্দ পাবে তা কিন্তু ঘরে বসে থেকে মোবাইল কিংবা টিভিতে পাওয়া সম্ভব না। কৃত্রিম বিনোদনের থেকে সামাজিক বিনোদন অনেক ভাল।

1000028190.jpg

আগে নাগরদোলা ঘুরিয়ে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এ পেশার সাথে জড়িত মানুষজন এখন তেমন একটা সুখে নেই। কারণ প্রযুক্তির প্রসারে নাগরদোলার জনপ্রিয়তা কমে এসেছে। ইলেকট্রনিক্স খেলনা সামগ্রীগুলো নাগরদোলার স্থান দখল করে নিচ্ছে। কাঠের তৈরি নাগরদোলার গায়ে বিভিন্ন নকশা দেখা যেত। আর এসব নকশার কারণেও অনেকে নাগরদোলায় চড়তে উৎসাহ পেত। এই ঐতিহ্যগুলো আমাদের লালন করা উচিত, যেন এগুলো কালের গর্ভে কখনো বিলীন হয়ে না যায়।

1000028193.jpg

লোকেশনG2HQ+G2C শাল ঘরিয়া
ডিভাইসস্যামসাং এস২১ আল্ট্রা

Sort:  
 last year 

আসলেই ভাই কথাটি আপনি খুব ভালো বলেছেন। আগে মানুষ নাগরদোলা ঘুরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।তারা অনেক টাকাও রোজগার করত। কিন্তু বর্তমানে নাগরদোলা তেমন প্রচলন নেই দিন দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে এই নাগরদোলা। খুব সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছেন ভাই দারুন লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

উয়াও,, নাগরদোলাটির খুব সুন্দর ছবি তুলেছেন ভাই। ছবিগুলো খুব সুন্দর লাগছে। সাজিয়ে গুছিয়েনঅসাধারণ পোস্ট শেয়ার করেছেন আমাদের মাঝে, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই

 last year 

নাগরদোলায় জীবনে একবার উঠেছিলাম তারপর থেকে কান ধরছি আর কখনোই নাগরদায় উঠিনি। নাগরতলায় উঠলে আমার শরীর প্রচন্ড কাঁপে আর প্রচন্ড ভয় লাগে এই বুঝি পড়ে যাব আমি। অনেক ভালো লিখেছেন ভাই ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

আপনাকেও ধন্যবাদ

 last year 

নাগরদোলা গ্রামীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বর্তমানে বিভিন্ন মেলাতেবেই সকল নাগরদোলা দেখতে পাওয়া যায়। বর্তমানের কিছু পার্কে এমন নাগরদোলা বসানো হয়েছে। আগে ছোট ছেলেমেয়েরা নাগরদোলায় উঠলেও বর্তমানে সববয়সের ছেলেমেয়েরা উঠে।

 last year 

ধন্যবাদ

 last year 

ভাতিজ তোরা নাগরদোলা'য় কখনও উঠছিলেন? নাগরদোলা'য় একবার উঠলে তোরা তো কান্দি ভাসে দিবেন 😀।

 last year 

রোলার কোস্টারে চড়সি এটা আর এমনকি

 last year 

চড়ি একদিন দেখিস 🙂

 last year (edited)

ছোটোবেলা থেকেই এই নাগরদোলা দেখে আসছি। ছোটো বাচ্চারা নাগরদোলা দেখলেই উঠতে চায়। আমিও ছোটোবেলায় নাগরদোলা দেখলে উঠার বায়না ধরতাম। আফতাফগঞ্জে কিসের মেলা হয়েছে...???

 last year 

শত বছরের পুরানো মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

 last year 

বিশেষ কোনো মেলা বা পার্কে ছাড়া এই নাগরদোলা দেখা যায় না। ছোটবেলায় নাগরদোলায় চড়ার জন্য অনেক বায়না ধরতাম,সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল । এই নাগরদোলা আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্য। দারুন ফটোগ্রাফি করেছেন ভাই, সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছে অনেক ধন্যবাদ ভাই।

 last year 

ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য

 last year 

নাগরদোলায় উঠতে আমার বেশ মজাই লাগে। প্রথম প্রথম উঠতে ভয় লাগত। আমাদের স্কুলের মাঠে আগে সার্কাস আসত।তাই প্রায় প্রতিদিনই উঠতাম।তাই ভয় কেটে গেছে।

 last year 

ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 63749.66
ETH 3419.02
USDT 1.00
SBD 2.48