একজন রাহেলা বানু এবং কিছু এলোমেলো চিন্তাভাবনা
|| আজ ২৫ মার্চ, ২০২৪ || রোজ: সোমবার ||
হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। আশা করছি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে ভালো আছি।আজ আপনাদের সামনে হাজির হলাম আবারো নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করছি আপনাদের ভালোলাগা বা মন্দ লাগা টুকু আপনাদের মূল্যবান মতামত এর মাধ্যমে জানাবেন।
রাহেলা বানু। মোহাম্মদপুর এ উনি একটা ভ্যান নিয়ে পিঠা বিক্রি করেন। সাথে একটা গামলায় থাকে ছোলা বুট। তবে উনার পিঠার খুব বেশি ভ্যারিয়েশন না, মাত্র দুইটি পিঠা উনি বিক্রি করেন। চিতই পিঠা আর চাপটি পিঠা। সাথে থাকে ৩ রকমের ভর্তা। সর্ষে ভর্তা, মরিচ ভর্তা আর শুটকি ভর্তা। উনার বয়স বেশ ভালোই, তাই কাজেও কিছুটা স্লো আবার সহজে খুব বেশি কিছু মনেও রাখতে পারেন না।যেমন - পিঠা খেয়ে কে টাকা দিয়েছে, কে দেয় নি কিংবা কে কয়টা পিঠা খেলো, এসবের হিসেব তিনি খুব একটা মনে রাখতে পারেন না। কিংবা কেউ ২০ টাকার পিঠা খেয়ে ৫০ টাকার নোট দিলে টাকা ফেরত দেয়ার সময় তার মনে থাকে না যে কত টাকা ফেরত দিবেন। এসব কারণে অবশ্য তার দোকানে তেমন বেশি ভীড় ও হয় না।
তার সাথে আমার পরিচয়ের একটা মজার কাহিনি আছে। তার কাছে ১ম দিন একটি চাপটি পিঠা নিয়েছিলাম। খেয়ে বেশ মজাই লেগেছে। তাই ২য় দিন গিয়ে আবারো চাপটি পিঠা নিয়েছি। আমি আবার পিঠা নিয়ে আগে টাকা দিয়ে দিয়েছি৷ তবে সেদিন আরো একটি পিঠা খেতে ইচ্ছে করছিলো। তাই পরে আরেকটি পিঠা নিয়ে খেলাম। খাওয়া শেষে সেই পিঠার দাম দিয়ে হাটা দিয়েছি। পেছন থেকে শুনি উনি সমানে ডেকে যাচ্ছেন। আমি যেহেতু প্রথমে বুঝি নি যে আমাকে ডাকছেন, তাই বেশ কিছুদূর চলেই এসেছিলাম। পরে পেছনে তাকিয়ে দেখি উনি আমাকেই ডাকছেন! উনার কাছে ফেরত গেলাম। উনি বলে যে আর টাকা কই? মানে আমি পিঠা খেয়েছি ২ টা কিন্তু দাম দিয়েছি একটার! পরে উনাকে মনে করায় দিলাম যে প্রথম পিঠার দাম তো আমি পিঠা খাওয়ার আগেই দিয়ে দিয়েছি। তারপরে মনে করে বললেন, আচ্ছা, তাহলে ঠিক আছে। এমন ঘটনার আকষ্মিকতায় আমিও কিছুটা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম এবং মনে মনে বেশ খানিকটা বিরক্তও হয়েছিলাম উনার উপর।
কিছুদিন পরে আবার কি মনে করে উনার দোকানে গিয়ে বসলাম পাশে চেয়ার নিয়ে। পিঠা খেতে খেতে গল্প করলাম বেশ অনেকক্ষণ। জানলাম উনার দুই ছেলে। সামর্থ্য হওয়ার পর বিয়ে করে এখন দুই ছেলেই আলাদা আলাদা থাকেন, উনার খোঁজ রাখেন না। তাই উনি এভাবেই নিজের খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা করেন। তখন বেশ কিছু চিন্তাভাবনা মাথায় এলো। উনার ছেলেরা যখন উনার সাথে যোগাযোগ রাখে না, উনিও উনার মতোন একটা ব্যবস্থা কিন্তু করেই নিয়েছেন, তবুও ভিক্ষাবৃতি বেছে নেন নি। উনার এই ব্যবসায় উনি যে অনেক পটু তেমনটা কিন্তু মোটেও না। উনার অনেক কিছুই মনে থাকে না, তবুও উনি এটা দিয়েই উনার খাওয়া-থাকার ব্যবস্থা যোগাড় করে ফেলছেন কিন্তু। তখন মনে হলো, আসলেই মানুষের চেষ্টা আর ইচ্ছা থাকলে কোন কিছু আটকা থাকে না। হাল ছেড়ে না দিলে মানুষের বয়স হয়ে গেলেও আত্নসম্মানের সাথে বাঁচা যায়, আত্নসম্মানের সাথে বাঁচতে জানতে হয়। অথচ অনেক শিক্ষিত পরিবারে অনেক বাবা-মা সন্তানের থেকে অনেক অপমান সহ্য করেও মনে হাজারো দু:খ কষ্ট নিয়েও মুখ থুবড়ে পড়ে থাকেন কি জানি কিসের জন্য। তারা প্রতিবাদ করতেও পারেন না, এভাবে রাহেলা বানুর মতোন ঘুরে দাঁড়াতেও পারেন না।
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
চিতই পিঠাগুলো খেতে বেশ ভালোই লাগে। এই বয়সে উনি যে নিজের আত্মসম্মানবধ নিজে ধরে রেখেছেন, ভীষণ ভালো লাগতেছে। খুবই খারাপ লাগে। ছেলে মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাপ মার খোঁজ রাখে না। বাপ মা ছেলেকে মানুষ করতে পারে কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে সেই ছেলেগুলো বাপ মাকে মানুষ করতে পারে না।সৃষ্টিকর্তা হয়তো ওনার জন্য এটাই লিখে রেখেছেন। এটাতেই ওনার প্রশান্তি। চেস্টা আর ইচ্ছা থাকলে প্রতিটা মানুষই সফল হতে পারবে। ভীষণ ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে।
সেটাই ভাই। নিজে কর্ম করেই ভালো আছেন, এটাই বা মন্দ কি! ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে নিজের বাবা মায়ের খোঁজ খবর না রাখাটা ভীষণ লজ্জার।
ধন্যবাদ আপু। আপনি অনেক সুন্দর করে পোস্ট টি করেছেন।আসলে ইচ্ছা শক্তিই বড়। আর জানি না আমি ভবিষ্যতে আমার মা -বাবার জন্য কি করব।তবে জীবন এ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার যে পথে আছি তার এক বিশাল অংশ জুড়ে আমার মা আছে।
মা বাবা আসলে সন্তানের জন্য অনেক কিছুই করেন। আমরা সন্তানেরা তার অনেক কিছুই বুঝি ও না। সকল সন্তানের উচিৎ বাবা মা যেমন ই হোক, তাদের খেয়াল রাখার।
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু সবাই ঘুরে দাঁড়াতে পারে না। আর উনি উনার আত্মসম্মানবোধ ধরে রাখতে পেরেছেন জেনে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু মানুষের ধৈর্য আর পরিশ্রম থাকলে জীবনে সবকিছু করাই সম্ভব। ধন্যবাদ আপু।
আমিও সেটাই বিশ্বাস করি আপু। চেষ্টা আর পরিশ্রম করতে পারলে অনেক কিছুই সম্ভব।
আপনার পোস্ট পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। তবে বর্তমান সময়ে এমন অনেক ছেলে আছে যারা বিয়ের পর বাবা মায়ের খোঁজ খবর রাখে না। কিন্তু তারা এটা বোঝে না বাবা মা তাকে ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে লালন পালন করে বড় করে তুলেছে। আসলে একটু ভালো থাকার জন্য বাবা মা রেখে অন্য জায়গায় থাকে। তবে রাহেলা বানু তার ইচ্ছা শক্তি নিয়ে নিজের ব্যবস্থা নিজে করে চলতেছেন দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। আসলেই মানুষ চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
বাবা মা আসলে তাদের জীবনের যা যা ত্যাগ করেন একজন সন্তানকে বড় করতে গিয়ে, সন্তানেরা সেসব ভুলে যায়। বিষয়টি খুবই লজ্জার।
নিজের আত্মসম্মানটাই অনেক বড় বিষয়৷ এই বয়সে এই মহিলাটি নিজের কাজের মাধ্যমে নিজের খরচ চালাচ্ছে। আসলে খুবই ভালো লাগছে৷ তিনি জীবনের এই সময় এই চিতই পিঠা তৈরি করার মাধ্যমে তার জীবনের পথকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন৷ আসলে এই বিষয়টি খুবই খারাপ লাগে যে ছেলেমেয়েদেরকে তারা ছোট থেকে বড় করে পরে তারা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন পিতা-মাতাকে ভুলে যায় এর থেকে বড় কষ্টের কিছুই হতে পারে না৷
আমিও আপনার সাথে সম্পূর্ণ ভাবে একমত বিজয় ভাই। আপনাকে ধন্যবাদ।
উনার ইচ্ছাশক্তির সত্যিই প্রশংসা করতে হয়। ছেলেদের আশায় বসে নেই উনি এই বয়সেও নিজের উদ্দ্যগো কিছু করছেন। এটা বেশ দারুণ লাগল আমার কাছ। যদিও একটু খারাপও লাগল। সত্যি উনার ছেলেরা কতটা হতভাগ্য নিজের মা কে তারা বোঝা মনে করে। তাদের কপালে দুঃখ আছে আপু। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটা পোস্ট করেছেন বাস্তবতা টা নিয়ে।
অবশ্যই ভাই, যে সন্তান বাবা মা কে কষ্ট দেয়, তাদের কপালে দুঃখ অবধারিত! আপনাকে ধন্যবাদ এমন দারুণ একটি মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য।