বাঙালি রেসিপি "টক মিষ্টি ঝাল কদবেলের আচার"

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নতুন একটি পোস্ট শুরু করছি। আজ আপনাদের সাথে ভিন্ন একটি রেসিপি শেয়ার করবো। আমি যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলাম সেখান থেকে কিছু কদবেল এনেছিলাম। এখানে থেকে বেশ কয়েকবার বাজার থেকে কদবেল কিনেছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই ভেঙ্গে দেখি ভেতরে খারাপ বা খেতে খুব একটা স্বাদের ছিলো না। তবে সদ্য গাছ থেকে পারা কদবেল খাওয়ার আনন্দই আলাদা। তাই বাংলাদেশ থেকে আসার সময় কিছু কদবেল নিয়ে এসেছিলাম। সেই কদবেল দিয়ে কিছুদিন আগে আচার তৈরি করেছিলাম। আর আমার আচার খেতে খুবই ভালো লাগে। শুধু আমার না মনে হয় আমার মত আপনাদের ভালো লাগে। শুধু কদবেল মাখা খাওয়া হতো। তাই ভাবলাম একটু আচার করা যাক রেখে রেখে খাওয়া যাবে। তবে কদবেলের আচার আমি সেই ছেলেবেলায় খেয়েছি। এখন আর খাওয়া হয় না। আমার ঠাকুরমা প্রায়ই তৈরি করতেন এই কদবেলের আচার। তবে ঠাকুরমা মারা যাওয়ার পর থেকে সেই আচার আর খেতে পারি না। মাকে বলতাম তৈরি করতে। কিন্তু মা সেই ঠাকুরমার মতো তৈরি করতে পারত না। তাই আর খাওয়া হতো না।
তবে হটাৎ মনে হলো আমি নিজে একবার করে দেখি।হয়তো সে রকম হবে না। তারপরও একবার তৈরি করাতো যাক। এই কদবেলের আচার তৈরি করতে খুব বেশি সময় লাগে না। আর এই আচার ছয় মাসের বেশি
দিন রেখে খাওয়া যায় খুবই মজাদার একটি খাবার। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

IMG_20230310_192601.jpg
উপকরণ:
১. কদবেল -৪ টি
২. পাঁচফোড়ন - হাপ্ চামচ
৩. শুকনো মরিচ -২ টি
৪.চিনি - স্বাদ অনুযায়ী
৫.বিট লবণ - হাপ্ চামচ
৬. হলুদ - হাপ্ চামচ
৭. সরিষার তেল - ১ কাপ
৮. লবণ - স্বাদ অনুযায়ী

IMG_20230220_184820.jpg
কদবেল

IMG_20230311_012839.jpg
পাঁচফোড়ন,শুকনো মরিচ, লবণ, হলুদ ও শুকনো মরিচ গুঁড়া

IMG_20230311_012844.jpg
চিনি

IMG_20230310_201152.jpg

বিট লবণ

IMG_20230310_182519.jpg
সরিষার তেল
প্রস্তুত প্রণালী:
১.প্রথমে কদবেল গুলো ভেঙ্গে নিতে হবে। এরপর একটা চামচ দিয়ে ভিতরের অংশ গুলো বের করে নিতে হবে। এরপর হাত দিয়ে শ্বাস থেকে শক্ত অংশ গুলো বের করে নিতে হবে।

IMG_20230220_184820.jpg

IMG_20230310_185226.jpg
২.এবার চুলার উপর একটা কড়াই বসিয়ে দিতে হবে। কড়াই গরম হয়ে গেলে পরিমান মতো সরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হয়ে গেলে এক চিমটি পাঁচফোড়ন ও শুকনো মরিচ ছিড়ে দিতে হবে। মসলা গুলো একটু ভেজে নিয়ে কদবেল দিয়ে দিতে হবে।

IMG_20230310_182632.jpg

IMG_20230310_183643.jpg

IMG_20230310_185336.jpg
৩. কদবেলের শ্বাস একটা খুন্তি দিয়ে নেড়ে চেড়ে দিতে হবে। এরপর স্বাদ মতো চিনি দিয়ে দিতে হবে। আবারো নেড়ে দিতে হবে। চিনি দিয়ে জল বের হলে পরিমান মতো লবণ, হলুদ ও শুকনো মরিচ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকতে হবে।

IMG_20230310_185410.jpg

IMG_20230310_185622.jpg

IMG_20230310_185458.jpg

IMG_20230310_185906.jpg
৪. বার বার নাড়তে থাকতে হবে তা না হলে কড়াই এর নিচে লেগে যেতে পারে। জল শুকিয়ে এলে সামান্য ভাজা জিরার গুঁড়া ছড়িয়ে দিতে হবে। সেই সাথে আর হাপ্ চামচের মতো বিট লবণ দিয়ে দিতে হবে। এতে করে আচারের স্বাদ ভালো আসবে। আবার মিনিট পাঁচেক ভালো করে নেড়ে নিতে হবে। এক পর্যায় আচার থেকে জল শুকিয়ে গেলে একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে। আচার ঠান্ডা হয়ে গেলে একটা কাচের বয়ামে রেখে দিতে। এতে করে আচার দীর্ঘ দিন ভালো থাকবে।

IMG_20230310_185727.jpg

IMG_20230310_185622.jpg

IMG_20230310_185906.jpg

IMG_20230310_190742.jpg

IMG_20230310_192215.jpg
তৈরি হয়ে গেল সুস্বাদু টক মিষ্টি ঝাল কদবেলের আচার। এই আচার আপনারা যেকোনো খাবারের সাথে খেতে পারেন এমনকি দুপুরে ও কোন কিছু ছাড়া খেতে পারেন। আশা করি আজকের রেসিপিটি আপনাদের ভালো লাগবে।

IMG_20230310_192601.jpg

Sort:  
 last year 

এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো যে আপনি বাংলাদেশ থেকে কদবেল নিয়ে গিয়েছেন এবং সেটা আচার তৈরি করে খেয়েছেন। সেদিন কয়েকটি কদবেল নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু তার মধ্যে প্রায় দুটো কদবেল নষ্ট ছিল খুবই খারাপ লেগেছিল। আপনার ঠাকুরমা কদবেল দিয়ে এরকম ভাবে আচার তৈরি করত কিন্তু ঠাকুমা মারা যাওয়ার পরে আর তেমন একটা কদবেলের আচার খাওয়া হয়নি। অবশেষে আপনি এরা নিজে তৈরি করেছেন জেনে খুবই খুশি হলাম। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক বেশি সুস্বাদু এবং লোভনীয় ছিল যদিও এরকম ভাবে কখনো কদবেলের আচার তৈরি করে খাওয়া হয়নি।

 last year 

আমি তো এটাই জানতাম না বৌদি যে কদবেলের আচার ও হয়!বেশ মজার রেসিপি তো।তবে সমস্যা হলো দেখেই যে খেতে ইচ্ছে করছে!

 last year 

রেসিপিটা দেখে তো জিভে জল চলে এলো। দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক মজাদার হয়েছে নিশ্চয়ই। ধন্যবাদ বৌদি কদবেলের টক, ঝাল, মিষ্টি আচারের একটা রেসিপি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 last year 

আসলে বৌদি বাজারে যেসব কদবেল গুলো পাওয়া যায় এই কদবেল গুলো বেশিরভাগই নষ্ট থাকে। তবে এই বিষয়টি জেনে অনেক ভালো লাগলো আপনি বাংলাদেশ থেকে কদবেল নিয়ে গেছেন এবং সেই কদবেল দিয়ে আচার তৈরি করেছেন। এটা জেনে অবাক হলাম সেই ছোটকালে কদবেল খেয়েছেন আর এর মধ্যে আর খাওয়া হয়নি। তবে আপনার ঠাকুর মা সুন্দর করে আচার তৈরি করতে পারে এটা জেনে ভালো লাগলো। যদিও তিনি মারা যাবার পরে আর সে সেভাবে খেতে পারেন না। যাহোক বৌদি আপনি অনেক সুন্দর করে কদবেলের আচার তৈরি করেছেন। আচারের রঙ দেখে বোঝা যাচ্ছে আচারটি অনেক সুস্বাদু হয়েছে। তবে এই আচারটি ছয় মাস রেখে খাওয়া যায় এটা জেনে ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভকামনা রইল বৌদি।

 last year 

টক-ঝাল-মিষ্টি কদবেলের আচার রেসিপি দেখে অনেক সুস্বাদু মনে হচ্ছে। আমি এই রেসিপি কখনো খাইনি। তো আপনার রেসিপি পরিবেশন আমার খুবই ভালো লেগেছে। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 last year 

এই ধরনের রেসিপিগুলো দেখলেই কোন ভাবে লোভ সামলানো যায় না। আজকে আপনি আমাদের মাঝে খুবই চমৎকার টক ঝাল কদবেলের আচার তৈরি করে শেয়ার করেছেন আপু। আপনার তৈরি করা এই আচার এর রেসিপি দেখেই জিভে জল চলে আসছে।

 last year 

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমি কখনো দিদি কদবেলের ভিতরটা ভালো পায়নি। হয় পচে গেছে না হয় নষ্ট! এজন্য কদবেল খাওয়ার সোভাগ্যও হয়নি আমার। আর আচার তো দূরের কথা! তবে আপনার লাক কিন্তু ভালো। সদ্য পাওয়া গাছের কদবেল খেতেও মজা হবে সিউর। আর আচার বানিয়ে খেলে ভালো লাগবে।

 last year 

বৌদি আপনি প্রতিনিয়ত ই ইউনিক কিছু রেসিপি শেয়ার করে থাকেন। আজকে টক ঝাল মিষ্টি কদবেলের আচার এর রেসিপি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন যেটি খুবই ইউনিক মনে হলো আমার কাছে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বৌদি এই রেসিপিটি আমাদের মাঝে ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য। আপনার এবং আপনার ফ্যামিলির সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

 last year 

টক মিষ্টি ঝাল কদবেলের আচার দেখে তো জিভে জল চলে এলো বৌদি। আহ কি মজার আচার তৈরি করেছেন,যা দেখে লোভ সামলানো কঠিন হয়ে গিয়েছে। কদবেলের আচার খেতে খুবই মজা। তবে অনেক দিন হল খাওয়া হয়নি। অনেক ধন্যবাদ বৌদি, এমন মুখরোচক একটি রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.032
BTC 57453.27
ETH 2928.75
USDT 1.00
SBD 3.67