" টক মিষ্টি ঝাল চালতার আচার"

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

Hello
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব টক মিষ্টি ঝাল চালতার আচার। আচার পছন্দ করেন না এমন কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর তা যদি হয় ঘরে তৈরি তাহলে তো কথাই নেই। ঘরে থাকা উপকরন দিয়ে খুব কম সময়ে এটি তৈরি করা যায়। এটি খুবই টেস্টি এবং স্বাস্থ্যসম্মত। বাইরে যে আচার কিনতে পাওয়া যায় তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অনেক দিন আগে একটি ঘটনা বলি। এটি ২০১৯ সালের ঘটনা। আমরা সবাই মিলে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি গিয়েছি পূজা দিতে। আমি প্রতি বছরই এক বার সেখানে যাই পূজা দিতে। আমি পূজা দিয়ে মন্দির থেকে বেরিয়ে দোকানে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। হটাৎ দেখি একটা আচারের দোকান। আপনাদের @rme দাদা বললো আচার কিনবে। আমিও রাজী হয়ে গেলাম। আর আচার আমার তো খুবই পছন্দের। আর তা যদি হয় চালতার আচার তাহলে তো কথাই নেই। বিভিন্ন রকমের আচার রয়েছে দোকানে। আমি আমার পছন্দের চালতার আচার, আমার প্রিয় মানুষটার জন্য তেতুঁলের ও আমার আচার কিনলাম। ভাবলাম সেখানে না খেয়ে একেবারে বাড়ি নিয়ে তারপর খাবো। এরপর বাড়ি এসে ফ্রেস হয়ে আগে আমার প্রিয় মানুষটাকে তার পছন্দের তেতুলের আচার দিতে গিয়ে দেখি ওই আচারের ভিতর মরা একটা আরশোলা। সেই দিন থেকে আমাদের কেউ বাইরের আচার খায় না। আর আমি বাড়ীতে তৈরি করি। আর কথা না বাড়িয়ে চলুন মূল রেসিপিতে ফিরে যাই।

IMG_20211029_182544.jpg
উপকরণ:
১. চালতা - ২ টি
২. জিরা - ১ চামচ
৩. মৌরি - ১ চামচ
৪. ধনে - হাপ্ চামচ
৫. শুকনো মরিচ - ২টি
৬. তেজ পাতা - ২ টি
৭. পাঁচ ফোড়ন - ১ চামচ
৮. তেতুল - ১ চামচ
৯. লবণ - ১ চামচ
১০. হলুদ - হাপ্ চামচ
১১. শুকনো মরিচ গুঁড়া - হাপ্ চামচ
১২. চিনি - ৩ চামচ
১৩. সরিষার তেল - ১ কাপ
১৪. কালো সরিষা বাটা - ৩ চামচ
১৫. দারচিনি - ২ টুকরো
IMG_20210818_085451.jpg
চালতা

IMG_20210821_125924.jpg
তেতুল, লবণ, হলুদ, শুকনো মরিচ গুঁড়া ও পাঁচ ফোড়ন

IMG_20210821_120836.jpg
কালো সরিষা বাটা

IMG_20210820_112913.jpg
শুকনো মরিচ, দারচিনি ও তেজ পাতা

IMG_20210820_112906.jpg
জিরা, ধনে ও মৌরি

IMG_20211030_164159.jpg
চিনি

IMG_20211022_122321.jpg
সরিষার তেল
প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে চালতা ছোটো ছোটো করে কেটে নিতে হবে। এবার সামান্য লবণ ও হলুদ দিয়ে কাটা চালতা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

IMG_20211029_100818.jpg
২.চুলায় একটা কড়াই বসিয়ে দিয়ে এতে জল দিয়ে কাটা চালতা সেদ্ধ বসিয়ে দিতে হবে। এতে সামান্য লবণ ও হলুদ দিয়ে দিতে হবে।চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিতে হবে। চালতা ২০ মিনিট ধরে সেদ্ধ করে নিতে হবে।

IMG_20211029_115344.jpg
৩. চালতা সেদ্ধ হয়ে গেলে একটু নরম হয়ে গেলে জল ঝরিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।

IMG_20211029_174859.jpg
৪. এবার চুলার উপর কড়াই বসিয়ে দিতে হবে। কড়াই গরম হয়ে গেলে একে একে শুকনো মরিচ , জিরা, ধনে, মৌরি, তেজ পাতা , ও দারচিনি একত্রে সব মশলা ৫ মিনিট ভেজে নিতে হবে।

IMG_20210820_113510.jpg
৫. মসলা ভাজা হলে একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে।

IMG_20210820_114129.jpg
৬.এবার ভাজা মশলা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। মশলা গুঁড়া হয়ে গেলে একটা পাত্রে রেখে দিতে হবে।

IMG_20210820_114532.jpg
৭.এবার শীল পাটায় সেদ্ধ চালতা বেটে নিতে হবে। চালতা বেটে নিয়ে কালো সরিষা বাটা দিয়ে আলতো
হাতে মেখে নিতে হবে।

IMG_20211029_180043.jpg
৮. চুলার উপর একটা ফ্রাই প্যান বসিয়ে দিতে। ফ্রাই প্যান গরম হয়ে গেলে এক কাপ সরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে। চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিতে হবে।

IMG_20211029_180420.jpg
৯. তেল গরম হয়ে গেলে এক চামচ পাঁচ ফোড়ন দিয়ে দিতে হবে। এবার চালতা দিয়ে একটু নেড়ে চেড়ে দিতে হবে।

IMG_20211029_180721.jpg
১০. চালতার ভিতরে তেতুল ও পরিমান মতো চিনি দিতে হবে। একে একে লবণ হলুদ ও শুকনো মরিচ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে রান্না করতে হবে।

IMG_20211029_181008.jpg
১১.চালতার জল শুকিয়ে গেলে ভাজা মসলার গুঁড়া দিয়ে আরো একটু সময় নিয়ে নেড়ে চেড়ে দিতে হবে। চালতা একেবারে শুকায় গেলে একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে।

IMG_20211029_182124.jpg

IMG_20211029_182439.jpg

তৈরি হয়ে গেল আমাদের টক মিষ্টি ঝাল চালতার আচার। এটি ফ্রিজে না রেখে ৬ মাস রাখা যাবে। রোদে দেওয়ার ঝামেলা নেই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। চাইলে আপনারা ও বাড়ীতে তৈরি করতে পারেন।

Sort:  
 3 years ago 

পচ্ছন্দের তালিকায় রেখে দিলাম, আস্তে আস্তে সব বানাবো বৌদি আমি। শুভেচ্ছা রইলো আপনার জন্য।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপু।

স্কুলে পড়ার সময় স্কুল ছুটির পর দেখতাম স্কুলের বাইরে আচারের ভ্যানগাড়ি দাঁড়ানো। তখন সেখানে থেকেই এই চালতার আচার কিনে খাইতাম। আমি ভাবতাম অন্য গুলোর চেয়ে এই চালতার আচার বানানো অনেক বেশি কঠিন কিন্তু আজকের আপনার রেসিপি দেখে ভুল ধারণা চলে গেলো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কত যে স্বাদের হইছে এই আচার।

আপু আপনার আচার দেখেই মনে হচ্ছে একবার হলেও বাসায় বানানো উচিত। লোভনীয় দেখাচ্ছে।

 3 years ago 

ছোটবেলায় চালতা খেতাম রাস্তায় বেঁচতে আসতো খুবই প্রিয় ছিল। এত সুন্দর লাগত খেতে। বারবার খেতে মন বলতো আর আপনি বাড়িতে বসেই এত সুন্দর টক-ঝাল-মিষ্টি চালতা তৈরি করে ফেললেন। বাহ অসাধারণ ছিল। প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে পরিবেশন করেছেন। আমরা ইচ্ছা করলে বাড়িতে তৈরি করতে পারব এবং অনেক উপকৃত হলো এটি জানা ছিল না। জেনে গেলাম আজকে।

 3 years ago 

ওয়াও চালতার আচার দেখেই জিভে জল চলে আসলো। আমার এবং আমার হাজব্যান্ড দুজনেরই চালতার আচার খুবই প্রিয়। কিছুদিন আগে আমরা কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে একটা আচারের দোকান থেকে আমরা চালতার আচার কিনে খেয়ে ছিলাম। কিন্তু আপনার কথা শুনে তো রাস্তায় বিক্রি করা আর কোন আচার খেতে ইচ্ছে করবে না। মনে হচ্ছে বাড়িতেই তৈরি করতে হবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি আচারের রেসিপি শেয়ার করার জন্য। পরবর্তীতে আপনার দই রেসিপি দেখে নিজে বানানোর চেষ্টা করব।

 3 years ago 

আচার টি দেখে জিভে পানি এসে গেল বৌদি, চালতার আচার আমার খুবই পছন্দের।আপনার আচারটি দেখে আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল, ছোটবেলায় যখন স্কুলে যেতাম তখন প্রায়ই এই আচার কিনে খেতাম, খুবই মজা লাগত। আবশ্য ঘরে বানানো আচারের স্বাদই আলাদা। এর সাথে কি দোকানের আচারের তুলনা হয়? আপনার আচারটি দেখে মনে হচ্ছে খুবই মজা হয়েছে, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

চালতার আচার দেখে স্কুল জীবনের কথা মনে পড়ে গেল। আমি আমার স্কুল জীবনে প্রায় প্রতিদিন ১ টাকা দিয়ে ৪ টুকরো চালতার আচার কিনে খেয়েছি। কি যে মজা ছিল সেই দিনগুলো তা আপনাকে বলে বোঝাতে পারবোনা। আজ আপনার মজাদার চালতার আচারের রেসিপি দেখে সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। আপনি দারুন একটি রেসিপি তৈরি করেছেন বৌদি। আপনার রেসিপিটি দেখে জিভে জল চলে আসলো। ধন্যবাদ আপনাকে এরকম লোভনীয় একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

বৌদি যত যাই বলেন না কেন, আচারের গল্প যা শোনান না কেন, কিন্তু কথা হলো আমার জিব্বা দিয়ে যে গল গল করে পানি পড়ছে সেটার কি হবে। সত্যি বৌদি আচারের কথা শুনলে কার না জিভে জল আসে বিশেষ করে যদি সেটা হয় টক। আপনার আছার খাওয়ার কথা শুনে আমার ছোট বেলার একটা কথা মনে পড়ে গেল। আমি আর আমার চাচাতো বোন চালতার আচার চুরি করে খেতে খেতে আর লাস্ট একটি ছিল। এখন এটা সমান ভাগে ভাগ করতে হবে। কিভাবে করি দুইজনে দুই মাথায় কামড় দিয়ে শুরু করলাম টানাটানি।যদিও আমি এই কথাটাই মজা দিতে পারিনি কিন্তু আমাদের কাছে সেই স্মৃতিটা এখনো মনে পড়ে। আচার আমি খুবই পছন্দ করি, বিশেষ করে আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমের বিভিন্ন ফল পাওয়া যায়। বিশেষ করে টক আমড়া, বড়ই, চালতা, আম, জলপাই, কামরাঙ্গা, লেবু, আরো কত কি। এগুলো খুব খাই আমার প্রিয় জিনিস টক। আমাদের সাথে এত সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ বৌদি।

 3 years ago 

দিদি বহুদিন চালতার আচার খাওয়া হয় না। ছোট বেলায় স্কুলের সামনে চালতার আচার বিক্রি করতো আমরা ১ টাকার চালতার আচার কিনে কত মজা করে খেতাম। আপনার চালতার আচার দেখে সত্যি জিভে জল চলে আসলো। সুন্দর একটা রেসিপি সেয়ার করেছেন। এবার মাকে বলবো বানাতে। আমার শশুরবাড়ীতে অনেক চালতা হয় নিয়ে আসবো। ভাল থাকবেন। শুভেচ্ছা রইল ।

 3 years ago 

চালতা রেসিপি দেখে আমার জিভে দিয়ে জল চলে আসলো। কারণ চালতা খেতে খুবই মজা লাগে আমার কাছে। এই চালতার আচার আমার খুবই পছন্দ। আপনি খুবই সুন্দর একটি রেসিপি তৈরি করেছেন। আর সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। যা দেখে আমার খুবই ভালো লাগলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বৌদি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 62585.78
ETH 3013.43
USDT 1.00
SBD 2.49