স্বরচিত নতুন কবিতা " বৈশাখ এলো রে"
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। সবাইকে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা।
বাংলা সনের প্রথম দিন হলো পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে শুভ নববর্ষ হিসেবে দিনটি বিশেষ বিশেষভাবে উদযাপন করা হয়। এটি বাঙ্গালীদের একটি সার্বজনীন উৎসব। গ্রেগরীহ বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই এপ্রিল বা ১৫ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়। এদিন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের মহাসমারোহের সাথে পালিত হয় এই নববর্ষ। সারা চৈত্র মাস দূরে চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র মাসের শেষ দিন বা চৈত্র সংক্রান্তি বা চড়ক পূজো হয়ে থাকে। এই দিন গ্রাম বাংলা বিভিন্ন অঞ্চলে চড়ক মেলাও বসে থাকে। এর পরের দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিন পরিবারের সকল সদস্যরা স্নান সেরে বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নেয় এবং প্রতি বাড়িতে বাড়িতে মিষ্টি খাওয়া হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশ এদিন তাদের ব্যবসায়িক হিসাবের নতুন খাতা উদ্বোধন করে। যার নাম হালখাতা। গ্রাম অঞ্চলে ও কলকাতার অনেক জায়গায় এদিন থেকে শুরু হয় বৈশাখী মেলা। এই মেলা সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়।
আকবরের সময় কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনে খাজনা পরিশোধ করতে হতো। এরপর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের দিন ভূমির মালিকরা নিজে নিজে অঞ্চলের অধিবাসীদের মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হতো। তখনকার সময়ে এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে বোঝানো হয়েছে নতুন হিসাব বই। আধুনিক নববর্ষের উদযাপনের প্রথম খবর পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যাবস্থা করা হয়।
পহেলা বৈশাখ বা নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িত। গ্রামের দিকে মানুষ খুব বড় ঘুম থেকে উঠে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে নতুন জামা কাপড় পরে একে অপরের বাড়িতে বেড়াতে যায়। আবার গ্রামের কিছু কিছু জায়গায় মেলা বসতে দেখা যায়। আবার অনেক জায়গায় ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।
বৈশাখ এলো রে
একটা বছর আসবে বলে একটা বছর প্রতীক্ষা,
একটা বছর আসবে বলে একটা বছর তিতিক্ষা।
নতুন বছরে নতুন আশা বুকের মাঝে রোমাঞ্চ,
পেরিয়ে আসা কষ্ট গুলো ভুলেই যাবো সব
আগ বছরের দুঃখগুলো উড়িয়ে দেবো দক্ষিণ বায়ে,
জামাট বাধা যন্ত্রনাদের ছড়িয়ে দেবো তারার গায়ে।
হারিয়েছে যা ফুরিয়েছে যা তাদের জন্য থাকুক শোক।
নতুন বছর এলো দ্বারে হাসছে দেখো বঙ্গ লোক,
কত আশায় বুক বেঁধেছি স্বপ্ন কত আলুক - শালুক!
কতো লতায় ফুল দেখেছি নতুন হওয়ায় বাড়ুক - দুলুক!
ব্যাথার পাহাড় সরিয়ে দিয়ে স্বপ্ন সোপান গড়েছি।
নতুন বছর নতুন মনে নতুন প্রাণ হাজিয়েছি,
স্বপ্ন আছে রাশি রাশি মানুষ পাবে ভাত কাপড়।
শিক্ষা পাবে সকল শিশু হৃদয় পাবে রত্ন আকর,
মাথার উপর ছাদের স্নেহ রোধ জলেতে কষ্ট নেই।
সকল মানুষ মানুষ হবে বিভেদ - বিষের বালাই নেই,
তুমিও বোঝ আমিও বুঝি এসব শুধু স্বপ্ন শুধু।
মরবে গরীব পায়ের নিচে বড় মানুষ গুলো খাবে দই মধু
শিক্ষা চরবে ঠান্ডা গাড়ি শুটেড বুটেড হলো ফ্যাশন,
কলের মাঠের কালো মানুষ অশিক্ষা দের হবে ভাসান।
বদলাবে না কিছুই তবু প্রতি বছর এক শপথ,
মন ভোলানো আশার বাণী ফিরবে বৃথাই শ্রবণ।।
রঙিন জামা নতুন শাড়ি ভাপা ইলিশ রান্না বাড়ি,
ফুল বিনুনি দুলিয়ে বুকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি।
কবিতা হবে গান ও হবে নৃত্য হবে বর্ষবরণ,
বঙ্গ মাতার বুকের উপর এতটা দিনের বঙ্গ তোরণ।
একটা দিনের আবেক। সবার রাত পোহালেই সেই সব আগের মতো,
একটা দিনের আলোর নিচে বছর ভবের অন্ধকার।।
সবই জানি সবই বুঝি কেউই তো আমরা অবুঝ নই,
একটা বছর এসো সবাই একটু না হয় সবুজ হই।
একদিনের বর্ষবরণ একদিনের ভালোবাসা,
ছুঁড়ে ফেলি এবার এসো ঠুনকো আশা ঠুনকো শপথ।
একটা বছর শপথ করি মিথ্যে স্বপ্ন দেখবো না,
একটা বছর শপথ করি ঠুনকো আশা বুনবো না।।
তোমার আমার জীবন থেকে একটু জীবন করবো দান,
প্রতিবাদের মশাল হাতে করবো অগ্নি স্নান!
একটু জীবন,একটু শিক্ষা একটু আগুন ও একটু প্রাণ,
একটু করেই গড়বো শান্তি প্রিয় সমাজ - সাম্যমান!
একটু একটু সত্যি দিয়ে ঘুচবে অন্ধকার।।
শুভ নববর্ষ দিদি। দিদি আপনাদের প্রতিটা দিন স্বর্গসুখ সম সুখে কাটুক। "বৈশাখ এলো রে" সুন্দর একটি স্বরচিত কবিতা আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। কবিতার ভাষাগুলো ছিল অনবদ্য অনিন্দ্য সুন্দর। ঠিকই বলেছেন কবিতার ভাষাতে, একটু একটু সত্যি দিয়েই ঘুচবে অন্ধকার। ধন্যবাদ দিদি আপনাকে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
শুভ নববর্ষ দিদি।আসছে দিন খুব বেশি ভাল কাটুক এই কামনা করি। বৈশাখ এলো রে কবিতাটি দারুন লিখেছেন।কবিতার প্রতিটি লাইন খুব ভাল লেগেছে।বাঙালি খুব অপেক্ষায় থাকে নতুন বছরের।ধন্যবাদ দিদি নতুন বছরে সুন্দর এই কবিতাটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। অনেক শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
বাহ্ বৌদি আপনি শুভ নববর্ষ সম্পর্কে নিয়ে খুবই সুন্দর একটি কবিতা লিখেছেন। আপনার কবিতাটি পড়ে নিজের কাছে দারুন লাগলো। এক বছর পর করে এই বৈশাখী আমাদের মাঝে আসে। বাঙালিরা এই দিনটাকে খুবই সুন্দরভাবে উদযাপন করে থাকে। যাইহোক সব মিলে খুব সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
বৌদি আপনাকে নববর্ষের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।পহেলা বৈশাখ নিয়ে দারুন কবিতা লিখলেন।আপনার লেখা কবিতা পড়ে অনেক ভালো লেগেছে।বাঙালির একটি সার্বজনীন উৎসব এটি।ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলে এই দিনটি পালন করে থাকেন।ধন্যবাদ বৌদি সুন্দর কবিতা পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
শুভ নববর্ষের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই বৌদি। আর টিনটিনকে জানাই আমার অনেক ভালোবাসা। কবিতাটা বেশ ভালো লাগলো পড়ে।একটা বছর চলে গেলে ভাবি পরের বছরটা কিছু হয়তো ভালো হবে।হয়তো কিছু কিছু জিনিস ভালোই হয়। আবার কিছু কিছু খারাপ লাগা দাগ কেটে রেখে যায় মনে। সব মিলিয়ে আমরা আশায় থাকি পরের বছরটা আরেকটু ভালো কাটাবো।
হালখাতার প্রচলনটি বৌদি আমাদের এদিকে এখনো আছে। এখনো নতুন বছরের শুরুতেই বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চল গুলোতে এটা দেখা যায়।
বেশ ভালই উপভোগ করলাম, আপনার কবিতাটি।